জাহীদ রেজা নূর
৯ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনী দেশের চতুর্দিক থেকে ঢাকার দিকে অগ্রসর হয়। এই দিন লে. জেনারেল অরোরা বিমানবিষয়ক একটি চমকপ্রদ তথ্য দেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান বিমানবাহিনীর তিনটি জঙ্গিবিমানের সর্বশেষটিকেও গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমানও আর অবশিষ্ট নেই। তিনি কলকাতায় একটি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা ঢাকার লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।’
চতুর্দিক থেকেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের খবর আসতে শুরু করে। নেত্রকোনা শত্রুমুক্ত হয় এই দিন। পাকিস্তানি সেনাবাহী একটি স্টিমার চাঁদপুরের কাছে যৌথ বাহিনীর রকেটের আঘাতে ডুবে যায়। প্রায় এক শ পাকিস্তানি সৈন্যের সলিলসমাধি ঘটে। এ দিন চাঁদপুরের পতন ঘটে।
যুদ্ধজাহাজের বিষয়টি এই মুহূর্তে প্রকাশ না করার জন্য কিসিঞ্জার নিক্সনকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। এ কথা জানাজানি হয়ে গেলে বিপদ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। ট্রেজারি সেক্রেটারি কনেলি বিমানবাহী জাহাজের পরিবর্তে হেলিকপ্টার পাঠাতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাঁর যুক্তি ছিল, এ মুহূর্তে যুদ্ধজাহাজ পাঠালে জনগণের মনে ধারণা জন্মাবে, আমেরিকা সামরিকভাবে এই যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে, তাতে পূর্ব পাকিস্তানে প্রায় যে ২০০ মার্কিন নাগরিক ছিল, তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে। কনেলির এই কথায় নিক্সন রেগে যান এবং বলেন, দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষার দায়িত্ব তাঁর নিজের। তিনি সমরাস্ত্রসজ্জিত জাহাজ পাঠাতেই ইচ্ছুক। কিসিঞ্জার যখন বুঝতে পারেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট রণতরি পাঠানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছেন, তখন তিনি চীনকে অনুরোধ করেন, ভারত সীমান্তে যেন তারা সেনা সরিয়ে নেয়।
এপিপি পরিবেশিত খবরে এই দিন বলা হয়, ভারতীয় বিমানবাহিনী বেসামরিক জনসাধারণের ওপর বেপরোয়া বোমা ও মেশিনগানের গুলিবর্ষণ করছে, ফলে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক রেডক্রসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ভারত এই দিন জানিয়ে দেয়, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি এবং সৈন্য প্রত্যাহারের ব্যাপারে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ যে আবেদন করেছে, তাতে ভারত কর্ণপাত করবে না। ভারতের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘এমনকি ভারতের পশ্চিম রণাঙ্গনে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি সম্পাদনের প্রশ্নটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বাস্তব অস্তিত্বের সঙ্গে যুক্ত। আমরা সেখানে শুধু বাংলাদেশ সরকারের বৈধতা স্বীকার করি। পূর্বাঞ্চলের বাস্তব অবস্থা স্বীকার করা হলেই শুধু পূর্ব ও পশ্চিমে যুদ্ধবিরতির সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
জাতিসংঘে পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের নেতা মাহমুদ আলী বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের সামনে একটি পথই খোলা আছে, তা হলো অবিলম্বে ভারতে সোভিয়েত সামরিক সাহায্য বন্ধ করা। এই দিন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের গণসংযোগ বিভাগ একটি হ্যান্ডআউট প্রকাশ করে। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয় সে হ্যান্ডআউটে। এদিন নয়াদিল্লি থেকে পরিবেশিত খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে বিদেশিদের অপসারণের জন্য বিদেশি বিমানগুলোকে ঢাকা ও করাচি বিমানবন্দরে নির্বিঘ্নে অবতরণের সব রকম সুযোগ-সুবিধা দিতে ভারত সরকার প্রস্তুত। তবে ইসলামাবাদ বিমানবন্দর থেকে বিদেশি অপসারণের বিষয়টি ভারত সরকারের বিবেচনাধীন আছে। এ কারণে ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা বিমানবন্দরে ভারতীয় বিমানবাহিনী কোনো বিমান আক্রমণ চালাবে না।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কমান্ডার জগজিৎ সিং অরোরা এই দিন বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দুই দিক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এক অংশ রয়েছে উত্তরে, অন্য অংশ দক্ষিণে। দুই অংশের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের আক্রমণ মিত্রবাহিনীর আক্রমণের গতিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা ও আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি জাতীয় কংগ্রেসের সমন্বয়ে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ এই দিন যৌথ বৈঠকে বসে। ভারত ও ভুটান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর এটা ছিল উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠক। মুক্ত এলাকায় বেসারমিক প্রশাসনের কার্যক্রম শুরু করা এবং খাদ্য, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিয়ে আলোচনা হয়।
সূত্র: আমির হোসেন, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ; হাসান ফেরদৌস, মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত বন্ধুরা; ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বরের ইত্তেফাক ও আনন্দবাজার পত্রিকা।
৯ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনী দেশের চতুর্দিক থেকে ঢাকার দিকে অগ্রসর হয়। এই দিন লে. জেনারেল অরোরা বিমানবিষয়ক একটি চমকপ্রদ তথ্য দেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান বিমানবাহিনীর তিনটি জঙ্গিবিমানের সর্বশেষটিকেও গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমানও আর অবশিষ্ট নেই। তিনি কলকাতায় একটি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা ঢাকার লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।’
চতুর্দিক থেকেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের খবর আসতে শুরু করে। নেত্রকোনা শত্রুমুক্ত হয় এই দিন। পাকিস্তানি সেনাবাহী একটি স্টিমার চাঁদপুরের কাছে যৌথ বাহিনীর রকেটের আঘাতে ডুবে যায়। প্রায় এক শ পাকিস্তানি সৈন্যের সলিলসমাধি ঘটে। এ দিন চাঁদপুরের পতন ঘটে।
যুদ্ধজাহাজের বিষয়টি এই মুহূর্তে প্রকাশ না করার জন্য কিসিঞ্জার নিক্সনকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। এ কথা জানাজানি হয়ে গেলে বিপদ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। ট্রেজারি সেক্রেটারি কনেলি বিমানবাহী জাহাজের পরিবর্তে হেলিকপ্টার পাঠাতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাঁর যুক্তি ছিল, এ মুহূর্তে যুদ্ধজাহাজ পাঠালে জনগণের মনে ধারণা জন্মাবে, আমেরিকা সামরিকভাবে এই যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে, তাতে পূর্ব পাকিস্তানে প্রায় যে ২০০ মার্কিন নাগরিক ছিল, তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে। কনেলির এই কথায় নিক্সন রেগে যান এবং বলেন, দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষার দায়িত্ব তাঁর নিজের। তিনি সমরাস্ত্রসজ্জিত জাহাজ পাঠাতেই ইচ্ছুক। কিসিঞ্জার যখন বুঝতে পারেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট রণতরি পাঠানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছেন, তখন তিনি চীনকে অনুরোধ করেন, ভারত সীমান্তে যেন তারা সেনা সরিয়ে নেয়।
এপিপি পরিবেশিত খবরে এই দিন বলা হয়, ভারতীয় বিমানবাহিনী বেসামরিক জনসাধারণের ওপর বেপরোয়া বোমা ও মেশিনগানের গুলিবর্ষণ করছে, ফলে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক রেডক্রসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ভারত এই দিন জানিয়ে দেয়, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি এবং সৈন্য প্রত্যাহারের ব্যাপারে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ যে আবেদন করেছে, তাতে ভারত কর্ণপাত করবে না। ভারতের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘এমনকি ভারতের পশ্চিম রণাঙ্গনে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি সম্পাদনের প্রশ্নটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বাস্তব অস্তিত্বের সঙ্গে যুক্ত। আমরা সেখানে শুধু বাংলাদেশ সরকারের বৈধতা স্বীকার করি। পূর্বাঞ্চলের বাস্তব অবস্থা স্বীকার করা হলেই শুধু পূর্ব ও পশ্চিমে যুদ্ধবিরতির সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
জাতিসংঘে পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের নেতা মাহমুদ আলী বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের সামনে একটি পথই খোলা আছে, তা হলো অবিলম্বে ভারতে সোভিয়েত সামরিক সাহায্য বন্ধ করা। এই দিন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের গণসংযোগ বিভাগ একটি হ্যান্ডআউট প্রকাশ করে। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয় সে হ্যান্ডআউটে। এদিন নয়াদিল্লি থেকে পরিবেশিত খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে বিদেশিদের অপসারণের জন্য বিদেশি বিমানগুলোকে ঢাকা ও করাচি বিমানবন্দরে নির্বিঘ্নে অবতরণের সব রকম সুযোগ-সুবিধা দিতে ভারত সরকার প্রস্তুত। তবে ইসলামাবাদ বিমানবন্দর থেকে বিদেশি অপসারণের বিষয়টি ভারত সরকারের বিবেচনাধীন আছে। এ কারণে ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা বিমানবন্দরে ভারতীয় বিমানবাহিনী কোনো বিমান আক্রমণ চালাবে না।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কমান্ডার জগজিৎ সিং অরোরা এই দিন বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দুই দিক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এক অংশ রয়েছে উত্তরে, অন্য অংশ দক্ষিণে। দুই অংশের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের আক্রমণ মিত্রবাহিনীর আক্রমণের গতিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা ও আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি জাতীয় কংগ্রেসের সমন্বয়ে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ এই দিন যৌথ বৈঠকে বসে। ভারত ও ভুটান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর এটা ছিল উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠক। মুক্ত এলাকায় বেসারমিক প্রশাসনের কার্যক্রম শুরু করা এবং খাদ্য, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিয়ে আলোচনা হয়।
সূত্র: আমির হোসেন, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ; হাসান ফেরদৌস, মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত বন্ধুরা; ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বরের ইত্তেফাক ও আনন্দবাজার পত্রিকা।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১০ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে