অরুণ কর্মকার
সাধন-ভজনের জন্য নির্দিষ্ট সময় থাকে। এ কথা শুধু যে দার্শনিকেরা বলেছেন তা নয়, পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মেও সাধন-ভজনের জন্য সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই বিধান থেকে শিক্ষণীয় বিষয় হলো, সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে। না হলে পস্তাতে হবে। যেমন এখন আমরা পস্তাচ্ছি জ্বালানিসংকটের কারণে।
দেশের চলমান জ্বালানিসংকটের মূল কারণ হলো সময়মতো জ্বালানি খাতের উন্নয়নে, বিশেষ করে দেশের নিজস্ব জ্বালানিসম্পদ উন্নয়নে সঠিকভাবে নজর না দেওয়া এবং কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া। ফলে সরকার এখন যতই প্রচার করুক যে দুই, তিন কিংবা পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং সে অনুযায়ী নতুন নতুন কূপ খনন করে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। তাতে কাজের কাজ তেমন কিছুই হবে না। কারণ এই কাজ শুরু করার সময় চলে গেছে অনেক আগে।
এই সময়ের মধ্যে জ্বালানির ঘাটতি ও সংকট তৈরি হয়েছে। প্রধান প্রধান বাণিজ্যিক জ্বালানির মধ্যে একমাত্র গ্যাসেরই ঘাটতি পৌঁছে গেছে ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। আর আমরা বছরে দু-তিনটি কূপ থেকে উত্তোলন বাড়াচ্ছি ৫০-৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। তিন বছরের মধ্যে ৪৬টি কূপ খনন করে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট উত্তোলন বাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছিল প্রায় দেড় বছর আগে। এখন পর্যন্ত সেই কাজের সাফল্য ১০ শতাংশের মতো। ঘাটতি রয়েছে কয়লারও। অথচ দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটা বড় অংশ এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ। এই অবস্থায় যদি মিরাকল কিছু না ঘটে, জ্বালানির এই সংকট আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে। এ থেকে পরিত্রাণের শর্টকাট কোনো উপায় নেই।
জ্বালানিসংকটের মানে কী? মানে, জীবনযাত্রার সব ক্ষেত্রে সংকট। তার ওপর সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বিদ্যুতের দামও বাড়াতে হয়েছে। এর ফল হচ্ছে ব্যবসা ও বাণিজ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি পর্যায়ে ব্যয় বৃদ্ধি। তার ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। এর অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি। সাধারণ মানুষের সংকট। এগুলো সবই চেইন এফেক্ট। এর কোনো ব্যত্যয় কখনো হয় না, হবে না। এখন শোনা যাচ্ছে, ভোক্তা পর্যায়েও গ্যাস, জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের জ্বালানির দাম বাড়ানো (সমন্বয় করা) হবে।
তবে বিদ্যুৎ, জ্বালানির দাম বাড়িয়ে সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করতে পারবে না। জ্বালানির সংকটও কমাতে পারবে না। দাম বাড়িয়ে যে বাড়তি টাকা পাওয়া যাবে, তা ব্যয় করা যাবে অন্য প্রকল্পে। টাকা দিয়ে জ্বালানি কেনা যায় না। এমনকি বিদ্যুৎ উৎপাদনও টাকায় হয় না। এই সবকিছুর জন্য দরকার হয় বৈদেশিক মুদ্রা ডলার। সেখানেও যে অবস্থা, তাকে আশাব্যঞ্জক কিছু বলা যায় না।
সরকার এই জ্বালানিসংকট এবং বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির জন্য সব সময়ই দায়ী করে আসছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে। তবে সরকারের এই বক্তব্য বা অবস্থান শতভাগ সঠিক নয়। কেননা, ওই যুদ্ধ শুরুর অনেক আগে থেকেই দেশে চাহিদার তুলনায় গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি ছিল। তখন দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়িয়ে এবং তারও পরে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে সেই ঘাটতি একপর্যায়ে যথেষ্ট কমানো গিয়েছিল। কিন্তু ইউরোপে যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে এলএনজির দামও আকাশচুম্বী হওয়ায় এর আমদানি যেমন কমিয়ে দিতে হয়েছে, তেমনি দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাও অব্যাহত রাখা যায়নি বা রাখা হয়নি।
ফলে ঘাটতি বেড়েছে, যা এখন দীর্ঘস্থায়ী সংকটে রূপ নিয়েছে। আমরা এখানে স্মরণ করতে পারি, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল দৈনিক ১৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট, যা ওই সময়ের চাহিদার তুলনায় অনেক কম ছিল। এরপর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়ার কারণে গ্যাসের চাহিদা বাড়তে থাকে।
সরকার তখন দেশে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়। ফলে ২০১২-১৩ সাল নাগাদ গ্যাস উত্তোলন দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট বাড়ে। এই বাড়তি উত্তোলনের সিংহভাগ এসেছিল বিবিয়ানা ক্ষেত্র থেকে। ফলে তখন দৈনিক গ্যাস সরবরাহ বেড়ে হয় ২৭৫ কোটি ঘনফুট। কিন্তু তত দিনে গ্যাসের চাহিদা হয় দৈনিক ৩০০ কোটি ঘনফুট।
এরপর আর দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন বাড়েনি। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তেমন কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি; বরং নির্ভরতা বাড়ানো হয়েছে আমদানির ওপর। এলএনজি আকারে গ্যাস ও কয়লা আমদানি করেই যে চালানোর মতো রাখে আমাদের অর্থনীতি। অবশ্য এর মধ্যেও বাপেক্স ওয়ার্কওভার (বিদ্যমান কূপ সংস্কার) করে এবং কয়েকটি নতুন কূপ খনন করে মাঝেমধ্যে ৫০ লাখ থেকে দুই-আড়াই কোটি ঘনফুট পর্যন্ত উৎপাদন বাড়িয়েছে। কিন্তু তা ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে যথেষ্ট ছিল না।
এই ক্রমবর্ধমান ঘাটতি পূরণ এবং সংকট মোকাবিলায় সরকার ২০১০ সাল থেকেই এলএনজি আমদানির উদ্যোগ-আয়োজন শুরু করে।কারণ সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে কী কারণে যেন এই ধারণা বদ্ধমূল ছিল (এখনো যে নেই তা নয়), আমাদের দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের আর কোনো বড় মজুত নেই। অথচ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীরা এখনো বলছেন, দেশে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি অনাবিষ্কৃত রয়েছে। কিন্তু সরকার সেই সব কথা বিশেষ একটা আমলে নেয়নি।
শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের শেষ দিকে শুরু হয় এলএনজি আমদানি। প্রথমে সরকারি মালিকানার একটি ভাসমান টার্মিনালের (পোশাকি নাম ‘ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট’, সংক্ষেপে এফএসআরইউ) মাধ্যমে। পরে বেসরকারি মালিকানাধীন আরেকটি এফএসআরইউর মাধ্যমে।
মহেশখালীতে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে স্থাপিত এই এফএসআরইউ দুটি ব্যবহার করে দৈনিক মোট ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেওয়া সম্ভব। কাতার ও ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে এই এলএনজি আমদানি করা হয়। তাতে বিশ্ববাজারে স্বাভাবিক মূল্যপরিস্থিতিতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম পড়ে সর্বনিম্ন ৬ মার্কিন ডলার। আর দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে তোলা গ্যাসের দাম পড়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ৩ ডলার। ফলে দেশের গ্যাস বেশি ব্যবহার করা গেলে বিশ্ববাজারের পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, সংকটে পড়তে হতো না। এ কারণে দেশের গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
এখন দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। সর্বোচ্চ সরবরাহ ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। এই ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগ যে নেই, তা নয়। তা যেমন যথেষ্ট নয়, তেমনি তার বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ এবং অনেক বেশি বিলম্বিত হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব হচ্ছে না, হবেও না।
আগেভাগে দেশের গ্যাস উত্তোলন সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। এমনকি বর্তমান সংকটের সময়ও দেশের গ্যাস বেশি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম অপেক্ষাকৃত কম খরচে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো।কিন্তু সাধন-ভজনের যে সময় সরকার হারিয়ে ফেলেছে, তার ফলে সৃষ্ট বিপত্তি কাটিয়ে ওঠা একটু কঠিনই হবে।
লেখক: অরুণ কর্মকার
সাধন-ভজনের জন্য নির্দিষ্ট সময় থাকে। এ কথা শুধু যে দার্শনিকেরা বলেছেন তা নয়, পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মেও সাধন-ভজনের জন্য সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই বিধান থেকে শিক্ষণীয় বিষয় হলো, সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে। না হলে পস্তাতে হবে। যেমন এখন আমরা পস্তাচ্ছি জ্বালানিসংকটের কারণে।
দেশের চলমান জ্বালানিসংকটের মূল কারণ হলো সময়মতো জ্বালানি খাতের উন্নয়নে, বিশেষ করে দেশের নিজস্ব জ্বালানিসম্পদ উন্নয়নে সঠিকভাবে নজর না দেওয়া এবং কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া। ফলে সরকার এখন যতই প্রচার করুক যে দুই, তিন কিংবা পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং সে অনুযায়ী নতুন নতুন কূপ খনন করে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। তাতে কাজের কাজ তেমন কিছুই হবে না। কারণ এই কাজ শুরু করার সময় চলে গেছে অনেক আগে।
এই সময়ের মধ্যে জ্বালানির ঘাটতি ও সংকট তৈরি হয়েছে। প্রধান প্রধান বাণিজ্যিক জ্বালানির মধ্যে একমাত্র গ্যাসেরই ঘাটতি পৌঁছে গেছে ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। আর আমরা বছরে দু-তিনটি কূপ থেকে উত্তোলন বাড়াচ্ছি ৫০-৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। তিন বছরের মধ্যে ৪৬টি কূপ খনন করে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট উত্তোলন বাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছিল প্রায় দেড় বছর আগে। এখন পর্যন্ত সেই কাজের সাফল্য ১০ শতাংশের মতো। ঘাটতি রয়েছে কয়লারও। অথচ দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটা বড় অংশ এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ। এই অবস্থায় যদি মিরাকল কিছু না ঘটে, জ্বালানির এই সংকট আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে। এ থেকে পরিত্রাণের শর্টকাট কোনো উপায় নেই।
জ্বালানিসংকটের মানে কী? মানে, জীবনযাত্রার সব ক্ষেত্রে সংকট। তার ওপর সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বিদ্যুতের দামও বাড়াতে হয়েছে। এর ফল হচ্ছে ব্যবসা ও বাণিজ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি পর্যায়ে ব্যয় বৃদ্ধি। তার ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। এর অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি। সাধারণ মানুষের সংকট। এগুলো সবই চেইন এফেক্ট। এর কোনো ব্যত্যয় কখনো হয় না, হবে না। এখন শোনা যাচ্ছে, ভোক্তা পর্যায়েও গ্যাস, জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের জ্বালানির দাম বাড়ানো (সমন্বয় করা) হবে।
তবে বিদ্যুৎ, জ্বালানির দাম বাড়িয়ে সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করতে পারবে না। জ্বালানির সংকটও কমাতে পারবে না। দাম বাড়িয়ে যে বাড়তি টাকা পাওয়া যাবে, তা ব্যয় করা যাবে অন্য প্রকল্পে। টাকা দিয়ে জ্বালানি কেনা যায় না। এমনকি বিদ্যুৎ উৎপাদনও টাকায় হয় না। এই সবকিছুর জন্য দরকার হয় বৈদেশিক মুদ্রা ডলার। সেখানেও যে অবস্থা, তাকে আশাব্যঞ্জক কিছু বলা যায় না।
সরকার এই জ্বালানিসংকট এবং বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির জন্য সব সময়ই দায়ী করে আসছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে। তবে সরকারের এই বক্তব্য বা অবস্থান শতভাগ সঠিক নয়। কেননা, ওই যুদ্ধ শুরুর অনেক আগে থেকেই দেশে চাহিদার তুলনায় গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি ছিল। তখন দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়িয়ে এবং তারও পরে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে সেই ঘাটতি একপর্যায়ে যথেষ্ট কমানো গিয়েছিল। কিন্তু ইউরোপে যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে এলএনজির দামও আকাশচুম্বী হওয়ায় এর আমদানি যেমন কমিয়ে দিতে হয়েছে, তেমনি দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাও অব্যাহত রাখা যায়নি বা রাখা হয়নি।
ফলে ঘাটতি বেড়েছে, যা এখন দীর্ঘস্থায়ী সংকটে রূপ নিয়েছে। আমরা এখানে স্মরণ করতে পারি, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল দৈনিক ১৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট, যা ওই সময়ের চাহিদার তুলনায় অনেক কম ছিল। এরপর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়ার কারণে গ্যাসের চাহিদা বাড়তে থাকে।
সরকার তখন দেশে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়। ফলে ২০১২-১৩ সাল নাগাদ গ্যাস উত্তোলন দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট বাড়ে। এই বাড়তি উত্তোলনের সিংহভাগ এসেছিল বিবিয়ানা ক্ষেত্র থেকে। ফলে তখন দৈনিক গ্যাস সরবরাহ বেড়ে হয় ২৭৫ কোটি ঘনফুট। কিন্তু তত দিনে গ্যাসের চাহিদা হয় দৈনিক ৩০০ কোটি ঘনফুট।
এরপর আর দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন বাড়েনি। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তেমন কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি; বরং নির্ভরতা বাড়ানো হয়েছে আমদানির ওপর। এলএনজি আকারে গ্যাস ও কয়লা আমদানি করেই যে চালানোর মতো রাখে আমাদের অর্থনীতি। অবশ্য এর মধ্যেও বাপেক্স ওয়ার্কওভার (বিদ্যমান কূপ সংস্কার) করে এবং কয়েকটি নতুন কূপ খনন করে মাঝেমধ্যে ৫০ লাখ থেকে দুই-আড়াই কোটি ঘনফুট পর্যন্ত উৎপাদন বাড়িয়েছে। কিন্তু তা ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে যথেষ্ট ছিল না।
এই ক্রমবর্ধমান ঘাটতি পূরণ এবং সংকট মোকাবিলায় সরকার ২০১০ সাল থেকেই এলএনজি আমদানির উদ্যোগ-আয়োজন শুরু করে।কারণ সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে কী কারণে যেন এই ধারণা বদ্ধমূল ছিল (এখনো যে নেই তা নয়), আমাদের দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের আর কোনো বড় মজুত নেই। অথচ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীরা এখনো বলছেন, দেশে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি অনাবিষ্কৃত রয়েছে। কিন্তু সরকার সেই সব কথা বিশেষ একটা আমলে নেয়নি।
শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের শেষ দিকে শুরু হয় এলএনজি আমদানি। প্রথমে সরকারি মালিকানার একটি ভাসমান টার্মিনালের (পোশাকি নাম ‘ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট’, সংক্ষেপে এফএসআরইউ) মাধ্যমে। পরে বেসরকারি মালিকানাধীন আরেকটি এফএসআরইউর মাধ্যমে।
মহেশখালীতে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে স্থাপিত এই এফএসআরইউ দুটি ব্যবহার করে দৈনিক মোট ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেওয়া সম্ভব। কাতার ও ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে এই এলএনজি আমদানি করা হয়। তাতে বিশ্ববাজারে স্বাভাবিক মূল্যপরিস্থিতিতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম পড়ে সর্বনিম্ন ৬ মার্কিন ডলার। আর দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে তোলা গ্যাসের দাম পড়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ৩ ডলার। ফলে দেশের গ্যাস বেশি ব্যবহার করা গেলে বিশ্ববাজারের পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, সংকটে পড়তে হতো না। এ কারণে দেশের গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
এখন দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। সর্বোচ্চ সরবরাহ ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। এই ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগ যে নেই, তা নয়। তা যেমন যথেষ্ট নয়, তেমনি তার বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ এবং অনেক বেশি বিলম্বিত হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব হচ্ছে না, হবেও না।
আগেভাগে দেশের গ্যাস উত্তোলন সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। এমনকি বর্তমান সংকটের সময়ও দেশের গ্যাস বেশি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম অপেক্ষাকৃত কম খরচে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো।কিন্তু সাধন-ভজনের যে সময় সরকার হারিয়ে ফেলেছে, তার ফলে সৃষ্ট বিপত্তি কাটিয়ে ওঠা একটু কঠিনই হবে।
লেখক: অরুণ কর্মকার
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে