গ্রামীণ পিঠা যান্ত্রিক শহরে

কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮: ১১

রাজধানীতে আজকাল শীতও নামে আলসেমি করে। গত কয়েক দিনে লোকজন যেন ভুলতে শুরু করেছে, শীতকাল এখনো ফুরিয়ে যায়নি। এই যাই যাই শীতে ঢাকায় বসেছে পিঠার উৎসব।

রাজধানীবাসীর কাছে এই পিঠা উৎসব একটু ভিন্ন আমেজ তৈরি করে। যান্ত্রিক জীবনে ভাপা পিঠার হাঁড়ির ভাপ এক মুহূর্তে মনে করিয়ে দেয় অনেক কিছু। শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বিকেলের মিষ্টি রোদে তাই মনে হয় দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের ভিড়।

জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির এ পিঠা উৎসবে বিভিন্ন জেলা থেকে পিঠা নিয়ে এসেছেন উদ্যোক্তারা। কেউ এবারেই প্রথম এসেছেন আবার কেউ এসেছেন এর আগেও।

এবারের উৎসবে এসেছেন নরসিংদী, নোয়াখালী, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নড়াইল, বরিশাল, ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পিঠাশিল্পীরা। তাঁদের দোকানগুলোতে আছে লবঙ্গ লতিকা, গোলাপ ফুল পিঠা, সুন্দরী পাকান, পাকান পিঠা, মালপোয়া, আন্দেশা, কাটা পিঠা, মালাই পিঠা, কলা পিঠা, খেজুরের পিঠা, কুলশি, বিবিখানা, দুধরাজ, ক্ষীর কুলি, মুঠি পিঠা, গোকুল পিঠা, রসফুল পিঠা, দুধ চিতই, চুটকি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, সরভাজা, নারকেলের সেদ্ধ পুলি, নারকেল জিলাপি, নারকেলের ভাজা পুলিসহ বাহারি নকশা ও আকারের পিঠা।

বগুড়া থেকে এবারই প্রথম মেলায় এসেছেন বিলকিস। অনলাইনে মূলত কাপড়ের ব্যবসা করেন তিনি। তবে পিঠা বানাতে ভালো লাগে তাঁর। মায়ের কাছে পিঠা বানানো শিখেছেন তিনি। বিলকিস বেগম মালপোয়া, ঝিনুক পিঠা, নকশি পিঠা, লবঙ্গ পিঠা, সেমাই, চিকেন রোল, চিংড়ি পিঠা আর সঙ্গে এনেছেন বগুড়ার দই।

তানজিনা আফরিন থাকেন রাজধানী গ্রিন রোডে, পরিবারের সঙ্গে। মাশরুম চাষের খামার আছে তাঁর। সেটা সাভারে। বুটিক ব্যবসার সঙ্গে আছে আচার ও সরিষার তেলের ব্যবসা। পিঠা মেলায় ঢুকতেই হাতের বাঁয়ে গেলে কয়েকটা স্টল পরেই তাঁর দোকান। নিজের চাষের মাশরুম দিয়ে সেখানেই ভেজে দিচ্ছেন মাশরুমের চপ। ক্রেতা সামলে তিনি বললেন, ‘আমি ভালোটা খাচ্ছি, তাই সবাইকে খাওয়াতে চাই।’ তাঁর দোকানে আছে বিবিখানা পিঠা, দুধ লাউসহ ছিট রুটি ও হাঁসের মাংস।

সুমাইয়া বিনতে বাঁধন তাঁর তিন খালা ও ভাইবোনের সঙ্গে এসেছেন পিঠা মেলায় স্টল নিয়ে। তাঁদের স্টলে আছে ১৭ রকমের পিঠা। এর মধ্যে গোলাপজাম আর বিবিখানা পিঠাকেই বিশেষ বলে উল্লেখ করলেন তিনি। অনলাইনে এই পিঠার ব্যবসা করেন সুমাইয়া।

বরিশাল পিঠা ঘরে সারি সারি সাজানো হয়েছে ঐতিহ্যবাহী পিঠা। দোকানের বিক্রেতা জানালেন, প্রতিদিন যা আনেন প্রায় সবই বিক্রি হয়ে যায়।

পিঠা মেলায় বিভিন্ন জেলার দেশীয় পিঠার পাশাপাশি হুট করে চোখে পড়ে মোমো। দোকানি জানালেন, দেশীয় পিঠার পাশাপাশি এই বিদেশি খাবারটিও শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায় ভালোই বিক্রি হয় যেকোনো জায়গায়।

পিঠা মেলার ভেতরে যে শুধু পিঠা বিক্রি হচ্ছে, এমন নয়। মেলার বাইরেও বিক্রি হচ্ছে পিঠা। যাঁদের কাছে পিঠা মেলার পিঠার দাম অনেক বেশি বলে মনে হচ্ছে, তাঁরা খাচ্ছেন বাইরের দোকান থেকে কিনে। এই পরিবেশ দেখে বলাই যায়, বাঙালি আর যা–ই হোক, শীত উপভোগ করতে পিঠা খাওয়া ভুলে যাবে না।

জাতীয় পিঠা মেলা শেষ হবে ২৮ জানুয়ারি। বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত