জাহীদ রেজা নূর
ইরান আর সৌদি আরবের মধ্যে আবার কূটনৈতিক সম্পর্ক বহাল হচ্ছে, এটা অনেকের জন্য ছিল চমক। চীনের পৌরহিত্যে এ রকম একটি ঘটনা ঘটে যাবে, সেটা কে জানত? এখন কোনো রাখঢাক না করেই বলা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে পরিবর্তন আসছে।
এমন সময় ঘটনাটি ঘটল, যখন পৃথিবীজুড়েই চলছে অস্থিরতা। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের তাপ এসে ঝলসে দিচ্ছে পুরো পৃথিবী। মূল্যস্ফীতি এড়াতে পারছে না কেউ। আমাদের দেশেও তার ছোঁয়া লেগেছে। দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম, বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে একটা প্রবল ধাক্কা এসে বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল সাধারণ মানুষের জীবন। এখনো টিসিবির পণ্যসামগ্রীর সারিতে অসহায় মানুষের চোখমুখ বলে দেয়, অস্থিতিশীল জীবনের দোলনায় আর কতকাল দুলতে হবে, তা তাদের জানা নেই।
সাত বছর পর
সাত বছর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। অবশেষে ১০ মার্চ ইরান আর সৌদি আরবের প্রতিনিধিরা পিকিংয়ে গিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে জানালেন, দূরত্বটা কমানো দরকার। আর কীভাবে সে দূরত্ব কমবে, তা নিশ্চিত করার জন্য প্রথমেই ভাবা হয়েছে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠকের কথা। দুই মাসের মধ্যে দুই দেশেই গড়ে উঠবে কূটনৈতিক আবাস। সমঝোতা চুক্তিতে যাঁরা স্বাক্ষর করেছেন, তাঁরা হলেন ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সচিব আলী শামখানি ও সৌদি আরবের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের উপদেষ্টা মুসাদ বিন মুহাম্মদ আল আইবান। চীনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ওয়ান ই নামের ঊর্ধ্বতন কূটনীতিক।
বলে রাখা দরকার, ২০১৫ সালের মার্চ মাসে তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে সম্পর্কে চিড় ধরেছিল। অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, সে সময় সৌদি আরবের নেতৃত্বে একটি জোট ইয়েমেনে শিয়া হুতিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়েছিল। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তেহরানে সৌদি দূতাবাসে যখন একদল মানুষ আক্রমণ চালিয়েছিল, তখন দুই দেশের মধ্যে আর কূটনৈতিক সম্পর্ক টিকে থাকতে পারেনি।
দীর্ঘদিন পর তারা আবার একসঙ্গে চলবে বলে ঠিক করেছে।
যেসব কারণে সংকট
মধ্যপ্রাচ্যে এই দুটি দেশ কোনোভাবেই সমঝোতায় পৌঁছাতে পারছিল না। কে কার চেয়ে ক্ষমতাবান, এ প্রশ্নটার উত্তর দুই দেশে দুই রকম। ইসলাম ধর্মের শিয়া-সুন্নি নিয়ে মতভেদ বেশির ভাগ সময়ই দেশ দুটিকে সংকটের আবর্তে জড়িয়ে রেখেছে। ইরান শিয়া মতবাদে দীক্ষিত, সৌদি আরবে সুন্নিরাই প্রধান। ফলে আঞ্চলিক নেতা হিসেবে শিয়া না সুন্নিরা দাঁড়িয়ে যাবে, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের যেসব জায়গায় শিয়াদের প্রাধান্য, সেখানে তারা স্বভাবতই চাইছিল ইরান হয়ে উঠুক নেতা। যেখানে সুন্নিরা প্রধান, সেখানে সৌদি আরবের পক্ষেই দাঁড়াবে নাগরিকেরা। হজরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মেছিলেন সৌদি আরবে, সেটা সৌদিদের প্রতি অনেককেই দুর্বল করে তোলে, আবার ১৯৭৯ সালে ইরানেই ঘটেছে ইসলামি বিপ্লব। ফলে ইরানকেও মুসলমানদের অগ্রযাত্রার নায়ক ভাবা হয়।
২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ইরাকের ক্ষমতা থেকে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করেছিল। সাদ্দাম ছিলেন সুন্নি। সাদ্দামের পতনের পর ইরানের সঙ্গে ভারসাম্য রাখার মতো নেতৃত্বের আর জন্ম হয়নি ইরাকে। ২০১১ সালের আরব বসন্তের ঢেউ বিপর্যস্ত করে তুলেছিল অঞ্চলটিকে। সৌদি আরব ও ইরান—দুই দেশই বিপ্লবের ফসল নিজের ঘরে তোলার চেষ্টা করেছিল। সিরিয়া, বাহরাইন আর ইয়েমেনে তখন কী ঘটছিল, সে কথা নিশ্চয়ই অনেকের মনে পড়ে যাবে। আর তাতেও ইরান ও সৌদি আরবের কার কী ভূমিকা ছিল, সেটা স্পষ্ট হবে।
কোথায় কোন দেশ শক্তিধর
কৌশলগত কারণে সংঘর্ষরত আরব দেশগুলোর আঞ্চলিক লড়াইয়ে ইরানের রয়েছে শক্ত অবস্থান। ইরান ও রাশিয়ার সমর্থনের কারণে সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি বাশার আল-আসাদ বিরোধী শক্তিকে দমন করতে সক্ষম হয়েছেন। এই বিরোধী শক্তি সৌদি-সমর্থিত। তাই এখানে ইরানের কাছে সৌদি আরবের পরাজয় ঘটেছে, সেটা বলা যায়। ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে নস্যাৎ করার জন্য সৌদি আরব বহুদিন ধরেই তৎপর ছিল।
সৌদি আরবের তরুণ নেতা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সামরিক নেতৃত্ব, তাঁর দুঃসাহসিকতা এই এলাকার আঞ্চলিক উত্তেজনাকে বাড়িয়ে তুলেছিল। অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, সৌদিরা প্রতিবেশী ইয়েমেনে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধ করে ইরানের কর্তৃত্ব খর্ব করার কাজটি করেছে। কিন্তু সে কাজে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছিল, তাতে একটা এসপার-ওসপার হওয়া খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল। অনেকেই বিশ্বাস করেন, লেবাননের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে সৌদি আরব। ইরান-সমর্থিত শিয়া গ্রুপ হিজবুল্লাহ সেখানে দারুণ সক্রিয়।
এই খেলায় বিদেশি খেলোয়াড়েরাও কম সক্রিয় ছিল না। আমরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা এখানে বলতে পারি। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন একজন তুখোড় খেলোয়াড়। আবার, মুখে মুখে ইসরায়েলের বিরোধিতা করে মুসলিম দেশগুলো। কিন্তু আঞ্চলিক রাজনীতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে সমঝোতাও করে। ইসরায়েল ইরানকে সন্দেহের চোখে দেখে, শত্রু বলেই মনে করে। ইরানকে ঠেকানোর খেলায় সৌদি আরব ইসরায়েলকে পায় পাশে। সিরিয়ায় ইরান-নিয়ন্ত্রিত জঙ্গি বাহিনী ইসরায়েলের সীমান্তে পৌঁছে যেতে পারে, এ আশঙ্কা ইসরায়েলের আছে। আরেকটু খেয়াল করলেই যে কারও চোখে পড়বে, ইসরায়েল ও সৌদি আরব দুটি দেশই ২০১৫ সালে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার জন্য ২০১৫ সালে যে আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়েছিল, তার সোচ্চার বিরোধিতা করেছিল। তারা বলেছিল, এই ব্যবস্থা মোটেও যথেষ্ট নয়, ইরান যদি চায়, তাহলে চুক্তির ফাঁকফোকর খুঁজে নিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারবে।
এখন কী হতে পারে?
যদিও যুক্তরাষ্ট্র ইরান-সৌদি সুসম্পর্ককে স্বাগত জানিয়েছে, তবুও বলা যায়, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এই মেরুকরণে যুক্তরাষ্ট্রের থাকবে সজাগ দৃষ্টি। ইরান ও সৌদি আরব সমঝোতায় পৌঁছানোর অর্থ হলো, বহুদিন ধরে এ অঞ্চলে টিকে থাকা মার্কিন-ইসরায়েলি বলয়ে নতুন আঘাত আসতে পারে। এতে ইসরায়েল কিছুটা কাবু হয়ে যেতে পারে। সৌদি আরবের মুখাপেক্ষী আরব দেশগুলো এখন ইসরায়েলের ব্যাপারে সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবতে পারে।
অন্যদিকে, যে চীনের মাধ্যমে এই সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টি হলো, সে চীনও ধোয়া তুলসীপাতা নয়। তাদের দেশও কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী। কিন্তু বহুদিন পর যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের বাইরের একটি দেশ এসে মধ্যপ্রাচ্য কূটনীতিতে সফল হলো। এটা সারা বিশ্বে চীনের কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে ওঠার দিকে অগ্রসর হওয়ার একটা উদাহরণ।
বহু যুগ ধরে আরব দেশগুলো নিজের ভাবনা নিজে না ভেবে অন্যকে ভাবতে দিয়েছে, অন্যরা চেষ্টা করেছে অঞ্চলটিকে অস্থিতিশীল করে ফায়দা লুটতে। নতুন এই সমীকরণের ফলে আরব দেশগুলো নিজেদের পরিচয়কে তুলে ধরতে পারবে কি না, সেটা একটি লাখ টাকার প্রশ্ন। নইলে এক বলয় থেকে অন্য বলয়ে নিজেদের ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আরব বিশ্বের জন্য ইতিবাচক নতুন কিছুই ঘটবে না।
জাহীদ রেজা নূর, উপসম্পাদক আজকের পত্রিকা
ইরান আর সৌদি আরবের মধ্যে আবার কূটনৈতিক সম্পর্ক বহাল হচ্ছে, এটা অনেকের জন্য ছিল চমক। চীনের পৌরহিত্যে এ রকম একটি ঘটনা ঘটে যাবে, সেটা কে জানত? এখন কোনো রাখঢাক না করেই বলা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে পরিবর্তন আসছে।
এমন সময় ঘটনাটি ঘটল, যখন পৃথিবীজুড়েই চলছে অস্থিরতা। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের তাপ এসে ঝলসে দিচ্ছে পুরো পৃথিবী। মূল্যস্ফীতি এড়াতে পারছে না কেউ। আমাদের দেশেও তার ছোঁয়া লেগেছে। দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম, বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে একটা প্রবল ধাক্কা এসে বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল সাধারণ মানুষের জীবন। এখনো টিসিবির পণ্যসামগ্রীর সারিতে অসহায় মানুষের চোখমুখ বলে দেয়, অস্থিতিশীল জীবনের দোলনায় আর কতকাল দুলতে হবে, তা তাদের জানা নেই।
সাত বছর পর
সাত বছর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। অবশেষে ১০ মার্চ ইরান আর সৌদি আরবের প্রতিনিধিরা পিকিংয়ে গিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে জানালেন, দূরত্বটা কমানো দরকার। আর কীভাবে সে দূরত্ব কমবে, তা নিশ্চিত করার জন্য প্রথমেই ভাবা হয়েছে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠকের কথা। দুই মাসের মধ্যে দুই দেশেই গড়ে উঠবে কূটনৈতিক আবাস। সমঝোতা চুক্তিতে যাঁরা স্বাক্ষর করেছেন, তাঁরা হলেন ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সচিব আলী শামখানি ও সৌদি আরবের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের উপদেষ্টা মুসাদ বিন মুহাম্মদ আল আইবান। চীনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ওয়ান ই নামের ঊর্ধ্বতন কূটনীতিক।
বলে রাখা দরকার, ২০১৫ সালের মার্চ মাসে তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে সম্পর্কে চিড় ধরেছিল। অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, সে সময় সৌদি আরবের নেতৃত্বে একটি জোট ইয়েমেনে শিয়া হুতিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়েছিল। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তেহরানে সৌদি দূতাবাসে যখন একদল মানুষ আক্রমণ চালিয়েছিল, তখন দুই দেশের মধ্যে আর কূটনৈতিক সম্পর্ক টিকে থাকতে পারেনি।
দীর্ঘদিন পর তারা আবার একসঙ্গে চলবে বলে ঠিক করেছে।
যেসব কারণে সংকট
মধ্যপ্রাচ্যে এই দুটি দেশ কোনোভাবেই সমঝোতায় পৌঁছাতে পারছিল না। কে কার চেয়ে ক্ষমতাবান, এ প্রশ্নটার উত্তর দুই দেশে দুই রকম। ইসলাম ধর্মের শিয়া-সুন্নি নিয়ে মতভেদ বেশির ভাগ সময়ই দেশ দুটিকে সংকটের আবর্তে জড়িয়ে রেখেছে। ইরান শিয়া মতবাদে দীক্ষিত, সৌদি আরবে সুন্নিরাই প্রধান। ফলে আঞ্চলিক নেতা হিসেবে শিয়া না সুন্নিরা দাঁড়িয়ে যাবে, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের যেসব জায়গায় শিয়াদের প্রাধান্য, সেখানে তারা স্বভাবতই চাইছিল ইরান হয়ে উঠুক নেতা। যেখানে সুন্নিরা প্রধান, সেখানে সৌদি আরবের পক্ষেই দাঁড়াবে নাগরিকেরা। হজরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মেছিলেন সৌদি আরবে, সেটা সৌদিদের প্রতি অনেককেই দুর্বল করে তোলে, আবার ১৯৭৯ সালে ইরানেই ঘটেছে ইসলামি বিপ্লব। ফলে ইরানকেও মুসলমানদের অগ্রযাত্রার নায়ক ভাবা হয়।
২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ইরাকের ক্ষমতা থেকে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করেছিল। সাদ্দাম ছিলেন সুন্নি। সাদ্দামের পতনের পর ইরানের সঙ্গে ভারসাম্য রাখার মতো নেতৃত্বের আর জন্ম হয়নি ইরাকে। ২০১১ সালের আরব বসন্তের ঢেউ বিপর্যস্ত করে তুলেছিল অঞ্চলটিকে। সৌদি আরব ও ইরান—দুই দেশই বিপ্লবের ফসল নিজের ঘরে তোলার চেষ্টা করেছিল। সিরিয়া, বাহরাইন আর ইয়েমেনে তখন কী ঘটছিল, সে কথা নিশ্চয়ই অনেকের মনে পড়ে যাবে। আর তাতেও ইরান ও সৌদি আরবের কার কী ভূমিকা ছিল, সেটা স্পষ্ট হবে।
কোথায় কোন দেশ শক্তিধর
কৌশলগত কারণে সংঘর্ষরত আরব দেশগুলোর আঞ্চলিক লড়াইয়ে ইরানের রয়েছে শক্ত অবস্থান। ইরান ও রাশিয়ার সমর্থনের কারণে সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি বাশার আল-আসাদ বিরোধী শক্তিকে দমন করতে সক্ষম হয়েছেন। এই বিরোধী শক্তি সৌদি-সমর্থিত। তাই এখানে ইরানের কাছে সৌদি আরবের পরাজয় ঘটেছে, সেটা বলা যায়। ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে নস্যাৎ করার জন্য সৌদি আরব বহুদিন ধরেই তৎপর ছিল।
সৌদি আরবের তরুণ নেতা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সামরিক নেতৃত্ব, তাঁর দুঃসাহসিকতা এই এলাকার আঞ্চলিক উত্তেজনাকে বাড়িয়ে তুলেছিল। অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, সৌদিরা প্রতিবেশী ইয়েমেনে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধ করে ইরানের কর্তৃত্ব খর্ব করার কাজটি করেছে। কিন্তু সে কাজে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছিল, তাতে একটা এসপার-ওসপার হওয়া খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল। অনেকেই বিশ্বাস করেন, লেবাননের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে সৌদি আরব। ইরান-সমর্থিত শিয়া গ্রুপ হিজবুল্লাহ সেখানে দারুণ সক্রিয়।
এই খেলায় বিদেশি খেলোয়াড়েরাও কম সক্রিয় ছিল না। আমরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা এখানে বলতে পারি। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন একজন তুখোড় খেলোয়াড়। আবার, মুখে মুখে ইসরায়েলের বিরোধিতা করে মুসলিম দেশগুলো। কিন্তু আঞ্চলিক রাজনীতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে সমঝোতাও করে। ইসরায়েল ইরানকে সন্দেহের চোখে দেখে, শত্রু বলেই মনে করে। ইরানকে ঠেকানোর খেলায় সৌদি আরব ইসরায়েলকে পায় পাশে। সিরিয়ায় ইরান-নিয়ন্ত্রিত জঙ্গি বাহিনী ইসরায়েলের সীমান্তে পৌঁছে যেতে পারে, এ আশঙ্কা ইসরায়েলের আছে। আরেকটু খেয়াল করলেই যে কারও চোখে পড়বে, ইসরায়েল ও সৌদি আরব দুটি দেশই ২০১৫ সালে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার জন্য ২০১৫ সালে যে আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়েছিল, তার সোচ্চার বিরোধিতা করেছিল। তারা বলেছিল, এই ব্যবস্থা মোটেও যথেষ্ট নয়, ইরান যদি চায়, তাহলে চুক্তির ফাঁকফোকর খুঁজে নিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারবে।
এখন কী হতে পারে?
যদিও যুক্তরাষ্ট্র ইরান-সৌদি সুসম্পর্ককে স্বাগত জানিয়েছে, তবুও বলা যায়, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এই মেরুকরণে যুক্তরাষ্ট্রের থাকবে সজাগ দৃষ্টি। ইরান ও সৌদি আরব সমঝোতায় পৌঁছানোর অর্থ হলো, বহুদিন ধরে এ অঞ্চলে টিকে থাকা মার্কিন-ইসরায়েলি বলয়ে নতুন আঘাত আসতে পারে। এতে ইসরায়েল কিছুটা কাবু হয়ে যেতে পারে। সৌদি আরবের মুখাপেক্ষী আরব দেশগুলো এখন ইসরায়েলের ব্যাপারে সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবতে পারে।
অন্যদিকে, যে চীনের মাধ্যমে এই সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টি হলো, সে চীনও ধোয়া তুলসীপাতা নয়। তাদের দেশও কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী। কিন্তু বহুদিন পর যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের বাইরের একটি দেশ এসে মধ্যপ্রাচ্য কূটনীতিতে সফল হলো। এটা সারা বিশ্বে চীনের কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে ওঠার দিকে অগ্রসর হওয়ার একটা উদাহরণ।
বহু যুগ ধরে আরব দেশগুলো নিজের ভাবনা নিজে না ভেবে অন্যকে ভাবতে দিয়েছে, অন্যরা চেষ্টা করেছে অঞ্চলটিকে অস্থিতিশীল করে ফায়দা লুটতে। নতুন এই সমীকরণের ফলে আরব দেশগুলো নিজেদের পরিচয়কে তুলে ধরতে পারবে কি না, সেটা একটি লাখ টাকার প্রশ্ন। নইলে এক বলয় থেকে অন্য বলয়ে নিজেদের ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আরব বিশ্বের জন্য ইতিবাচক নতুন কিছুই ঘটবে না।
জাহীদ রেজা নূর, উপসম্পাদক আজকের পত্রিকা
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৪ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৮ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৮ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৮ দিন আগে