এ কে এম শামসুদ্দিন
টেলিভিশন কিংবা ইউটিউব-ফেসবুকে শিক্ষার্থী হত্যার নৃশংসতম দৃশ্যগুলো যখন দেখি, তখন ঘাতকদের চেহারা দেখে মনে প্রশ্ন জাগে, ওরা কি এ দেশেরই সন্তান? যে রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই বাংলাদেশে ওরা রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। বাঙালির ইতিহাসে একক কোনো আন্দোলনে এত অধিকসংখ্যক মানুষ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে সম্ভবত এই প্রথম কোনো সরকারের আমলে এত মানুষের রক্ত ঝরল। সারা দেশে এযাবৎ আড়াই শতাধিক মানুষকে হত্যা করার খবর জানা গেছে। আরও কতজন যে গুম হয়েছে, কে জানে। যদিও সরকার স্বীকার করেছে ১৪৭ জনের কথা। আহত হয়েছে কয়েক হাজার। হত্যার শিকার শিক্ষার্থী ছাড়াও শিশু, সাংবাদিক, পথচারী, রিকশাওয়ালা, ভ্যানচালক, মেহনতি মানুষ অনেকেই আছেন। যদিও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে, তবু এ আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি। আগামী দিনে আরও লাশ পড়বে না, তা কে বলতে পারে? আন্দোলনে এযাবৎ যতগুলো হত্যাকাণ্ড হয়েছে তার মধ্যে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডটি ছিল সবচেয়ে মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক।
আমার এ লেখার শিরোনামটি নিয়েছি শহীদ আবু সাঈদের মায়ের কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে যে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন তা থেকে। তিনি বলেছেন, ‘তুই মোর ছাওয়াক চাকুরি না দিবু না দে কিন্তু মারলু ক্যানে?’ আবু সাঈদকে যেভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তা শুধু মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দখলদার পাকিস্তানি নরঘাতকদের বাঙালি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেই তুলনা করা চলে। এ ঘটনা ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সম্ভবত এ কারণেই আবু সাঈদের মায়ের প্রশ্নের জবাবও শেখ হাসিনার কাছে ছিল না। এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনে যে রক্তপাত হয়েছে, সম্ভবত তাঁর রাজনৈতিক জীবনে এটি একটি নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এ দেশে অনেক ছাত্র আন্দোলন হয়েছে। পাকিস্তান আমল থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ছাত্ররাই বড় বড় আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করেছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মার্চের অসহযোগ আন্দোলন; অর্থাৎ পাকিস্তানি সামরিক জান্তা আইয়ুব-ইয়াহিয়া খানের শাসনকাল, এমনকি স্বাধীনতার পর স্বৈরশাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও এমন বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। হত্যাকাণ্ডের এ দৃশ্য বড় মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক।
আন্দোলনের প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীরা সরকারকে আলোচনায় বসে মীমাংসার জন্য অনুরোধ করে আসছিল। কিন্তু অতিরিক্ত আত্মগরিমার জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে সরকার ব্যর্থ হয়। আন্দোলনের তীব্রতা যখন আকাশচুম্বী, পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে, সরকার তখন আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়। সুষ্ঠু সমাধানের সুযোগ তখন হাতছাড়া হয়ে গেছে। সহপাঠীদের রক্ত মাড়িয়ে আলোচনায় বসবে না বলে শিক্ষার্থীরা সাফ জানিয়ে দেয়। এরপরই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সদস্যরা পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় অস্ত্র হাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে ও জটিল আকার ধারণ করে। এই পরিস্থিতিতে সুযোগসন্ধানীরা মাঠে নেমে পড়ে। এটা অবশ্য সব সময়ই হয়ে থাকে। পুলিশ, আওয়ামী লীগ এবং শিক্ষার্থীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে কেবল লাশের সংখ্যাই বৃদ্ধি পেয়েছে। নরসিংদীর তেরো-চৌদ্দ বছরের তাহমিদ তামিম কিংবা ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ফারহান ফায়াজের মতো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যখন নির্দয়ভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়, তখন এসব সন্তানহারা মায়ের আত্মনিঃসৃত আহাজারি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ যখন ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আন্দোলনে শামিল হয়, তখন কোনো কিছুই আর সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে না।
আন্দোলন যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে, তখন মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ফলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। আন্দোলন তখন আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সরকার তখন আন্দোলনকে ঢালাওভাবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বলে নিজেদের দুর্বলতা ঢাকার চেষ্টা করেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দোষ চাপিয়ে নিজের হাত সাফাই করার চেষ্টা চালিয়েছে। এত দিনের দুর্নীতি, অর্থ লুটপাট, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং পুলিশের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে দমন ও পীড়ন চালিয়ে সরকার যে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারপরও শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ব্যর্থ চেষ্টা চালানো হয়েছে। সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে সরকারি সম্পদের যা-ই ক্ষতি হয়েছে, দেশের জনগণ এখন তা আমলে নিতে চাইছে না। তাদের বক্তব্য, এক যুগের বেশি সময় ধরে দলীয় নেতা-কর্মী, আত্মীয়স্বজন এবং তাদেরই আশীর্বাদপুষ্ট কিছু চেনা ব্যক্তি যখন লাখ, কোটি টাকা লুটপাট করে দেশের বাইরে পাচার করে দিয়েছে, তখন তো সরকার কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। এখন সম্পদ নষ্টের দোহাই দিয়ে পার পাওয়া যাবে না; বরং এই আন্দোলনে সরকার যে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে নির্বিচারে এতগুলো মানুষ হত্যা করেছে, তার বিচার চেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
সংঘর্ষ-সংঘাতের শেষ খবর অনুযায়ী, ২২০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। হত্যার শিকার মানুষের মধ্যে ৭৫ শতাংশ শিশু, কিশোর ও তরুণ। নিহতদের বেশির ভাগের শরীরে প্রাণঘাতী গুলির ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের হৃদয়বিদারক ও ভয়াবহ যে চিত্র ভেসে বেড়াচ্ছে, তা সত্যিই বর্ণনাতীত। সরকার অবশ্য সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের বিষয়টিকে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে আড়াল করার সব চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। কারণ মানুষের বুকে যে ক্ষতচিহ্নের সৃষ্টি হয়েছে তা সহজেই মুছে যাওয়ার নয়। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে, আইনজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের জনগণ এখন সম্পৃক্ত হচ্ছে, যা সরকারের জন্য অশনিসংকেতই বটে।
সরকার শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোটাসংক্রান্ত সব দাবিই মেনে নিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে প্রথমেই কেন মেনে নেওয়া হলো না? সরকার এখন যা-ই বলুক শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে চলেছে। শেখ হাসিনা এখন যত নরম ভাষায় কথা বলুন কিংবা বুকে জড়িয়ে ধরুন না কেন, যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁদের অন্তরের রক্তক্ষরণ কি বন্ধ হবে? সরকার যদি এখন সারা দুনিয়া এনেও হাজির করে, তাহলে যে মায়ের বুক খালি হয়েছে তা কি পূরণ হবে? তপ্ত সিসার আঘাতে হাজারো তরুণের বুকে যে আগুন জ্বলে উঠেছে, সেই আগুন কি নিভে যাবে? এতগুলো মানুষকে যে হত্যা করা হলো তারই-বা কী হবে? সরকারি দলের যে নেতা-কর্মীদের মারণাস্ত্র হাতে দেখা গেছে, তাদের কি শাস্তি হবে? নাকি অতীতের মতো সবকিছু আড়াল করা হবে? এসব প্রশ্নের মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান হবে না।
শিক্ষার্থীরা নতুন করে যে ৯ দফা দাবি পেশ করেছে, সে বিষয়ে সরকার যদি আশু ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এই আন্দোলন আরও অগ্নিরূপ ধারণ করবে। তাদের পেশ করা দাবিগুলোর মধ্যে দু-একটি বাদে বাকি সব দাবি বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মনে হয়। সরকার এসব নিয়ে আবারও যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে, তাহলে তার পরিণতি কি খুব ভালো হবে? পরিস্থিতি এ পর্যায়ে টেনে এনে সরকার এখন যত সাফাই গাক না কেন, আবু সাঈদের মায়ের মতোই, এ আন্দোলনে সন্তানহারা শত মা যদি সমস্বরে চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘মোর ছাওয়াক মারলু ক্যানে’, তখন কী জবাব দেবে সরকার? মায়ের বুকের অন্তর্জ্বালা নেভাতে পারে–এমন জবাব কি আছে কারও কাছে?
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলামিস্ট
টেলিভিশন কিংবা ইউটিউব-ফেসবুকে শিক্ষার্থী হত্যার নৃশংসতম দৃশ্যগুলো যখন দেখি, তখন ঘাতকদের চেহারা দেখে মনে প্রশ্ন জাগে, ওরা কি এ দেশেরই সন্তান? যে রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই বাংলাদেশে ওরা রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। বাঙালির ইতিহাসে একক কোনো আন্দোলনে এত অধিকসংখ্যক মানুষ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে সম্ভবত এই প্রথম কোনো সরকারের আমলে এত মানুষের রক্ত ঝরল। সারা দেশে এযাবৎ আড়াই শতাধিক মানুষকে হত্যা করার খবর জানা গেছে। আরও কতজন যে গুম হয়েছে, কে জানে। যদিও সরকার স্বীকার করেছে ১৪৭ জনের কথা। আহত হয়েছে কয়েক হাজার। হত্যার শিকার শিক্ষার্থী ছাড়াও শিশু, সাংবাদিক, পথচারী, রিকশাওয়ালা, ভ্যানচালক, মেহনতি মানুষ অনেকেই আছেন। যদিও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে, তবু এ আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি। আগামী দিনে আরও লাশ পড়বে না, তা কে বলতে পারে? আন্দোলনে এযাবৎ যতগুলো হত্যাকাণ্ড হয়েছে তার মধ্যে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডটি ছিল সবচেয়ে মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক।
আমার এ লেখার শিরোনামটি নিয়েছি শহীদ আবু সাঈদের মায়ের কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে যে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন তা থেকে। তিনি বলেছেন, ‘তুই মোর ছাওয়াক চাকুরি না দিবু না দে কিন্তু মারলু ক্যানে?’ আবু সাঈদকে যেভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তা শুধু মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দখলদার পাকিস্তানি নরঘাতকদের বাঙালি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেই তুলনা করা চলে। এ ঘটনা ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সম্ভবত এ কারণেই আবু সাঈদের মায়ের প্রশ্নের জবাবও শেখ হাসিনার কাছে ছিল না। এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনে যে রক্তপাত হয়েছে, সম্ভবত তাঁর রাজনৈতিক জীবনে এটি একটি নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এ দেশে অনেক ছাত্র আন্দোলন হয়েছে। পাকিস্তান আমল থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ছাত্ররাই বড় বড় আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করেছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মার্চের অসহযোগ আন্দোলন; অর্থাৎ পাকিস্তানি সামরিক জান্তা আইয়ুব-ইয়াহিয়া খানের শাসনকাল, এমনকি স্বাধীনতার পর স্বৈরশাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও এমন বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। হত্যাকাণ্ডের এ দৃশ্য বড় মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক।
আন্দোলনের প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীরা সরকারকে আলোচনায় বসে মীমাংসার জন্য অনুরোধ করে আসছিল। কিন্তু অতিরিক্ত আত্মগরিমার জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে সরকার ব্যর্থ হয়। আন্দোলনের তীব্রতা যখন আকাশচুম্বী, পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে, সরকার তখন আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়। সুষ্ঠু সমাধানের সুযোগ তখন হাতছাড়া হয়ে গেছে। সহপাঠীদের রক্ত মাড়িয়ে আলোচনায় বসবে না বলে শিক্ষার্থীরা সাফ জানিয়ে দেয়। এরপরই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সদস্যরা পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় অস্ত্র হাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে ও জটিল আকার ধারণ করে। এই পরিস্থিতিতে সুযোগসন্ধানীরা মাঠে নেমে পড়ে। এটা অবশ্য সব সময়ই হয়ে থাকে। পুলিশ, আওয়ামী লীগ এবং শিক্ষার্থীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে কেবল লাশের সংখ্যাই বৃদ্ধি পেয়েছে। নরসিংদীর তেরো-চৌদ্দ বছরের তাহমিদ তামিম কিংবা ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ফারহান ফায়াজের মতো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যখন নির্দয়ভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়, তখন এসব সন্তানহারা মায়ের আত্মনিঃসৃত আহাজারি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ যখন ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আন্দোলনে শামিল হয়, তখন কোনো কিছুই আর সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে না।
আন্দোলন যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে, তখন মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ফলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। আন্দোলন তখন আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সরকার তখন আন্দোলনকে ঢালাওভাবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বলে নিজেদের দুর্বলতা ঢাকার চেষ্টা করেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দোষ চাপিয়ে নিজের হাত সাফাই করার চেষ্টা চালিয়েছে। এত দিনের দুর্নীতি, অর্থ লুটপাট, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং পুলিশের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে দমন ও পীড়ন চালিয়ে সরকার যে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারপরও শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ব্যর্থ চেষ্টা চালানো হয়েছে। সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে সরকারি সম্পদের যা-ই ক্ষতি হয়েছে, দেশের জনগণ এখন তা আমলে নিতে চাইছে না। তাদের বক্তব্য, এক যুগের বেশি সময় ধরে দলীয় নেতা-কর্মী, আত্মীয়স্বজন এবং তাদেরই আশীর্বাদপুষ্ট কিছু চেনা ব্যক্তি যখন লাখ, কোটি টাকা লুটপাট করে দেশের বাইরে পাচার করে দিয়েছে, তখন তো সরকার কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। এখন সম্পদ নষ্টের দোহাই দিয়ে পার পাওয়া যাবে না; বরং এই আন্দোলনে সরকার যে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে নির্বিচারে এতগুলো মানুষ হত্যা করেছে, তার বিচার চেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
সংঘর্ষ-সংঘাতের শেষ খবর অনুযায়ী, ২২০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। হত্যার শিকার মানুষের মধ্যে ৭৫ শতাংশ শিশু, কিশোর ও তরুণ। নিহতদের বেশির ভাগের শরীরে প্রাণঘাতী গুলির ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের হৃদয়বিদারক ও ভয়াবহ যে চিত্র ভেসে বেড়াচ্ছে, তা সত্যিই বর্ণনাতীত। সরকার অবশ্য সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের বিষয়টিকে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে আড়াল করার সব চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। কারণ মানুষের বুকে যে ক্ষতচিহ্নের সৃষ্টি হয়েছে তা সহজেই মুছে যাওয়ার নয়। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে, আইনজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের জনগণ এখন সম্পৃক্ত হচ্ছে, যা সরকারের জন্য অশনিসংকেতই বটে।
সরকার শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোটাসংক্রান্ত সব দাবিই মেনে নিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে প্রথমেই কেন মেনে নেওয়া হলো না? সরকার এখন যা-ই বলুক শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে চলেছে। শেখ হাসিনা এখন যত নরম ভাষায় কথা বলুন কিংবা বুকে জড়িয়ে ধরুন না কেন, যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁদের অন্তরের রক্তক্ষরণ কি বন্ধ হবে? সরকার যদি এখন সারা দুনিয়া এনেও হাজির করে, তাহলে যে মায়ের বুক খালি হয়েছে তা কি পূরণ হবে? তপ্ত সিসার আঘাতে হাজারো তরুণের বুকে যে আগুন জ্বলে উঠেছে, সেই আগুন কি নিভে যাবে? এতগুলো মানুষকে যে হত্যা করা হলো তারই-বা কী হবে? সরকারি দলের যে নেতা-কর্মীদের মারণাস্ত্র হাতে দেখা গেছে, তাদের কি শাস্তি হবে? নাকি অতীতের মতো সবকিছু আড়াল করা হবে? এসব প্রশ্নের মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান হবে না।
শিক্ষার্থীরা নতুন করে যে ৯ দফা দাবি পেশ করেছে, সে বিষয়ে সরকার যদি আশু ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এই আন্দোলন আরও অগ্নিরূপ ধারণ করবে। তাদের পেশ করা দাবিগুলোর মধ্যে দু-একটি বাদে বাকি সব দাবি বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মনে হয়। সরকার এসব নিয়ে আবারও যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে, তাহলে তার পরিণতি কি খুব ভালো হবে? পরিস্থিতি এ পর্যায়ে টেনে এনে সরকার এখন যত সাফাই গাক না কেন, আবু সাঈদের মায়ের মতোই, এ আন্দোলনে সন্তানহারা শত মা যদি সমস্বরে চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘মোর ছাওয়াক মারলু ক্যানে’, তখন কী জবাব দেবে সরকার? মায়ের বুকের অন্তর্জ্বালা নেভাতে পারে–এমন জবাব কি আছে কারও কাছে?
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলামিস্ট
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে