আজকের পত্রিকা: বাজেট পেশের আগে বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করা হলেও, সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া হয় না। এটা কতটুকু যৌক্তিক?
এম এম আকাশ: একটি গণতান্ত্রিক দেশে বাজেট সব মানুষকে স্পর্শ করার কথা। এ জন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করাই গণতান্ত্রিক রীতি হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যবস্থাটাই হলো কেন্দ্রীভূত আমলাতান্ত্রিক। সুতরাং যত দিন পর্যন্ত বাজেট প্রণয়নের নীতিমালার পরিবর্তন করা না হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত এটা গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক বাজেট হবে না। এ জন্য একসময় সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জেলা বাজেটের কথা বলেছিলেন। সেটা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। বেসরকারি একটি সংস্থাও কতগুলো দাবি তুলেছিল, সেটাও কার্যকর হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন সম্প্রতি দাবি করেছেন, বাজেট দুই ভাগে ভাগ করে অর্ধেক উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ দিতে হবে। এভাবে যদি বাজেট করা হয়, তাহলে জেলা, উপজেলাসহ সর্বত্র বাজেট নিয়ে আলোচনা বিস্তৃত হবে এবং অংশগ্রহণমূলক বাজেট প্রণীত হবে।
আজকের পত্রিকা: বাজেট সাধারণ মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম। সরকার অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখলেও সাধারণ জনগণের স্বার্থ দেখে কী?
এম এম আকাশ: এটা নির্ভর করে সরকার কাদের দ্বারা গঠিত, মন্ত্রিপরিষদ, সংসদ সংসদ এবং জাতীয় সংসদে কারা প্রভাব বিস্তার করে আছেন, সরকারের মূল নীতিগুলো নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে কারা বেশি ভূমিকা ও প্রভাব রাখেন— ইত্যাদির ওপর। আমরা জানি, বাজেট প্রণয়নের জন্য যে সংসদে আলোচনা হয়, সেই সংসদের ৬২ শতাংশের বেশি হলেন ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর লোক। আমরা জানি, ব্যবসায়ীরা নির্বাচনকে নিজেদের অর্থ ও ক্ষমতার দাপট দেখানোর ক্ষেত্রে পরিণত করেছেন। জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন সেখানে কমই ঘটে। সে কারণে বাজেটে ক্ষমতাকাঠামোর প্রভাবটাই বড় হয়ে ওঠে। আর ক্ষমতাকাঠামোয় এখন অসৎ ব্যবসায়ী, অসৎ রাজনীতিবিদ এবং অসৎ আমলাদের সম্মিলন ঘটেছে। বাজেটে তাঁদের প্রভাবের কারণে জনগণের প্রভাব কম দেখা যায়।
আজকের পত্রিকা: এবারের বাজেটে আপনি কী চ্যালেঞ্জ দেখছেন?
এম এম আকাশ: এবারের বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি। কারণ ভ্যাট যদি আরও বসানো হয় এবং ভর্তুকি যদি কমানো হয়, তাহলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। পাশাপাশি সুদের হার ও ডলারের বিনিময় হার বাড়ানো হলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। কিন্তু এগুলো আবার না করলে আইএমএফের সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করা যাবে না। আর সেটা না করা গেলে আইএমএফের ঋণও পাওয়া যাবে না। সুতরাং একদিকে সম্পদের ঘাটতি তৈরি হবে, অন্যদিকে অপ্রিয় সংস্কার না করে উপায় থাকবে না। এসব করলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। এ রকম ত্রিশঙ্কু অবস্থার মধ্যে বাজেট পড়ে গেছে।
আজকের পত্রিকা: এবারও ঋণ করে বাজেট বাস্তবায়ন করা হবে। এটা কতটা যৌক্তিক?
এম এম আকাশ: সরকারের যুক্তি হলো, তারা তো জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি ঋণ করছে না। যেহেতু ৫ শতাংশের বেশি ঘাটতি হচ্ছে না, সেহেতু তাদের মতে সেটা ঠিকই আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ঋণের মূল পরিমাণ তো ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে। আগে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার মতো ছিল, সেটা এখন ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো হয়ে যাচ্ছে। বাজেটের বিরাট একটা অংশ ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে। ফলে আসলে শেষ পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়িত হবে না। এই পরিমাণ ঋণ সংগ্রহ করতে গেলে প্রাইভেট সেক্টর থেকে ঋণ পাবে না। আর প্রাইভেট সেক্টর থেকে ঋণ না পেলে বাজেটে যেসব প্রবৃদ্ধির টার্গেট ছিল, সেই টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হবে না।
আজকের পত্রিকা: বাজেট যদি বাস্তবায়ন না করা যায়, তাহলে কী হবে?
এম এম আকাশ: বাজেট যে একেবারেই বাস্তবায়ন করা যাবে না, তা তো না। এর আগে আমরা সাধারণত ৮৫ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। ১৫ শতাংশ করা সম্ভব হয়নি। তবে এবার বেশি শতাংশ অবাস্তবায়িত হবে।
আজকের পত্রিকা: দেশে এমনিতেই ডলার-সংকট, মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংকসহ নানা সংকট চলছে। এবারের বাজেটে কি এসব নিয়ে কোনো সুখবর থাকবে?
এম এম আকাশ: অনেকগুলো সংস্কার চালু হয়েছে। এই সংস্কারগুলো তো অপ্রিয় সংস্কার। এগুলো করলে মানুষের ওপর চাপ আরও বাড়বে। সেই চাপ রক্ষা করার জন্য এবং মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য কতগুলো সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন সরকার যদি পারে তাহলে শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারে। গ্রামাঞ্চলে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী, বিশেষ করে চরম দরিদ্র ও কৃষকদের জন্য বরাদ্দ বা ভর্তুকি বাড়ানো গেলে এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা গেলে, একটা সুখবর হতে পারে। আর যদি দরিদ্র মানুষের কাছে বাজেটের বোঝা চাপে এবং কোনো ধরনের সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে সেটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার হবে।
আজকের পত্রিকা: কয়েক বছরের বাজেট পর্যালোচনা করে কোনো দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতা চোখে পড়েছে আপনার?
এম এম আকাশ: আগে যেসব প্রশ্ন করেছেন, সেখানে বাজেটের দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতার অনেক কথা বলা হয়েছে। মূলত বাজেট অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না, সেটা একটা বড় দুর্বলতা। দ্বিতীয়ত, কর সংগ্রহ করার জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে, তাতে অপ্রত্যক্ষ করই বেশি। এ কারণে সাধারণ মানুষের কাছে করের বোঝা বাড়ছে। কিন্তু ধনী বা সক্ষম লোকের কাছ থেকে কর আদায়ের যে নীতি হওয়া উচিত, সেটা সরকার সেভাবে অনুসরণ করছে না। তার কারণ হচ্ছে, বাজেটকাঠামোর মধ্যে শাসকশ্রেণি, বিশেষ করে দুর্নীতিপরায়ণ আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের আধিপত্য বেশি।
আসলে সুশাসনের সংকট থেকে এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। সুশাসন কার্যকর করার জন্য যেসব অপ্রিয় সংস্কার করতে হয়, যেগুলোর ক্ষেত্রে আইএমএফ কিছুটা নির্দেশ দেয়, কিছুটা অর্থনীতিবিদেরা পরামর্শ দেন এবং কিছুটা সরকার নিজেই নড়েচড়ে বসে করে; সেগুলো যখন করতে যায়, তখন বাজেটে এসবের চাপ বেড়ে যায়। সংকোচনমূলক নীতির চাপটা সাধারণ মানুষের ওপর পড়ে। স্থিতিশীলতা হয়তো বাড়ে, কিন্তু প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান কমে যায়। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য যে ধরনের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা যায়, সেটা যখন হয় না, তখন অন্য দিক দিয়ে চাপটা বেড়ে যায়। এ কারণে বাজেটকে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ বলা উচিত। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হয়।
আজকের পত্রিকা: সমাধানের উপায় কী?
এম এম আকাশ: এসব স্বল্প মেয়াদে সমাধান করা সম্ভব নয়। এগুলো হলো কাঠামোগত সমস্যা। এর মধ্যে কতগুলো ব্যাপার আছে, যেগুলো দীর্ঘ মেয়াদে সমাধান করতে হবে। কিন্তু বাজেটে করা যেতে পারে। যেমন খেলাপি ঋণ, টাকা পাচার, ডলারের বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের সঙ্গে অফিশিয়াল বিনিময় হারের পার্থক্য কমানোর ব্যাপারটা শুরু করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: সেটা কীভাবে?
এম এম আকাশ: এগুলো সমাধানের ব্যাপারে অনেকেই জানে এবং সমাধানের পদক্ষেপগুলোও জানে। প্রাথমিকভাবে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: বাজেটকে মানুষের সার্বিক কল্যাণমুখী করার জন্য আপনার পরামর্শ কী?
এম এম আকাশ: দুটি উদ্যোগ প্রধান। বাজেট মানে সরকারের আয় ও ব্যয়ের হিসাব। প্রথমত, সরকারকে ব্যয় করতে হবে দুর্নীতিহীনভাবে, দক্ষভাবে। মানে এক টাকার ব্যয় এক টাকায় করতে হবে। আর সেই ব্যয়টা করতে হবে কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা—এসব খাতে। দ্বিতীয়ত, এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করতে হবে ভৌত অবকাঠামোয়, এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করতে হবে সামাজিক অবকাঠামোয় আর এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করতে হবে উৎপাদনশীল খাতে। আর সেই ব্যয়গুলো যাতে উৎপাদনশীল শ্রেণির হাতে যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, অনুৎপাদনশীল শ্রেণির লোকেরা যাতে লিকেজের মাধ্যমে এবং সিস্টেম লসের মাধ্যমে টাকা নিয়ে যেতে না পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। এসব হলো ব্যয়ের খাত নিয়ে আমার সুপারিশ।
সক্ষম ধনী ব্যক্তিদের করজালের মধ্যে নিয়ে এসে আয় বাড়াতে হবে। আর ভ্যাটকে ইলেকট্রনিক সিস্টেমের মধ্যে আনতে হবে; যাতে কেউ ফাঁকি দিতে না পারে। আমি অবশ্যই মুদির দোকানির ক্ষেত্রে কথাটি বলছি না। অবশ্যই বড় বড় ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে কথাটি বলছি। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এবং বৈদেশিক শক্তির সঙ্গে সম্পদ সংগ্রহের সময় বা বৈদেশিক বিনিয়োগের সময় চুক্তিগুলো জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে হয়, সেই জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার জন্য যাতে উপযুক্ত দর-কষাকষি হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
এম এম আকাশ: আপনাকেও ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা: বাজেট পেশের আগে বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করা হলেও, সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া হয় না। এটা কতটুকু যৌক্তিক?
এম এম আকাশ: একটি গণতান্ত্রিক দেশে বাজেট সব মানুষকে স্পর্শ করার কথা। এ জন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করাই গণতান্ত্রিক রীতি হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যবস্থাটাই হলো কেন্দ্রীভূত আমলাতান্ত্রিক। সুতরাং যত দিন পর্যন্ত বাজেট প্রণয়নের নীতিমালার পরিবর্তন করা না হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত এটা গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক বাজেট হবে না। এ জন্য একসময় সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জেলা বাজেটের কথা বলেছিলেন। সেটা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। বেসরকারি একটি সংস্থাও কতগুলো দাবি তুলেছিল, সেটাও কার্যকর হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন সম্প্রতি দাবি করেছেন, বাজেট দুই ভাগে ভাগ করে অর্ধেক উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ দিতে হবে। এভাবে যদি বাজেট করা হয়, তাহলে জেলা, উপজেলাসহ সর্বত্র বাজেট নিয়ে আলোচনা বিস্তৃত হবে এবং অংশগ্রহণমূলক বাজেট প্রণীত হবে।
আজকের পত্রিকা: বাজেট সাধারণ মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম। সরকার অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখলেও সাধারণ জনগণের স্বার্থ দেখে কী?
এম এম আকাশ: এটা নির্ভর করে সরকার কাদের দ্বারা গঠিত, মন্ত্রিপরিষদ, সংসদ সংসদ এবং জাতীয় সংসদে কারা প্রভাব বিস্তার করে আছেন, সরকারের মূল নীতিগুলো নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে কারা বেশি ভূমিকা ও প্রভাব রাখেন— ইত্যাদির ওপর। আমরা জানি, বাজেট প্রণয়নের জন্য যে সংসদে আলোচনা হয়, সেই সংসদের ৬২ শতাংশের বেশি হলেন ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর লোক। আমরা জানি, ব্যবসায়ীরা নির্বাচনকে নিজেদের অর্থ ও ক্ষমতার দাপট দেখানোর ক্ষেত্রে পরিণত করেছেন। জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন সেখানে কমই ঘটে। সে কারণে বাজেটে ক্ষমতাকাঠামোর প্রভাবটাই বড় হয়ে ওঠে। আর ক্ষমতাকাঠামোয় এখন অসৎ ব্যবসায়ী, অসৎ রাজনীতিবিদ এবং অসৎ আমলাদের সম্মিলন ঘটেছে। বাজেটে তাঁদের প্রভাবের কারণে জনগণের প্রভাব কম দেখা যায়।
আজকের পত্রিকা: এবারের বাজেটে আপনি কী চ্যালেঞ্জ দেখছেন?
এম এম আকাশ: এবারের বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি। কারণ ভ্যাট যদি আরও বসানো হয় এবং ভর্তুকি যদি কমানো হয়, তাহলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। পাশাপাশি সুদের হার ও ডলারের বিনিময় হার বাড়ানো হলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। কিন্তু এগুলো আবার না করলে আইএমএফের সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করা যাবে না। আর সেটা না করা গেলে আইএমএফের ঋণও পাওয়া যাবে না। সুতরাং একদিকে সম্পদের ঘাটতি তৈরি হবে, অন্যদিকে অপ্রিয় সংস্কার না করে উপায় থাকবে না। এসব করলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। এ রকম ত্রিশঙ্কু অবস্থার মধ্যে বাজেট পড়ে গেছে।
আজকের পত্রিকা: এবারও ঋণ করে বাজেট বাস্তবায়ন করা হবে। এটা কতটা যৌক্তিক?
এম এম আকাশ: সরকারের যুক্তি হলো, তারা তো জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি ঋণ করছে না। যেহেতু ৫ শতাংশের বেশি ঘাটতি হচ্ছে না, সেহেতু তাদের মতে সেটা ঠিকই আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ঋণের মূল পরিমাণ তো ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে। আগে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার মতো ছিল, সেটা এখন ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো হয়ে যাচ্ছে। বাজেটের বিরাট একটা অংশ ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে। ফলে আসলে শেষ পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়িত হবে না। এই পরিমাণ ঋণ সংগ্রহ করতে গেলে প্রাইভেট সেক্টর থেকে ঋণ পাবে না। আর প্রাইভেট সেক্টর থেকে ঋণ না পেলে বাজেটে যেসব প্রবৃদ্ধির টার্গেট ছিল, সেই টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হবে না।
আজকের পত্রিকা: বাজেট যদি বাস্তবায়ন না করা যায়, তাহলে কী হবে?
এম এম আকাশ: বাজেট যে একেবারেই বাস্তবায়ন করা যাবে না, তা তো না। এর আগে আমরা সাধারণত ৮৫ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। ১৫ শতাংশ করা সম্ভব হয়নি। তবে এবার বেশি শতাংশ অবাস্তবায়িত হবে।
আজকের পত্রিকা: দেশে এমনিতেই ডলার-সংকট, মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংকসহ নানা সংকট চলছে। এবারের বাজেটে কি এসব নিয়ে কোনো সুখবর থাকবে?
এম এম আকাশ: অনেকগুলো সংস্কার চালু হয়েছে। এই সংস্কারগুলো তো অপ্রিয় সংস্কার। এগুলো করলে মানুষের ওপর চাপ আরও বাড়বে। সেই চাপ রক্ষা করার জন্য এবং মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য কতগুলো সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন সরকার যদি পারে তাহলে শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারে। গ্রামাঞ্চলে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী, বিশেষ করে চরম দরিদ্র ও কৃষকদের জন্য বরাদ্দ বা ভর্তুকি বাড়ানো গেলে এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা গেলে, একটা সুখবর হতে পারে। আর যদি দরিদ্র মানুষের কাছে বাজেটের বোঝা চাপে এবং কোনো ধরনের সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে সেটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার হবে।
আজকের পত্রিকা: কয়েক বছরের বাজেট পর্যালোচনা করে কোনো দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতা চোখে পড়েছে আপনার?
এম এম আকাশ: আগে যেসব প্রশ্ন করেছেন, সেখানে বাজেটের দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতার অনেক কথা বলা হয়েছে। মূলত বাজেট অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না, সেটা একটা বড় দুর্বলতা। দ্বিতীয়ত, কর সংগ্রহ করার জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে, তাতে অপ্রত্যক্ষ করই বেশি। এ কারণে সাধারণ মানুষের কাছে করের বোঝা বাড়ছে। কিন্তু ধনী বা সক্ষম লোকের কাছ থেকে কর আদায়ের যে নীতি হওয়া উচিত, সেটা সরকার সেভাবে অনুসরণ করছে না। তার কারণ হচ্ছে, বাজেটকাঠামোর মধ্যে শাসকশ্রেণি, বিশেষ করে দুর্নীতিপরায়ণ আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের আধিপত্য বেশি।
আসলে সুশাসনের সংকট থেকে এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। সুশাসন কার্যকর করার জন্য যেসব অপ্রিয় সংস্কার করতে হয়, যেগুলোর ক্ষেত্রে আইএমএফ কিছুটা নির্দেশ দেয়, কিছুটা অর্থনীতিবিদেরা পরামর্শ দেন এবং কিছুটা সরকার নিজেই নড়েচড়ে বসে করে; সেগুলো যখন করতে যায়, তখন বাজেটে এসবের চাপ বেড়ে যায়। সংকোচনমূলক নীতির চাপটা সাধারণ মানুষের ওপর পড়ে। স্থিতিশীলতা হয়তো বাড়ে, কিন্তু প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান কমে যায়। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য যে ধরনের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা যায়, সেটা যখন হয় না, তখন অন্য দিক দিয়ে চাপটা বেড়ে যায়। এ কারণে বাজেটকে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ বলা উচিত। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হয়।
আজকের পত্রিকা: সমাধানের উপায় কী?
এম এম আকাশ: এসব স্বল্প মেয়াদে সমাধান করা সম্ভব নয়। এগুলো হলো কাঠামোগত সমস্যা। এর মধ্যে কতগুলো ব্যাপার আছে, যেগুলো দীর্ঘ মেয়াদে সমাধান করতে হবে। কিন্তু বাজেটে করা যেতে পারে। যেমন খেলাপি ঋণ, টাকা পাচার, ডলারের বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের সঙ্গে অফিশিয়াল বিনিময় হারের পার্থক্য কমানোর ব্যাপারটা শুরু করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: সেটা কীভাবে?
এম এম আকাশ: এগুলো সমাধানের ব্যাপারে অনেকেই জানে এবং সমাধানের পদক্ষেপগুলোও জানে। প্রাথমিকভাবে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: বাজেটকে মানুষের সার্বিক কল্যাণমুখী করার জন্য আপনার পরামর্শ কী?
এম এম আকাশ: দুটি উদ্যোগ প্রধান। বাজেট মানে সরকারের আয় ও ব্যয়ের হিসাব। প্রথমত, সরকারকে ব্যয় করতে হবে দুর্নীতিহীনভাবে, দক্ষভাবে। মানে এক টাকার ব্যয় এক টাকায় করতে হবে। আর সেই ব্যয়টা করতে হবে কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা—এসব খাতে। দ্বিতীয়ত, এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করতে হবে ভৌত অবকাঠামোয়, এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করতে হবে সামাজিক অবকাঠামোয় আর এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করতে হবে উৎপাদনশীল খাতে। আর সেই ব্যয়গুলো যাতে উৎপাদনশীল শ্রেণির হাতে যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, অনুৎপাদনশীল শ্রেণির লোকেরা যাতে লিকেজের মাধ্যমে এবং সিস্টেম লসের মাধ্যমে টাকা নিয়ে যেতে না পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। এসব হলো ব্যয়ের খাত নিয়ে আমার সুপারিশ।
সক্ষম ধনী ব্যক্তিদের করজালের মধ্যে নিয়ে এসে আয় বাড়াতে হবে। আর ভ্যাটকে ইলেকট্রনিক সিস্টেমের মধ্যে আনতে হবে; যাতে কেউ ফাঁকি দিতে না পারে। আমি অবশ্যই মুদির দোকানির ক্ষেত্রে কথাটি বলছি না। অবশ্যই বড় বড় ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে কথাটি বলছি। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এবং বৈদেশিক শক্তির সঙ্গে সম্পদ সংগ্রহের সময় বা বৈদেশিক বিনিয়োগের সময় চুক্তিগুলো জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে হয়, সেই জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার জন্য যাতে উপযুক্ত দর-কষাকষি হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
এম এম আকাশ: আপনাকেও ধন্যবাদ।
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে