মইনুল হাসান
ভারতের বর্তমান এবং চতুর্দশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ২২ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে হোয়াইট হাউসে অতিথি হন। তিনি প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি দুবার মার্কিন পার্লামেন্টে ভাষণ দিয়ে নজির গড়লেন। সেখানে তাঁর খাতির যত্নের কমতি হয়নি। গত ৪ জুলাই সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) নামের চীনা নেতৃত্বের আন্তর্জাতিক জোটের শীর্ষ বৈঠকে মোদি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর ১৪ জুলাই ফ্রান্সের জাতীয় উৎসবের এ দিনটিতে তিনি ছিলেন প্রধান অতিথি, বাস্তিল দিবসে আয়োজিত অনুষ্ঠানের ‘মধ্যমণি’। আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে জি-২০ জোটের ১৮তম শীর্ষ সম্মেলনেও পৌরোহিত্য করবেন তিনি। অতীতের যেকোনো সময়ের থেকে তিনি এখন বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
রাশিয়া, ইরান, চীন এবং উত্তর কোরিয়া অনেকটা এক জোট হয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের একটি বার্তা পৌঁছে দিতে চাইছে—আর ছড়ি ঘোরানো চলবে না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ছায়ায় পশ্চিমা বিশ্ব সরাসরি পুতিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং অস্ত্রে শাণ দিতে শুরু করেছে।
নরেন্দ্র মোদি এ সময়ে পক্ষ-বিপক্ষের বিতর্ক থেকে নিজের দেশকে অনেকটা আলাদা করে রেখেছেন। গণতন্ত্রের চর্চা করেও, ভারত কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর সঙ্গে দূরত্ব না বাড়িয়ে একটি সহনশীল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে ভারত নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে সমর্থ হয়েছে। তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার নগ্ন আগ্রাসনের নিন্দা করলেও, মস্কোর ওপর অবরোধ আরোপে সায় দেননি; বরং কড়া ভাষায় পশ্চিমা বিশ্বের একতরফা অবরোধ আরোপের সমালোচনা করেছেন। যুদ্ধে ইউক্রেনের সর্বনাশ হলেও, রাশিয়া থেকে খুব সস্তায় জ্বালানি পাওয়ায় অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে ভারতের জন্য অনেকটা পৌষ মাস হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি বড় ঝাঁকুনি দিলেও ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের দেশ যুক্তরাজ্যকে পেছনে ফেলে ভারত আজ বিশ্বের পঞ্চম অর্থনীতির দেশ। গত বছর ভারতের স্বাধীনতার প্লাটিনাম জয়ন্তী, অর্থাৎ ৭৫তম বার্ষিকী পালনকালে মোদির দাম্ভিক উক্তি ছিল, ‘যে দেশটি আমাদের দীর্ঘ ২৫০ বছর শাসন করেছে, সেই দেশটি এখন আমাদের পশ্চাতে।’ বোদ্ধা অর্থনীতিবিদেরা আগে থেকেই জানিয়ে দিচ্ছেন, বিশাল জনসংখ্যায় বলীয়ান ভারতের এমন উত্থান দেশটিকে ২০৩০ সালে অর্থনৈতিক শক্তির তৃতীয় স্থানে পৌঁছে দেবে।
আপাতত যুক্তরাজ্য পশ্চাতে হলেও, ভারতের সামনে রয়েছে চীন। চীনকে পেছনে ফেলতে পারলেই বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নেওয়ার কল্পনা ‘অলীক’ হবে না।
ভারত জনসংখ্যায় এ বছর চীনকে পেছনে ফেলে বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, বর্তমানে ভারতের জনসংখ্যা ১৪২ কোটি ৮৬ লাখ এবং চীনের ১৪২ কোটি ৫৭ লাখ। আর ১৯৫০ সালে ভারতের মোট জনসংখ্যা হবে ১৬৬ কোটি ৮০ লাখ। সেখানে চীনের হবে ১৩১ কোটি ৭০ লাখ। ভারতের এমন জনসংখ্যা বৃদ্ধি চলতে থাকবে ২০৫৫ সাল পর্যন্ত। যে সময়ে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার গতি পেতে শুরু করেছে, সে সময়ে চীনের জনসংখ্যা হ্রাস সে দেশের প্রবৃদ্ধির হারকে পেছনে টেনে ধরবে। ভারতের ২ কোটি ৮০ লাখ নাগরিক প্রবাসে কর্মরত। বিশাল কর্মীবাহিনী প্রতিবছর অর্থমূল্যে ৯ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠান।
শ্রমিকদের মজুরি চীনের থেকে প্রায় তিন গুণ কম হওয়ার কারণেও বহু বিদেশি বিনিয়োগকারী চীন ছেড়ে ইতিমধ্যে ভারতে স্থায়ী ঘাঁটি গাড়তে শুরু করেছে। শিল্প ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, বিশেষ করে ডিজিটাল বিপ্লব জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আর আগামী এক দশকেই এই প্রবৃদ্ধির হার চীনকে পেছনে ফেলে ৬ শতাংশে উন্নীত হবে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। ভারতের একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন যে তাঁদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে প্রতিবছর ৫ লাখ দক্ষ প্রকৌশলী বের হয়। তবে ভারতে উচ্চশিক্ষার দরজায় কড়া নাড়ে ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। সে ক্ষেত্রে চীনে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে ৬৪ শতাংশ।
চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত ৪ হাজার কিলোমিটার বা ২ হাজার ৫০০ মাইলজুড়ে। ঘরের দরজায় পরাশক্তি প্রতিবেশী দেশ চীনের মতিগতি ভারতের খুব একটা সুবিধার মনে হয় না। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতের সজাগ দৃষ্টি। আর তাই স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ ৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার থেকে ১০ বছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৭ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইতিমধ্যে ৩০০ কোটি ডলারের অত্যাধুনিক ৩১টি ‘এমকিউ-৯বি সি গার্ডিয়ান’ নজরদারি ড্রোন কেনার চুক্তি হয়েছে। অন্য আরেকটি চুক্তি হয়েছে ভারতে তৈরি ‘তেজস’ যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন নিয়ে, যা প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে জেনারেল ইলেকট্রিকের সহায়তায় তৈরি হবে কর্ণাটকের রাষ্ট্রায়ত্ত হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেডে। এদিকে প্যারিস সফরকালে উন্নত প্রযুক্তির ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান ও ৩টি দানবাকৃতির স্করপেন ডুবোজাহাজের ক্রয়াদেশ অনুমোদন করেন মোদি। এর আগে ফ্রান্সের সঙ্গে ৮০০ কোটি ইউরো মূল্যে আরও ৩৬টি যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি হয়েছে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বান ডাকলেও ভারতকে যেসব সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখ করার মতো হলো দারিদ্র্য এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য। কর্মক্ষম জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ কর্মহীন। বিশাল জনসংখ্যার দেশটির প্রায় অর্ধেক নাগরিকের বার্ষিক আয় গড়ে ৬৫০ ডলার। তবে সে দেশেও আছে ১০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থের মালিক। মাত্র ১ শতাংশ নাগরিক ভোগ করেন জাতীয় সম্পদের ৩৩ শতাংশ। ফোর্বস-এর দেওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, ভারতে শতকোটি ডলারের ধনকুবের আছেন ১৬৯ জন। এ ছাড়া দুর্নীতি দূর করাও সম্ভব হয়নি। দেশজুড়ে বিভিন্ন অবকাঠামোর অবক্ষয় এবং ভঙ্গুর অবস্থার কারণে প্রায়ই ভয়ংকর দুর্ঘটনা জনজীবনে দুর্ভোগের কারণ হচ্ছে। ওডিশায় তিন ট্রেনের সংঘর্ষে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহতম রেল দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০ প্রাণ নিভে যায় এবং ১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়। বিভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, বর্ণের একটি মোজাইক দেশ ভারত বিরল ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। তাই ধর্মাশ্রয়ী এবং বিভেদের সস্তা রাজনীতি কারও কারও ক্ষমতার সিঁড়ি হলেও, দেশটির জন্য তা হবে আত্মঘাতী। সে দেশে মুসলিম নাগরিকের সংখ্যা ২০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। তাঁদের দ্বিতীয় সারিতে রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। এ ছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরূপ প্রভাব দেশটির জন্য কোনো ভালো বার্তা দিচ্ছে না। এমন সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে পারলেই একবিংশ শতাব্দী হবে ভারতের।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স মোটেই স্বস্তিতে নেই। ভূ-রাজনৈতিক ক্ষমতার অশান্ত বলয় যখন অতলান্তিক ছেড়ে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে ঝুঁকছে। বিশ্ব নেতৃত্বের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, দুই বৃহৎ পরাশক্তির শক্তি ক্ষয় ঘটলে মাঝখান থেকে ভারতের উত্থান ঘটবে—এ রকমটাই মনে করছেন ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। ক্ষমতার অক্ষ যে পশ্চিম থেকে মুখ ঘুরিয়ে পূর্বের দিকে ঝুঁকছে, তা আজ স্পষ্ট।
বহু শতাব্দী ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের বৈষম্যমূলক এবং একচোখা নীতি বিশ্ব মানবতাকে খণ্ডিত করেছে। সে কারণেই বিশ্ব নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানাবে। আর তাই বিস্মিত হওয়ার কিছুই থাকবে না যদি এমনটি সত্যিই ঘটে যে ২০৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার শতবার্ষিকীতে, সে দেশটির সেদিনের প্রধানমন্ত্রী দাম্ভিক উচ্চারণে ঘোষণা দিচ্ছেন, ‘আজ বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি ভারত!’
লেখক: ফ্রান্সপ্রবাসী
ভারতের বর্তমান এবং চতুর্দশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ২২ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে হোয়াইট হাউসে অতিথি হন। তিনি প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি দুবার মার্কিন পার্লামেন্টে ভাষণ দিয়ে নজির গড়লেন। সেখানে তাঁর খাতির যত্নের কমতি হয়নি। গত ৪ জুলাই সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) নামের চীনা নেতৃত্বের আন্তর্জাতিক জোটের শীর্ষ বৈঠকে মোদি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর ১৪ জুলাই ফ্রান্সের জাতীয় উৎসবের এ দিনটিতে তিনি ছিলেন প্রধান অতিথি, বাস্তিল দিবসে আয়োজিত অনুষ্ঠানের ‘মধ্যমণি’। আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে জি-২০ জোটের ১৮তম শীর্ষ সম্মেলনেও পৌরোহিত্য করবেন তিনি। অতীতের যেকোনো সময়ের থেকে তিনি এখন বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
রাশিয়া, ইরান, চীন এবং উত্তর কোরিয়া অনেকটা এক জোট হয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের একটি বার্তা পৌঁছে দিতে চাইছে—আর ছড়ি ঘোরানো চলবে না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ছায়ায় পশ্চিমা বিশ্ব সরাসরি পুতিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং অস্ত্রে শাণ দিতে শুরু করেছে।
নরেন্দ্র মোদি এ সময়ে পক্ষ-বিপক্ষের বিতর্ক থেকে নিজের দেশকে অনেকটা আলাদা করে রেখেছেন। গণতন্ত্রের চর্চা করেও, ভারত কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর সঙ্গে দূরত্ব না বাড়িয়ে একটি সহনশীল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে ভারত নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে সমর্থ হয়েছে। তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার নগ্ন আগ্রাসনের নিন্দা করলেও, মস্কোর ওপর অবরোধ আরোপে সায় দেননি; বরং কড়া ভাষায় পশ্চিমা বিশ্বের একতরফা অবরোধ আরোপের সমালোচনা করেছেন। যুদ্ধে ইউক্রেনের সর্বনাশ হলেও, রাশিয়া থেকে খুব সস্তায় জ্বালানি পাওয়ায় অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে ভারতের জন্য অনেকটা পৌষ মাস হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি বড় ঝাঁকুনি দিলেও ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের দেশ যুক্তরাজ্যকে পেছনে ফেলে ভারত আজ বিশ্বের পঞ্চম অর্থনীতির দেশ। গত বছর ভারতের স্বাধীনতার প্লাটিনাম জয়ন্তী, অর্থাৎ ৭৫তম বার্ষিকী পালনকালে মোদির দাম্ভিক উক্তি ছিল, ‘যে দেশটি আমাদের দীর্ঘ ২৫০ বছর শাসন করেছে, সেই দেশটি এখন আমাদের পশ্চাতে।’ বোদ্ধা অর্থনীতিবিদেরা আগে থেকেই জানিয়ে দিচ্ছেন, বিশাল জনসংখ্যায় বলীয়ান ভারতের এমন উত্থান দেশটিকে ২০৩০ সালে অর্থনৈতিক শক্তির তৃতীয় স্থানে পৌঁছে দেবে।
আপাতত যুক্তরাজ্য পশ্চাতে হলেও, ভারতের সামনে রয়েছে চীন। চীনকে পেছনে ফেলতে পারলেই বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নেওয়ার কল্পনা ‘অলীক’ হবে না।
ভারত জনসংখ্যায় এ বছর চীনকে পেছনে ফেলে বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, বর্তমানে ভারতের জনসংখ্যা ১৪২ কোটি ৮৬ লাখ এবং চীনের ১৪২ কোটি ৫৭ লাখ। আর ১৯৫০ সালে ভারতের মোট জনসংখ্যা হবে ১৬৬ কোটি ৮০ লাখ। সেখানে চীনের হবে ১৩১ কোটি ৭০ লাখ। ভারতের এমন জনসংখ্যা বৃদ্ধি চলতে থাকবে ২০৫৫ সাল পর্যন্ত। যে সময়ে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার গতি পেতে শুরু করেছে, সে সময়ে চীনের জনসংখ্যা হ্রাস সে দেশের প্রবৃদ্ধির হারকে পেছনে টেনে ধরবে। ভারতের ২ কোটি ৮০ লাখ নাগরিক প্রবাসে কর্মরত। বিশাল কর্মীবাহিনী প্রতিবছর অর্থমূল্যে ৯ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠান।
শ্রমিকদের মজুরি চীনের থেকে প্রায় তিন গুণ কম হওয়ার কারণেও বহু বিদেশি বিনিয়োগকারী চীন ছেড়ে ইতিমধ্যে ভারতে স্থায়ী ঘাঁটি গাড়তে শুরু করেছে। শিল্প ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, বিশেষ করে ডিজিটাল বিপ্লব জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আর আগামী এক দশকেই এই প্রবৃদ্ধির হার চীনকে পেছনে ফেলে ৬ শতাংশে উন্নীত হবে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। ভারতের একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন যে তাঁদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে প্রতিবছর ৫ লাখ দক্ষ প্রকৌশলী বের হয়। তবে ভারতে উচ্চশিক্ষার দরজায় কড়া নাড়ে ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। সে ক্ষেত্রে চীনে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে ৬৪ শতাংশ।
চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত ৪ হাজার কিলোমিটার বা ২ হাজার ৫০০ মাইলজুড়ে। ঘরের দরজায় পরাশক্তি প্রতিবেশী দেশ চীনের মতিগতি ভারতের খুব একটা সুবিধার মনে হয় না। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতের সজাগ দৃষ্টি। আর তাই স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ ৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার থেকে ১০ বছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৭ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইতিমধ্যে ৩০০ কোটি ডলারের অত্যাধুনিক ৩১টি ‘এমকিউ-৯বি সি গার্ডিয়ান’ নজরদারি ড্রোন কেনার চুক্তি হয়েছে। অন্য আরেকটি চুক্তি হয়েছে ভারতে তৈরি ‘তেজস’ যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন নিয়ে, যা প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে জেনারেল ইলেকট্রিকের সহায়তায় তৈরি হবে কর্ণাটকের রাষ্ট্রায়ত্ত হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেডে। এদিকে প্যারিস সফরকালে উন্নত প্রযুক্তির ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান ও ৩টি দানবাকৃতির স্করপেন ডুবোজাহাজের ক্রয়াদেশ অনুমোদন করেন মোদি। এর আগে ফ্রান্সের সঙ্গে ৮০০ কোটি ইউরো মূল্যে আরও ৩৬টি যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি হয়েছে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বান ডাকলেও ভারতকে যেসব সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখ করার মতো হলো দারিদ্র্য এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য। কর্মক্ষম জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ কর্মহীন। বিশাল জনসংখ্যার দেশটির প্রায় অর্ধেক নাগরিকের বার্ষিক আয় গড়ে ৬৫০ ডলার। তবে সে দেশেও আছে ১০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থের মালিক। মাত্র ১ শতাংশ নাগরিক ভোগ করেন জাতীয় সম্পদের ৩৩ শতাংশ। ফোর্বস-এর দেওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, ভারতে শতকোটি ডলারের ধনকুবের আছেন ১৬৯ জন। এ ছাড়া দুর্নীতি দূর করাও সম্ভব হয়নি। দেশজুড়ে বিভিন্ন অবকাঠামোর অবক্ষয় এবং ভঙ্গুর অবস্থার কারণে প্রায়ই ভয়ংকর দুর্ঘটনা জনজীবনে দুর্ভোগের কারণ হচ্ছে। ওডিশায় তিন ট্রেনের সংঘর্ষে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহতম রেল দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০ প্রাণ নিভে যায় এবং ১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়। বিভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, বর্ণের একটি মোজাইক দেশ ভারত বিরল ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। তাই ধর্মাশ্রয়ী এবং বিভেদের সস্তা রাজনীতি কারও কারও ক্ষমতার সিঁড়ি হলেও, দেশটির জন্য তা হবে আত্মঘাতী। সে দেশে মুসলিম নাগরিকের সংখ্যা ২০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। তাঁদের দ্বিতীয় সারিতে রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। এ ছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরূপ প্রভাব দেশটির জন্য কোনো ভালো বার্তা দিচ্ছে না। এমন সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে পারলেই একবিংশ শতাব্দী হবে ভারতের।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স মোটেই স্বস্তিতে নেই। ভূ-রাজনৈতিক ক্ষমতার অশান্ত বলয় যখন অতলান্তিক ছেড়ে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে ঝুঁকছে। বিশ্ব নেতৃত্বের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, দুই বৃহৎ পরাশক্তির শক্তি ক্ষয় ঘটলে মাঝখান থেকে ভারতের উত্থান ঘটবে—এ রকমটাই মনে করছেন ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। ক্ষমতার অক্ষ যে পশ্চিম থেকে মুখ ঘুরিয়ে পূর্বের দিকে ঝুঁকছে, তা আজ স্পষ্ট।
বহু শতাব্দী ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের বৈষম্যমূলক এবং একচোখা নীতি বিশ্ব মানবতাকে খণ্ডিত করেছে। সে কারণেই বিশ্ব নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানাবে। আর তাই বিস্মিত হওয়ার কিছুই থাকবে না যদি এমনটি সত্যিই ঘটে যে ২০৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার শতবার্ষিকীতে, সে দেশটির সেদিনের প্রধানমন্ত্রী দাম্ভিক উচ্চারণে ঘোষণা দিচ্ছেন, ‘আজ বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি ভারত!’
লেখক: ফ্রান্সপ্রবাসী
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে