আবু তাহের খান
৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী বেশ কয়েক দিন বাংলাদেশের সড়কগুলোতে পুলিশের মাধ্যমে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ (ট্রাফিক) ব্যবস্থা বলতে গেলে পুরোপুরিই অকার্যকর ছিল। এই সময়ে সারা দেশের অধিকাংশ সড়কে শিক্ষার্থীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫ আগস্ট বিকেল থেকে এ দায়িত্ব পালন সীমিত পরিসরে শুরু হলেও পরবর্তী দিনগুলোতে তা ব্যাপক পরিসরে বাড়ে এবং ক্রমান্বয়ে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণভিত্তিক এই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ১৪ আগস্ট এই নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত চোখে পড়েছে। এর মধ্যে ট্রাফিক পুলিশও ফিরতে শুরু করেছে। আশা করা যায়, পুলিশ শিগগিরই কাজটি নিজেরাই আবার পূর্ণাঙ্গ পরিসরে শুরু করবে। ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন সমালোচনা ছাড়া শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণভিত্তিক এই নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা সারা দেশেই সর্বস্তরের মানুষের ব্যাপক কৌতূহল, প্রশংসা ও সমর্থন কুড়াতে সক্ষম হয়েছে। এরূপ প্রশংসনীয় কাজের জন্য তাঁদের স্বীকৃতিপত্র দেওয়া হবে বলেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহোদয় ঘোষণা করেছেন।
শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত সাম্প্রতিক এই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা দেখে যে বিষয়গুলো অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকভাবেই চিন্তায় এল, তা নিয়ে এখানে খানিকটা আলোচনার প্রয়োজন মনে করি। প্রথমেই বাংলাদেশের রাস্তায় বহু বছর ধরে সাধারণ মানুষ যে অসহনীয় যানজট পরিস্থিতি ভোগ করছে, তার কারণগুলো চিহ্নিত করা যাক। এক. পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে প্রয়োজনীয় লোকবলের ঘাটতি; দুই. দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের মধ্যে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না থাকা; তিন. ট্রাফিক বিভাগের জন্য চাহিদার তুলনায় কম বাজেট বরাদ্দ পাওয়া; চার. দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের মধ্যে পেশাদারত্ব ও নৈতিকতার ঘাটতি; পাঁচ. দায়িত্বরত অবস্থায় পুলিশ কর্তৃক মূল কাজ ফেলে যানবাহনের চালকদের সঙ্গে অনৈতিক সমঝোতায় লিপ্ত হওয়া; ছয়. দূরপাল্লার যানবাহনের ওপর পুলিশের চাঁদাবাজি; সাত. কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালনের বিপরীতে উপযুক্ত প্রণোদনা না থাকা ও তদজনিত হতাশা; আট. ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের নানা অন্যায্য নির্দেশ, তদবির ও চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে প্রায় সারাক্ষণই হিমশিম খাওয়া ইত্যাদি।
উল্লিখিত সমস্যাগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে যে পরিসর প্রয়োজন, সেটি এটি নয়। তাই এখানে সমস্যার আদ্যোপান্তে না গিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর মূল প্রস্তাবগুলোই শুধু খানিকটা সবিস্তারে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।
দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪২ শতাংশ এখন শহরে বসবাস করে এবং এই সংখ্যা এত দ্রুত হারে বাড়ছে যে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তা গ্রামীণ জনসংখ্যার হার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, অর্থাৎ ২০৩০ সালের আগেই তা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই প্রবণতা বর্তমান ধারায় অব্যাহত থাকার মানে হচ্ছে, দেশের শহরাঞ্চলগুলোতে সড়কে যানবাহনের সংখ্যা দ্রুতই আরও বাড়বে এবং সে কারণে যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে জনবল আরও বহুলাংশে বাড়াতে হবে। ‘আরও বহুলাংশে’ বলা এ কারণে যে, বর্তমানে দেশের সড়কগুলোতে যতসংখ্যক যানবাহন চলাচল করে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই পর্যাপ্ত লোকবল ট্রাফিক বিভাগের নেই। এ অবস্থায় আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে শহরের লোকসংখ্যা যদি ৮ শতাংশ বাড়ে এবং সে অনুপাতে যানবাহনের সংখ্যাও বাড়ে (বাড়াটাই স্বাভাবিক), তাহলে অনিবার্যভাবেই সেসব যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য সড়কে বাড়তি জনবলের প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ, জনবলের বিদ্যমান ঘাটতির পাশাপাশি নতুন চাহিদা মেটানোর জন্যও বাড়তি জনবল নিয়োগ করতে হবে।
এই বাড়তি জনবল নিয়োগের মানেই হচ্ছে রাষ্ট্রের পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়া, তথা বাজেটের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হওয়া। অথচ এটি ইতিমধ্যে সর্বজনবিদিত তথ্য যে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব বাজেটের ৪৩ শতাংশই যাচ্ছে পরিচালন ব্যয় বাবদ। এ অবস্থায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে জনবল বাড়াতে হলে উল্লিখিত ৪৩ শতাংশ পরিচালন ব্যয় যে আরও বেড়ে যাবে, তা বহন করার ক্ষমতা রাষ্ট্রের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রায় নেই বললেই চলে। তা ছাড়া এটাও খেয়াল রাখা দরকার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় পরিস্থিতিও বর্তমানে অত্যন্ত নাজুক। পাশাপাশি এটাও সত্য, সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাটা অর্থনীতির জন্য একটি বড় ক্ষতির কারণ। একরকম একটি জটিল বাস্তবতায় অর্থ সাশ্রয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে অধ্যয়নরত ১৮ বছরের ঊর্ধ্ববয়সী শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে খণ্ডকালীন ভিত্তিতে সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োগ করা হলে তা খুবই চমৎকার কাজ হবে বলে মনে করি। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থের যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি এতে করে তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য খণ্ডকালীন কর্মসংস্থানেরও প্রয়োজনীয় সুযোগ তৈরি হবে।
এবার আসি তাদের প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে। বর্তমানে ট্রাফিক পুলিশের প্রশিক্ষণের যে মান কিংবা এই প্রশিক্ষণকে আত্মস্থ করার ব্যাপারে পুলিশ সদস্যদের যে সামর্থ্য, এ দুটির কোনোটিই সন্তোষজনক পর্যায়ে নেই। এরূপ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের যদি মানোন্নীত প্রশিক্ষণ কোর্সের আওতায় নিয়ে আসা যায়, তাহলে দ্রুততম সময়ে অধিকতর মানসম্পন্ন দক্ষতা অর্জনে নিয়মিত সদস্যের তুলনায় ওই শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি ভালো করবেন বলেই ধারণা করা চলে (কথাটি নিয়মিত পুলিশ সদস্যদের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেই বলা)। আর প্রস্তাব অনুযায়ী প্রশিক্ষণ-উত্তর সময়ে ঘণ্টাভিত্তিক সম্মানীর বিনিময়ে তাঁদের উক্ত দায়িত্বে নিয়োগ করা হলে এ ক্ষেত্রে তাঁরা খুবই আন্তরিকতাপূর্ণ চমৎকার সেবাদানে সক্ষম হবেন বলেও আশা করা যায়। তবে শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের উক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত করতে হলে সংশ্লিষ্ট বিধিবিধানের ক্ষেত্রে হয়তো সামান্য কিছু সংশোধনী আনতে হবে, যা তেমন জটিল কিছু হবে না বলেই মনে করি। এ প্রসঙ্গে এটাও বলা প্রয়োজন, নিষ্ঠা ও নৈতিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিয়মিত সদস্যের তুলনায় শিক্ষার্থীরা এগিয়ে থাকবেন বলেও আশা করা যায়।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা কেমন করবেন, তার প্রামাণিক দৃষ্টান্ত ইতিমধ্যে তাঁরা আগস্টের ক্রান্তিকালে সড়কে কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছেন। আর জনগণও যে তাঁদের এই ভূমিকাকে নিবিড় আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন, সেটাও আমরা সবাই কমবেশি প্রত্যক্ষ করেছি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক হবে যে, পৃথিবীর বহু উন্নত দেশেই শিক্ষার্থীদের জন্য খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ ও চর্চা দুই-ই রয়েছে। ফলে বাংলাদেশেও শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে যুক্ত করার মাধ্যমে সমজাতীয় সম্মানজনক চর্চা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি নতুন শুভ দৃষ্টান্তের সূচনা ঘটবে বলেই আশা করা যায়। আর এর মধ্য দিয়ে তাঁরা জনবল ব্যবস্থাপনা, মাঠে নেতৃত্বদান ও সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে যেসব গুণাবলি অর্জন করবেন, সেগুলো সারা জীবন তাঁদের উচ্চতর পেশাজীবী ও মননশীল সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে যে বিশেষভাবে সহায়ক হবে, তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে সতর্কতার জন্য বলি, ট্রাফিক প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণের পর যাঁরা সাফল্যের সঙ্গে উক্ত কোর্সে উন্নীত হবেন, শুধু তাঁরাই উক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন এবং সে ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক তদবিরকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অন্যান্য ক্ষেত্রের নানা মৌলিক পরিবর্তন ও সংস্কারের পাশাপাশি সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার বিষয়টিকেও সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। অর্থ সাশ্রয়ী এই ব্যবস্থা সড়কে সফল হলে শিক্ষার্থীদের ক্রমান্বয়ে রাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষেত্রেও সাশ্রয়ী আঙ্গিকে কাজে লাগানো যেতে পারে। এতে করে রাষ্ট্রের পরিচালন ব্যয় যেমন হ্রাস পাবে, তেমনি এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য খণ্ডকালীন কাজেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। উল্লেখ্য, দেশের বেসরকারি খাতের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন কাজে নিয়োগ করে ব্যবসায়িকভাবে উপকৃত হচ্ছে। অতএব এই ধারা রাষ্ট্র খাতেও লাভজনকভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব বলে মনে করি।
লেখক: আবু তাহের খান
সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সংস্থা
৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী বেশ কয়েক দিন বাংলাদেশের সড়কগুলোতে পুলিশের মাধ্যমে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ (ট্রাফিক) ব্যবস্থা বলতে গেলে পুরোপুরিই অকার্যকর ছিল। এই সময়ে সারা দেশের অধিকাংশ সড়কে শিক্ষার্থীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫ আগস্ট বিকেল থেকে এ দায়িত্ব পালন সীমিত পরিসরে শুরু হলেও পরবর্তী দিনগুলোতে তা ব্যাপক পরিসরে বাড়ে এবং ক্রমান্বয়ে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণভিত্তিক এই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ১৪ আগস্ট এই নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত চোখে পড়েছে। এর মধ্যে ট্রাফিক পুলিশও ফিরতে শুরু করেছে। আশা করা যায়, পুলিশ শিগগিরই কাজটি নিজেরাই আবার পূর্ণাঙ্গ পরিসরে শুরু করবে। ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন সমালোচনা ছাড়া শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণভিত্তিক এই নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা সারা দেশেই সর্বস্তরের মানুষের ব্যাপক কৌতূহল, প্রশংসা ও সমর্থন কুড়াতে সক্ষম হয়েছে। এরূপ প্রশংসনীয় কাজের জন্য তাঁদের স্বীকৃতিপত্র দেওয়া হবে বলেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহোদয় ঘোষণা করেছেন।
শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত সাম্প্রতিক এই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা দেখে যে বিষয়গুলো অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকভাবেই চিন্তায় এল, তা নিয়ে এখানে খানিকটা আলোচনার প্রয়োজন মনে করি। প্রথমেই বাংলাদেশের রাস্তায় বহু বছর ধরে সাধারণ মানুষ যে অসহনীয় যানজট পরিস্থিতি ভোগ করছে, তার কারণগুলো চিহ্নিত করা যাক। এক. পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে প্রয়োজনীয় লোকবলের ঘাটতি; দুই. দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের মধ্যে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না থাকা; তিন. ট্রাফিক বিভাগের জন্য চাহিদার তুলনায় কম বাজেট বরাদ্দ পাওয়া; চার. দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের মধ্যে পেশাদারত্ব ও নৈতিকতার ঘাটতি; পাঁচ. দায়িত্বরত অবস্থায় পুলিশ কর্তৃক মূল কাজ ফেলে যানবাহনের চালকদের সঙ্গে অনৈতিক সমঝোতায় লিপ্ত হওয়া; ছয়. দূরপাল্লার যানবাহনের ওপর পুলিশের চাঁদাবাজি; সাত. কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালনের বিপরীতে উপযুক্ত প্রণোদনা না থাকা ও তদজনিত হতাশা; আট. ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের নানা অন্যায্য নির্দেশ, তদবির ও চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে প্রায় সারাক্ষণই হিমশিম খাওয়া ইত্যাদি।
উল্লিখিত সমস্যাগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে যে পরিসর প্রয়োজন, সেটি এটি নয়। তাই এখানে সমস্যার আদ্যোপান্তে না গিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর মূল প্রস্তাবগুলোই শুধু খানিকটা সবিস্তারে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।
দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪২ শতাংশ এখন শহরে বসবাস করে এবং এই সংখ্যা এত দ্রুত হারে বাড়ছে যে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তা গ্রামীণ জনসংখ্যার হার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, অর্থাৎ ২০৩০ সালের আগেই তা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই প্রবণতা বর্তমান ধারায় অব্যাহত থাকার মানে হচ্ছে, দেশের শহরাঞ্চলগুলোতে সড়কে যানবাহনের সংখ্যা দ্রুতই আরও বাড়বে এবং সে কারণে যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে জনবল আরও বহুলাংশে বাড়াতে হবে। ‘আরও বহুলাংশে’ বলা এ কারণে যে, বর্তমানে দেশের সড়কগুলোতে যতসংখ্যক যানবাহন চলাচল করে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই পর্যাপ্ত লোকবল ট্রাফিক বিভাগের নেই। এ অবস্থায় আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে শহরের লোকসংখ্যা যদি ৮ শতাংশ বাড়ে এবং সে অনুপাতে যানবাহনের সংখ্যাও বাড়ে (বাড়াটাই স্বাভাবিক), তাহলে অনিবার্যভাবেই সেসব যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য সড়কে বাড়তি জনবলের প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ, জনবলের বিদ্যমান ঘাটতির পাশাপাশি নতুন চাহিদা মেটানোর জন্যও বাড়তি জনবল নিয়োগ করতে হবে।
এই বাড়তি জনবল নিয়োগের মানেই হচ্ছে রাষ্ট্রের পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়া, তথা বাজেটের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হওয়া। অথচ এটি ইতিমধ্যে সর্বজনবিদিত তথ্য যে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব বাজেটের ৪৩ শতাংশই যাচ্ছে পরিচালন ব্যয় বাবদ। এ অবস্থায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে জনবল বাড়াতে হলে উল্লিখিত ৪৩ শতাংশ পরিচালন ব্যয় যে আরও বেড়ে যাবে, তা বহন করার ক্ষমতা রাষ্ট্রের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রায় নেই বললেই চলে। তা ছাড়া এটাও খেয়াল রাখা দরকার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় পরিস্থিতিও বর্তমানে অত্যন্ত নাজুক। পাশাপাশি এটাও সত্য, সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাটা অর্থনীতির জন্য একটি বড় ক্ষতির কারণ। একরকম একটি জটিল বাস্তবতায় অর্থ সাশ্রয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে অধ্যয়নরত ১৮ বছরের ঊর্ধ্ববয়সী শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে খণ্ডকালীন ভিত্তিতে সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োগ করা হলে তা খুবই চমৎকার কাজ হবে বলে মনে করি। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থের যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি এতে করে তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য খণ্ডকালীন কর্মসংস্থানেরও প্রয়োজনীয় সুযোগ তৈরি হবে।
এবার আসি তাদের প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে। বর্তমানে ট্রাফিক পুলিশের প্রশিক্ষণের যে মান কিংবা এই প্রশিক্ষণকে আত্মস্থ করার ব্যাপারে পুলিশ সদস্যদের যে সামর্থ্য, এ দুটির কোনোটিই সন্তোষজনক পর্যায়ে নেই। এরূপ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের যদি মানোন্নীত প্রশিক্ষণ কোর্সের আওতায় নিয়ে আসা যায়, তাহলে দ্রুততম সময়ে অধিকতর মানসম্পন্ন দক্ষতা অর্জনে নিয়মিত সদস্যের তুলনায় ওই শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি ভালো করবেন বলেই ধারণা করা চলে (কথাটি নিয়মিত পুলিশ সদস্যদের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেই বলা)। আর প্রস্তাব অনুযায়ী প্রশিক্ষণ-উত্তর সময়ে ঘণ্টাভিত্তিক সম্মানীর বিনিময়ে তাঁদের উক্ত দায়িত্বে নিয়োগ করা হলে এ ক্ষেত্রে তাঁরা খুবই আন্তরিকতাপূর্ণ চমৎকার সেবাদানে সক্ষম হবেন বলেও আশা করা যায়। তবে শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের উক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত করতে হলে সংশ্লিষ্ট বিধিবিধানের ক্ষেত্রে হয়তো সামান্য কিছু সংশোধনী আনতে হবে, যা তেমন জটিল কিছু হবে না বলেই মনে করি। এ প্রসঙ্গে এটাও বলা প্রয়োজন, নিষ্ঠা ও নৈতিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিয়মিত সদস্যের তুলনায় শিক্ষার্থীরা এগিয়ে থাকবেন বলেও আশা করা যায়।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা কেমন করবেন, তার প্রামাণিক দৃষ্টান্ত ইতিমধ্যে তাঁরা আগস্টের ক্রান্তিকালে সড়কে কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছেন। আর জনগণও যে তাঁদের এই ভূমিকাকে নিবিড় আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন, সেটাও আমরা সবাই কমবেশি প্রত্যক্ষ করেছি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক হবে যে, পৃথিবীর বহু উন্নত দেশেই শিক্ষার্থীদের জন্য খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ ও চর্চা দুই-ই রয়েছে। ফলে বাংলাদেশেও শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে যুক্ত করার মাধ্যমে সমজাতীয় সম্মানজনক চর্চা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি নতুন শুভ দৃষ্টান্তের সূচনা ঘটবে বলেই আশা করা যায়। আর এর মধ্য দিয়ে তাঁরা জনবল ব্যবস্থাপনা, মাঠে নেতৃত্বদান ও সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে যেসব গুণাবলি অর্জন করবেন, সেগুলো সারা জীবন তাঁদের উচ্চতর পেশাজীবী ও মননশীল সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে যে বিশেষভাবে সহায়ক হবে, তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে সতর্কতার জন্য বলি, ট্রাফিক প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণের পর যাঁরা সাফল্যের সঙ্গে উক্ত কোর্সে উন্নীত হবেন, শুধু তাঁরাই উক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন এবং সে ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক তদবিরকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অন্যান্য ক্ষেত্রের নানা মৌলিক পরিবর্তন ও সংস্কারের পাশাপাশি সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার বিষয়টিকেও সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। অর্থ সাশ্রয়ী এই ব্যবস্থা সড়কে সফল হলে শিক্ষার্থীদের ক্রমান্বয়ে রাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষেত্রেও সাশ্রয়ী আঙ্গিকে কাজে লাগানো যেতে পারে। এতে করে রাষ্ট্রের পরিচালন ব্যয় যেমন হ্রাস পাবে, তেমনি এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য খণ্ডকালীন কাজেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। উল্লেখ্য, দেশের বেসরকারি খাতের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন কাজে নিয়োগ করে ব্যবসায়িকভাবে উপকৃত হচ্ছে। অতএব এই ধারা রাষ্ট্র খাতেও লাভজনকভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব বলে মনে করি।
লেখক: আবু তাহের খান
সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সংস্থা
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে