আজকের পত্রিকা: চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণ কী?
ড. মো. গোলাম ছারোয়ার: বিগত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হলো, বিভিন্ন ধরনের কীটনাশকের (ইনসেকটিসাইড) যথেচ্ছ ব্যবহার। একটা ব্যাপার আমরা জানি না যে এডিস মশা কতটুকু প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এর প্রকৃত ব্যাপারটা আমাদের জানা নেই। তবে আমরা পরিষ্কার করে বলতে পারছি যে শুধু রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহারই করে এসেছি। ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট (আইভিএম) বা মাল্টিপল অ্যাপ্রোচের ব্যবহার করছি না। যার কারণে এডিস মশার বংশবিস্তার অনেক গুণ বেড়ে গেছে। এর জন্য অবশ্যই পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও পরিবেশের দূষণ অবস্থাও দায়ী।
আজকের পত্রিকা: ডেঙ্গু যে দেশে ঢোকে, সেখান থেকে বের হয় না। কিন্তু একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমাদের দেশে দুই যুগের বেশি সময় ধরে এর নিয়ন্ত্রণে কোনো কাজ করা হয়নি কেন?
ড. ছারোয়ার: এটি একটি চমৎকার প্রশ্ন। এ বিষয়টি আমি বারবার বিভিন্ন মিডিয়ায় বলেছি। এর কারণটা হলো, যখন নির্দিষ্ট লেভেলের নিচে মশাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব, তখনই কিন্তু ডেঙ্গুতে আমাদের মৃত্যুর হার শূন্যতে চলে আসবে। এর জন্য আমাদের মূল যে কাজটা করতে হবে তা হলো, ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট (আইভিএম) বা মাল্টিপল অ্যাপ্রোচের ব্যবহার। মানে, সমন্বিতভাবে পরিস্থিতিটাকে মোকাবিলা করছি না। আমরা শুধু রাসায়নিকের ব্যবহার করছি। যখন আমরা শুধুই রাসায়নিক ব্যবহার করছি, তখন মশা প্রতিরোধী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার অন্যান্য প্রাকৃতিক শত্রুও ধ্বংস হচ্ছে। ফলে মশার লার্ভাকে ধরে খেয়ে ফেলার কোনো প্রাকৃতিক জীব অবশিষ্ট থাকছে না। এমতাবস্থায় মশা অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে বংশবিস্তার করে চলছে।
মশার যে প্রাকৃতিক শত্রু আছে, যেগুলো কোনো ক্ষতি করবে না, এমন পদ্ধতি আমরা এখন পর্যন্ত যথার্থভাবে ব্যবহার করতে পারিনি। আমরা বারবারই শুধু রাসায়নিক ব্যবহার করছি। আর এই রাসায়নিকটাও অনেক পুরোনো। পাইরোথ্রয়েট ডেল্টামেথ্রিন, মালাথিয়ন ও টেমিফস প্রভৃতি কীটনাশক ঢাকার যে দুই সিটি করপোরেশন ব্যবহার করছে, সেগুলো কিন্তু লার্ভা ও পরিপূর্ণ মশাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য আগের মতো কাজ করছে না। সহজ কথায় কেউ যদি অনেক দিন ধরে একই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে থাকেন, তাহলে তিনি অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হবেন।
আজকের পত্রিকা: এ বিষয়টা কেন সিটি করপোরেশন বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কার্যকর করতে পারছে না?
ড. ছারোয়ার: এ ক্ষেত্রে পরিষ্কার কথা হলো, আমরা দেশে নতুন কোনো অ্যাপ্রোচ ও ধারণাকে এখনো গ্রহণ করতে পারছি না। আরেকটা বিষয়, এখন পর্যন্ত দেশে আধুনিক কোনো ল্যাবরেটরি তৈরি করা হয়নি। যেখানে মশার জৈবিক দমনের জন্য সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার করা যায়, যেখানে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারব। সেটা এখন পর্যন্ত তৈরি করা হয়নি।
দেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান, যেমন জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান (নিপসম), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, আইইডিসিআর ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কীটতত্ত্ব বিভাগ আছে। কিন্তু কোথাও মশা এবং এর ভেতরের ভয়ংকর ভাইরাসটির জেনম সিকোয়েন্সিং করার জন্য মলিকুলার ল্যাব নেই। যেখানে গবেষণা এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল আমরা প্রয়োগ (ইমপ্লিমেন্ট) করতে পারব। আর এসব কাজ করতে গেলে যে ধরনের লোকবল দরকার তার যথেষ্ট ঘাটতি আছে। এ কারণে সিটি করপোরেশন বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজগুলো ততটা কার্যকর হচ্ছে না।
আজকের পত্রিকা: এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজনন প্রতিরোধে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি। এ ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ নয় কি?
ড. ছারোয়ার: এখন পর্যন্ত দুই সিটি করপোরেশনের যতজন কীটতত্ত্ববিদের প্রয়োজন ছিল, সেই সংখ্যক লোক সেখানে নেই। কীটতত্ত্ববিদের যে ধরনের অর্গানোগ্রাম থাকার কথা, তারও কোনো পদায়ন করা হয়নি। এটাও একটা বড় ধরনের সমস্যা। যদি আমরা ভারতের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, সেখানে কিন্তু ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আলাদা ইনস্টিটিউট আছে। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান তো দূরের কথা, গোছানো কোনো অর্গানোগ্রামই তৈরি করা হয়নি।
দেশের এ রকম ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সবকিছু ধার করে নিয়ে আসা হচ্ছে। এডিস মশার প্রজনন মৌসুমে লার্ভার পরিমাণ বিপৎসীমা অতিক্রম করছে, তখন বিভিন্ন জায়গা থেকে কীটতত্ত্ববিদদের নিয়ে এসে কিছু পরামর্শ নিয়ে এ কাজগুলো করা হচ্ছে। এ রকম জাতীয় একটা দুর্যোগ মুহূর্তে এভাবে কি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব?আমি যে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান, এখানেও কিন্তু লোকবলের সংকট আছে। এখানে যেমন রিসোর্সের স্বল্পতা আছে, তেমনি রিসোর্স পারসনের স্বল্পতাও আছে। এসব স্বল্পতার কারণেই কিন্তু আমরা এ জায়গাগুলোতে সঠিকভাবে হাত দিতে পারছি না।
আমার মনে হয়, এ রকম পরিস্থিতিতে এ জায়গাগুলোতে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার সময় এখন। কাজ করতে হবে ত্বরিত গতিতে। এটা কিন্তু একটা মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। এসব কাজ করার জন্য সমন্বয়টা খুব দরকার। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজগুলো করতে হবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের সঙ্গেও যোগাযোগটা রাখতে হবে। কারণ রিসোর্স পারসন তো সে সব জায়গা থেকেই আসবে। যখন আমরা এডিস মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জৈবিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে যাব, তখন কিন্তু ল্যাবরেটরিতে দুটি ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করতে হবে। একটির নাম হচ্ছে উলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া, আরেকটির নাম বিটিআই।
উত্তর সিটি করপোরেশন বিটিআই পাউডার কেনার জন্য টেন্ডার আহ্বান করেছে, কিন্তু দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এখন পর্যন্ত এর কোনো উদ্যোগই নেয়নি। বিটিআইকে মশার লার্ভা খাবার হিসেবে ব্যবহার করে। যে পানির মধ্যে লার্ভা থাকে, সেখানে যদি বিটিআই পাউডার দেওয়া হয় তারা সেটা খেয়ে ফেলে। বিটিআই তখন তার শরীরের মধ্যে যে সেল আছে, তাকে ফুটো করে দিয়ে মশার লার্ভাটাকে মেরে ফেলে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মশার লার্ভাটা যখন মরে যায়, তখন মরে যাওয়ার ফলে তার চারপাশে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়, তা পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না। আবার ওই পানির মধ্যে যদি অন্য কোনো জীব থাকে, তারও কোনো ক্ষতি করে না এই বিটিআই পাউডার। তখন এটা মশার বংশ বৃদ্ধি মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। এটা একটা পরিবেশবান্ধব পাউডার।
আরেকটা হচ্ছে, আমরা জানি, মশা প্রকৃতিতে থাকবেই। কিন্তু মশার রোগ ছড়ানোর যে ক্ষমতা সেটাকে রোধ করতে হবে। তাদের রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা থাকবে না।জীবাণুটি তার শরীরের মধ্যে রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। সে জন্য উলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার ঘটাতে হবে। ল্যাবরেটরিতে এটাকে মশার শরীরের মধ্যে প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্যই প্রয়োজন বিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদের। আর ল্যাবরেটরিতে তৈরি উলবাকিয়াযুক্ত মশা প্রকৃতিতে ছেড়ে দিতে পারলে কয়েক প্রজন্মের পর আমাদের প্রকৃতিতে শুধু এ ধরনের মশাই বিরাজ করবে। প্রকৃতিতে এ ধরনের মশা থাকলে ডেঙ্গুর যে ভাইরাস থাকবে, সেটা আর আক্রমণ করতে পারবে না। ডেঙ্গু আক্রমণ করতে না পারলে আমাদের এ নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না। এই প্রক্রিয়াটা যদি আমাদের দেশে ব্যবহার করা হয়, তাহলে আমরা ডেঙ্গুর মহামারি থেকে রক্ষা পাব।
আজকের পত্রিকা: ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আপনার পরামর্শ কী?
ড. ছারোয়ার: ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের আগে লার্ভা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সে জন্য আগে লার্ভার প্রজনন স্থান শনাক্ত করতে হবে। এই শনাক্তকরণ স্থানটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা শনাক্তের পরে সেই নির্দিষ্ট জায়গায় যথার্থভাবে যদি বায়ো কন্ট্রোল পদ্ধতিটা অ্যাপ্লাই করতে পারি, তাহলে সেটা পরিবেশবান্ধব হবে এবং তা নিয়ন্ত্রণে আসবে। শুধু রাসায়নিক কীটনাশক দিয়ে মশাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। আমার পরামর্শ হলো, ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট (আইভিএম) বা মাল্টিপল অ্যাপ্রোচ ব্যবহারের মধ্যে বায়ো কন্ট্রোল পদ্ধতি ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে সাধারণ জনগণকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এ জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ যেসব প্রতিষ্ঠান ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করছে তারাসহ সাধারণ জনগণকে নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজটা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মিডিয়া বড় ধরনের ভূমিকা পালন করবে। আর এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। সবাইকে এক হয়েই এ কাজ করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
ড. ছারোয়ার: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা: চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণ কী?
ড. মো. গোলাম ছারোয়ার: বিগত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হলো, বিভিন্ন ধরনের কীটনাশকের (ইনসেকটিসাইড) যথেচ্ছ ব্যবহার। একটা ব্যাপার আমরা জানি না যে এডিস মশা কতটুকু প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এর প্রকৃত ব্যাপারটা আমাদের জানা নেই। তবে আমরা পরিষ্কার করে বলতে পারছি যে শুধু রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহারই করে এসেছি। ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট (আইভিএম) বা মাল্টিপল অ্যাপ্রোচের ব্যবহার করছি না। যার কারণে এডিস মশার বংশবিস্তার অনেক গুণ বেড়ে গেছে। এর জন্য অবশ্যই পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও পরিবেশের দূষণ অবস্থাও দায়ী।
আজকের পত্রিকা: ডেঙ্গু যে দেশে ঢোকে, সেখান থেকে বের হয় না। কিন্তু একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমাদের দেশে দুই যুগের বেশি সময় ধরে এর নিয়ন্ত্রণে কোনো কাজ করা হয়নি কেন?
ড. ছারোয়ার: এটি একটি চমৎকার প্রশ্ন। এ বিষয়টি আমি বারবার বিভিন্ন মিডিয়ায় বলেছি। এর কারণটা হলো, যখন নির্দিষ্ট লেভেলের নিচে মশাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব, তখনই কিন্তু ডেঙ্গুতে আমাদের মৃত্যুর হার শূন্যতে চলে আসবে। এর জন্য আমাদের মূল যে কাজটা করতে হবে তা হলো, ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট (আইভিএম) বা মাল্টিপল অ্যাপ্রোচের ব্যবহার। মানে, সমন্বিতভাবে পরিস্থিতিটাকে মোকাবিলা করছি না। আমরা শুধু রাসায়নিকের ব্যবহার করছি। যখন আমরা শুধুই রাসায়নিক ব্যবহার করছি, তখন মশা প্রতিরোধী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার অন্যান্য প্রাকৃতিক শত্রুও ধ্বংস হচ্ছে। ফলে মশার লার্ভাকে ধরে খেয়ে ফেলার কোনো প্রাকৃতিক জীব অবশিষ্ট থাকছে না। এমতাবস্থায় মশা অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে বংশবিস্তার করে চলছে।
মশার যে প্রাকৃতিক শত্রু আছে, যেগুলো কোনো ক্ষতি করবে না, এমন পদ্ধতি আমরা এখন পর্যন্ত যথার্থভাবে ব্যবহার করতে পারিনি। আমরা বারবারই শুধু রাসায়নিক ব্যবহার করছি। আর এই রাসায়নিকটাও অনেক পুরোনো। পাইরোথ্রয়েট ডেল্টামেথ্রিন, মালাথিয়ন ও টেমিফস প্রভৃতি কীটনাশক ঢাকার যে দুই সিটি করপোরেশন ব্যবহার করছে, সেগুলো কিন্তু লার্ভা ও পরিপূর্ণ মশাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য আগের মতো কাজ করছে না। সহজ কথায় কেউ যদি অনেক দিন ধরে একই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে থাকেন, তাহলে তিনি অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হবেন।
আজকের পত্রিকা: এ বিষয়টা কেন সিটি করপোরেশন বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কার্যকর করতে পারছে না?
ড. ছারোয়ার: এ ক্ষেত্রে পরিষ্কার কথা হলো, আমরা দেশে নতুন কোনো অ্যাপ্রোচ ও ধারণাকে এখনো গ্রহণ করতে পারছি না। আরেকটা বিষয়, এখন পর্যন্ত দেশে আধুনিক কোনো ল্যাবরেটরি তৈরি করা হয়নি। যেখানে মশার জৈবিক দমনের জন্য সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার করা যায়, যেখানে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারব। সেটা এখন পর্যন্ত তৈরি করা হয়নি।
দেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান, যেমন জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান (নিপসম), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, আইইডিসিআর ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কীটতত্ত্ব বিভাগ আছে। কিন্তু কোথাও মশা এবং এর ভেতরের ভয়ংকর ভাইরাসটির জেনম সিকোয়েন্সিং করার জন্য মলিকুলার ল্যাব নেই। যেখানে গবেষণা এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল আমরা প্রয়োগ (ইমপ্লিমেন্ট) করতে পারব। আর এসব কাজ করতে গেলে যে ধরনের লোকবল দরকার তার যথেষ্ট ঘাটতি আছে। এ কারণে সিটি করপোরেশন বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজগুলো ততটা কার্যকর হচ্ছে না।
আজকের পত্রিকা: এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজনন প্রতিরোধে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি। এ ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ নয় কি?
ড. ছারোয়ার: এখন পর্যন্ত দুই সিটি করপোরেশনের যতজন কীটতত্ত্ববিদের প্রয়োজন ছিল, সেই সংখ্যক লোক সেখানে নেই। কীটতত্ত্ববিদের যে ধরনের অর্গানোগ্রাম থাকার কথা, তারও কোনো পদায়ন করা হয়নি। এটাও একটা বড় ধরনের সমস্যা। যদি আমরা ভারতের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, সেখানে কিন্তু ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আলাদা ইনস্টিটিউট আছে। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান তো দূরের কথা, গোছানো কোনো অর্গানোগ্রামই তৈরি করা হয়নি।
দেশের এ রকম ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সবকিছু ধার করে নিয়ে আসা হচ্ছে। এডিস মশার প্রজনন মৌসুমে লার্ভার পরিমাণ বিপৎসীমা অতিক্রম করছে, তখন বিভিন্ন জায়গা থেকে কীটতত্ত্ববিদদের নিয়ে এসে কিছু পরামর্শ নিয়ে এ কাজগুলো করা হচ্ছে। এ রকম জাতীয় একটা দুর্যোগ মুহূর্তে এভাবে কি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব?আমি যে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান, এখানেও কিন্তু লোকবলের সংকট আছে। এখানে যেমন রিসোর্সের স্বল্পতা আছে, তেমনি রিসোর্স পারসনের স্বল্পতাও আছে। এসব স্বল্পতার কারণেই কিন্তু আমরা এ জায়গাগুলোতে সঠিকভাবে হাত দিতে পারছি না।
আমার মনে হয়, এ রকম পরিস্থিতিতে এ জায়গাগুলোতে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার সময় এখন। কাজ করতে হবে ত্বরিত গতিতে। এটা কিন্তু একটা মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। এসব কাজ করার জন্য সমন্বয়টা খুব দরকার। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজগুলো করতে হবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের সঙ্গেও যোগাযোগটা রাখতে হবে। কারণ রিসোর্স পারসন তো সে সব জায়গা থেকেই আসবে। যখন আমরা এডিস মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জৈবিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে যাব, তখন কিন্তু ল্যাবরেটরিতে দুটি ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করতে হবে। একটির নাম হচ্ছে উলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া, আরেকটির নাম বিটিআই।
উত্তর সিটি করপোরেশন বিটিআই পাউডার কেনার জন্য টেন্ডার আহ্বান করেছে, কিন্তু দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এখন পর্যন্ত এর কোনো উদ্যোগই নেয়নি। বিটিআইকে মশার লার্ভা খাবার হিসেবে ব্যবহার করে। যে পানির মধ্যে লার্ভা থাকে, সেখানে যদি বিটিআই পাউডার দেওয়া হয় তারা সেটা খেয়ে ফেলে। বিটিআই তখন তার শরীরের মধ্যে যে সেল আছে, তাকে ফুটো করে দিয়ে মশার লার্ভাটাকে মেরে ফেলে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মশার লার্ভাটা যখন মরে যায়, তখন মরে যাওয়ার ফলে তার চারপাশে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়, তা পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না। আবার ওই পানির মধ্যে যদি অন্য কোনো জীব থাকে, তারও কোনো ক্ষতি করে না এই বিটিআই পাউডার। তখন এটা মশার বংশ বৃদ্ধি মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। এটা একটা পরিবেশবান্ধব পাউডার।
আরেকটা হচ্ছে, আমরা জানি, মশা প্রকৃতিতে থাকবেই। কিন্তু মশার রোগ ছড়ানোর যে ক্ষমতা সেটাকে রোধ করতে হবে। তাদের রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা থাকবে না।জীবাণুটি তার শরীরের মধ্যে রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। সে জন্য উলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার ঘটাতে হবে। ল্যাবরেটরিতে এটাকে মশার শরীরের মধ্যে প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্যই প্রয়োজন বিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদের। আর ল্যাবরেটরিতে তৈরি উলবাকিয়াযুক্ত মশা প্রকৃতিতে ছেড়ে দিতে পারলে কয়েক প্রজন্মের পর আমাদের প্রকৃতিতে শুধু এ ধরনের মশাই বিরাজ করবে। প্রকৃতিতে এ ধরনের মশা থাকলে ডেঙ্গুর যে ভাইরাস থাকবে, সেটা আর আক্রমণ করতে পারবে না। ডেঙ্গু আক্রমণ করতে না পারলে আমাদের এ নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না। এই প্রক্রিয়াটা যদি আমাদের দেশে ব্যবহার করা হয়, তাহলে আমরা ডেঙ্গুর মহামারি থেকে রক্ষা পাব।
আজকের পত্রিকা: ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আপনার পরামর্শ কী?
ড. ছারোয়ার: ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের আগে লার্ভা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সে জন্য আগে লার্ভার প্রজনন স্থান শনাক্ত করতে হবে। এই শনাক্তকরণ স্থানটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা শনাক্তের পরে সেই নির্দিষ্ট জায়গায় যথার্থভাবে যদি বায়ো কন্ট্রোল পদ্ধতিটা অ্যাপ্লাই করতে পারি, তাহলে সেটা পরিবেশবান্ধব হবে এবং তা নিয়ন্ত্রণে আসবে। শুধু রাসায়নিক কীটনাশক দিয়ে মশাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। আমার পরামর্শ হলো, ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট (আইভিএম) বা মাল্টিপল অ্যাপ্রোচ ব্যবহারের মধ্যে বায়ো কন্ট্রোল পদ্ধতি ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে সাধারণ জনগণকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এ জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ যেসব প্রতিষ্ঠান ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করছে তারাসহ সাধারণ জনগণকে নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজটা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মিডিয়া বড় ধরনের ভূমিকা পালন করবে। আর এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। সবাইকে এক হয়েই এ কাজ করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
ড. ছারোয়ার: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে