নর্তকীর টাকা

নবীনচন্দ্র সেন
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩, ১৪: ১০

নবীনচন্দ্র সেন ছিলেন কবি। মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মধ্যবর্তী কবিদের মধ্যে হেমচন্দ্র আর নবীনচন্দ্রের নামই বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয়।

সেই সময় যশোরে বেশ বড় পদে চাকরি করছিলেন নবীনচন্দ্র। কিন্তু স্ত্রীকে সেখানে আনতে পারছিলেন না। চাচারা নবীনচন্দ্রের মাকে বুঝিয়েছিলেন, বউ যদি নবীনচন্দ্রের কাছে চলে যায়, তাহলে তাঁদের প্রতিপালনের জন্য নবীন আর টাকা পাঠাবেন না। ফলে মা স্রেফ জানিয়ে দিলেন, ‘আমি বউকে পাঠাইব না। তোমার ইচ্ছা হয়, তুমি সেখানে বিবাহ করো।’

স্ত্রীকে নিজের কাছে আনার আশা ত্যাগ করলেন নবীন। এর মধ্যে যখন মা মারা গেলেন, তখন খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন নবীনচন্দ্র। সে সময় একদিন ওভারসিয়ার বাবুর বাড়িতে নিমন্ত্রণে গেছেন। সেখানে নাচ হচ্ছে। নবীনের মুখে মেঘ। যদি স্ত্রীকে আনতে হয়, তাহলে ছোট ছোট ভাই-বোনদেরও আনতে হবে। নদীপথে যশোর আসতেও লাগবে আঠারো দিন।

এ সময় এক নর্তকী তাঁর চিন্তামগ্ন চেহারা দেখে এগিয়ে এলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনাকে এত চিন্তিত লাগছে কেন?’

নবীন কিছু বললেন না। নর্তকী স্নেহভরে আবার একই প্রশ্ন করলেন। এবার তাঁর কথা নবীনের প্রাণ স্পর্শ করল। নবীন সব খুলে বললেন তাঁকে।

নর্তকী বললেন, ‘আপনি আপনার স্ত্রীকে আসতে লিখে দিন।’ 
নবীনচন্দ্র বললেন, ‘আমার হাতে টাকা নেই।’
নর্তকী বললেন, ‘কত টাকা প্রয়োজন?’ 
নবীনচন্দ্র বললেন, ‘অন্তত দুই শ টাকা।’

নর্তকী বললেন, ‘যদি কিছু মনে না করেন, আমি কাল দুই শ টাকা পাঠিয়ে দেব। আপনি সুবিধামতো শোধ করবেন। আমি বুঝতে পারছি আমার মতো পতিতার মুখে এ কথা শুনে আপনি অবাক হচ্ছেন। কিন্তু পতিতা হলেও আমি তো মানুষ।’

এবং সত্যিই সেই নর্তকী পরদিন দুই শ টাকা পাঠিয়ে দিলেন নবীনচন্দ্রের কাছে। যদিও সেই টাকা নবীনচন্দ্র গ্রহণ করেননি, কিন্তু এই নারীর প্রতি কৃতজ্ঞতায় অবনত হয়েছেন তিনি। 

সূত্র: নবীনচন্দ্র সেন, আমার জীবন দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৪-৬৫

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত