মৃত্যুঞ্জয় রায়
স্মরণকালের এক ভয়াবহ বন্যার রূপ দেখেছে এবার বাংলাদেশের মানুষ। দেশের পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ ১১টি জেলার ৭৪টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৫। পানিবন্দী পরিবার ১২ লাখ ৭ হাজার ৪২৯টি। বন্যায় এ পর্যন্ত মারা গেছে ২৭ জন।
গত ৩০ বছরের মধ্যে এরূপ ভয়াবহ বন্যা দেখেনি পূর্বাঞ্চলের মানুষ। তাই এই অঞ্চলের অনেক মানুষের কাছে এ এক নতুন অভিজ্ঞতা এবং চরম ভোগান্তি। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে অতিবৃষ্টির পানি ১৫টি নদী দিয়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যে হঠাৎ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এই আকস্মিক বন্যা ঘটিয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ১৯ আগস্ট থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে শুরু হয় মেঘ বিস্ফোরণ। পশ্চিম দিক থেকে উঠে আসা ঠান্ডা বাতাস দেশের পূর্বাঞ্চলের আকাশে প্রবেশ করে। অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ কক্সবাজার থেকে কুমিল্লায় চলে আসে। মৌসুমি বায়ু প্রবল থাকায় বিপুল পরিমাণ মেঘ এই অঞ্চলের আকাশে স্তরে স্তরে জমা হয়। একসময় তা বিস্ফোরিত হয়ে প্রবল বর্ষণ তৈরি করে। ত্রিপুরায় ডুম্বুর বাঁধ খুলে দিলে হঠাৎ করে ধেয়ে আসে বিপুল পরিমাণ পানি। ১৯ আগস্ট পূর্ণিমা তিথি থাকায় তার প্রভাবে বেড়ে যায় জোয়ারের পানি। ফলে বন্যার পানি নিকাশেও বিলম্ব হয়। সব মিলিয়ে পূর্বাঞ্চলে সৃষ্টি হয় এই বন্যা পরিস্থিতি। বন্যায় কোনো কোনো এলাকায় পানির উচ্চতা ১৪ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত হয়ে যায়, অধিকাংশ এলাকায় ঘরের চালা পর্যন্ত পানি উঠে যায়, যা ইতিপূর্বে সেই সব এলাকার মানুষ কখনো দেখেনি।
বন্যায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে বেড়িয়েছে নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে। অসহায় অবস্থায় দিনের পর দিন কেটেছে তাদের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে। এ দেশের সব শ্রেণির মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ছুটে গেছে বন্যার্ত মানুষের পাশে। ত্রাণ ও খাদ্যসহায়তা পেলেও চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলোতে। হাসপাতালগুলোতেও সুপেয় পানি, চিকিৎসক ও ওষুধের সংকট, প্রত্যন্ত এলাকার অবস্থা বেশি নাজুক।
এ তো গেল মানুষের দুর্ভোগের কথা। বন্যার পানি ইতিমধ্যে নামতে শুরু করেছে। আশা করা যায়, কয়েক দিনের মধ্যেই বন্যার পানি সরে যাবে। কিন্তু এর পরই দেখা যাবে বন্যার আসল ক্ষতচিহ্নগুলো। বিপর্যস্ত যোগাযোগব্যবস্থা, সড়কে ভাঙন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। সাধারণভাবে বন্যার পর ভূমি ও পরিবেশের যেসব ক্ষতি দেখা যায়, তার সবই ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হবে। কোনো স্থানে হয়তো মাটি নেই। আবার কোনো জায়গায় ছিল পুকুর বা জলাশয়, সেগুলো বন্যার পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। টিউবওয়েলগুলো অকেজো, খাওয়ার পানির তীব্র সংকট। হয়তো দেখা যাবে, কোথাও নদীতলে পলি জমে উঁচু হয়ে গেছে, ফলে নদীগুলো নাব্যতা হারাচ্ছে, নদীর পাড় ভেঙেছে, ভূমিধসের মতো ঘটনাও বিরল নয়। চারদিকে মরা জীবজন্তুর দেহাবশেষ, দূষিত পানি। দীর্ঘ সময় ধরে জলাবদ্ধ থাকায় বন্যাকবলিত এলাকার খেতগুলো হয়ে পড়েছে ফসলশূন্য। ফসল চাষ করা হয় মৌসুম ধরে। এবারের বন্যায় আমন ধানের বীজতলা ও চারাগাছ ডুবে যাওয়ায় চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। বন্যার পর নতুন করে বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদন এবং সেই সব চারা লাগানোর সময়ও নেই। ফলে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এসব এলাকার বিপুল পরিমাণ জমিতে আমন ধানের চাষ পড়তে পারে শঙ্কার মুখে। শাকসবজির অবস্থাও তথৈবচ, অনেক ফলের গাছ মরে যাবে। নতুন করে আবার শুরু করতে হবে চাষাবাদ। বিভিন্ন বর্জ্য, মনুষ্য বিষ্ঠা ও পশুবর্জ্য, গলে যাওয়া সার, গুলে যাওয়া বালাইনাশক, বৃক্ষলতার পচন, জীবজন্তুর মৃতদেহ ইত্যাদি বানের পানিকে দূষিত করে। জলমগ্নতা ও দূষিত পলিময় পানির প্রভাবে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে সেই সব এলাকার বৃক্ষসম্পদ। এতে ভেঙে পড়বে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র, অনেক জীব তাদের বাসস্থানের অভাবে উদ্বাস্তু হবে, এমনকি অনেক জীব মরে যাবে। মানুষের মতো ওরাও এই বন্যায় আশ্রয়হীন। আবার আর্দ্র ও জলমগ্ন পরিবেশে বাড়বে অনেক জীবাণুর প্রকোপ। এতে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। এমনিতে বন্যার কারণে ও খাদ্যাভাবে মানুষ কাহিল হয়ে পড়ে। তাই এসব রোগজীবাণু সহজেই মানুষকে সংক্রমণ করতে পারে। এ সময় বেড়ে যায় ডায়রিয়া, জন্ডিস, টাইফয়েড, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ইত্যাদি রোগ।
বন্যার পর এরূপ পরিবেশগত, জীবগত ও সামাজিক বিপর্যয় এবং ঝুঁকি মোকাবিলায় তাই বন্যাকালীন ত্রাণসহায়তা প্রদানের মতো বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতেও দুর্গত মানুষের পাশে সবাইকে দাঁড়াতে হবে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফেরা মানুষ যেন তাদের ঘরে ফিরতে পারে এবং সেখানে নিরাপদে থাকতে পারে, তাতে সাহায্য করতে হবে। ঘরবাড়ি মেরামত করা নিশ্চয়ই দুবেলা খাওয়ার জন্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণের চেয়ে কঠিন। যারা সম্বলহীন, তাদের জন্য নতুন ঘর বানানো বা মেরামত করা খুবই কঠিন। তাদের কীভাবে কে কতটা সাহায্য করতে পারে, তা নিশ্চিত করা দরকার। ঘরবাড়ি, শৌচাগার, জলাধার ইত্যাদি পরিষ্কার করাও সহজ নয়। যেসব সম্পদ পানিতে ভিজে বা ভেসে গেছে, তার অধিকাংশই আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই ক্ষতিগ্রস্তদের উপকরণগত সাহায্যের বিষয়টিকেও অবহেলা করার উপায় নেই। এ ক্ষেত্রে গৃহপালিত প্রাণিসম্পদ পুনরুদ্ধার, চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া জরুরি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো শুধু সচল করলেই চলবে না, সেখানে আপৎকালীন দুর্যোগ পরিস্থিতি বিবেচনা করে সাময়িক সময়ের জন্য অতিরিক্ত চিকিৎসক ও নার্সদের নিয়োজিত এবং ওষুধ সরবরাহ করা দরকার।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাপনা সচল করা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। ইতিমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও বন্যা-পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ১২টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো চলমান কৃষি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন কর্মসূচি জোরদার করা, উপযুক্ত নাবি জাতের আমন ধানের বীজের পর্যাপ্ত সংস্থান করা, উঁচু স্থানে আপৎকালীন বীজতলা করা, আগাম শীতকালীন শাকসবজি উৎপাদনের কার্যক্রম গ্রহণ করা ইত্যাদি। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট এলাকার সবাইকে সার্বক্ষণিকভাবে কৃষকদের পাশে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, সবার সম্মিলিত চেষ্টায় এবং সরকারের যথাযথ উদ্যোগে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে মানুষ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে, পরিবেশও পুনরুজ্জীবিত হবে। তবে স্থায়ীভাবে বন্যা প্রতিরোধের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার কথাও সরকারকে ভাবতে হবে।
লেখক: কৃষিবিদ ও পরিবেশবিষয়ক লেখক
স্মরণকালের এক ভয়াবহ বন্যার রূপ দেখেছে এবার বাংলাদেশের মানুষ। দেশের পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ ১১টি জেলার ৭৪টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৫। পানিবন্দী পরিবার ১২ লাখ ৭ হাজার ৪২৯টি। বন্যায় এ পর্যন্ত মারা গেছে ২৭ জন।
গত ৩০ বছরের মধ্যে এরূপ ভয়াবহ বন্যা দেখেনি পূর্বাঞ্চলের মানুষ। তাই এই অঞ্চলের অনেক মানুষের কাছে এ এক নতুন অভিজ্ঞতা এবং চরম ভোগান্তি। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে অতিবৃষ্টির পানি ১৫টি নদী দিয়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যে হঠাৎ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এই আকস্মিক বন্যা ঘটিয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ১৯ আগস্ট থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে শুরু হয় মেঘ বিস্ফোরণ। পশ্চিম দিক থেকে উঠে আসা ঠান্ডা বাতাস দেশের পূর্বাঞ্চলের আকাশে প্রবেশ করে। অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ কক্সবাজার থেকে কুমিল্লায় চলে আসে। মৌসুমি বায়ু প্রবল থাকায় বিপুল পরিমাণ মেঘ এই অঞ্চলের আকাশে স্তরে স্তরে জমা হয়। একসময় তা বিস্ফোরিত হয়ে প্রবল বর্ষণ তৈরি করে। ত্রিপুরায় ডুম্বুর বাঁধ খুলে দিলে হঠাৎ করে ধেয়ে আসে বিপুল পরিমাণ পানি। ১৯ আগস্ট পূর্ণিমা তিথি থাকায় তার প্রভাবে বেড়ে যায় জোয়ারের পানি। ফলে বন্যার পানি নিকাশেও বিলম্ব হয়। সব মিলিয়ে পূর্বাঞ্চলে সৃষ্টি হয় এই বন্যা পরিস্থিতি। বন্যায় কোনো কোনো এলাকায় পানির উচ্চতা ১৪ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত হয়ে যায়, অধিকাংশ এলাকায় ঘরের চালা পর্যন্ত পানি উঠে যায়, যা ইতিপূর্বে সেই সব এলাকার মানুষ কখনো দেখেনি।
বন্যায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে বেড়িয়েছে নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে। অসহায় অবস্থায় দিনের পর দিন কেটেছে তাদের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে। এ দেশের সব শ্রেণির মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ছুটে গেছে বন্যার্ত মানুষের পাশে। ত্রাণ ও খাদ্যসহায়তা পেলেও চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলোতে। হাসপাতালগুলোতেও সুপেয় পানি, চিকিৎসক ও ওষুধের সংকট, প্রত্যন্ত এলাকার অবস্থা বেশি নাজুক।
এ তো গেল মানুষের দুর্ভোগের কথা। বন্যার পানি ইতিমধ্যে নামতে শুরু করেছে। আশা করা যায়, কয়েক দিনের মধ্যেই বন্যার পানি সরে যাবে। কিন্তু এর পরই দেখা যাবে বন্যার আসল ক্ষতচিহ্নগুলো। বিপর্যস্ত যোগাযোগব্যবস্থা, সড়কে ভাঙন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। সাধারণভাবে বন্যার পর ভূমি ও পরিবেশের যেসব ক্ষতি দেখা যায়, তার সবই ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হবে। কোনো স্থানে হয়তো মাটি নেই। আবার কোনো জায়গায় ছিল পুকুর বা জলাশয়, সেগুলো বন্যার পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। টিউবওয়েলগুলো অকেজো, খাওয়ার পানির তীব্র সংকট। হয়তো দেখা যাবে, কোথাও নদীতলে পলি জমে উঁচু হয়ে গেছে, ফলে নদীগুলো নাব্যতা হারাচ্ছে, নদীর পাড় ভেঙেছে, ভূমিধসের মতো ঘটনাও বিরল নয়। চারদিকে মরা জীবজন্তুর দেহাবশেষ, দূষিত পানি। দীর্ঘ সময় ধরে জলাবদ্ধ থাকায় বন্যাকবলিত এলাকার খেতগুলো হয়ে পড়েছে ফসলশূন্য। ফসল চাষ করা হয় মৌসুম ধরে। এবারের বন্যায় আমন ধানের বীজতলা ও চারাগাছ ডুবে যাওয়ায় চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। বন্যার পর নতুন করে বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদন এবং সেই সব চারা লাগানোর সময়ও নেই। ফলে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এসব এলাকার বিপুল পরিমাণ জমিতে আমন ধানের চাষ পড়তে পারে শঙ্কার মুখে। শাকসবজির অবস্থাও তথৈবচ, অনেক ফলের গাছ মরে যাবে। নতুন করে আবার শুরু করতে হবে চাষাবাদ। বিভিন্ন বর্জ্য, মনুষ্য বিষ্ঠা ও পশুবর্জ্য, গলে যাওয়া সার, গুলে যাওয়া বালাইনাশক, বৃক্ষলতার পচন, জীবজন্তুর মৃতদেহ ইত্যাদি বানের পানিকে দূষিত করে। জলমগ্নতা ও দূষিত পলিময় পানির প্রভাবে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে সেই সব এলাকার বৃক্ষসম্পদ। এতে ভেঙে পড়বে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র, অনেক জীব তাদের বাসস্থানের অভাবে উদ্বাস্তু হবে, এমনকি অনেক জীব মরে যাবে। মানুষের মতো ওরাও এই বন্যায় আশ্রয়হীন। আবার আর্দ্র ও জলমগ্ন পরিবেশে বাড়বে অনেক জীবাণুর প্রকোপ। এতে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। এমনিতে বন্যার কারণে ও খাদ্যাভাবে মানুষ কাহিল হয়ে পড়ে। তাই এসব রোগজীবাণু সহজেই মানুষকে সংক্রমণ করতে পারে। এ সময় বেড়ে যায় ডায়রিয়া, জন্ডিস, টাইফয়েড, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ইত্যাদি রোগ।
বন্যার পর এরূপ পরিবেশগত, জীবগত ও সামাজিক বিপর্যয় এবং ঝুঁকি মোকাবিলায় তাই বন্যাকালীন ত্রাণসহায়তা প্রদানের মতো বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতেও দুর্গত মানুষের পাশে সবাইকে দাঁড়াতে হবে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফেরা মানুষ যেন তাদের ঘরে ফিরতে পারে এবং সেখানে নিরাপদে থাকতে পারে, তাতে সাহায্য করতে হবে। ঘরবাড়ি মেরামত করা নিশ্চয়ই দুবেলা খাওয়ার জন্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণের চেয়ে কঠিন। যারা সম্বলহীন, তাদের জন্য নতুন ঘর বানানো বা মেরামত করা খুবই কঠিন। তাদের কীভাবে কে কতটা সাহায্য করতে পারে, তা নিশ্চিত করা দরকার। ঘরবাড়ি, শৌচাগার, জলাধার ইত্যাদি পরিষ্কার করাও সহজ নয়। যেসব সম্পদ পানিতে ভিজে বা ভেসে গেছে, তার অধিকাংশই আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই ক্ষতিগ্রস্তদের উপকরণগত সাহায্যের বিষয়টিকেও অবহেলা করার উপায় নেই। এ ক্ষেত্রে গৃহপালিত প্রাণিসম্পদ পুনরুদ্ধার, চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া জরুরি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো শুধু সচল করলেই চলবে না, সেখানে আপৎকালীন দুর্যোগ পরিস্থিতি বিবেচনা করে সাময়িক সময়ের জন্য অতিরিক্ত চিকিৎসক ও নার্সদের নিয়োজিত এবং ওষুধ সরবরাহ করা দরকার।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাপনা সচল করা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। ইতিমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও বন্যা-পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ১২টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো চলমান কৃষি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন কর্মসূচি জোরদার করা, উপযুক্ত নাবি জাতের আমন ধানের বীজের পর্যাপ্ত সংস্থান করা, উঁচু স্থানে আপৎকালীন বীজতলা করা, আগাম শীতকালীন শাকসবজি উৎপাদনের কার্যক্রম গ্রহণ করা ইত্যাদি। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট এলাকার সবাইকে সার্বক্ষণিকভাবে কৃষকদের পাশে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, সবার সম্মিলিত চেষ্টায় এবং সরকারের যথাযথ উদ্যোগে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে মানুষ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে, পরিবেশও পুনরুজ্জীবিত হবে। তবে স্থায়ীভাবে বন্যা প্রতিরোধের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার কথাও সরকারকে ভাবতে হবে।
লেখক: কৃষিবিদ ও পরিবেশবিষয়ক লেখক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে