যেভাবে তৈরি হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সিনেমা

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মহাকাব্যিক ইতিহাস বিভিন্ন সময়ে ধরা দিয়েছে রুপালি পর্দায়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত হয়েছে বেশ কিছু চলচ্চিত্র। মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’। এটিকে এখনো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের অসামান্য দলিল বলা হয় এই সিনেমাকে।

‘ওরা ১১ জন’ সিনেমায় ১১ জন মুক্তিকামী যুবকের গল্প উঠে এসেছে। দেশের স্বাধীনতার জন্য তাঁরা নিজেদের জীবন তুচ্ছ করেছেন। সাদা-কালো এ সিনেমায় নিপুণভাবে ক্যামেরাবন্দী করা হয়েছে এর প্রতিটি দৃশ্য। যুদ্ধের দৃশ্যগুলো আরও বাস্তবভাবে দেখানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল সত্যিকারের গোলাবারুদ। শুধু তা-ই নয়, বীর মুক্তিযোদ্ধারাই অভিনয় করেছিলেন এ সিনেমায়। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন খসরু, মুরাদ, হেলাল ও নান্টু। এ ছাড়া রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, সৈয়দ হাসান ইমাম, আলতাফ, মুরাদ, নান্টু, বেবী, আবু, খলিলউল্লাহ খানসহ আরও অনেকে সিনেমাটিতে অভিনয় করে সে সময়ে আলোচনায় আসেন।

যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রতিকূল পরিবেশে তখন সিনেমা নির্মাণ করা সহজ ছিল না। অসাধ্যটি সাধন করেছিলেন মাসুদ পারভেজ ও পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। ওরা ১১ জন সিনেমার প্রযোজক মাসুদ পারভেজ, যিনি সবার কাছে সোহেল রানা নামে পরিচিত। আর এ সিনেমা দিয়েই চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন চাষী নজরুল ইসলাম। খ্যাতিমান পরিচালক মুস্তাফিজ সিনেমাটি বানাতে চেয়েছিলেন বিনা পারিশ্রমিকে; কিন্তু চাষী নজরুল যুক্ত হচ্ছেন শুনে তিনি বলেন, ‘সে অনেক দিন ধরে কাজ করছে। সে পারবে।’

সোহেল রানা বলেন, ‘যুদ্ধ থেকে ফিরে মনে হলো, যুদ্ধের ছোট ছোট ঘটনা ক্যামেরায় তুলে আনব, যেন যুদ্ধের ঘটনাগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা যায়। মূলত সে চিন্তা থেকেই সিনেমাটি করা।’

নিজের জমানো টাকার সঙ্গে মা-বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে সিনেমার কাজ শুরু করেছিলেন সোহেল রানা। সে সময় কয়েক দিন শুটিং করে ছবি ও গল্প নিয়ে পরিবেশকদের কাছে যেতেন প্রযোজকেরা। গল্প ও সিনেমার শিল্পী পছন্দ হলে তাঁরা প্রযোজকদের সঙ্গে চুক্তি করে অর্থ লগ্নি করতেন। যখন সোহেল রানা প্রস্ততি নিচ্ছিলেন পরিবেশকদের কাছে যাওয়ার, তখন ইফতেখারুল আলম কিসলু পরামর্শ দেন,  মুক্তিযোদ্ধারা তো অভিনয়শিল্পী নন, শুধু তাঁরা অভিনয় করলে সিনেমাটি কোনো পরিবেশক নিতে রাজি হবেন না। তাই এতে পরিচিত মুখ যুক্ত করতে হবে। এরপর তখনকার পরিচিত অনেক অভিনয়শিল্পীকে এ সিনেমায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সোহেল রানার সঙ্গে প্রথমে ১০ বছরের চুক্তি করতে চেয়েছিল স্টার ফিল্মস। তবে রাজি হননি তিনি। চুক্তি হয় পাঁচ বছরের। মুক্তির আগেই হলমালিকদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়ে সিনেমার লগ্নি করা টাকা উঠে এসেছিল বলে জানান সোহেল রানা। এ সিনেমায় শিলা চরিত্রে অভিনয় করা নূতন বলেন, ‘২৫০টির বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছি। কিন্তু এ সিনেমায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অভিনয় করতে পারা অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এ সিনেমা আমার শ্রেষ্ঠ পরিচয়। আমি নিজে যুদ্ধ দেখেছি। যুদ্ধের সময় পালিয়ে থেকেছি। মাকে নিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশালে আমাদের গ্রামে চলে গিয়েছিলাম। সেই সময় কত মানুষের কষ্ট দেখেছি। পালিয়ে থাকার সময়ে না খেয়েও থেকেছি। সে জন্য ওরা ১১ জন করতে গিয়ে এটিকে সিনেমা মনে হয়নি, বাস্তব জীবনের গল্প মনে হয়েছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত