ঘাম দিয়ে সারল জ্বর

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২২, ১১: ২৯

কৃষ্ণনগর ছিল খুব স্বাস্থ্যকর জায়গা। ছেলেবেলায় সেই অঞ্চলে প্রমথ চৌধুরী সপরিবারে ছিলেন প্রায় পাঁচ বছর। ১৮৮০ সালে কৃষ্ণনগরে হলো ম্যালেরিয়ার প্রকোপ। বাড়ির সবাইকে ধরল সেই অসুখ। শুধু মা আর প্রমথ ছাড়া পরিবারের সবাই জ্বরে ভুগলেন। ১৮৮১ সালে ম্যালেরিয়া হয়ে উঠল ভয়াবহ। প্রতিদিন সেখানে ২০-৩০ জন মানুষ মারা যেতে লাগল। প্রমথের দাদা বিলেতে, মেজদা কলকাতায়। প্রমথ পড়ছেন এনট্রান্স। এ সময় একদিন প্রমথ হেঁটে গোয়াড়িতে গেলেন খাতা কিনতে। দুপুর ১২টার দিকে বাড়ি ফিরলেন। পথে খুব মাথা ধরেছিল। তাই বাড়ি ফিরেই তিনি শুয়ে পড়লেন।

যখন চোখ খুললেন, তখন দেখেন সামনে মেজদা যোগেশ চৌধুরী। প্রমথ জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি এখানে এলে কবে?’ যোগেশ বললেন, ‘শুধু আমি নই, দিদি আর মন্মথও এসেছেন।’

প্রমথ বললেন, ‘কেন?’

মেজদা বললেন, ‘তুমি আট দিন অজ্ঞান ছিলে, আজই তোমার জ্ঞান ফিরল। তোমার অজ্ঞান অবস্থায় যে যেখানে ছিল, সকলকে টেলিগ্রাম করে এখানে আনা হয়েছে।’

প্রমথ যেন রিপ ভ্যান উইঙ্কেলের মতো বিশাল এক ঘুম দিয়ে উঠেছেন। একটু ভয় পেয়েই তিনি বললেন, ‘আমি কি এখন ভালো হয়ে গেছি?’

মেজদা বললেন, ‘না। তোমার কানের দুপাশে বেজায় ফুলে আছে। ডাক্তার বলেছেন, জলের হাওয়ায় সেরে যেতে পারে, তাই তোমাকে নৌকায় নিয়ে যেতে হবে।’

পাঁচটায় ঘুম ভেঙেছিল প্রমথের। ছয়টার দিকে গাড়িতে করে নৌকায় চড়ানো হলো। সকালের মধ্যে কান দুটি স্বাভাবিক হয়ে গেল।

কিন্তু এর কয়েক দিন পর একটা ইংরেজি পত্রিকা হাতে নিয়ে প্রমথ দেখেন, একটি অক্ষরও চিনতে পারছেন না। ভয় পেলেন খুব। ঠিক করলেন, সাত দিন ইংরেজি পত্রিকা ছোঁবেন না। পড়তে শুরু করলেন ‘উদভ্রান্ত প্রেম’। সাত দিন পর গোল্ডেন ট্রেজারি থেকে ‘সংস অ্যান্ড লিরিকস’ হাতে নিয়ে দেখলেন,

হ্যাঁ, ইংরেজি অক্ষরগুলো চেনা চেনা লাগছে। ঘাম দিয়ে জ্বর সারল প্রমথের।

সূত্র: প্রমথ চৌধুরী, আত্মকথা, পৃষ্ঠা ৩৫-৩৬ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত