একটা ট্রানজিস্টার

সম্পাদকীয়
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ৫৯
Thumbnail image

গৌতম চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ইতিহাসের অধ্যাপক। সিপিআই করতেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বংশধর তিনি। বিদ্যাসাগরের একমাত্র পুত্র নারায়ণচন্দ্র বিদ্যারত্নের কনিষ্ঠা কন্যা মতিমালা দেবী ছিলেন তাঁর দাদিমা। তাঁর স্ত্রী মঞ্জু দেবীও ইতিহাস পড়াতেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁরা দুজনই অনেক সাহায্য করেছেন।

কখনো অর্থ, কখনো খাদ্য, কখনো বস্ত্র নিয়ে তাঁরা ছুটে গেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবিরে। সেখানে যে তরুণ যোদ্ধাদের দেখতেন, তাদের কথা বর্ণনা করতেন ফিরে এসে।

একবার গৌতম চট্টোপাধ্যায় গিয়েছিলেন এক ক্যাম্পে। সেখানে দেখা হয়েছিল বারো বছর বয়সী এক মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে। ক্যাম্প কমান্ড্যান্ট জানিয়েছিল, এই ছেলেটিই বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা। নিরীহ চেহারা। পরনের কাপড় মলিন। এইটুকু শিশু কেন মুক্তিযোদ্ধাদের শিবিরে? প্রশ্নটা জেগেছিল গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের মনে। উত্তর পেয়েছিলেন, ‘নির্দিষ্ট লক্ষ্যে দ্রুত ও অব্যর্থ গ্রেনেড নিক্ষেপে এই ছেলেটির কোনো জুড়ি নেই।’

একটু আগেই একটা অপারেশন শেষ করে ফিরে এসেছে ছেলেটি। গৌতম ছেলেটির কাছে গেলেন। গৌতমের জানা ছিল, এরা ভালোভাবে খেতে পায় না, ভালো জামা-জুতো নেই। তিনি ভেবেছিলেন এ রকম কোনো অভাব পূরণের চেষ্টা করবেন। সেই ইচ্ছে থেকেই তিনি প্রশ্ন করলেন ছেলেটিকে, ‘এরপর যখন আসব, তখন তোমার জন্য কী নিয়ে আসব?’

ছেলেটা কিছু চায় না। অনেক পীড়াপীড়ি করা হলো। তখন ছেলেটি বলল, ‘আমাদের ক্যাম্পের ট্রানজিস্টারে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান ভালো শোনা যায় না। যদি একটা ভালো ট্রানজিস্টার…।’

ছেলেটার মুখে এই কথা শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন গৌতম চট্টোপাধ্যায়। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের কাছে সে কথা বলতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠেছিল তাঁর চেহারা। তিনি বলেছিলেন, ‘জামা নয়, কাপড় নয়, খাবার নয়, চাইলো একটা ট্রানজিস্টার রেডিও! স্বাধীন বাংলার অনুষ্ঠান শোনার জন্য! যে দেশে এমন ছেলে জন্মায়, সে দেশ স্বাধীন না হয়ে পারে না।’

সূত্র: আনিসুজ্জামান, আমার একাত্তর, পৃষ্ঠা ১৩৩-১৩৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত