ফারুক মেহেদী, ঢাকা
জিনিসপত্রের বাড়তি দাম, ডলার সংকট, রাজস্ব ঘাটতিসহ অর্থনীতির প্রায় সব সূচকে এখন অস্থিরতা চলছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ উন্নয়ন-সহযোগীদের কাছ থেকে ধারকর্জ করে দেশ চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এমন অবস্থায় আসছে অর্থবছরে সরকার যখন বড় রাজস্ব আয় করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার পরিকল্পনা করছে, ঠিক তখনই দেশের অর্থনীতির ‘পাওয়ার হাউস’ নামে পরিচিত বেসরকারি খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা ঢালাও করছাড়ের শতাধিক প্রস্তাব দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর)।
এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্বে ঢাকা চেম্বার, মেট্রোপলিটন চেম্বার, বিজিএমইএ, বিটিএমএ, চট্টগ্রাম চেম্বার, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ, ফরেন চেম্বার, রিহ্যাব, ই-ক্যাব, ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ দেশসেরা এ রকম ২৮টি ব্যবসায়িক সংগঠনের আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতের অন্তত ১২৮টি করছাড়ের প্রস্তাব এখন এনবিআরের টেবিলে। বেসরকারি খাতকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এসব সংগঠনই মূলত সরকারের রাজস্বের সিংহভাগ জোগান দিয়ে থাকে। তবে বাজেট ঘিরে নতুন করে তাঁদের এত বিপুল অঙ্কের করছাড়ের প্রস্তাবটি আইএমএফের শর্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং রাজস্ব পরিকল্পনাকে ওলটপালট করে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ঢালাও করছাড়ের ব্যাপারে এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশের করহার অনেক বেশি। এর ফলে অনেকে কর দিতে চায় না। আমরা চাই করহার কমিয়ে বেশি মানুষকে করের আওতায় নিয়ে আসা। এটা করতে পারলে কর আদায় কমবে না, বরং বাড়বে।’
তবে এনবিআরের আয়কর নীতির সাবেক সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা এখন আর সম্ভব নয়। এমনিতেই বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে রাজস্ব আয়ের অনেক উৎস সংকুচিত হয়ে গেছে। বরং রাজস্ব আয়ের গতি বাড়াতে হবে। ফলে গণহারে ছাড়ের সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।’
এনবিআরের ভ্যাট নীতির সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান পাটোয়ারি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ছাড়ের প্রস্তাব দেবেন। তবে দিলেই যে সব ছাড় পাবেন, এমন নয়। পর্যালোচনা করে প্রয়োজন মনে হলে সমন্বয় করবে এনবিআর।’
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আসছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ এখন পুরোদমে চলছে। এরই মধ্যে বাজেট নিয়ে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক শেষ করা হয়েছে। ওই সব বৈঠকে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, অবকাঠামোসহ সব ধরনের সেবার নিশ্চয়তা চেয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরা আসছে বাজেটে শুল্ক-কর-ভ্যাট ইত্যাদি কমানোরও দাবি জানিয়েছেন। পৃথক পৃথক বৈঠকের ওই সব দাবিদাওয়া যখন এনবিআরের বাজেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পর্যালোচনা করে দেখছেন, তখনই ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ আরও ২৭টি দেশসেরা বাণিজ্য সংগঠনের নিজ নিজ খাতের শুল্ক-কর ও ভ্যাটছাড়ের অন্তত ১২৮টি প্রস্তাব দাখিল করেছে এনবিআরে।
রাজস্ব খাতের বিশ্লেষকেরা বলছেন, তাঁদের অর্ধেক প্রস্তাবও যদি এনবিআরকে মানতে হয়, তাহলে আসছে অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য পূরণ দূরে থাক, সন্তোষজনক রাজস্ব আয় করাও কঠিন হয়ে পড়বে। অথচ আসছে অর্থবছরে সরকার এনবিআর থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে চায়। চলতি বাজেটে যা ছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরের আট মাসে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি পড়েছে। আইএমএফ ঋণ দেওয়ার সময় শর্ত দিয়েছে, আসছে অর্থবছর থেকে করছাড় ব্যাপক হারে কমাতে হবে।
এনবিআরের বাজেটের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আসছে অর্থবছরে করছাড়ের সুযোগ কম বরং যেসব খাতে বছরের পর বছর ধরে গণহারে করছাড় ও কর অবকাশ রয়েছে, সেগুলো কীভাবে বাতিল করা বা কমিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে পর্যালোচনা চলছে।
এই যখন অবস্থা, তখন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে উল্টো বড় অঙ্কের করছাড়ের দাবিতে এখন সোচ্চার। তাঁদের প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ফরেন চেম্বার মোট ৯টি প্রস্তাব দিয়েছে করছাড়ের। এর মধ্যে ব্যবসা শুরুর প্রথম তিন বছর নিট মুনাফার বিদ্যমান ১০ শতাংশ কর কমিয়ে ৮ শতাংশ আর অনাবাসী ব্যক্তির আয়ের উৎসে কর ২০-৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫-১০ শতাংশ করার প্রস্তাব অন্যতম। মেট্রোপলিটান চেম্বার ৮টি প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে আমদানি পর্যায়ে উৎসে আয়কর ৩-৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১-৫ শতাংশ করা, বিভিন্ন কৃষিজপণ্যের সরবরাহ পর্যায়ে বিদ্যমান ২ শতাংশ উৎসে আয়কর প্রত্যাহার করা, পরিবহন সেবার বিদ্যমান ৫ শতাংশ কর কমিয়ে ২ শতাংশ করা ও সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংকে জমা টাকার ওপর দেওয়া সুদের উৎসে আয়কর প্রত্যাহারের দাবি অন্যতম।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) করছাড়ের ১২টি প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে করপোরেট কর, বস্ত্রশিল্পের আয়কর কমানো, দক্ষতা উন্নয়ন খাতের বিনিয়োগে কর অবকাশ অন্যতম। ঢাকা চেম্বার ৬টি করছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে কোম্পানির ব্যাংক থেকে অর্জিত সুদের আয়ের উৎসে কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা ও শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে প্লাস্টিক বর্জ্যের বিদ্যমান ৪ শতাংশ উৎসে অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা অন্যতম।
নিজেদের করছাড়ের বিষয়ে বিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা করছাড় চেয়েছি মূলত ছোট ব্যবসায়ীদের ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। তাঁদের সুযোগ দিলে কর আহরণ বেড়ে যাবে।’
কর ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করে আনোয়ার-উল আলম বলেন, ‘দেশে কর দেওয়ার সামর্থ্য আছে সাড়ে ৩ কোটি লোকের। কিন্তু এনবিআরের নীতির কারণে মানুষ কর দিতে ভয় পায়। সেই জন্য কর দিচ্ছে মাত্র ২৬ লাখ মানুষ। এনবিআর একটা মুখস্থ নীতির ওপর বিভিন্ন খাতের কোম্পানিগুলোর ওপর করহার নির্ধারণ করে। কোম্পানি যে ব্যবসায় লোকসান করতে পারে, সেটা এনবিআর মানতে চায় না।’
এনবিআরে দেওয়া করছাড়ের প্রস্তাব পর্যালোচনায় আরও জানা যায়, চট্টগ্রাম চেম্বার ১৩টি প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে বিদেশগামী দেশি জাহাজের মালামালের বিক্রেতাকে দেওয়া বিলের উৎসে কর বাতিল করা, স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির উৎসে কর প্রতি টনে ৫০০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা করা, অন্যান্য কোম্পানির ক্ষেত্রে টার্নওভারের ন্যূনতম কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ করা অন্যতম।
সিলেট চেম্বার ১০টি প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ নিবন্ধিত কোম্পানির পরিশোধিত পুঁজির ওপর করপোরেট কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা অন্যতম। বিজিএমইএ ৮টি করছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করা, করপোরেট কর ১২ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা, নগদ সহায়তার উৎসে কর প্রত্যাহার করা অন্যতম।
আবাসন খাতের সংগঠন রিহ্যাব ৭টি করছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে আবাসন খাতে ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য বিনা প্রশ্নে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ, আবাসন খাতের উদ্যোক্তাদের আয়কর কমানো, এলাকাভেদে জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের কর কমানো, নগর বিকেন্দ্রীকরণের স্বার্থে ৫ থেকে ১০ বছরের কর অবকাশ অন্যতম।
ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের করছাড় প্রস্তাবের মধ্যে রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তার উৎসে কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব অন্যতম। এর বাইরেও টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন ১টি, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন ২টি, টায়ার টিউব উৎপাদক সমিতি ১টি, সিমেন্ট উৎপাদক সমিতি ২টি, মোবাইল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন ৩টি, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি ৫টি, প্লাস্টিক দ্রব্য রপ্তানিকারক সমিতি ১টি, বাংলাদেশ সুইটস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ৩টি, বিজিএপিএমইএ ১টি, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি ১টি, অ্যাগ্রিকালচারার্স ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ১টি, বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ৭টি, বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন ৯টি, বিটিএমএ ১টি, টেরিটাওয়েল অ্যাসোসিয়েশন ১টি, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন ১টি ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ৪টি করছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে।
করছাড়ের প্রস্তাব দেওয়া ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ‘ট্রেডিংয়ের ওপর আমাদের (ব্রোকারেজ হাউস) শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ ট্যাক্স, সেটা কোনো দিক থেকে যৌক্তিক নয়। আমরা বছরের পর বছর লোকসান করছি। অগ্রিম আয়কর বেশি দিয়ে আসছি। এটা অ্যাডজাস্টও হয় না। এটা কোনোভাবেই জাস্টিফাইড না।’
জিনিসপত্রের বাড়তি দাম, ডলার সংকট, রাজস্ব ঘাটতিসহ অর্থনীতির প্রায় সব সূচকে এখন অস্থিরতা চলছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ উন্নয়ন-সহযোগীদের কাছ থেকে ধারকর্জ করে দেশ চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এমন অবস্থায় আসছে অর্থবছরে সরকার যখন বড় রাজস্ব আয় করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার পরিকল্পনা করছে, ঠিক তখনই দেশের অর্থনীতির ‘পাওয়ার হাউস’ নামে পরিচিত বেসরকারি খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা ঢালাও করছাড়ের শতাধিক প্রস্তাব দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর)।
এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্বে ঢাকা চেম্বার, মেট্রোপলিটন চেম্বার, বিজিএমইএ, বিটিএমএ, চট্টগ্রাম চেম্বার, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ, ফরেন চেম্বার, রিহ্যাব, ই-ক্যাব, ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ দেশসেরা এ রকম ২৮টি ব্যবসায়িক সংগঠনের আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতের অন্তত ১২৮টি করছাড়ের প্রস্তাব এখন এনবিআরের টেবিলে। বেসরকারি খাতকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এসব সংগঠনই মূলত সরকারের রাজস্বের সিংহভাগ জোগান দিয়ে থাকে। তবে বাজেট ঘিরে নতুন করে তাঁদের এত বিপুল অঙ্কের করছাড়ের প্রস্তাবটি আইএমএফের শর্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং রাজস্ব পরিকল্পনাকে ওলটপালট করে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ঢালাও করছাড়ের ব্যাপারে এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশের করহার অনেক বেশি। এর ফলে অনেকে কর দিতে চায় না। আমরা চাই করহার কমিয়ে বেশি মানুষকে করের আওতায় নিয়ে আসা। এটা করতে পারলে কর আদায় কমবে না, বরং বাড়বে।’
তবে এনবিআরের আয়কর নীতির সাবেক সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা এখন আর সম্ভব নয়। এমনিতেই বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে রাজস্ব আয়ের অনেক উৎস সংকুচিত হয়ে গেছে। বরং রাজস্ব আয়ের গতি বাড়াতে হবে। ফলে গণহারে ছাড়ের সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।’
এনবিআরের ভ্যাট নীতির সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান পাটোয়ারি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ছাড়ের প্রস্তাব দেবেন। তবে দিলেই যে সব ছাড় পাবেন, এমন নয়। পর্যালোচনা করে প্রয়োজন মনে হলে সমন্বয় করবে এনবিআর।’
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আসছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ এখন পুরোদমে চলছে। এরই মধ্যে বাজেট নিয়ে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক শেষ করা হয়েছে। ওই সব বৈঠকে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, অবকাঠামোসহ সব ধরনের সেবার নিশ্চয়তা চেয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরা আসছে বাজেটে শুল্ক-কর-ভ্যাট ইত্যাদি কমানোরও দাবি জানিয়েছেন। পৃথক পৃথক বৈঠকের ওই সব দাবিদাওয়া যখন এনবিআরের বাজেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পর্যালোচনা করে দেখছেন, তখনই ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ আরও ২৭টি দেশসেরা বাণিজ্য সংগঠনের নিজ নিজ খাতের শুল্ক-কর ও ভ্যাটছাড়ের অন্তত ১২৮টি প্রস্তাব দাখিল করেছে এনবিআরে।
রাজস্ব খাতের বিশ্লেষকেরা বলছেন, তাঁদের অর্ধেক প্রস্তাবও যদি এনবিআরকে মানতে হয়, তাহলে আসছে অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য পূরণ দূরে থাক, সন্তোষজনক রাজস্ব আয় করাও কঠিন হয়ে পড়বে। অথচ আসছে অর্থবছরে সরকার এনবিআর থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে চায়। চলতি বাজেটে যা ছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরের আট মাসে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি পড়েছে। আইএমএফ ঋণ দেওয়ার সময় শর্ত দিয়েছে, আসছে অর্থবছর থেকে করছাড় ব্যাপক হারে কমাতে হবে।
এনবিআরের বাজেটের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আসছে অর্থবছরে করছাড়ের সুযোগ কম বরং যেসব খাতে বছরের পর বছর ধরে গণহারে করছাড় ও কর অবকাশ রয়েছে, সেগুলো কীভাবে বাতিল করা বা কমিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে পর্যালোচনা চলছে।
এই যখন অবস্থা, তখন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে উল্টো বড় অঙ্কের করছাড়ের দাবিতে এখন সোচ্চার। তাঁদের প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ফরেন চেম্বার মোট ৯টি প্রস্তাব দিয়েছে করছাড়ের। এর মধ্যে ব্যবসা শুরুর প্রথম তিন বছর নিট মুনাফার বিদ্যমান ১০ শতাংশ কর কমিয়ে ৮ শতাংশ আর অনাবাসী ব্যক্তির আয়ের উৎসে কর ২০-৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫-১০ শতাংশ করার প্রস্তাব অন্যতম। মেট্রোপলিটান চেম্বার ৮টি প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে আমদানি পর্যায়ে উৎসে আয়কর ৩-৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১-৫ শতাংশ করা, বিভিন্ন কৃষিজপণ্যের সরবরাহ পর্যায়ে বিদ্যমান ২ শতাংশ উৎসে আয়কর প্রত্যাহার করা, পরিবহন সেবার বিদ্যমান ৫ শতাংশ কর কমিয়ে ২ শতাংশ করা ও সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংকে জমা টাকার ওপর দেওয়া সুদের উৎসে আয়কর প্রত্যাহারের দাবি অন্যতম।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) করছাড়ের ১২টি প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে করপোরেট কর, বস্ত্রশিল্পের আয়কর কমানো, দক্ষতা উন্নয়ন খাতের বিনিয়োগে কর অবকাশ অন্যতম। ঢাকা চেম্বার ৬টি করছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে কোম্পানির ব্যাংক থেকে অর্জিত সুদের আয়ের উৎসে কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা ও শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে প্লাস্টিক বর্জ্যের বিদ্যমান ৪ শতাংশ উৎসে অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা অন্যতম।
নিজেদের করছাড়ের বিষয়ে বিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা করছাড় চেয়েছি মূলত ছোট ব্যবসায়ীদের ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। তাঁদের সুযোগ দিলে কর আহরণ বেড়ে যাবে।’
কর ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করে আনোয়ার-উল আলম বলেন, ‘দেশে কর দেওয়ার সামর্থ্য আছে সাড়ে ৩ কোটি লোকের। কিন্তু এনবিআরের নীতির কারণে মানুষ কর দিতে ভয় পায়। সেই জন্য কর দিচ্ছে মাত্র ২৬ লাখ মানুষ। এনবিআর একটা মুখস্থ নীতির ওপর বিভিন্ন খাতের কোম্পানিগুলোর ওপর করহার নির্ধারণ করে। কোম্পানি যে ব্যবসায় লোকসান করতে পারে, সেটা এনবিআর মানতে চায় না।’
এনবিআরে দেওয়া করছাড়ের প্রস্তাব পর্যালোচনায় আরও জানা যায়, চট্টগ্রাম চেম্বার ১৩টি প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে বিদেশগামী দেশি জাহাজের মালামালের বিক্রেতাকে দেওয়া বিলের উৎসে কর বাতিল করা, স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির উৎসে কর প্রতি টনে ৫০০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা করা, অন্যান্য কোম্পানির ক্ষেত্রে টার্নওভারের ন্যূনতম কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ করা অন্যতম।
সিলেট চেম্বার ১০টি প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ নিবন্ধিত কোম্পানির পরিশোধিত পুঁজির ওপর করপোরেট কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা অন্যতম। বিজিএমইএ ৮টি করছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করা, করপোরেট কর ১২ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা, নগদ সহায়তার উৎসে কর প্রত্যাহার করা অন্যতম।
আবাসন খাতের সংগঠন রিহ্যাব ৭টি করছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে আবাসন খাতে ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য বিনা প্রশ্নে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ, আবাসন খাতের উদ্যোক্তাদের আয়কর কমানো, এলাকাভেদে জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের কর কমানো, নগর বিকেন্দ্রীকরণের স্বার্থে ৫ থেকে ১০ বছরের কর অবকাশ অন্যতম।
ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের করছাড় প্রস্তাবের মধ্যে রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তার উৎসে কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব অন্যতম। এর বাইরেও টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন ১টি, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন ২টি, টায়ার টিউব উৎপাদক সমিতি ১টি, সিমেন্ট উৎপাদক সমিতি ২টি, মোবাইল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন ৩টি, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি ৫টি, প্লাস্টিক দ্রব্য রপ্তানিকারক সমিতি ১টি, বাংলাদেশ সুইটস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ৩টি, বিজিএপিএমইএ ১টি, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি ১টি, অ্যাগ্রিকালচারার্স ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ১টি, বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ৭টি, বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন ৯টি, বিটিএমএ ১টি, টেরিটাওয়েল অ্যাসোসিয়েশন ১টি, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন ১টি ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ৪টি করছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে।
করছাড়ের প্রস্তাব দেওয়া ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ‘ট্রেডিংয়ের ওপর আমাদের (ব্রোকারেজ হাউস) শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ ট্যাক্স, সেটা কোনো দিক থেকে যৌক্তিক নয়। আমরা বছরের পর বছর লোকসান করছি। অগ্রিম আয়কর বেশি দিয়ে আসছি। এটা অ্যাডজাস্টও হয় না। এটা কোনোভাবেই জাস্টিফাইড না।’
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১৭ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে