মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
৩ মে, মঙ্গলবার ছিল পবিত্র ঈদুল ফিতর। করোনায় দুই বছর অনেকটা বন্দিজীবন শেষে এবার ঈদ কেটেছে মুক্তভাবে। ৫ থেকে ৬ কোটি মানুষ এবার শহর থেকে গ্রামে গিয়ে ঈদ করেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি। কেবল রাজধানী ঢাকা ছেড়েছে ১ কোটির বেশি মানুষ। বাস, ট্রেন, লঞ্চ-স্টিমার, বিমান ও ব্যক্তিগত যানবাহনে করে এসব মানুষ শহর থেকে গ্রামে গেছে।
এবার ঈদের আগে ছুটি বেশি পাওয়ায় ব্যাপকসংখ্যক মানুষ পরিবারের সদস্যদের আগেভাগেই গ্রামে পাঠিয়ে দিতে পেরেছে। তা ছাড়া, সড়ক সংস্কার ও ব্যবস্থাপনায় এ বছর কর্তৃপক্ষ দক্ষতা দেখাতে পেরেছে। তাই ঈদ করতে যাওয়া মানুষ অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি যেতে পেরেছে। অতীতে অবশ্য যানবাহনে মানুষের চাপ সামলানো যায়নি, সে কারণে ঈদে বাড়ি যাওয়ার ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হতো। টিকিট পাওয়া, গাড়িতে ওঠা, বাড়িতে নিরাপদে পৌঁছানো ছিল কঠিন কাজ। মানুষ গ্রামে যেতে সব ঝুঁকি মাথায় পেতে নিত। ঈদে বাড়ি যাওয়ার সেই দুর্ভোগের দৃশ্য অকল্পনীয় ছিল। এবার অবশ্য সে রকম কিছু ঘটেনি। যারা বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে বাড়ি গেছে, তাদের স্বস্তির কথাই প্রতিদিন গণমাধ্যমে আমরা শুনেছি, দেখেছি। এ বছর ঈদযাত্রার ব্যবস্থাপনার অর্জনটি যেন ভবিষ্যতে অক্ষুণ্ন থাকে, সেটি আমাদের একান্ত কামনা।
আড়াই বছর ধরে করোনার অতিমারি সংক্রমণে গোটা বিশ্ব জর্জরিত। এখনো মুক্ত হতে পারেনি অনেক অঞ্চল। আমরা বলা চলে কিছুদিন আগে মুক্ত হলেও করোনার নতুন ঢেউয়ের আশঙ্কা থেকে মোটেও মুক্ত নই। বিশেষজ্ঞরা তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিলেও দুই-তিন মাস ধরেই সেটি মেনে চলার বেলায় মানুষের মধ্যে ঔদাসীন্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে মানুষ। গোটা বিশ্বই এখন নানা অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। বাংলাদেশও এই সংকট থেকে মুক্ত নয়। আমদানি করা বেশ কিছু পণ্যসামগ্রীর দাম এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাজারও তাই অস্থির। অসাধু ব্যবসায়ীরাও এই অস্থিরতার আগুনে ঘি ঢালছেন। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ছে।
তারপরও মানুষ যেভাবে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তাতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ছোট, বড়, মাঝারি সব ধরনের ব্যবসা চাঙা হয়ে উঠছে বলে দেশের বোদ্ধাদের অভিমত। ঈদ শেষে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন এ বছর দেশে ঈদ উপলক্ষে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক লেনদেন হয়েছে। অন্যদিকে রমজান ও ঈদ উপলক্ষে সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি, বিশেষ সাশ্রয়ী মূল্যের কার্ড, ভিজিএফ সহযোগিতার আওতা বৃদ্ধি করার ফলে শহর এবং গ্রামাঞ্চলের ব্যাপকসংখ্যক দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ উপকৃত হয়েছে। তা ছাড়া, বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা হতদরিদ্র ব্যক্তিদের নানাভাবে সহযোগিতায় এবারও এগিয়ে এসেছে। রমজানে এমনিতেই আমাদের দেশের মানুষ গরিবদের কাপড়চোপড় ও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে থাকে। এর ছাপ পড়েছে এবারও সেসব দরিদ্র মানুষের শহর থেকে গ্রামে ঈদ করতে যাওয়ার উৎসাহ-উদ্দীপনার দৃশ্য দেখে।
সবচেয়ে উল্লেখ করার বিষয় হচ্ছে, এই প্রথম দেশের পোশাকশ্রমিকেরা ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পেরেছেন। নিকট অতীতে সাধারণত ঈদের আগে পোশাকশ্রমিকদের বেতন-বোনাসের দাবি নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে থাকতে দেখা যেত। এবার সেই দৃশ্যটি দেখতে হয়নি। অবশ্য আশঙ্কা ছিল, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান হয়তো বেতন-বোনাস পরিশোধে সক্ষম হবে না, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকা গেছে, এটি এবারের ঈদে আরেকটি স্বস্তিদায়ক ঘটনা। ২০২২ সালের বিশ্ব বাস্তবতায় বাংলাদেশে ঈদযাত্রার এমন দৃশ্যকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। ঈদ উপলক্ষে প্রায় ১০ লাখ মানুষ কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় বেড়াতে যাওয়ার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। প্রায় ৫ লাখ মানুষ দেশের বাইরে ঈদ করতে গেছেন বলেও প্রচারিত হয়েছে। শহর এবং গ্রামের সর্বত্রই ঈদের কেনাকাটায় যেমন ধুম পরিলক্ষিত হয়েছে, ঈদও পালিত হয়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং উৎসবের আমেজে। ব্যক্তিগতভাবে হয়তো কেউ কেউ প্রিয়জন হারানো, অসুখ-বিসুখ কিংবা অপ্রত্যাশিত কারণে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি, তেমনটি সব সময়ই ঘটে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে এবার ঈদে স্বস্তি ও বৃষ্টি দুটোই দেখা গেছে। ঈদের আগে বেশ গরম ছিল। বৃষ্টি সেই গরমে স্বস্তি ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। তবে কোথাও কোথাও বজ্রপাত ঘটায় বেশ কিছু দুঃসংবাদের কথা শুনতে হয়েছে। সামগ্রিকভাবে ঈদ এ বছর ধনী-দরিদ্র সব পরিবারেই উৎসবমুখর কিংবা স্বাচ্ছন্দ্যে কেটেছে। এমন স্বস্তির খবর গণমাধ্যমগুলোতেই ঈদের দিনে প্রচারিত হয়েছে।
কিন্তু রাজনৈতিক মহলে সাধারণভাবে ঈদের এই বাস্তবতা নিয়েও দেখা গেছে বিভাজিত মত। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত শেষে বলেছেন, দেশের মানুষ এ বছর সরকারের দুঃশাসনে ‘কষ্টে’ ঈদ পালন করছে। তিনি সে কারণে সৃষ্টিকর্তার কাছে জনগণের মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেছেন বলেও জানিয়েছেন। ঈদ উৎসব পালনে ব্যস্ত মানুষ বিএনপির এই বক্তব্য বা মনোভাবের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশে আদৌ মনোযোগ দিয়েছে কি না, সেটি জানা সম্ভব নয়।
ঈদে কোথাও কোথাও সহিংসতা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে কারও কারও জীবনহানি হয়েছে, এটি দুঃখজনক। ঈদ উৎসবে হানাহানি-মারামারি সংঘটিত হবে, এটি মোটেও কাম্য নয়। ঈদ আনন্দের। মানুষ শহর থেকে গ্রামে ঈদের আনন্দে শামিল হতে ছুটে গেছে। সেই আনন্দই তারা উপভোগ করেছে। কোথাও কোথাও যারা এই আনন্দের পরিবেশ নষ্ট করেছে, তারা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্যই তা করেছে। এতে তাদের লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয়েছে বেশি। তবে সারা দেশের সাধারণ মানুষ এসব রাজনৈতিক বক্তব্য শোনা এবং মারামারি-হানাহানি দেখার পর্যায়ে নেই। সে কারণে রাজনৈতিক দ্বিধাবিভক্তি, হানাহানি এবার খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। মানুষ এখন ফেরার অপেক্ষায়। শুক্রবার থেকে শুরু শহরে ফেরা মানুষের ঢল। রোববার অফিস খুলবে। সময় মাত্র দুই দিন। শহরে ফিরতে এবার মনে হয় ভিড়ভাট্টা বেশি হবে, পরিবহন সংকট বেড়ে যেতে পারে। নানা অজুহাতে এমন পরিস্থিতিতে পরিবহনগুলোতে বেশি ভাড়া অদায় করা হতে পারে।
বাড়ি যাওয়ার সময়ও পরিবহনগুলোতে গলাকাটা ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছিল, কিন্তু পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা সেটি বরাবরের মতোই অস্বীকার করেছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত, অর্থদণ্ড এবং সতর্ক করা সত্ত্বেও ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রবণতা থেকে পরিবহনগুলো মুক্ত থাকতে পারেনি। তবে ট্রেনের ভাড়া আগের মতোই আছে। সাধারণ যাত্রীদের আস্থা তাই ট্রেনেই বেশি দেখা যাচ্ছে। যাত্রীসাধারণের চাহিদা অনুযায়ী রেলপথে নতুন নতুন আন্তনগর সার্ভিস চালু করা প্রয়োজন। আমাদের দেশে এই খাতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটানোর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মানুষের রেলযাত্রাকে নির্বিঘ্ন, আরামদায়ক এবং সহজলভ্য করার উদ্যোগ কর্তৃপক্ষের নেওয়া উচিত। এবার বেশির ভাগ যাত্রীই রেলভ্রমণকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। দেশের অন্য পরিবহন খাতগুলো মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সুযোগ পেলেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা, যাত্রীসাধারণকে হয়রানি করা এবং পথে পথে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের জীবন বিপন্ন করতে তাদের মধ্যে কোনো দ্বিধা কাজ করছে না।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বিশেষ উৎসবে ভালো সেবা দেওয়ার মানসিকতা ও প্রতিযোগিতা থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের বেসরকারি পরিবহনগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্পূর্ণ উল্টো মানসিকতা। সে কারণে সবে ধন নীলমণি রেলওয়ে সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসার স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময় এটিকেও রুগ্ণ শিল্পে পরিণত করা হয়েছিল। ক্ষমতাসীন সরকার সেই জায়গা থেকে রেলকে বের করে এনেছে। পূর্ববর্তী সরকার কর্তৃক বন্ধ করে দেওয়া রেল মন্ত্রণালয় পুনরায় চালু করা হয়েছে, নতুন বেশ কিছু ইঞ্জিন এবং বগি ঈদ উপলক্ষে যোগ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, রেলওয়ে এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠান। নতুন নতুন রেলপথ নির্মিত হচ্ছে। সুতরাং আমরা আশা করতেই পারি, বাংলাদেশ রেলওয়ে জনগণের নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য যানবাহন হিসেবে ক্রমবর্ধমান সমৃদ্ধিতে এগিয়ে যাবে। এবারের ঈদের অভিজ্ঞতা থেকে সরকার রেল সম্প্রসারণ এবং উন্নয়নে যেমন কাজ করতে পারবে, একই সঙ্গে বেসরকারি গণপরিবহনসহ বাস, লঞ্চ, স্টিমারগুলো সেবাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেড়ে ওঠার নীতি অনুসরণ করবে, সেটিই সবার কাম্য।
৩ মে, মঙ্গলবার ছিল পবিত্র ঈদুল ফিতর। করোনায় দুই বছর অনেকটা বন্দিজীবন শেষে এবার ঈদ কেটেছে মুক্তভাবে। ৫ থেকে ৬ কোটি মানুষ এবার শহর থেকে গ্রামে গিয়ে ঈদ করেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি। কেবল রাজধানী ঢাকা ছেড়েছে ১ কোটির বেশি মানুষ। বাস, ট্রেন, লঞ্চ-স্টিমার, বিমান ও ব্যক্তিগত যানবাহনে করে এসব মানুষ শহর থেকে গ্রামে গেছে।
এবার ঈদের আগে ছুটি বেশি পাওয়ায় ব্যাপকসংখ্যক মানুষ পরিবারের সদস্যদের আগেভাগেই গ্রামে পাঠিয়ে দিতে পেরেছে। তা ছাড়া, সড়ক সংস্কার ও ব্যবস্থাপনায় এ বছর কর্তৃপক্ষ দক্ষতা দেখাতে পেরেছে। তাই ঈদ করতে যাওয়া মানুষ অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি যেতে পেরেছে। অতীতে অবশ্য যানবাহনে মানুষের চাপ সামলানো যায়নি, সে কারণে ঈদে বাড়ি যাওয়ার ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হতো। টিকিট পাওয়া, গাড়িতে ওঠা, বাড়িতে নিরাপদে পৌঁছানো ছিল কঠিন কাজ। মানুষ গ্রামে যেতে সব ঝুঁকি মাথায় পেতে নিত। ঈদে বাড়ি যাওয়ার সেই দুর্ভোগের দৃশ্য অকল্পনীয় ছিল। এবার অবশ্য সে রকম কিছু ঘটেনি। যারা বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে বাড়ি গেছে, তাদের স্বস্তির কথাই প্রতিদিন গণমাধ্যমে আমরা শুনেছি, দেখেছি। এ বছর ঈদযাত্রার ব্যবস্থাপনার অর্জনটি যেন ভবিষ্যতে অক্ষুণ্ন থাকে, সেটি আমাদের একান্ত কামনা।
আড়াই বছর ধরে করোনার অতিমারি সংক্রমণে গোটা বিশ্ব জর্জরিত। এখনো মুক্ত হতে পারেনি অনেক অঞ্চল। আমরা বলা চলে কিছুদিন আগে মুক্ত হলেও করোনার নতুন ঢেউয়ের আশঙ্কা থেকে মোটেও মুক্ত নই। বিশেষজ্ঞরা তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিলেও দুই-তিন মাস ধরেই সেটি মেনে চলার বেলায় মানুষের মধ্যে ঔদাসীন্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে মানুষ। গোটা বিশ্বই এখন নানা অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। বাংলাদেশও এই সংকট থেকে মুক্ত নয়। আমদানি করা বেশ কিছু পণ্যসামগ্রীর দাম এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাজারও তাই অস্থির। অসাধু ব্যবসায়ীরাও এই অস্থিরতার আগুনে ঘি ঢালছেন। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ছে।
তারপরও মানুষ যেভাবে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তাতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ছোট, বড়, মাঝারি সব ধরনের ব্যবসা চাঙা হয়ে উঠছে বলে দেশের বোদ্ধাদের অভিমত। ঈদ শেষে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন এ বছর দেশে ঈদ উপলক্ষে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক লেনদেন হয়েছে। অন্যদিকে রমজান ও ঈদ উপলক্ষে সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি, বিশেষ সাশ্রয়ী মূল্যের কার্ড, ভিজিএফ সহযোগিতার আওতা বৃদ্ধি করার ফলে শহর এবং গ্রামাঞ্চলের ব্যাপকসংখ্যক দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ উপকৃত হয়েছে। তা ছাড়া, বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা হতদরিদ্র ব্যক্তিদের নানাভাবে সহযোগিতায় এবারও এগিয়ে এসেছে। রমজানে এমনিতেই আমাদের দেশের মানুষ গরিবদের কাপড়চোপড় ও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে থাকে। এর ছাপ পড়েছে এবারও সেসব দরিদ্র মানুষের শহর থেকে গ্রামে ঈদ করতে যাওয়ার উৎসাহ-উদ্দীপনার দৃশ্য দেখে।
সবচেয়ে উল্লেখ করার বিষয় হচ্ছে, এই প্রথম দেশের পোশাকশ্রমিকেরা ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পেরেছেন। নিকট অতীতে সাধারণত ঈদের আগে পোশাকশ্রমিকদের বেতন-বোনাসের দাবি নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে থাকতে দেখা যেত। এবার সেই দৃশ্যটি দেখতে হয়নি। অবশ্য আশঙ্কা ছিল, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান হয়তো বেতন-বোনাস পরিশোধে সক্ষম হবে না, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকা গেছে, এটি এবারের ঈদে আরেকটি স্বস্তিদায়ক ঘটনা। ২০২২ সালের বিশ্ব বাস্তবতায় বাংলাদেশে ঈদযাত্রার এমন দৃশ্যকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। ঈদ উপলক্ষে প্রায় ১০ লাখ মানুষ কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় বেড়াতে যাওয়ার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। প্রায় ৫ লাখ মানুষ দেশের বাইরে ঈদ করতে গেছেন বলেও প্রচারিত হয়েছে। শহর এবং গ্রামের সর্বত্রই ঈদের কেনাকাটায় যেমন ধুম পরিলক্ষিত হয়েছে, ঈদও পালিত হয়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং উৎসবের আমেজে। ব্যক্তিগতভাবে হয়তো কেউ কেউ প্রিয়জন হারানো, অসুখ-বিসুখ কিংবা অপ্রত্যাশিত কারণে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি, তেমনটি সব সময়ই ঘটে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে এবার ঈদে স্বস্তি ও বৃষ্টি দুটোই দেখা গেছে। ঈদের আগে বেশ গরম ছিল। বৃষ্টি সেই গরমে স্বস্তি ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। তবে কোথাও কোথাও বজ্রপাত ঘটায় বেশ কিছু দুঃসংবাদের কথা শুনতে হয়েছে। সামগ্রিকভাবে ঈদ এ বছর ধনী-দরিদ্র সব পরিবারেই উৎসবমুখর কিংবা স্বাচ্ছন্দ্যে কেটেছে। এমন স্বস্তির খবর গণমাধ্যমগুলোতেই ঈদের দিনে প্রচারিত হয়েছে।
কিন্তু রাজনৈতিক মহলে সাধারণভাবে ঈদের এই বাস্তবতা নিয়েও দেখা গেছে বিভাজিত মত। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত শেষে বলেছেন, দেশের মানুষ এ বছর সরকারের দুঃশাসনে ‘কষ্টে’ ঈদ পালন করছে। তিনি সে কারণে সৃষ্টিকর্তার কাছে জনগণের মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেছেন বলেও জানিয়েছেন। ঈদ উৎসব পালনে ব্যস্ত মানুষ বিএনপির এই বক্তব্য বা মনোভাবের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশে আদৌ মনোযোগ দিয়েছে কি না, সেটি জানা সম্ভব নয়।
ঈদে কোথাও কোথাও সহিংসতা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে কারও কারও জীবনহানি হয়েছে, এটি দুঃখজনক। ঈদ উৎসবে হানাহানি-মারামারি সংঘটিত হবে, এটি মোটেও কাম্য নয়। ঈদ আনন্দের। মানুষ শহর থেকে গ্রামে ঈদের আনন্দে শামিল হতে ছুটে গেছে। সেই আনন্দই তারা উপভোগ করেছে। কোথাও কোথাও যারা এই আনন্দের পরিবেশ নষ্ট করেছে, তারা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্যই তা করেছে। এতে তাদের লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয়েছে বেশি। তবে সারা দেশের সাধারণ মানুষ এসব রাজনৈতিক বক্তব্য শোনা এবং মারামারি-হানাহানি দেখার পর্যায়ে নেই। সে কারণে রাজনৈতিক দ্বিধাবিভক্তি, হানাহানি এবার খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। মানুষ এখন ফেরার অপেক্ষায়। শুক্রবার থেকে শুরু শহরে ফেরা মানুষের ঢল। রোববার অফিস খুলবে। সময় মাত্র দুই দিন। শহরে ফিরতে এবার মনে হয় ভিড়ভাট্টা বেশি হবে, পরিবহন সংকট বেড়ে যেতে পারে। নানা অজুহাতে এমন পরিস্থিতিতে পরিবহনগুলোতে বেশি ভাড়া অদায় করা হতে পারে।
বাড়ি যাওয়ার সময়ও পরিবহনগুলোতে গলাকাটা ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছিল, কিন্তু পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা সেটি বরাবরের মতোই অস্বীকার করেছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত, অর্থদণ্ড এবং সতর্ক করা সত্ত্বেও ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রবণতা থেকে পরিবহনগুলো মুক্ত থাকতে পারেনি। তবে ট্রেনের ভাড়া আগের মতোই আছে। সাধারণ যাত্রীদের আস্থা তাই ট্রেনেই বেশি দেখা যাচ্ছে। যাত্রীসাধারণের চাহিদা অনুযায়ী রেলপথে নতুন নতুন আন্তনগর সার্ভিস চালু করা প্রয়োজন। আমাদের দেশে এই খাতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটানোর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মানুষের রেলযাত্রাকে নির্বিঘ্ন, আরামদায়ক এবং সহজলভ্য করার উদ্যোগ কর্তৃপক্ষের নেওয়া উচিত। এবার বেশির ভাগ যাত্রীই রেলভ্রমণকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। দেশের অন্য পরিবহন খাতগুলো মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সুযোগ পেলেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা, যাত্রীসাধারণকে হয়রানি করা এবং পথে পথে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের জীবন বিপন্ন করতে তাদের মধ্যে কোনো দ্বিধা কাজ করছে না।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বিশেষ উৎসবে ভালো সেবা দেওয়ার মানসিকতা ও প্রতিযোগিতা থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের বেসরকারি পরিবহনগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্পূর্ণ উল্টো মানসিকতা। সে কারণে সবে ধন নীলমণি রেলওয়ে সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসার স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময় এটিকেও রুগ্ণ শিল্পে পরিণত করা হয়েছিল। ক্ষমতাসীন সরকার সেই জায়গা থেকে রেলকে বের করে এনেছে। পূর্ববর্তী সরকার কর্তৃক বন্ধ করে দেওয়া রেল মন্ত্রণালয় পুনরায় চালু করা হয়েছে, নতুন বেশ কিছু ইঞ্জিন এবং বগি ঈদ উপলক্ষে যোগ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, রেলওয়ে এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠান। নতুন নতুন রেলপথ নির্মিত হচ্ছে। সুতরাং আমরা আশা করতেই পারি, বাংলাদেশ রেলওয়ে জনগণের নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য যানবাহন হিসেবে ক্রমবর্ধমান সমৃদ্ধিতে এগিয়ে যাবে। এবারের ঈদের অভিজ্ঞতা থেকে সরকার রেল সম্প্রসারণ এবং উন্নয়নে যেমন কাজ করতে পারবে, একই সঙ্গে বেসরকারি গণপরিবহনসহ বাস, লঞ্চ, স্টিমারগুলো সেবাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেড়ে ওঠার নীতি অনুসরণ করবে, সেটিই সবার কাম্য।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৪ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৮ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৮ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৮ দিন আগে