তীব্র গ্যাস-সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় ধস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে সতর্কতা হিসেবে সরকার গত শুক্রবার রাত থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। এতে তীব্র গ্যাস-সংকটে বড় ধাক্কা লেগেছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। বেড়েছে লোডশেডিং। গ্যাসের সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও ১০-১২ দিন লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।

দেশে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪২ শতাংশের বেশি আসে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। এর পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার মেগাওয়াট। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) জানিয়েছে, এলএনজি সরবরাহ বন্ধ থাকায় বর্তমানে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন অর্ধেকে, অর্থাৎ ৩ হাজার মেগাওয়াটে নেমে এসেছে।ফলে গত দুই দিন জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ এসেছে সাড়ে ৯ হাজার মেগাওয়াট। যদিও বিদ্যুতের দৈনিক গড় চাহিদা ১২ হাজার মেগাওয়াট।

গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে হিমশিম খেতে হচ্ছে জানিয়ে পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা গ্যাস নিয়ে এমন সংকটে পড়েছি যে, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আমাদের গ্যাসচালিত যত বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে, সেগুলো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম ছাড়াও মধ্যাঞ্চলে যত বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে, সবগুলো এখন বন্ধ। এখন যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আছে, সেগুলো চালু রাখাও কঠিন হয়ে গেছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় দেশব্যাপী বেড়েছে লোডশেডিং। গ্রামাঞ্চলে আগে থেকেই ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেড করা হচ্ছিল। এখন রাজধানী ঢাকাসহ বড় মেট্রোপলিটন শহরেও বেড়েছে লোডশেডিংয়ের তীব্রতা। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় ঢাকায় ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হচ্ছে।

ঢাকার একাংশে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসি জানিয়েছে, গতকাল রোববার গড়ে ৫ ঘণ্টা করে লোডশেড করতে হয়েছে তাদের।ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা আছে প্রায় ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ আছে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের মতো। এই জন্য এখন স্থানভেদে ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’

অন্যদিকে ডেসকো জানিয়েছে, তাদের আওতাধীন এলাকায়ও গত শনিবারের তুলনায় গতকাল রোববার লোডশেডিং বেড়েছে। শনিবার ৩০০ মেগাওয়াটের মতো ঘাটতি থাকলেও গতকাল সেটা বেড়ে ৪০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। এ জন্য ঢাকার কোনো কোনো এলাকায় ৭ ঘণ্টা ছাড়িয়ে গেছে লোডশেডিং।

আগামী দুই দিনের মধ্যে বিদ্যুতের লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তবে গ্যাসের সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও ১০-১২ দিন লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল সচিবালয়ে নসরুল হামিদ বলেন, দুটি ভাসমান টার্মিনালের মধ্যে একটি গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। আর যেটি উপকূলের কাছাকাছি আছে, সেখান থেকে শিগগিরই এলএনজি সরবরাহ শুরু হবে। তবে গভীর সমুদ্রে থাকা ভাসমান টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ শুরু হতে ১২ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতে পারে।

চুলাও জ্বলছে না 
রাজধানীতে লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি রান্নার গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, রিং রোড, কল্যাণপুর, রামপুরা, গোড়ানসহ আশপাশের এলাকায় দুই দিন ধরে দিনের বেশির ভাগ সময় গ্যাস থাকছে না। গোড়ানের শান্তিপুর এলাকার বাসিন্দা মো. আরিফ রহমান বলেন, ‘এত দিন আমরা মিটমিট করে গ্যাস পেলেও দুই দিন ধরে গ্যাস আসছে না বলা যায়। রান্নাবান্না নিয়ে আমরা বেশ সমস্যায় আছি।’

অন্যদিকে সিএনজি ফিলিং স্টেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা গত দুই দিন ধরে গ্যাসের চাপ অনেক কম পাচ্ছেন। গ্যাসের চাপ না থাকায় সিএনজির সঙ্গে বাতাস ঢুকে যাচ্ছে গাড়িতে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গাড়ির মালিকেরা।

রাজধানীর বীরোত্তম রফিকুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে অবস্থিত জামান ফিলিং স্টেশনের পরিচালক (অর্থ) মোনতাকাজ্জামান সাব্বির আজকের পত্রিকাকে বলেন, সিএনজি ফিলিং স্টেশনে অনেক আগে থেকেই গ্যাসের চাপ কম। কিন্তু গত দুই দিন ধরে চাপ আরও কমে গেছে।  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত