সমন্বয়হীনতায় আটকে আছে ঝুঁকিপূর্ণ কিন ব্রিজের সংস্কার

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৩, ০৯: ৫১

সিলেট নগরের বুক চিরে বইছে সুরমা নদী। দুই ভাগে বিভক্ত নগরের সেতুবন্ধন কিন ব্রিজ। ব্রিটিশ আমলের স্মৃতিবিজড়িত লোহার সেতুটি জরাজীর্ণ এবং পাঁচ বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ। যান চলাচলেরও অনুপযোগী হয়ে আছে। তবু দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যান চলাচল বন্ধ করে হেরিটেজ হিসেবে সেতুটি সংরক্ষণ করতে হবে। এদিকে কয়েক দফা সংস্কারের উদ্যোগও নেওয়া হয়। বরাদ্দ পাওয়ার পরও সমন্বয়হীনতায় সংস্কারকাজ শুরু হয়নি।

ঐতিহাসিক সেতুটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন। এটি দেখভাল করে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রকৌশল বিভাগ। ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়লে দুই দিকে লোহার বেষ্টনী দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে নাগরিকদের প্রতিবাদের মুখে ৫২ দিন পর যান চলাচলের জন্য সেতুটি আবার খুলে দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেতুটি সংস্কারের জন্য ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। জুনে বরাদ্দের টাকা রেলওয়ের সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ২০২২ সালের জুলাই মাসে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সম্পাদনের চুক্তিও হয়। এত কিছুর পরও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রায় আড়াই বছর পর গত ২৫ জুলাই সংস্কারকাজ শুরু করবে বলে জানায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য ২৫ জুলাই থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুই মাস সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখা প্রয়োজন জানিয়ে চিঠি দেয় সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু আড়াই বছর পর নেওয়া উদ্যোগও আটকে যায় সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়হীনতায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১০ জুলাই সেতুটির সংস্কারকাজের সময় যান চলাচল বন্ধ রাখতে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি) এবং সওজের সিলেট অধিদপ্তরের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেন বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জীষাণ দত্ত। এতে বলা হয়, অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচলের কারণে বর্তমানে সিলেটের ঐতিহাসিক সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেতুটির কয়েক জায়গায় যানবাহনের ধাক্কায় গার্ড রেলিং ও স্টিল ট্রাস বেঁকে গেছে। কয়েক জায়গায় স্টিলের পাত ক্ষয় হয়ে গেছে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে সেতুটি মেরামত করা প্রয়োজন। এ কারণে আগামী দুই মাস জনসাধারণকে বিকল্প পথে যাতায়াতের অনুরোধ করা হয়েছে।

তবে গত শুক্রবার বিকেলে কিনব্রিজে গিয়ে দেখা গেছে, আগের মতো চলছে যানবাহন। একইভাবে পথচারীরাও হেঁটে পারাপার হচ্ছে সেতু।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জীষাণ দত্ত আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা সওজ ও এসএমপির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ওদের পক্ষ থেকে যান চলাচল বন্ধ করা হলে আমরা কাজটা শুরু করতে পারি। ইতিমধ্যে সাইটে (রেলস্টেশন-সংলগ্ন) আমাদের মালপত্রও পৌঁছে গেছে। কার কারণে কাজ আটকে আছে, সেটা বলতে পারব না।’

এসএমপির উপকমিশনার (ট্রাফিক) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব বলেন, ‘আমরা তো চিঠি পেয়ে পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। ওরা কাজ শুরু করে নাই। ওদের কাজের কোনো লক্ষণও নাই। তারা বলেছিল কন্ট্রাক্টর যোগাযোগ করবে, কেউ তো যোগাযোগ করেনি। তারা কাজ করলে আমরা মেরামতের জন্য সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেব।’

সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ সপ্তাহে কাজ শুরু করার কথা ছিল, তবে এখনো শুরু করেনি। ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাইনি। রেলওয়ের কালুরঘাট ব্রিজে কী সমস্যা হয়েছে, এ জন্য হয়তো ওরা শুরু করতে পারেনি। চট্টগ্রাম থেকে বসে একটা চিঠি দিলেই তো কাজ হয় না, ফিল্ড লেভেলে তো লোক লাগে, তাই না।’

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাক আহমদ বলেন, এখানে দুটি বিষয়ের একটি হলো সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ, আরেকটি হেরিটেজ। এই দুটিই বিবেচনা করতে হবে। পর্যটনের জন্য হেরিটেজ হিসেবে রক্ষা এবং বড় ধরনের বিপদ থেকে বাঁচতে হলে এখনই যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া উচিত।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ‘কিনব্রিজ সিলেট তথা দেশের একটি ঐতিহ্য। এটি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এতে যান চলাচল বন্ধ করে ফুটওভারব্রিজে রূপান্তর করার জন্য একটি প্রস্তাব আমরা ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সওজকে দিয়েছিলাম। তবে তা গৃহীত হয়নি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত