মৃত্যুঞ্জয় রায়
আমাদের কল্পনার চেয়েও বেশি বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর জলবায়ু। গবেষকদের বহু পূর্বাভাস এখন ধারণার চেয়ে বাস্তবে বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। সবাই মিলে একজোট হয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে গ্লাসগোতে কপ ২৬ সম্মেলনে আমরা বলেছিলাম, প্রাকশিল্পযুগের চেয়ে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা যে পরিমাণ বেড়েছে, সেই বৃদ্ধির পরিমাণকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আমরা বেঁধে রাখব—এ আমাদের অঙ্গীকার। ইতিমধ্যে তা ১.১৫ ডিগ্রি বেড়ে গেছে। অর্থাৎ, শিল্পায়নের আগে এই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা যা ছিল, এখন তার পরিমাণ সে তুলনায় ১.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। অনুমান করা হচ্ছে, আগামী ২০৫০ সালে বায়ুমণ্ডলের এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাবে, যার ভয়াবহ পরিণতির শিকার হবে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ। আর এর চেয়ে যদি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায়, তাহলে কী হবে তা কল্পনা করাও কঠিন!
যদি বিশ্বের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে হয়, তাহলে ইন্টারগভর্নমেন্ট প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের হারকে কমপক্ষে ৪৩ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। এ বিষয়ে বিশ্বনেতারা তা করতে কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে রাজি হলেও বাস্তবে আসলে যা ঘটার তা ঘটেই চলেছে। মুখে মুখে সবাই শুধু বলছি এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে, কিন্তু কাজের বেলায় অগ্রগতি খুব সামান্য।
ধনী রাষ্ট্রগুলো গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসারণের জন্য মূলত দায়ী হলেও তা কমানোর দায়িত্ব চাপাচ্ছে গরিব দেশগুলোর ওপর। অথচ গরিব দেশগুলোয় ওদের মতো শিল্প-কলকারখানা নেই, গাড়ি ও শীতাতপ যন্ত্রের ব্যবহার নেই। কিন্তু দুর্ভোগের শিকার যেন তারাই বেশি হচ্ছে।
ধনী দেশগুলো তাই এসব দেশকে পরিবেশগত বিপর্যয়ের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে কথিত ‘গ্রিন ফান্ড’, ‘ক্লাইমেট ফান্ড’ ইত্যাদি তহবিল গঠন করে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে নানামুখী প্রকল্প নিতে গরিব ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পেছনে ছুটছে, টাকা ঢালছে; বলছে, বেশি করে গাছ লাগাও, পরিবেশ বাঁচাও, ধরিত্রীকে রক্ষা করো। কিন্তু নিজেরা গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসারণ কমাতে পারছে না। পরিবেশের চেয়ে অর্থনীতিই এখন সব দেশের কাছে যেন মুখ্য বিষয়, এমনকি মানুষের জীবনও অনেকের কাছে তুচ্ছ। স্রোতের মতো মানুষ ছুটছে জীবিকার আশায় শহরের দিকে। শহরে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মূলত ৭৫ শতাংশ দায়ী ধনী দেশ ও পৃথিবীর শহরগুলো।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, এখন যেভাবে চলছে, সেভাবে চলতে থাকলে এই শতকের মধ্যেই খুব দ্রুত বাযুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে যাবে। ১.৫ ডিগ্রি থেকে ২ ডিগ্রিতে চলে যাওয়া মানেই পরিবেশ ও প্রকৃতির মধ্যে এক বিশাল পরিবর্তনের সাক্ষী হওয়া। সাক্ষী হওয়ার চেয়ে এখন যেন প্রত্যক্ষ করার সময় এসে গেছে। ১.৫ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া মানে জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাবের মাত্রা বহুগুণে বেড়ে যাওয়া। এমনকি বর্তমানে যেসব আলামত দেখা যাচ্ছে সেগুলোর অর্থ হলো, আমরা মনে হয় খুব দ্রুতই সব ধরনের বিপৎসীমা অতিক্রম করতে যাচ্ছি। বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা যেভাবে যতটুকু বাড়ার কথা, তার চেয়েও বেশি বেড়েছে বলেই দ্রুতগতিতে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে। বরফ গলে সেখানে কোনো কোনো জায়গায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে, সেখানে রীতিমতো কিছু উদ্ভিদ জন্মাতে শুরু করেছে। সেই সব গাছে ফুলও ফোটা শুরু হয়েছে। আর এতেই বড় বড় বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। গবেষকেরা একে পৃথিবীর জন্য এক মহা অশনিসংকেত হিসেবে মনে করছেন। এতে শুধু মানুষই নয়, জলবায়ুর এই দ্রুত পরিবর্তনে হুমকির মুখে গোটা জীবজগৎ। এমনকি এই পরিবর্তনের কারণে একাধিক প্রজাতির জীব সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। এ যেন পৃথিবীর ষষ্ঠ গণ বিলুপ্তিরই সংকেত দিচ্ছে। ব্যাপারটা ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়, বাস্তবে তা না ঘটলেই ভালো।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরিবেশ বিপর্যয়ের একটি সংবাদ বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়েছে, তা হলো মেরু অঞ্চলেও এখন অভাবিত হারে দ্রুত বরফ গলে যাওয়ায় সেখানে গাছ জন্মাচ্ছে এবং সেই সব গাছে ফুল ফুটছে। সারা বছরই যেখানে তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নিচে, চিরতুষারের সেই অ্যান্টার্কটিকা ও আর্কটিক অঞ্চলে গত বছরের শেষের দিকে দ্রুত হারে তাপমাত্রা বেড়েছে। মেরু অঞ্চলের জলবায়ুতে এখন নাটকীয় পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। অ্যান্টার্কটিকা ঘিরে ভাসমান বরফের পরিমাণ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা ছবিতে তা দেখা যাচ্ছে। ১৯৯০ সালের পর থেকে অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলন সমুদ্রের পানির উচ্চতা ৭.২ শতাংশ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অ্যান্টার্কটিকায় বরফের চাদর সরিয়ে বেরিয়ে এসেছে ফুল।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ১৯৬০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলে যে হারে উদ্ভিদের জন্ম হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তার ১০ গুণ উদ্ভিদ জন্মেছে। আগের তুলনায় অ্যান্টার্কটিকায় উদ্ভিদের বৃদ্ধি বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। মূলত ওখানকার সিগনি দ্বীপে জন্মানো একধরনের উদ্ভিদে ফুল ফুটতে দেখেই বিজ্ঞানীদের টনক নড়েছে। কেননা, এসব উদ্ভিদ জন্মানোর ফলে সেখানকার মাটির চরিত্র বদলে যেতে পারে, এসব উদ্ভিদ পচে মাটিতে যোগ হলে মাটির অম্লত্ব বাড়তে পারে আর তার প্রভাবে নতুন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হতে পারে, বিলুপ্ত হতে পারে মস ও লাইকেনের মতো কিছু আদি প্রজাতি।
অস্ট্রেলিয়ার ওলংগং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সেখানে দেখেন, মূলত দুই ধরনের উদ্ভিদের বৃদ্ধি হচ্ছে। প্রথম দিকে এসব উদ্ভিদ একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তা সেই অঞ্চলের বাইরেও দেখা যাচ্ছে। মানুষই এর জন্য দায়ী বলে তাঁরা মনে করেন। মেরু অঞ্চলে নানা কারণে মানুষের আগাগোনা বেড়েছে আগের চেয়ে বহুগুণ। গবেষণা থেকে বেড়ানো—নানা কারণে সেখানে এখন মানুষ যাচ্ছে।
তাদের ফেলে রাখা বর্জ্যে যেমন দূষিত হচ্ছে অ্যান্টার্কটিকার পরিবেশ, তেমনি তাদের সঙ্গে সেখানে বাহিত হচ্ছে অনেক জীবাণু ও বীজ-বীজাণু। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই উদ্ভিদের বীজ সম্ভবত বহু বছর আগে গবেষক ও অভিযাত্রীদের সঙ্গে এসেছিল অ্যান্টার্কটিকায়। অতীতে ঠান্ডার কারণে তা গজাতে পারেনি। ধীরে ধীরে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মেরু অঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়েছে, তাই সেই সব সুপ্ত বীজ গজাচ্ছে এবং তাতে ফুলও ফুটছে। ফুল থেকে হবে বীজ, বীজ থেকে বাড়বে বংশ।
বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে উদ্ভিদের জন্ম, বৃদ্ধি ও বিকাশ নিঃসন্দেহে আনন্দের সংবাদ, কিন্তু তা মেরু অঞ্চলের জন্য নয়। কেননা, মেরু অঞ্চলের তুষাররাজি পৃথিবীর জলবায়ু ও জল নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। মেরু অঞ্চলের উষ্ণতা বাড়ছে বলেই বরফ গলছে, বরফ গলছে বলেই সেখানকার মাটিতে উদ্ভিদ জন্মানোর সুযোগ পাচ্ছে। এটি মানবজাতি ও গোটা জীবজগতের জন্য এক লাল সংকেত। অ্যান্টর্কটিকার তুষাররাজ্যে একটি উদ্ভিদে ফুল ফোটা বিরাট কোনো ঘটনা নয়, কিন্তু তা আমাদের জন্য সতর্কবাণী।
জানি, পৃথিবীর মানুষ তবু এসব অগ্রাহ্য করবে, মেরু অঞ্চলের শেষ বরফখণ্ডটুকু গলাতেও দ্বিধা করবে না। শেষে সাগরের মহাপ্লাবনে তলিয়ে যাবে পাহাড়চূড়া পর্যন্ত, সবাই মিলে মরে যাব, এই নিয়তিই যেন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। জানি না কোন নূহ নবী (আ.)-এর আবার আগমন হবে কিছু ভালো মানুষকে বাঁচানোর জন্য! তাদের দ্বারা আবার পত্তন ঘটবে নতুন মানবসভ্যতার—প্রকৃতি লালিত বিশুদ্ধ সুন্দর আরেক নতুন পৃথিবী। যুগে যুগে সে রকমই তো হয়েছে। প্রকৃতির প্রতি মানুষের অত্যাচারের সব সীমা ছাড়িয়ে গেলে প্রকৃতি আমাদের ক্ষমা করবে না।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
আমাদের কল্পনার চেয়েও বেশি বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর জলবায়ু। গবেষকদের বহু পূর্বাভাস এখন ধারণার চেয়ে বাস্তবে বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। সবাই মিলে একজোট হয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে গ্লাসগোতে কপ ২৬ সম্মেলনে আমরা বলেছিলাম, প্রাকশিল্পযুগের চেয়ে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা যে পরিমাণ বেড়েছে, সেই বৃদ্ধির পরিমাণকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আমরা বেঁধে রাখব—এ আমাদের অঙ্গীকার। ইতিমধ্যে তা ১.১৫ ডিগ্রি বেড়ে গেছে। অর্থাৎ, শিল্পায়নের আগে এই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা যা ছিল, এখন তার পরিমাণ সে তুলনায় ১.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। অনুমান করা হচ্ছে, আগামী ২০৫০ সালে বায়ুমণ্ডলের এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাবে, যার ভয়াবহ পরিণতির শিকার হবে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ। আর এর চেয়ে যদি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায়, তাহলে কী হবে তা কল্পনা করাও কঠিন!
যদি বিশ্বের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে হয়, তাহলে ইন্টারগভর্নমেন্ট প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের হারকে কমপক্ষে ৪৩ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। এ বিষয়ে বিশ্বনেতারা তা করতে কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে রাজি হলেও বাস্তবে আসলে যা ঘটার তা ঘটেই চলেছে। মুখে মুখে সবাই শুধু বলছি এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে, কিন্তু কাজের বেলায় অগ্রগতি খুব সামান্য।
ধনী রাষ্ট্রগুলো গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসারণের জন্য মূলত দায়ী হলেও তা কমানোর দায়িত্ব চাপাচ্ছে গরিব দেশগুলোর ওপর। অথচ গরিব দেশগুলোয় ওদের মতো শিল্প-কলকারখানা নেই, গাড়ি ও শীতাতপ যন্ত্রের ব্যবহার নেই। কিন্তু দুর্ভোগের শিকার যেন তারাই বেশি হচ্ছে।
ধনী দেশগুলো তাই এসব দেশকে পরিবেশগত বিপর্যয়ের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে কথিত ‘গ্রিন ফান্ড’, ‘ক্লাইমেট ফান্ড’ ইত্যাদি তহবিল গঠন করে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে নানামুখী প্রকল্প নিতে গরিব ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পেছনে ছুটছে, টাকা ঢালছে; বলছে, বেশি করে গাছ লাগাও, পরিবেশ বাঁচাও, ধরিত্রীকে রক্ষা করো। কিন্তু নিজেরা গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসারণ কমাতে পারছে না। পরিবেশের চেয়ে অর্থনীতিই এখন সব দেশের কাছে যেন মুখ্য বিষয়, এমনকি মানুষের জীবনও অনেকের কাছে তুচ্ছ। স্রোতের মতো মানুষ ছুটছে জীবিকার আশায় শহরের দিকে। শহরে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মূলত ৭৫ শতাংশ দায়ী ধনী দেশ ও পৃথিবীর শহরগুলো।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, এখন যেভাবে চলছে, সেভাবে চলতে থাকলে এই শতকের মধ্যেই খুব দ্রুত বাযুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে যাবে। ১.৫ ডিগ্রি থেকে ২ ডিগ্রিতে চলে যাওয়া মানেই পরিবেশ ও প্রকৃতির মধ্যে এক বিশাল পরিবর্তনের সাক্ষী হওয়া। সাক্ষী হওয়ার চেয়ে এখন যেন প্রত্যক্ষ করার সময় এসে গেছে। ১.৫ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া মানে জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাবের মাত্রা বহুগুণে বেড়ে যাওয়া। এমনকি বর্তমানে যেসব আলামত দেখা যাচ্ছে সেগুলোর অর্থ হলো, আমরা মনে হয় খুব দ্রুতই সব ধরনের বিপৎসীমা অতিক্রম করতে যাচ্ছি। বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা যেভাবে যতটুকু বাড়ার কথা, তার চেয়েও বেশি বেড়েছে বলেই দ্রুতগতিতে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে। বরফ গলে সেখানে কোনো কোনো জায়গায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে, সেখানে রীতিমতো কিছু উদ্ভিদ জন্মাতে শুরু করেছে। সেই সব গাছে ফুলও ফোটা শুরু হয়েছে। আর এতেই বড় বড় বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। গবেষকেরা একে পৃথিবীর জন্য এক মহা অশনিসংকেত হিসেবে মনে করছেন। এতে শুধু মানুষই নয়, জলবায়ুর এই দ্রুত পরিবর্তনে হুমকির মুখে গোটা জীবজগৎ। এমনকি এই পরিবর্তনের কারণে একাধিক প্রজাতির জীব সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। এ যেন পৃথিবীর ষষ্ঠ গণ বিলুপ্তিরই সংকেত দিচ্ছে। ব্যাপারটা ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়, বাস্তবে তা না ঘটলেই ভালো।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরিবেশ বিপর্যয়ের একটি সংবাদ বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়েছে, তা হলো মেরু অঞ্চলেও এখন অভাবিত হারে দ্রুত বরফ গলে যাওয়ায় সেখানে গাছ জন্মাচ্ছে এবং সেই সব গাছে ফুল ফুটছে। সারা বছরই যেখানে তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নিচে, চিরতুষারের সেই অ্যান্টার্কটিকা ও আর্কটিক অঞ্চলে গত বছরের শেষের দিকে দ্রুত হারে তাপমাত্রা বেড়েছে। মেরু অঞ্চলের জলবায়ুতে এখন নাটকীয় পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। অ্যান্টার্কটিকা ঘিরে ভাসমান বরফের পরিমাণ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা ছবিতে তা দেখা যাচ্ছে। ১৯৯০ সালের পর থেকে অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলন সমুদ্রের পানির উচ্চতা ৭.২ শতাংশ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অ্যান্টার্কটিকায় বরফের চাদর সরিয়ে বেরিয়ে এসেছে ফুল।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ১৯৬০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলে যে হারে উদ্ভিদের জন্ম হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তার ১০ গুণ উদ্ভিদ জন্মেছে। আগের তুলনায় অ্যান্টার্কটিকায় উদ্ভিদের বৃদ্ধি বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। মূলত ওখানকার সিগনি দ্বীপে জন্মানো একধরনের উদ্ভিদে ফুল ফুটতে দেখেই বিজ্ঞানীদের টনক নড়েছে। কেননা, এসব উদ্ভিদ জন্মানোর ফলে সেখানকার মাটির চরিত্র বদলে যেতে পারে, এসব উদ্ভিদ পচে মাটিতে যোগ হলে মাটির অম্লত্ব বাড়তে পারে আর তার প্রভাবে নতুন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হতে পারে, বিলুপ্ত হতে পারে মস ও লাইকেনের মতো কিছু আদি প্রজাতি।
অস্ট্রেলিয়ার ওলংগং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সেখানে দেখেন, মূলত দুই ধরনের উদ্ভিদের বৃদ্ধি হচ্ছে। প্রথম দিকে এসব উদ্ভিদ একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তা সেই অঞ্চলের বাইরেও দেখা যাচ্ছে। মানুষই এর জন্য দায়ী বলে তাঁরা মনে করেন। মেরু অঞ্চলে নানা কারণে মানুষের আগাগোনা বেড়েছে আগের চেয়ে বহুগুণ। গবেষণা থেকে বেড়ানো—নানা কারণে সেখানে এখন মানুষ যাচ্ছে।
তাদের ফেলে রাখা বর্জ্যে যেমন দূষিত হচ্ছে অ্যান্টার্কটিকার পরিবেশ, তেমনি তাদের সঙ্গে সেখানে বাহিত হচ্ছে অনেক জীবাণু ও বীজ-বীজাণু। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই উদ্ভিদের বীজ সম্ভবত বহু বছর আগে গবেষক ও অভিযাত্রীদের সঙ্গে এসেছিল অ্যান্টার্কটিকায়। অতীতে ঠান্ডার কারণে তা গজাতে পারেনি। ধীরে ধীরে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মেরু অঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়েছে, তাই সেই সব সুপ্ত বীজ গজাচ্ছে এবং তাতে ফুলও ফুটছে। ফুল থেকে হবে বীজ, বীজ থেকে বাড়বে বংশ।
বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে উদ্ভিদের জন্ম, বৃদ্ধি ও বিকাশ নিঃসন্দেহে আনন্দের সংবাদ, কিন্তু তা মেরু অঞ্চলের জন্য নয়। কেননা, মেরু অঞ্চলের তুষাররাজি পৃথিবীর জলবায়ু ও জল নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। মেরু অঞ্চলের উষ্ণতা বাড়ছে বলেই বরফ গলছে, বরফ গলছে বলেই সেখানকার মাটিতে উদ্ভিদ জন্মানোর সুযোগ পাচ্ছে। এটি মানবজাতি ও গোটা জীবজগতের জন্য এক লাল সংকেত। অ্যান্টর্কটিকার তুষাররাজ্যে একটি উদ্ভিদে ফুল ফোটা বিরাট কোনো ঘটনা নয়, কিন্তু তা আমাদের জন্য সতর্কবাণী।
জানি, পৃথিবীর মানুষ তবু এসব অগ্রাহ্য করবে, মেরু অঞ্চলের শেষ বরফখণ্ডটুকু গলাতেও দ্বিধা করবে না। শেষে সাগরের মহাপ্লাবনে তলিয়ে যাবে পাহাড়চূড়া পর্যন্ত, সবাই মিলে মরে যাব, এই নিয়তিই যেন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। জানি না কোন নূহ নবী (আ.)-এর আবার আগমন হবে কিছু ভালো মানুষকে বাঁচানোর জন্য! তাদের দ্বারা আবার পত্তন ঘটবে নতুন মানবসভ্যতার—প্রকৃতি লালিত বিশুদ্ধ সুন্দর আরেক নতুন পৃথিবী। যুগে যুগে সে রকমই তো হয়েছে। প্রকৃতির প্রতি মানুষের অত্যাচারের সব সীমা ছাড়িয়ে গেলে প্রকৃতি আমাদের ক্ষমা করবে না।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৪ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৮ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৮ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৮ দিন আগে