মহিউদ্দিন খান মোহন
৭ এপ্রিল একটি ইফতার মাহফিলে যোগ দিতে গিয়েছিলাম বিক্রমপুরের মাওয়ায়। দাওয়াত করেছিলেন লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বি এম শোয়েব। তিনি আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুরের ঢাকাপ্রবাসী ও স্থানীয় সাংবাদিকদের সম্মানে ছিল ইফতার মাহফিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ, বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক, বিক্রমপুর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক অলক কুমার মিত্র, অনলাইন নিউজ পোর্টাল গ্রামনগর বার্তার প্রকাশক খান নজরুল ইসলাম হান্নানসহ দুই শতাধিক সাংবাদিক অংশ নিয়েছেন ইফতারে। ইফতারপূর্ব বক্তৃতায় বি এম শোয়েব নির্বাচনে তাঁর অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে সবার দোয়া ও সহযোগিতা চাইলেন।
ইফতার শেষে আমরা কয়েকজন বসে কথা বলছিলাম। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, বেশ কয়েকজন জাঁদরেল প্রার্থী রয়েছেন এবার লৌহজং উপজেলায়। নির্বাচন সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ হলে একটি জমজমাট ভোটের লড়াই হবে বলে সবাই আশা করছেন।
বেশ একটা নির্বাচনী আমেজ এরই মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। খবর নিলাম আমার নিজের উপজেলা শ্রীনগরের। সেখানেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা নেমে পড়েছেন গণসংযোগে। উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাচনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। চার ধাপে দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল তারা ভোট দিতে আগ্রহী, যদি সে সুযোগটি পায়। একজনকে বললাম, সুযোগ কেন বলছেন? এটা তো আপনার সাংবিধানিক অধিকার! তিনি বললেন, ‘ভাই, আমাদের সে অধিকার কি এখন অক্ষুণ্ন আছে? আপনাকে তো বেশি বলার দরকার নেই। আপনাদের মতো সাংবাদিকদের লেখা থেকে আমরা বহু কিছু জানতে পারি।’ দেখলাম অনেকেরই শঙ্কা আছে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে। তা ছাড়া বিএনপি ইতিমধ্যে নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দেওয়ায় অনেকে হতাশ।
দলটির স্থানীয় অনেক নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত। তাঁরা আগ্রহী ছিলেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। নির্বাচন বর্জনের এই প্রবণতা বিএনপিকে আরও অনেক দূর পিছিয়ে দেবে—বললেন উপজেলা বিএনপির এক নেতা। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন। ১৬ এপ্রিলের আজকের পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, প্রথম ধাপের নির্বাচনে বিএনপির ৩৪ জন নেতা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
দলীয়ভাবে বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে চলেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যেই। ফলে প্রার্থীরা ক্ষমতা প্রদর্শনের পন্থা অবলম্বন করলে নির্বাচন কতটা শান্তিপূর্ণ থাকবে তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় রয়েছে; বিশেষ করে স্থানীয় এমপি বা সরকারি প্রশাসন যদি কোনো প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেয়, তাহলে নির্বাচন অবাধ না হওয়ার গ্যারান্টি হান্ড্রেড পারসেন্ট। যদিও সরকার এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বারবার মন্ত্রী-এমপিদের উপজেলা নির্বাচনে কোনোরকম হস্তক্ষেপ না করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু এই নির্দেশ পালিত হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।
এ বিষয়ে পত্রপত্রিকায় ইতিমধ্যে যেসব খবর বেরিয়েছে, তাতে এ আশঙ্কা তীব্র হয়ে উঠতে শুরু করেছে, উপজেলা নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হয়তো মন্ত্রী-এমপিদের হস্তক্ষেপের বাইরে থাকবে না। ৬ এপ্রিল একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের ‘অযাচিত’ হস্তক্ষেপ বন্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম। তাঁরা বলছেন, উপজেলা নির্বাচনে যে কেউ প্রার্থী হতে পারবেন। এ ব্যাপারে এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তা সত্ত্বেও নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় উপজেলায় ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েমের সব প্রস্তুতি শুরু করেছেন কিছু এমপি-মন্ত্রী।
ছেলে, বউ, ভাই, শ্যালক, ভগ্নিপতি, ভাগনে, বেয়াইদের উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন তাঁরা। এ বিষয়ে একজন সাবেক মন্ত্রীসহ ডজনখানেক এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ৮ এপ্রিল একই পত্রিকায় ‘উপজেলায় এমপিদের পরিবারতন্ত্র’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপজেলায় পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মেতে উঠেছেন ক্ষমতাসীন দলের এমপিরা। উপজেলা পরিষদকে নিজেদের মুঠোয় রাখতে আসন্ন নির্বাচনে নিজেদের পরিবার থেকে প্রার্থী দিচ্ছেন তাঁরা। স্বজনদের জিতিয়ে আনতে অর্থ, ক্ষমতা ও প্রভাবকে হাতিয়ার করে মাঠে নেমেছেন অন্তত ২০ জন এমপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এত দিন তাঁরা স্বজনদের দিয়ে দলীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখলে রাখায় সচেষ্ট ছিলেন। এবার নেমেছেন স্বজনদের দিয়ে উপজেলায় একচ্ছত্রাধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টায়। এ ব্যাপারে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনার প্রতি কর্ণপাত করছেন না তাঁরা; বরং হাইকমান্ডকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ‘এমপি লীগ’ ও ‘এমপিতন্ত্র’ কায়েমে আদাজল খেয়ে নেমেছেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কেন্দ্রীয় সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন এমপি পত্রিকাটিকে বলেছেন, ‘দল কাউকে মনোনয়ন দেবে না।
যাঁরা (এমপি-মন্ত্রী) ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন দিচ্ছেন, তাঁরা নির্দেশনা ভঙ্গ করছেন। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা ও দলের সাধারণ সম্পাদকের বিবৃতি কোনোভাবেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেবে, যে কেউ প্রার্থী হতে পারবে। জনগণ পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচিত করবে। কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।’ তবে তিনি এটা পরিষ্কার করেননি, যাঁরা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দল কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না। কার্যকর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার উল্লেখ না থাকলে কোনো নির্দেশনাকেই যে সংশ্লিষ্টরা পরোয়া করেন না, তা বলাই বাহুল্য।
একই দিনের আজকের পত্রিকায় ‘স্বজনদের নিয়ে অনড় এমপিরা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীরা কোনোরকম হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না, ক্ষমতাসীন দলের এমন নির্দেশনা সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন উপজেলায় নিজেদের পছন্দের এবং স্বজনদের প্রার্থী করার বিষয়ে অনড় অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় এমপিরা। প্রথম ধাপের ৫৭টির মধ্যে ১১টি উপজেলায় স্থানীয় এমপিরা স্বজনদের প্রার্থী করেছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থী ঘোষণাকারী এমপিদের বিরুদ্ধে দল কী ব্যবস্থা নেবে—আজকের পত্রিকার প্রতিবেদকের এ প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আগে নির্বাচন শুরু হোক।
এই মুহূর্তে অনেকেই নির্বাচন করার কথা বলছেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল করছেন না। আগে নির্বাচনের প্রার্থিতা, মনোনয়নপত্র চূড়ান্ত হোক, তারপর এসব প্রশ্ন এলে আমরা অবশ্যই দলীয় নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’ ওবায়দুল কাদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও তাঁর কথায় আস্থা রাখতে পারছেন না অনেকেই। কেননা, এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত কয়েকটি পৌরসভার নির্বাচনে স্থানীয় এমপির স্বজনদের নির্বাচিত করিয়ে আনা হয়েছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে স্থানীয় এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মেয়ে এবং মুন্সিগঞ্জ পৌরসভায় সেখানকার এমপি ফয়সাল বিপ্লবের স্ত্রীকে মেয়র নির্বাচিত করে আনা হয়েছে।
আমাদের দেশের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের প্রকোপ যে দিন দিন বাড়ছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের স্বজন বা পছন্দের লোকদের প্রার্থী করার প্রবণতাই তার প্রমাণ। সরকারের মন্ত্রী কিংবা দেশের একজন আইনপ্রণেতা যখন তাঁর এলাকায় স্বজন বা পোষ্যকে স্থানীয় মেয়র-চেয়ারম্যান পদে বসাতে চান, তখন এটা আর লুক্কায়িত থাকে না, তাঁরা সংশ্লিষ্ট এলাকায় একধরনের ‘ডাইনেষ্ট’ সৃষ্টি করতে চান। এই প্রবণতার লাগাম টেনে না ধরতে পারলে তা দেশের রাজনীতি ও নির্বাচনব্যবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে; যার প্রতিক্রিয়া হবে মারাত্মক নেতিবাচক।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
৭ এপ্রিল একটি ইফতার মাহফিলে যোগ দিতে গিয়েছিলাম বিক্রমপুরের মাওয়ায়। দাওয়াত করেছিলেন লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বি এম শোয়েব। তিনি আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুরের ঢাকাপ্রবাসী ও স্থানীয় সাংবাদিকদের সম্মানে ছিল ইফতার মাহফিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ, বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক, বিক্রমপুর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক অলক কুমার মিত্র, অনলাইন নিউজ পোর্টাল গ্রামনগর বার্তার প্রকাশক খান নজরুল ইসলাম হান্নানসহ দুই শতাধিক সাংবাদিক অংশ নিয়েছেন ইফতারে। ইফতারপূর্ব বক্তৃতায় বি এম শোয়েব নির্বাচনে তাঁর অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে সবার দোয়া ও সহযোগিতা চাইলেন।
ইফতার শেষে আমরা কয়েকজন বসে কথা বলছিলাম। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, বেশ কয়েকজন জাঁদরেল প্রার্থী রয়েছেন এবার লৌহজং উপজেলায়। নির্বাচন সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ হলে একটি জমজমাট ভোটের লড়াই হবে বলে সবাই আশা করছেন।
বেশ একটা নির্বাচনী আমেজ এরই মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। খবর নিলাম আমার নিজের উপজেলা শ্রীনগরের। সেখানেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা নেমে পড়েছেন গণসংযোগে। উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাচনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। চার ধাপে দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল তারা ভোট দিতে আগ্রহী, যদি সে সুযোগটি পায়। একজনকে বললাম, সুযোগ কেন বলছেন? এটা তো আপনার সাংবিধানিক অধিকার! তিনি বললেন, ‘ভাই, আমাদের সে অধিকার কি এখন অক্ষুণ্ন আছে? আপনাকে তো বেশি বলার দরকার নেই। আপনাদের মতো সাংবাদিকদের লেখা থেকে আমরা বহু কিছু জানতে পারি।’ দেখলাম অনেকেরই শঙ্কা আছে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে। তা ছাড়া বিএনপি ইতিমধ্যে নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দেওয়ায় অনেকে হতাশ।
দলটির স্থানীয় অনেক নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত। তাঁরা আগ্রহী ছিলেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। নির্বাচন বর্জনের এই প্রবণতা বিএনপিকে আরও অনেক দূর পিছিয়ে দেবে—বললেন উপজেলা বিএনপির এক নেতা। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন। ১৬ এপ্রিলের আজকের পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, প্রথম ধাপের নির্বাচনে বিএনপির ৩৪ জন নেতা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
দলীয়ভাবে বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে চলেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যেই। ফলে প্রার্থীরা ক্ষমতা প্রদর্শনের পন্থা অবলম্বন করলে নির্বাচন কতটা শান্তিপূর্ণ থাকবে তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় রয়েছে; বিশেষ করে স্থানীয় এমপি বা সরকারি প্রশাসন যদি কোনো প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেয়, তাহলে নির্বাচন অবাধ না হওয়ার গ্যারান্টি হান্ড্রেড পারসেন্ট। যদিও সরকার এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বারবার মন্ত্রী-এমপিদের উপজেলা নির্বাচনে কোনোরকম হস্তক্ষেপ না করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু এই নির্দেশ পালিত হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।
এ বিষয়ে পত্রপত্রিকায় ইতিমধ্যে যেসব খবর বেরিয়েছে, তাতে এ আশঙ্কা তীব্র হয়ে উঠতে শুরু করেছে, উপজেলা নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হয়তো মন্ত্রী-এমপিদের হস্তক্ষেপের বাইরে থাকবে না। ৬ এপ্রিল একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের ‘অযাচিত’ হস্তক্ষেপ বন্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম। তাঁরা বলছেন, উপজেলা নির্বাচনে যে কেউ প্রার্থী হতে পারবেন। এ ব্যাপারে এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তা সত্ত্বেও নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় উপজেলায় ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েমের সব প্রস্তুতি শুরু করেছেন কিছু এমপি-মন্ত্রী।
ছেলে, বউ, ভাই, শ্যালক, ভগ্নিপতি, ভাগনে, বেয়াইদের উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন তাঁরা। এ বিষয়ে একজন সাবেক মন্ত্রীসহ ডজনখানেক এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ৮ এপ্রিল একই পত্রিকায় ‘উপজেলায় এমপিদের পরিবারতন্ত্র’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপজেলায় পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মেতে উঠেছেন ক্ষমতাসীন দলের এমপিরা। উপজেলা পরিষদকে নিজেদের মুঠোয় রাখতে আসন্ন নির্বাচনে নিজেদের পরিবার থেকে প্রার্থী দিচ্ছেন তাঁরা। স্বজনদের জিতিয়ে আনতে অর্থ, ক্ষমতা ও প্রভাবকে হাতিয়ার করে মাঠে নেমেছেন অন্তত ২০ জন এমপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এত দিন তাঁরা স্বজনদের দিয়ে দলীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখলে রাখায় সচেষ্ট ছিলেন। এবার নেমেছেন স্বজনদের দিয়ে উপজেলায় একচ্ছত্রাধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টায়। এ ব্যাপারে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনার প্রতি কর্ণপাত করছেন না তাঁরা; বরং হাইকমান্ডকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ‘এমপি লীগ’ ও ‘এমপিতন্ত্র’ কায়েমে আদাজল খেয়ে নেমেছেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কেন্দ্রীয় সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন এমপি পত্রিকাটিকে বলেছেন, ‘দল কাউকে মনোনয়ন দেবে না।
যাঁরা (এমপি-মন্ত্রী) ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন দিচ্ছেন, তাঁরা নির্দেশনা ভঙ্গ করছেন। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা ও দলের সাধারণ সম্পাদকের বিবৃতি কোনোভাবেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেবে, যে কেউ প্রার্থী হতে পারবে। জনগণ পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচিত করবে। কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।’ তবে তিনি এটা পরিষ্কার করেননি, যাঁরা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দল কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না। কার্যকর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার উল্লেখ না থাকলে কোনো নির্দেশনাকেই যে সংশ্লিষ্টরা পরোয়া করেন না, তা বলাই বাহুল্য।
একই দিনের আজকের পত্রিকায় ‘স্বজনদের নিয়ে অনড় এমপিরা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীরা কোনোরকম হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না, ক্ষমতাসীন দলের এমন নির্দেশনা সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন উপজেলায় নিজেদের পছন্দের এবং স্বজনদের প্রার্থী করার বিষয়ে অনড় অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় এমপিরা। প্রথম ধাপের ৫৭টির মধ্যে ১১টি উপজেলায় স্থানীয় এমপিরা স্বজনদের প্রার্থী করেছেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থী ঘোষণাকারী এমপিদের বিরুদ্ধে দল কী ব্যবস্থা নেবে—আজকের পত্রিকার প্রতিবেদকের এ প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আগে নির্বাচন শুরু হোক।
এই মুহূর্তে অনেকেই নির্বাচন করার কথা বলছেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল করছেন না। আগে নির্বাচনের প্রার্থিতা, মনোনয়নপত্র চূড়ান্ত হোক, তারপর এসব প্রশ্ন এলে আমরা অবশ্যই দলীয় নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’ ওবায়দুল কাদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও তাঁর কথায় আস্থা রাখতে পারছেন না অনেকেই। কেননা, এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত কয়েকটি পৌরসভার নির্বাচনে স্থানীয় এমপির স্বজনদের নির্বাচিত করিয়ে আনা হয়েছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে স্থানীয় এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মেয়ে এবং মুন্সিগঞ্জ পৌরসভায় সেখানকার এমপি ফয়সাল বিপ্লবের স্ত্রীকে মেয়র নির্বাচিত করে আনা হয়েছে।
আমাদের দেশের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের প্রকোপ যে দিন দিন বাড়ছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের স্বজন বা পছন্দের লোকদের প্রার্থী করার প্রবণতাই তার প্রমাণ। সরকারের মন্ত্রী কিংবা দেশের একজন আইনপ্রণেতা যখন তাঁর এলাকায় স্বজন বা পোষ্যকে স্থানীয় মেয়র-চেয়ারম্যান পদে বসাতে চান, তখন এটা আর লুক্কায়িত থাকে না, তাঁরা সংশ্লিষ্ট এলাকায় একধরনের ‘ডাইনেষ্ট’ সৃষ্টি করতে চান। এই প্রবণতার লাগাম টেনে না ধরতে পারলে তা দেশের রাজনীতি ও নির্বাচনব্যবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে; যার প্রতিক্রিয়া হবে মারাত্মক নেতিবাচক।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৩ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৭ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৭ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৭ দিন আগে