গুদামে একটি ধানও পড়েনি

আনোয়ার হোসেন, মনিরামপুর
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২২, ১৩: ৪৬
Thumbnail image

যশোরের মনিরামপুরে সরকারি গুদামে আমন ধান সংগ্রহের সময়সীমা শেষ হয়েছে গতকাল সোমবার। গত তিন মাস আগে খাদ্যগুদামে আমন সংগ্রহ শুরু হলেও একটি ধানও দেননি কৃষকেরা।

ফলে এ মৌসুমে উপজেলাটিতে সরকারিভাবে ধান কেনার জন্য পাওয়া প্রায় এক কোটি টাকা ফেরত পাঠাতে হচ্ছে গুদাম কর্তৃপক্ষকে।

এদিকে আমন ধান সংগ্রহ করতে না পারলেও দুই দফায় ক্রয় আদেশের ৭১৯ মেট্রিক টন চাল কিনতে সক্ষম হয়েছে গুদাম কর্তৃপক্ষ। যদিও চালকল মালিকেরা বলছেন, জামানত হারানোর চাপে পড়েই তাঁরা গুদামে চাল দিতে বাধ্য হয়েছেন। এ জন্যই চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়েছে।

জানা গেছে, গত বছরের ৮ নভেম্বর আমনের ১ হাজার ৪৪৫ মেট্রিক টন ধান ও ৪৮২ টন চাল কেনার চিঠি পায় মনিরামপুর উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ। প্রতিমণ ধান ১ হাজার ৮০ টাকা ও প্রতিকেজি চালের দাম ৪০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। চিঠি পেয়ে যথাসময়ে ধান ও চাল সংগ্রহ শুরু করতে পারেনি ক্রয় কমিটি। এক মাস পর ৫ ডিসেম্বর ক্রয় কমিটির প্রথম সভা হয়। এর পর গুদাম কর্তৃপক্ষকে ধান ও চাল সংগ্রহ শুরু করতে বলা হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এ কাজের উদ্বোধন হয়নি।

আমন সংগ্রহের মতো গতবারের বোরো সংগ্রহেও অনীহা দেখিয়েছিলেন কৃষক। সে সময় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানেরা ভর্তুকি দিয়ে কিছু ধান সংগ্রহে সহায়তা করেছিলেন। এবার তাও দেখা যায়নি। তা ছাড়া ধান ওঠার মুহূর্তে সংগ্রহ শুরু করতে ব্যর্থ হয়েছ গুদাম কর্তৃপক্ষ। ফলে কোনো প্রচার না থাকায় অনেক জানতেনও না কবে থেকে ধান নেওয়া হবে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের দাবি, বাজারে ধানের চড়া দাম থাকায় কৃষক গুদামে আসেনি। এ কারণে এ মৌসুমে ধান সংগ্রহ সম্ভব হয়নি।

যদিও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমন মৌসুমে ৯৩০ টাকা থেকে শুরু করে ৯৭০ টাকায় ধানের মণ বিক্রি হয়েছে; যা সরকারের দামের চেয়েও ১১০-১৫০ টাকা কম। বাজার থেকে গুদামে দাম বেশি থাকার পরও ধান কিনতে ব্যর্থ হয়েছে ক্রয় কমিটি।

এদিকে ধান কিনতে না পারলেও চালকল মালিকদের চাপ দিতে চালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে গুদাম কর্তৃপক্ষ। এমনকি দ্বিতীয় দফা বরাদ্দ বাড়িয়ে ২৩৭ টন চাল বেশি সংগ্রহ করেছেন তাঁরা।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, ‘লটারির মাধ্যমে প্রকৃত আমন চাষিদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের নির্দেশনা ছিল। বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় উপজেলা ক্রয় কমিটির সভায় লটারি ছাড়া কার্ডধারী কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার সিদ্ধান্ত হয়। গুদাম উন্মুক্ত করে দিলেও কোনো কৃষক গুদামে না আসায় ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে খোলা বাজারে মোটা ধানের মণ ১ হাজার ১০ টাকা; যা সরকারি দরের চেয়ে ৭০ টাকা বেশি। এরপরও কৃষককে গুদামে ভিড়তে দেখা যায়নি।

মাহমুদকাটি গ্রামের কৃষক নূর ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছিলাম। খোরাকি বাদে কিছু ধান বেচে দিছিলাম। এখন গোলায় কিছু ধান আছে।’

নূর ইসলাম বলেন, ‘আমার কৃষি কার্ড আছে। দুই বছর আগে একবার লটারির মাধ্যমে গুদামে ধান দিয়ে অনেক হাঁটাহাঁটি করতি হইল। সরকারি গুদামে ধান নিয়ে গেলে নানা দোষ বের করে। ধান দিয়ে টাকা নেওয়ার জন্যি ধরনা দেওয়া লাগে। আবার গুদামে নিতে গেলে বাড়তি ভাড়া দিতে হয়। এর চেয়ে গ্রামে বেচা ভালো। ধান ভিজে হলিও সমস্যা হয় না।’

এদিকে খোলাবাজারে পাইকারি দর আর সরকারি দর সমান হলেও জামানত হারানোর ভয়ে গুদামে চাল দিতে বাধ্য হয়েছেন উপজেলার ৪৪ চালকল মালিক।

উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বরাদ্দের ২ শতাংশ টাকা আমাদের ব্যাংকে জমা দিতে হয়। এর পর চাল দেওয়ার পর চালের দামের সঙ্গে জামানতের টাকা ফেরত পাওয়া যায়। চাল না দিলে জামানত হারাতে হয়। মিল চালাতেও সমস্যায় পড়তে হয়।’

আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘খোলা বাজারে মোটা চালের কেজিপ্রতি পাইকারি দর ৪০ টাকা ৪০ পয়সা। সরকার দিয়েছে ৪০ টাকা করে। এ ছাড়া যাতায়াত খরচ আছে। সব মিলিয়ে লোকসান হয়। তার পরও দ্বিতীয় দফা চালের বরাদ্দ আসায় কয়েকজন চালকল মালিককে বাড়তি চাল দিতে হয়েছে।’

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, ‘এ মৌসুমে আমন সংগ্রহের সময় শেষ হয়েছে আজ (সোমবার)। আর সময় বাড়ানো হয়নি। বাজারে ধানের দর হাজার টাকার ওপরে হওয়ায় গুদামে ধান পাওয়া যায়নি। ধান কেনার বরাদ্দের ৯৮ লাখ ২৭ হাজার ৭৬০ টাকা আমাদের ফেরত পাঠাতে হচ্ছে।’

ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, ‘আমনের চালের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮২ টন। দ্বিতীয়বার বরাদ্দ বাড়ায় আমরা ৭১৯ দশমিক ৪০ টন চাল সংগ্রহ করতে পেরেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত