এ তো নজরুলের গান!

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৩, ০৯: ১৮
আপডেট : ২২ মে ২০২৩, ১০: ০১

শঙ্খ ঘোষ যখন ছোট, তখনই তাঁর কাছে এলেন নজরুল। তবে পরিচয়ে ঋদ্ধ হয়ে নয়, তিনি এলেন আবেগ হয়ে, ব্যক্তিপরিচয়হীন আবেগ হয়ে। নজরুলের নাম শুনবার আগে থেকেই নজরুলের আবেগ কী করে ছুঁলো শঙ্খ ঘোষকে, সে কথাই জানা যাক। 

পদ্মাপারে থাকতেন তখন তিনি। বয়স আট-নয় বছর। কাকার বাড়িতে এল এক ঝকঝকে গ্রামোফোন। তাতে শোনা গেল পঙ্কজ মল্লিক, কুন্দলাল সায়গল, শচীন দেববর্মন, নির্মলেন্দু লাহিড়ীর গান। শোনা হলো ‘সিরাজুদ্দৌলা’ নাটক। শচীন দেববর্মন গাইছেন, ‘চোখ গেল চোখ গেল কেন ডাকিসরে।’ গাইছেন, ‘কুহু কুহু কুহু কোয়েলিয়া’, গাইছেন ‘পদ্মার ঢেউরে’। 

এ সবই তো শচীন দেবের গান হিসেবে শোনা হচ্ছে। নজরুল কোথায়? সিরাজুদ্দৌলা নাটকে ‘আমি আলোর শিখা’ কিংবা ‘পথহারা পাখি’ গান দুটোকে আলেয়ার গান হিসেবেই শুনছেন শঙ্খ ঘোষ। কিংবা আরেকটু জানলে শুনছেন গায়িকা নীহারবালার গান হিসেবে। নজরুল কোথায়? তখনো তিনি জানেন না এই গানগুলোর সঙ্গে নজরুলের কী সম্পর্ক। 

বয়স যখন দশ, তখন স্কুলে হলো একটি অভিনয়। সেখানে হাতে বাঁধা মঞ্চে ব্যান্ডের তালে তালে শোনা গেল মার্চিং সং—‘চল চল চল’। 

এরপর একদিন গেরুয়া পোশাকে এক সন্ন্যাসী এসে ভরাটকণ্ঠে গাইলেন দেশাত্মবোধক গান। খুব পছন্দ হলো শিশু শঙ্খ ঘোষের। কাগজ-পেনসিল নিয়ে লিখতে শুরু করলেন গানের কথাগুলো। 

এরপর সভা ভঙ্গ হলে মাস্টার মশাইয়ের কাছে অজানা এই গানের কথা সগর্বে বলছেন যখন, তখন মাস্টার মশাই বললেন, ‘সে কী রে! অজানা কেন হবে? এ গান কার লেখা জানিস না? এ তো নজরুলের গান!’ 

গানটি ছিল ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব, জাতজালিয়াত খেলছে জুয়া।’ 

মাস্টার মশাই বললেন, ‘শুনিসনি, “কারার ঐ লৌহকপাট”, “আমি বিদ্রোহী রণক্লান্ত?”’

সেই থেকে শঙ্খ ঘোষের সচেতনতার মধ্যে এলেন নজরুল। 

সূত্র: শঙ্খ ঘোষ, অল্প স্বল্প কথা, পৃষ্ঠা ৫৩-৫৫ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত