আজকের পত্রিকা: গণ-অভ্যুত্থানে আপনারাও ছিলেন। কিন্তু সরকার গঠনে আপনারা নেই কেন?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: সরকার গঠন করার সময় আমরা বলেছিলাম, আমরাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পরামর্শ করে সেটা করা হোক। কিন্তু সেটা হয়নি। এখন বরং প্রশ্ন আসছে, এটা কারা ও কীভাবে করল? সেটা কিন্তু আমরা আগে এবং এখনো জানতে পারিনি। সরকার কীভাবে গঠিত হলো, এটা বড় প্রশ্ন হিসেবে মানুষের সামনে আছে। আর আমাদের তো এ সরকারে থাকার কোনো কারণ নেই। গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল ও গ্রুপের কাছে জাতীয় সরকার গঠনের প্রশ্ন এলে এবং সে অনুযায়ী জাতীয় সরকার গঠিত হলে প্রশ্ন আসতে পারত—আমরা নেই কেন! এই প্রশ্ন এখন অপ্রাসঙ্গিক।
আজকের পত্রিকা: তাহলে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: অন্তর্বর্তী সরকারকে মূল্যায়নের এখনো সময় আসেনি। আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু আমরা এর গঠনকালীন বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারি। এই সরকার গঠনের সময় আমাদের সঙ্গে কথা না বললেও ছাত্র, শ্রমিক, জনতার একটি রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সরকার গঠিত হয়েছে, তার প্রতি আমরা সমর্থন ব্যক্ত করেছি। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তাদের কার্যক্রমে আমরা অসন্তুষ্ট। তারপরও আমরা এ সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছি। আমরা আশা করব, এ সরকারের প্রধান কাজ হবে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করা এবং বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য গণতান্ত্রিক সংস্কার। আর সেগুলোর রূপরেখা তৈরির জন্য সবার সঙ্গে কথা বলা দরকার। এই প্রত্যাশাগুলো আমরা রাখছি।
আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তী সরকার একটা বড় আন্তর্জাতিক শক্তির আশীর্বাদপুষ্ট বলে অভিযোগ। তারপরেও কেন আপনারা তাদের সমর্থন করছেন?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: আগেই বলেছি, এ সরকার নিয়ে এখনই কোনো পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করতে চাই না। সাধারণভাবে যেহেতু এ সরকার গণ-অভ্যুত্থানের পরিণতিতে গঠিত হয়েছে, সে জন্য আমরা তাদের সমর্থন করছি। আর এই সরকার তো কমিউনিস্ট পার্টি বা বামপন্থীদের সরকার না। তাদের নিয়ে আমাদের নানা প্রশ্ন আছে। ভবিষ্যতে যখন আমরা এদের নিয়ে মূল্যায়ন করব, সেটা আরও স্পষ্ট হবে।
আর একটা কথা বলতে চাই, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে আন্তরিক হবে, এটাই স্বাভাবিক। গত দুই মাসে কিছু দৃশ্যমান পজিটিভ কাজ করার কথা থাকলেও সেটা তারা করতে পারল না কেন? আমি সহজ করে বলতে চাই, এ সরকার যে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সেই আন্দোলনে ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ছিল। এখন খবর পাওয়া যাচ্ছে, ছাত্রদের মধ্যে গঠিত একটা ক্ষুদ্র অংশ এর সব সাংগঠনিক চিন্তা করত। কিন্তু মনে রাখতে হবে, গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছে ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণে। এই আন্দোলনের পেছনে যদি আমরা সব শ্রেণি-পেশার শক্তিকে সংগঠিত করতে পারতাম, তাহলে কিন্তু আমাদের নেতৃত্বেরও প্রভাব থাকত।
আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান স্বতঃস্ফূর্ত হলেও এখন শোনা যাচ্ছে এর নেপথ্যে ছিল দক্ষিণপন্থী ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। এখন দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে ওই দক্ষিণপন্থী ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি প্রভাব বিস্তার করছে। আমরা কিন্তু সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছি, আপনারা যদি তাদের প্রভাবে এই অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনা করতে চান, তাহলে গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে এবং এটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, পাঠ্যপুস্তক কমিটি গঠন ও বাতিল করা, সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান হিসেবে প্রথম যাঁর নাম প্রস্তাব করা হলো, পরবর্তী সময়ে তাঁকেই আবার বাদ দেওয়া। দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় এক দখলদারত্বের বিদায়ে নতুন আরেক দখলদারত্ব কায়েম হচ্ছে। অনেক জায়গায় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অমানবিক আচরণের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি জেঁকে বসছে—এ সবকিছুই কিন্তু এই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
আজকের পত্রিকা: ১৫ বছরের শাসনামলে আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এটাই কি বাংলাদেশে প্রথম স্বৈরাচার? বারবার স্বৈরাচারী শাসন কেন আসে?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: এটা তো প্রথম স্বৈরাচার নয়। আমরা স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। আমরা বিভিন্ন সময়ে যারা সামরিক আইন জারি করে শাসনক্ষমতায় এসেছে, তাদের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করেছি। কিন্তু এবারের বিষয়টা হয়েছে, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থেকে কর্তৃত্ববাদী এবং ভয়ের রাজত্ব কায়েম করে জনগণকে মর্যাদাহীন করেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে তারা ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে, যেটা অতীতে কখনো ঘটেনি। এ কারণে শেখ হাসিনা কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিস্ট হিসেবে জনগণের কাছে প্রতিভাত হয়েছেন।
আর স্বৈরাচারী শাসন তো একটা ব্যবস্থা। আমাদের প্রচলিত যে সাংবিধানিক ব্যবস্থা, সেটাই কিন্তু দিনদিন স্বৈরাচার হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে। আমরা বামপন্থীরা অতীতে এবং এখনো যে আন্দোলন করছি এবং স্লোগান তুলেছি, ‘দুঃশাসন হটাও, ব্যবস্থা বদলাও’—এর জন্য বামপন্থী বিকল্প গড়ে তোলার কথা বলে আসছি। কিন্তু আমরা তো ব্যবস্থাটার বদল করতে পারিনি।
আমরা বলি, রাজনীতি হলো উপরিকাঠামো আর অর্থনীতি হলো এর ভিত্তিকাঠামো। যদি আমাদের অর্থনীতির কাঠামোটা এমন থাকে, যেখানে যে কেউ লুটপাট করতে পারে এবং কাঠামোটা যদি দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি দিয়ে আবদ্ধ হতে হয়, মানে উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্ক না থেকে অসৎ আমলা আর অসৎ ব্যবসায়ীরা যদি অসৎ উপায়ে উপার্জন করেন, তাহলে এই দুর্বৃত্তায়িত অর্থনীতি আবার দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতিরই জন্ম দেয়, যা অবশ্যম্ভাবীভাবে কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করে। এটা ভাঙতে হলে অনেকগুলো জায়গায় হাত দিতে হবে, নইলে নতুন রাজনীতি নির্মাণ করা সম্ভব না। যেমন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, নির্বাচনীব্যবস্থা সংস্কার যত দিন পর্যন্ত না করতে পারছি, তত দিন পর্যন্ত স্বৈরাচারী ব্যবস্থাটা তৈরি হওয়ার সুযোগ চালু থাকবে।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে সরতেই বিএনপি দখলদারি চালাচ্ছে। সরকার ধর্মীয় রাজনীতির সঙ্গে আপস করছে। এগুলোকে কীভাবে দেখছেন?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: এ দুটোই অগ্রহণযোগ্য। আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের সঙ্গে গত ১২ আগস্ট দেখা করার সুযোগ হয়েছিল। আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমি তাঁকে পরিষ্কার করে বলেছিলাম, এই গণ-অভ্যুত্থানে কোনো দল বা গোষ্ঠী জয়ী হয়নি। সুতরাং এক দখলদারের পরিবর্তে আরেক দখলদার আসবে, সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সুতরাং আপনারা নির্দেশ দেন, কেউ যদি জোর করে দখল করে, তাদের উচ্ছেদ করা হবে। প্রশাসনে নিয়োগ, বদলির ক্ষেত্রেও নীতিমালা প্রণয়নের ভিত্তিতে দলনিরপেক্ষ, যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে।
আমার কাছে মনে হয়, এ সরকারের বড় দুর্বলতা হলো, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এবং দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে কিছু কিছু জায়গায় প্রশ্রয় দেওয়ার কারণে তারা বিভিন্ন অপকর্ম করার সুযোগ পাচ্ছে। আমরা মনে করি, এখনই এসব দমন করা দরকার। তা না হলে গণ-অভ্যুত্থানই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে।
আজকের পত্রিকা: সংবিধান সংশোধন নাকি সংবিধান নতুন করে লেখা উচিত?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: প্রথম কথা হলো, আমূল পরিবর্তনের রায় এদের কে দিয়েছে? আমূল পরিবর্তনের কথা কোনো ব্যক্তি বললে আমি প্রশ্ন তুলতে পারি না। যারা মুক্তিযুদ্ধ মানে না, তারা তো এই সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিতে চাইবে। আর এটাকে শুধু একটা গঠনতন্ত্র বলে সংবিধান বাতিল করে দেওয়া কিন্তু তাদের লক্ষ্য।
এ সরকারের কোনো ম্যান্ডেট নেই যে তারা সংবিধান পুনর্লিখন করবে। কিন্তু আমরা মনে করি, বাহাত্তরের সংবিধানের মূল চারটা ভিত্তি হলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অর্জন। আমরা বামপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, আমাদের সংবিধানের অনেক অসম্পূর্ণতা আছে, সেসব দূর করতে হবে। সংস্কার করা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এই সংবিধানের কোন কোন বিষয় সংস্কার হতে পারে, সেসব নিয়ে আলোচনা হতে পারে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে চার মূলনীতি, সেটাকে ঠিক রেখে। এর বাইরে কেউ যদি সংবিধান পুনর্লিখনের মাধ্যমে সংবিধান ছুড়ে দিতে চায়, আমরা তাদের সাবধান করে দিতে চাই, এটা আমরা করতে দেব না।
আজকের পত্রিকা: অরাজকতাও তো চলছে। পরিবর্তনের আশা কি রাখতে পারছেন?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: আমি আপনার সঙ্গে যে মুহূর্তে কথা বলছি এবং সরকার যেভাবে চলছে, তাতে পরিবর্তনের কোনো আলামত দেখছি না। এটা আমার এক নম্বর কথা। দুই নম্বর কথা হচ্ছে, আমরা অনেক আগে থেকে বলে আসছি, কিছু করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে করতে হবে। কিন্তু সরকার মনে হয় রাজনৈতিক দলগুলোকে উপেক্ষা করছে। তারা সবার সরকার না বলে একটা অংশের সরকার বলছে।
এমনকি বেশ কিছু সংস্কারের কমিটি করা হলো আমাদের সঙ্গে কথা না বলে। জনগণের তাৎক্ষণিক সমস্যা, যেমন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, জানমালের নিরাপত্তা এবং দখলদারত্ব যদি উচ্ছেদ করতে পারে, তাহলে অরাজক পরিস্থিতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে আমার ধারণা।
আজকের পত্রিকা: গণ-অভ্যুত্থানে আপনারাও ছিলেন। কিন্তু সরকার গঠনে আপনারা নেই কেন?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: সরকার গঠন করার সময় আমরা বলেছিলাম, আমরাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পরামর্শ করে সেটা করা হোক। কিন্তু সেটা হয়নি। এখন বরং প্রশ্ন আসছে, এটা কারা ও কীভাবে করল? সেটা কিন্তু আমরা আগে এবং এখনো জানতে পারিনি। সরকার কীভাবে গঠিত হলো, এটা বড় প্রশ্ন হিসেবে মানুষের সামনে আছে। আর আমাদের তো এ সরকারে থাকার কোনো কারণ নেই। গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল ও গ্রুপের কাছে জাতীয় সরকার গঠনের প্রশ্ন এলে এবং সে অনুযায়ী জাতীয় সরকার গঠিত হলে প্রশ্ন আসতে পারত—আমরা নেই কেন! এই প্রশ্ন এখন অপ্রাসঙ্গিক।
আজকের পত্রিকা: তাহলে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: অন্তর্বর্তী সরকারকে মূল্যায়নের এখনো সময় আসেনি। আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু আমরা এর গঠনকালীন বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারি। এই সরকার গঠনের সময় আমাদের সঙ্গে কথা না বললেও ছাত্র, শ্রমিক, জনতার একটি রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সরকার গঠিত হয়েছে, তার প্রতি আমরা সমর্থন ব্যক্ত করেছি। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তাদের কার্যক্রমে আমরা অসন্তুষ্ট। তারপরও আমরা এ সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছি। আমরা আশা করব, এ সরকারের প্রধান কাজ হবে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করা এবং বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য গণতান্ত্রিক সংস্কার। আর সেগুলোর রূপরেখা তৈরির জন্য সবার সঙ্গে কথা বলা দরকার। এই প্রত্যাশাগুলো আমরা রাখছি।
আজকের পত্রিকা: অন্তর্বর্তী সরকার একটা বড় আন্তর্জাতিক শক্তির আশীর্বাদপুষ্ট বলে অভিযোগ। তারপরেও কেন আপনারা তাদের সমর্থন করছেন?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: আগেই বলেছি, এ সরকার নিয়ে এখনই কোনো পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করতে চাই না। সাধারণভাবে যেহেতু এ সরকার গণ-অভ্যুত্থানের পরিণতিতে গঠিত হয়েছে, সে জন্য আমরা তাদের সমর্থন করছি। আর এই সরকার তো কমিউনিস্ট পার্টি বা বামপন্থীদের সরকার না। তাদের নিয়ে আমাদের নানা প্রশ্ন আছে। ভবিষ্যতে যখন আমরা এদের নিয়ে মূল্যায়ন করব, সেটা আরও স্পষ্ট হবে।
আর একটা কথা বলতে চাই, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে আন্তরিক হবে, এটাই স্বাভাবিক। গত দুই মাসে কিছু দৃশ্যমান পজিটিভ কাজ করার কথা থাকলেও সেটা তারা করতে পারল না কেন? আমি সহজ করে বলতে চাই, এ সরকার যে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সেই আন্দোলনে ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ছিল। এখন খবর পাওয়া যাচ্ছে, ছাত্রদের মধ্যে গঠিত একটা ক্ষুদ্র অংশ এর সব সাংগঠনিক চিন্তা করত। কিন্তু মনে রাখতে হবে, গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছে ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণে। এই আন্দোলনের পেছনে যদি আমরা সব শ্রেণি-পেশার শক্তিকে সংগঠিত করতে পারতাম, তাহলে কিন্তু আমাদের নেতৃত্বেরও প্রভাব থাকত।
আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান স্বতঃস্ফূর্ত হলেও এখন শোনা যাচ্ছে এর নেপথ্যে ছিল দক্ষিণপন্থী ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। এখন দেখা যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে ওই দক্ষিণপন্থী ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি প্রভাব বিস্তার করছে। আমরা কিন্তু সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছি, আপনারা যদি তাদের প্রভাবে এই অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনা করতে চান, তাহলে গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে এবং এটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, পাঠ্যপুস্তক কমিটি গঠন ও বাতিল করা, সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান হিসেবে প্রথম যাঁর নাম প্রস্তাব করা হলো, পরবর্তী সময়ে তাঁকেই আবার বাদ দেওয়া। দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় এক দখলদারত্বের বিদায়ে নতুন আরেক দখলদারত্ব কায়েম হচ্ছে। অনেক জায়গায় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অমানবিক আচরণের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি জেঁকে বসছে—এ সবকিছুই কিন্তু এই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
আজকের পত্রিকা: ১৫ বছরের শাসনামলে আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এটাই কি বাংলাদেশে প্রথম স্বৈরাচার? বারবার স্বৈরাচারী শাসন কেন আসে?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: এটা তো প্রথম স্বৈরাচার নয়। আমরা স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। আমরা বিভিন্ন সময়ে যারা সামরিক আইন জারি করে শাসনক্ষমতায় এসেছে, তাদের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করেছি। কিন্তু এবারের বিষয়টা হয়েছে, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থেকে কর্তৃত্ববাদী এবং ভয়ের রাজত্ব কায়েম করে জনগণকে মর্যাদাহীন করেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে তারা ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে, যেটা অতীতে কখনো ঘটেনি। এ কারণে শেখ হাসিনা কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিস্ট হিসেবে জনগণের কাছে প্রতিভাত হয়েছেন।
আর স্বৈরাচারী শাসন তো একটা ব্যবস্থা। আমাদের প্রচলিত যে সাংবিধানিক ব্যবস্থা, সেটাই কিন্তু দিনদিন স্বৈরাচার হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে। আমরা বামপন্থীরা অতীতে এবং এখনো যে আন্দোলন করছি এবং স্লোগান তুলেছি, ‘দুঃশাসন হটাও, ব্যবস্থা বদলাও’—এর জন্য বামপন্থী বিকল্প গড়ে তোলার কথা বলে আসছি। কিন্তু আমরা তো ব্যবস্থাটার বদল করতে পারিনি।
আমরা বলি, রাজনীতি হলো উপরিকাঠামো আর অর্থনীতি হলো এর ভিত্তিকাঠামো। যদি আমাদের অর্থনীতির কাঠামোটা এমন থাকে, যেখানে যে কেউ লুটপাট করতে পারে এবং কাঠামোটা যদি দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি দিয়ে আবদ্ধ হতে হয়, মানে উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্ক না থেকে অসৎ আমলা আর অসৎ ব্যবসায়ীরা যদি অসৎ উপায়ে উপার্জন করেন, তাহলে এই দুর্বৃত্তায়িত অর্থনীতি আবার দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতিরই জন্ম দেয়, যা অবশ্যম্ভাবীভাবে কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করে। এটা ভাঙতে হলে অনেকগুলো জায়গায় হাত দিতে হবে, নইলে নতুন রাজনীতি নির্মাণ করা সম্ভব না। যেমন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, নির্বাচনীব্যবস্থা সংস্কার যত দিন পর্যন্ত না করতে পারছি, তত দিন পর্যন্ত স্বৈরাচারী ব্যবস্থাটা তৈরি হওয়ার সুযোগ চালু থাকবে।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে সরতেই বিএনপি দখলদারি চালাচ্ছে। সরকার ধর্মীয় রাজনীতির সঙ্গে আপস করছে। এগুলোকে কীভাবে দেখছেন?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: এ দুটোই অগ্রহণযোগ্য। আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের সঙ্গে গত ১২ আগস্ট দেখা করার সুযোগ হয়েছিল। আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমি তাঁকে পরিষ্কার করে বলেছিলাম, এই গণ-অভ্যুত্থানে কোনো দল বা গোষ্ঠী জয়ী হয়নি। সুতরাং এক দখলদারের পরিবর্তে আরেক দখলদার আসবে, সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সুতরাং আপনারা নির্দেশ দেন, কেউ যদি জোর করে দখল করে, তাদের উচ্ছেদ করা হবে। প্রশাসনে নিয়োগ, বদলির ক্ষেত্রেও নীতিমালা প্রণয়নের ভিত্তিতে দলনিরপেক্ষ, যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে।
আমার কাছে মনে হয়, এ সরকারের বড় দুর্বলতা হলো, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এবং দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে কিছু কিছু জায়গায় প্রশ্রয় দেওয়ার কারণে তারা বিভিন্ন অপকর্ম করার সুযোগ পাচ্ছে। আমরা মনে করি, এখনই এসব দমন করা দরকার। তা না হলে গণ-অভ্যুত্থানই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে।
আজকের পত্রিকা: সংবিধান সংশোধন নাকি সংবিধান নতুন করে লেখা উচিত?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: প্রথম কথা হলো, আমূল পরিবর্তনের রায় এদের কে দিয়েছে? আমূল পরিবর্তনের কথা কোনো ব্যক্তি বললে আমি প্রশ্ন তুলতে পারি না। যারা মুক্তিযুদ্ধ মানে না, তারা তো এই সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিতে চাইবে। আর এটাকে শুধু একটা গঠনতন্ত্র বলে সংবিধান বাতিল করে দেওয়া কিন্তু তাদের লক্ষ্য।
এ সরকারের কোনো ম্যান্ডেট নেই যে তারা সংবিধান পুনর্লিখন করবে। কিন্তু আমরা মনে করি, বাহাত্তরের সংবিধানের মূল চারটা ভিত্তি হলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অর্জন। আমরা বামপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, আমাদের সংবিধানের অনেক অসম্পূর্ণতা আছে, সেসব দূর করতে হবে। সংস্কার করা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এই সংবিধানের কোন কোন বিষয় সংস্কার হতে পারে, সেসব নিয়ে আলোচনা হতে পারে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে চার মূলনীতি, সেটাকে ঠিক রেখে। এর বাইরে কেউ যদি সংবিধান পুনর্লিখনের মাধ্যমে সংবিধান ছুড়ে দিতে চায়, আমরা তাদের সাবধান করে দিতে চাই, এটা আমরা করতে দেব না।
আজকের পত্রিকা: অরাজকতাও তো চলছে। পরিবর্তনের আশা কি রাখতে পারছেন?
রুহিন হোসেন প্রিন্স: আমি আপনার সঙ্গে যে মুহূর্তে কথা বলছি এবং সরকার যেভাবে চলছে, তাতে পরিবর্তনের কোনো আলামত দেখছি না। এটা আমার এক নম্বর কথা। দুই নম্বর কথা হচ্ছে, আমরা অনেক আগে থেকে বলে আসছি, কিছু করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে করতে হবে। কিন্তু সরকার মনে হয় রাজনৈতিক দলগুলোকে উপেক্ষা করছে। তারা সবার সরকার না বলে একটা অংশের সরকার বলছে।
এমনকি বেশ কিছু সংস্কারের কমিটি করা হলো আমাদের সঙ্গে কথা না বলে। জনগণের তাৎক্ষণিক সমস্যা, যেমন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, জানমালের নিরাপত্তা এবং দখলদারত্ব যদি উচ্ছেদ করতে পারে, তাহলে অরাজক পরিস্থিতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে আমার ধারণা।
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে