আঙুলহারা

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৩, ১০: ৪৫

শৈশবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের যে রোগ হয়েছিল, তার নাম আঙুলহারা। কীভাবে কী হলো, সেটাই বলা হবে এখন।‘চিলড্রেনস ফ্রেশ এয়ার অ্যান্ড এক্সকারশন সোসাইটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন এক ধনবতী নারী। যে মা-বাবারা অর্থের অভাবে নিজ ছেলেমেয়েকে ভ্রমণে নিয়ে যেতে পারেন না, তাদের বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠান। এর বাংলায়ও একটি নাম ছিল, ‘মুক্ত বায়ু সেবন সমিতি’। মাত্র পাঁচ টাকা দেওয়া হলে এক একটি ছেলে বা মেয়েকে বিহার–ওডিশার কোনো স্বাস্থ্যকর ও দর্শনীয় স্থানে নিয়ে যাওয়া হতো।

অসীম দত্ত নামে এক স্কাউট মাস্টার এ রকম ভ্রমণে প্রধান কর্মকর্তা হতেন। ভোর সাড়ে ৫টায় বিছানা ত্যাগ, ৬টায় ড্রিল, এক ঘণ্টা পরে জলখাবার, দুই ঘণ্টা পড়াশোনা, মার্চ করে কোনো দর্শনীয় স্থানে যাওয়া, সাড়ে ১২টায় গোসল, দেড়টায় দুপুরের খাওয়া, এক ঘণ্টা বিশ্রাম, খেলাধুলা, নাশতা, সন্ধ্যায় ক্যাম্পফায়ার।

এই ক্যাম্পফায়ারে প্রত্যেক ছেলেমেয়েকেই অংশ নিতে হতো। মাঝখানে আগুন জ্বেলে কেউ কবিতা পড়ত, কেউ গল্প, কেউ চুটকি ইত্যাদি বলতে থাকত। সবচেয়ে জমে উঠত তখনই, যখন কেউ ভুলে যেত কিংবা ভুল বলত। সুনীল নজরুলের কবিতা ভুলে যাওয়ার ভান করে কিছুক্ষণ চুপ থাকলেই প্রচুর হাস্যরোল উঠত।

ভ্রমণের সময় নিয়ম করে বাড়িতে দুটো চিঠি লিখতে হতো প্রত্যেককে। একবার অসীম দত্ত সেই চিঠি লেখা মাফ করলেন সুনীলকে। কারণ ওই আঙুলহারা রোগ।কী কারণে কে জানে, সুনীলের আঙুল ফুলে হলুদ হয়ে উঠেছিল। ওটাকেই আঙুলহারা রোগ বলে। একজন হাতুড়ে ডাক্তারকে দিয়ে অপারেশন করানো হয়েছিল, তাতে সুনীলের আঙুলটা বেঁচেছিল বটে, কিন্তু বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। সেটা আর ঠিক হয়নি।

পরে অনেক জ্যোতিষী সুনীলের এই আঙুল দেখে থতমত খেয়েছেন। একজন অবশ্য বলেছেন, বইয়ের ছবিতে এমন আঙুল আছে। তাতে বলা হয়েছে, এই আঙুলের অধিকারীরা খুনি হয়। কিন্তু সুনীল কাউকে খুন করেননি! 

সূত্র: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অর্ধেক জীবন, পৃষ্ঠা ৯৮-১০০

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত