হঠাৎ জ্বালানি তেলের সংকট

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২২, ০৫: ৫৭
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২২, ১৫: ১৪

শরীয়তপুরে হঠাৎ করে পেট্রল ও অকটেনের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিটি পাম্প থেকে মোটরসাইকেলে ১০০ ও প্রাইভেট কারে ৫০০ টাকার বেশি জ্বালানি তেল দেওয়া হচ্ছে না। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চালকেরা।

পাম্প কর্তৃপক্ষ বলছে, এক সপ্তাহ ধরে ডিপো থেকে সরবরাহ কম থাকায় সংকট তৈরি হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে পাম্পে তেল বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে। বিদেশ থেকে জাহাজ আসতে দেরি হওয়ায় ডিপোতে তেলের সরবরাহ কমে গেছে বলে জানিয়েছে ডিপো কর্তৃপক্ষ।

পাম্পমালিকেরা জানান, এক সপ্তাহ ধরে বরিশাল ডিপো থেকে চাহিদার অর্ধেকের কম তেল সরবরাহ করা হচ্ছিল। গত বৃহস্পতিবার থেকে পাম্পে পেট্রল ও অকটেন সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। জ্বালানি তেলের জন্য ডিপোতে তেলের লরি পাঠিয়েও সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। জেলার প্রতিটি পাম্পে গড়ে প্রতিদিন ৮ হাজার লিটার পেট্রল ও অকটেনের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ করা হচ্ছে ৩ হাজার লিটারের কম। ফলে জেলার প্রতিটি পাম্পেই জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তেল বিক্রি সীমিত করা হয়েছে। এ সময় গ্রাহকপ্রতি ১০০ টাকা তেল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর প্রাইভেট কারের ক্ষেত্রে বিক্রি করা হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকার পেট্রল বা অকটেন। মজুত কমে আসায় আগামীকালের (বুধবার) মধ্যে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে পাম্পে তেল বিক্রি বন্ধ করে দিতে হবে। হঠাৎ তেলের এমন সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন জ্বালানি তেলনির্ভর যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা।

গতকাল মঙ্গলবার শরীয়তপুরের অন্তত ৪টি ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি ফিলিং স্টেশনেই মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি। লাইন ধরে একে একে পেট্রল সংগ্রহ করছেন চালকেরা। ১০০ টাকার বেশি তেল না পাওয়ায় ফিলিং স্টেশনের শ্রমিকদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন অনেকে। জরুরি প্রয়োজনের কথা বলেও ১০০ টাকার বেশি তেল না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে অনেক গ্রাহককে।

প্রাইভেট কার নিয়ে আসা চালক ও মালিকদের দেওয়া হচ্ছে ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকার পেট্রল বা অকটেন।

শরীয়তপুরের ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান সোহেল জরুরি কাজে পরিবার নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন। তাঁর ব্যবহৃত প্রাইভেট কারে তেল নিতে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের পাশে চোকদার ফিলিং স্টেশনে যান তিনি। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, প্রাইভেট কারে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকার তেল বিক্রি করছে পাম্প কর্তৃপক্ষ। অনেক অনুরোধ করার পরও ৪০০ টাকার বেশি তেল না পেয়ে পাম্পশ্রমিকদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় যেতে কমপক্ষে ১০ লিটার তেল প্রয়োজন। অথচ পাম্প থেকে নিতে পেরেছি সাড়ে চার লিটার তেল। পদ্মা পার হয়ে সামনের কোনো ফিলিং স্টেশন থেকে আবার তেল নিতে হবে।’

শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের পাশেই হাজি আব্দুল জলিল ফিলিং স্টেশনে বাইকে তেল নিতে এসেছেন ডামুড্যার আমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, ডামুডায় কোনো পেট্রলপাম্প না থাকায় মাসে দুবার শরীয়তপুর এসে মোটরসাইকেলে ট্যাংক ভরাট করে নিই। আজ (মঙ্গলবার) ১০০ টাকার বেশি তেল দিচ্ছেন না পাম্পশ্রমিকেরা। এই ১০০ টাকার তেল তো বাড়ি যেতেই শেষ হয়ে যাবে।’

শরীয়তপুর জেলা শহরের গ্লোরি ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের পাম্পে ৬ হাজার লিটার পেট্রল ও ২ হাজার লিটার অকটেনের চাহিদা রয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে বরিশালের ডিপো থেকে চাহিদার অর্ধেকের কম তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। দু-তিন দিন ধরে পেট্রল ও অকটেন সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। মজুত ফুরিয়ে আসায় বেশিসংখ্যক গ্রাহককে তেল দিতে পারছি না। প্রত্যেক গ্রাহককে ১০০ বা ২০০ টাকা করে তেল দেওয়া হচ্ছে। নতুন করে তেল সরবরাহ করা না হলে আগামীকাল (বুধবার) দুপুরের পর পাম্পে কোনো তেল থাকবে না। তেল বিক্রি বন্ধ করে দিতে হবে।’

বরিশালের যমুনা পেট্রোলিয়ামের ব্যবস্থাপক মো. ইমাম হোসেন বলেন, ‘তেলবাহী জাহাজ আসতে দেরি হওয়ায় ডিপোতে তেল সরবরাহ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে জ্বালানি তেলের কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাই পেট্রলপাম্পগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী তেল সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।’

কবে নাগাদ এই সমস্যার সমাধান হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো নির্দিষ্ট সময় বলতে পারেননি তিনি।

শরীয়তপুরে প্রতি লিটার পেট্রল ৮৬ দশমিক ৫০ টাকা ও অকটেন ৯০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত