নরসিংদীতে লেখাপড়ার পাশাপাশি বাসার ছাদে মাশরুম চাষ করে আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছে মো. আবদুল্লাহ নামের এক স্কুলছাত্র। অনলাইনে মাশরুম চাষের ট্রেনিং নিয়ে মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজিতে মাশরুম চাষ শুরু করে সে। এর পর ছয় মাসের মাথায় এখন প্রতি মাসে তার আয় হয় ৩০ হাজার টাকা। মো. আবদুল্লাহ নরসিংদী পৌর এলাকার বীরপুর মহল্লার মকবুল হোসেনের ছেলে। সে নরসিংদী আইডিয়াল স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। তার এই মাশরুম বাগানের নাম ‘ফিউচার মাশরুম সেন্টার’।

সরেজমিন দেখা যায়, মো. আবদুল্লাহর তিনতলা বাড়ির ছাদের একপাশে টিনের শেড। শেডের নিচে ঝুলছে পাটের রশির শিকে, আর শিকেই ঝুলছে মাশরুমের বীজপত্র। খড় দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে বানানো এই বীজপত্রের চারপাশ দিয়ে ছোট বড় মাশরুম উঁকি দিচ্ছে।

এ সময় কথা হয় মো. আব্দুল্লাহর সঙ্গে। সে বলে, করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকায় বেকার না বসে থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে নতুন কিছু করার জন্য অনলাইনে মাশরুম চাষ সম্পর্কে টিউটোরিয়াল দেখি। একপর্যায়ে ছয় হাজার টাকার বিনিময়ে সাভার মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে মাশরুম চাষের ওপর একটি অনলাইন কোর্স সম্পন্ন করি।’

মো. আবদুল্লাহ আরও বলে, ‘আমি বাবার কাছ থেকে মাত্র দশ হাজার টাকা নিয়ে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মাশরুমের চাষ শুরু করি। ছয় মাস ধরে কাজ করেছি। প্রথম তিন মাস লেগেছে একটা বীজপত্র বা মাইসিলিয়াম তৈরি শেষ হতে। প্রতিটি মাইসিলিয়াম থেকে দেড় কেজি মাশরুম পাওয়া যায়। প্রতি কেজি মাশরুম বিক্রি হয় ২৫০ টাকায়। এখন আমার পুঁজি বিনিয়োগ করা হয়েছে দুই লাখ টাকা। আপাতত শুধু ‘ওয়েস্ট্রা পি ও ২’ জাতের মাশরুম চাষ করছি। এতে আয় হচ্ছে মাসপ্রতি ৫০ হাজার টাকার বেশি। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে গড়ে ৩০ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে।

মাশরুম কীভাবে বিক্রি করেন এবং বাজারজাতকরণে কী কী ধরনের সমস্যা আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ জানায়, ‘আমরা এটিকে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও গ্রুপের মাধ্যমে বিক্রি করি। অনলাইনে অর্ডার নিই, কুরিয়ার করি। আবার অনেকে এসে বাড়ি থেকেই নিয়ে যায়। বেশির ভাগ মাশরুম যায় রেস্টুরেন্টগুলোতে। এদিকে, নরসিংদীতে মাশরুম বাজারজাতকরণ ও মাশরুম চাষিদের প্রশিক্ষণের কোনো সেন্টার নাই।’

আবদুল্লাহর বাবা মকবুল হোসেন বলেন, ‘ছেলের এই রকম সফল কাজে আমি খুব খুশি। অবসর বসে না থেকে উৎপাদনমুখী কাজ করছে এটাই অনেক বড় ব্যাপার।’

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মাহবুবুর রশীদ বলেন, মাশরুম চাষে এখন পর্যন্ত জেলা পর্যায়ে কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। নরসিংদীতে যারা মাশরুম চাষ করে, সহজভাবে বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে আমরা তাঁদের বিভিন্ন চায়নিজ রেস্টুরেন্টগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে থাকি।’