সংগ্রাম চলবে

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২২, ১০: ৪৫
Thumbnail image

২ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় কী পরিস্থিতিতে বেসামরিক প্রশাসনের সাহায্যার্থে সামরিক বাহিনী তলব করা হয়েছিল, সে সম্পর্কে তদন্তের জন্য খ-অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এহেন তদন্ত কমিশন আমরা চাই নাই। আমরা চেয়েছিলাম সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রকাশ্য তদন্ত। আমি দুঃখিত, যে তদন্ত কমিশনের কথা ঘোষণা করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আমার উত্থাপিত দাবির পরিপূরক নয়। একটি সামরিক নির্দেশবলে এই কমিশন গঠন এবং সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে তার রিপোর্ট দাখিলের বিধান অত্যন্ত আপত্তিকর। কমিশনের বিবেচ্য সূচিই মূল ইস্যু পূর্বাহ্নিক বিচার এবং আসল ইস্যুর তদন্ত না করার মতলব ফাঁস করে দিয়েছে। একমাত্র বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, মার্চ মাসের ২ তারিখ থেকে ৯ তারিখের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় যে পরিস্থিতিতে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের সাহায্যার্থে সেনাবাহিনী তলব করা হয়েছিল, তা নির্ধারণ করাই হচ্ছে তদন্ত কমিটির একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। দেখা যাচ্ছে বেসামরিক প্রশাসনিক মহলের সাহায্যার্থে নয়; বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্যই সেনাবাহিনী তলব ও শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছিল কি না, সেটা তদন্ত করতে হবে বিধায় মূল বিষয় সম্পর্কে শুনানির আগেই বিচার করে রাখা হয়েছে।

‘জনগণের পক্ষ থেকে আমরা গত ৭ মার্চ ৪ দফা দাবি তুলেছি। তার একটি দাবি ছিল, যথাযথ বিবেচ্যসূচিসহ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রকাশ্য তদন্ত অনুষ্ঠানের। সেই দাবিগুলোর নামমাত্র বা খণ্ডিত স্বীকৃতে উল্লিখিত পদ্ধতিতে আমাদের সামনে বিরাজমান গভীর সংকট সমাধানে কিছুমাত্র সহায়ক হবে না।’

আওয়ামী পার্লামেন্টারি পার্টির ডেপুটি লিডার এবং পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে আমাদের উপর্যুপরি প্রতিবাদ সত্ত্বেও সেনাবাহিনীর দায়িত্বজ্ঞানহীন কার্যকলাপ বর্ধিত পরিমাণে অব্যাহত রয়েছে। আমরা জানতে পারলাম যশোর-খুলনা রুটে এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে সেনাবহিনীর লোকেরা সম্পূর্ণ বিনা কারণে নিরস্ত্র অসামরিক লোকজনকে হয়রানি করছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। আজ সকালে ঢাকা বিমানবন্দরের কাছ দিয়ে কয়েকটি নিরস্ত্র শ্রমিক ট্রাকে করে যাওয়ার সময় সেনাবাহিনীর লোকেরা তাদের ওপর বলপ্রয়োগ করে এবং মেহের আলী নামের একজন শ্রমিক তাদের হাতে গুরুতর আহত হয়। আমরা জানতে পারলাম, সৈন্যরা ঢাকা অভিমুখে অপর এক খানি ট্রাকেরও গতি রোধ করে এবং ট্রাক ড্রাইভারসহ কয়েকজনকে নির্দয়ভাবে প্রহার করে। তাদের কাছে যে আড়াই শ টাকা ছিল তা-ও জোর করে কেড়ে নেয়। এসব ব্যাপারে থানায় এজাহার দেওয়া হয়েছে উল্লিখিত ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং বেশ কিছু লোক মিছিল নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে গিয়ে তাঁকে সবকিছু অবহিত করেন। বারবার আমরা এই সব ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছি কিন্তু তারপরও ক্যান্টনমেন্ট এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় এ ধরনের উসকানিমূলক তৎপরতা অব্যাহত আছে। আমরা পরিষ্কারভাবে এ কথা জানিয়ে দিতে চাই যে কোনো রকম উসকানিমূলক আচরণ তা যেকোনো মহলেরই হোক না কেন, তা সহ্য করা হবে না এবং উসকানিদানকারীদেরই এর ফলাফলের দায়িত্ব সম্পূর্ণ বহন করতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির বাড়িতে মুক্তিকামী জনতার মিছিলের পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, ‘বিদেশি বন্ধুরা দেখুন, আমার দেশের মানুষ আজ প্রতীক্ষায় কী অটল সংগ্রাম আর ত্যাগের মন্ত্রে উজ্জীবিত। কার সাধ্য এদের রোখে? আমার দেশ আজ জেগেছে। জনগণ জেগেছে। জীবন দিতে শিখেছে। স্বাধীনতার জন্য জীবন দানের অগ্নি শপথের দীপ্ত জাগ্রত জনতার এ জীবন জোয়ারকে, প্রচণ্ড গণবিস্ফোরণকে স্তব্ধ করতে পারে—এমন শক্তি মেশিনগানেরও আজ আর নেই।’

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘জনগণের সার্বিক মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে।’

গ্রন্থনা: জাহীদ রেজা নূর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত