হিন্দুর টিকি, মুসলমানের দাড়ি

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯: ৫৭

সৈয়দ মুজতবা আলীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের শেষ দেখা হয় ১৯৩১ সালে। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের সামনাসামনি হওয়ার পরই রবিঠাকুর বললেন, ‘লোকটি যে বড় চেনা চেনা লাগছে। তুই নাকি বরোদার মহারাজা হয়ে গেছিস?’

মুজতবা আলী কথা বাড়ালেন না। কারণ তিনি জানেন, তর্ক করতে গেলেই তিনি নাজেহাল হবেন। যদি ‘বরোদার মহারাজা’ কথাটায় আপত্তি জানান, তাহলে রবীন্দ্রনাথ প্রমাণ করে দেবেন, মুজতবা আলীই বরোদার রাজা, নয়তো আরও বড় জাঁদরেল গোছের কেউ।

তারপর অবশ্য রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘না, না, মহারাজা নয়, দেওয়ান-টেওয়ান কিছু একটা।’

জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুই এখনো বরোদা কলেজে ধর্মশাস্ত্র পড়াস না? জানিস, তোদের যখন রাজা-মহারাজারা ডেকে নিয়ে সম্মান দেখায়, তখন আমার কী গর্ব হয়, আমার কী আনন্দ হয়। আমার ছেলেরা দেশ-বিদেশে কৃতী হয়েছে।’

এই গর্বের মধ্যে দুঃখ ঢেকে রাখেন না, সেটা প্রকাশ করে বলেন, ‘কিন্তু জানিস, আমার মনে দুঃখও হয়। তোদের আমি গড়ে তুলেছি, এখন আমার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য তোদের প্রয়োজন। গোখলে, শুক্ল, তোরা সব এখানে থেকে আমাকে সাহায্য করবি। কিন্তু তোদের আনবার সামর্থ্য আমার কোথায়?’

আবার প্রসঙ্গ পাল্টান রবীন্দ্রনাথ। বলেন, ‘তা যাক! বলতে পারিস, সেই মহাপুরুষ কবে আসছেন কাঁচি হাতে করে?’

একটু ভড়কে যান মুজতবা আলী। মহাপুরুষেরা তো আসেন ভগবানের বাণী নিয়ে অথবা শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্মফুল নিয়ে। রবীন্দ্রনাথ বলছেন, মহাপুরুষ আসবেন কাঁচি হাতে করে!

এরও ব্যাখ্যা করেন রবীন্দ্রনাথ, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, কাঁচি নিয়ে। সেই কাঁচি দিয়ে সামনের দাড়ি ছেঁটে দেবেন আর পেছনের টিকি কেটে দেবেন। সব চুরমার করে একাকার করে দেবেন। হিন্দু-মুসলমান আর কত দিন এভাবে আলাদা হয়ে থাকবে?’

এরপর আধঘণ্টা ধরে বললেন হিন্দু-মুসলমান কলহ নিয়ে। তাঁকে এই কলহ কতটা বেদনা দিত, সেটা বুঝতে একটুও কষ্ট হয়নি মুজতবা আলীর।

সূত্র: ভুঁইয়া ইকবাল, রবীন্দ্রনাথ ও মুসলমান সমাজ, পৃষ্ঠা ৩৫০-৩৫১

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত