গিরিশচন্দ্রের ভূমিকা

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২: ৪৪

বিনোদিনী দাসী একটি আত্মকাহিনি লিখেছিলেন। সে কাহিনি লিখতে অনুরোধ করেছিলেন তাঁরই শিক্ষাগুরু গিরিশচন্দ্র ঘোষ। লেখা শেষ হলে বিনোদিনী সেই পাণ্ডুলিপি দেখতে দিলেন গুরুকে। খুবই মনোযোগ দিয়ে সে লেখা পড়লেন গিরিশচন্দ্র। তারপর কোন কোন জায়গায় কিঞ্চিৎ পরিবর্তন আনতে হবে, সে কথা বলে দিলেন। তারপর বললেন, ‘তোমার সরলভাবে লিখিত সাদা ভাষায় যে সৌন্দর্য আছে, কাটাকুটি করে পরিবর্তন করলে তা নষ্ট হবে। তুমি যেমন লিখেছ, সেভাবেই ছাপিয়ে দাও। আমি তোমার বইয়ের ভূমিকা লিখে দেব।’

গিরিশচন্দ্র বইটির ভূমিকা লিখে বিনোদিনীকে দিলেন। কিন্তু সেটা বিনোদিনীর মনঃপূত হলো না। লেখাটি ভালো। সেই ভূমিকায় অনেকগুলো সত্যের উপস্থিতি ছিল না বলে বিনোদিনীর আপত্তি ছিল। কেন সত্য কথাগুলো শিক্ষাগুরু লেখেননি, সে কথা গিরিশচন্দ্র ঘোষের কাছে জানতে চাইলেন বিনোদিনী। গিরিশ বললেন, ‘সত্য যদি অপ্রিয় ও কটু হয়, তাহলে তা সব সময় প্রকাশ করা উচিত নয়।’

সে সময় অভিমানে বিনোদিনীর হৃদয় পূর্ণ। গিরিশ তাঁর স্বভাবের উদারতা দিয়েই বিনোদিনীকে স্নেহের প্রশ্রয় দিচ্ছেন, সে কথা বুঝতেন বিনোদিনী। কিন্তু অভিমানের কারণে রুগ্‌ণ দেহে রোগশয্যায় থাকা গিরিশকে তিনি নতুন করে সব সত্য প্রকাশ করে আবার একটি ভূমিকা লিখে দিতে বললেন। এমন জোর দিয়ে তিনি নতুন ভূমিকা চাইলেন যে গিরিশচন্দ্র নতুন করে ভূমিকা লিখবেন বলে কথা দিলেন।

বিনোদিনী ভেবেছিলেন, তাঁর শিক্ষাগুরু ও সে সময়ের সেরা অভিনেতা যদি সব ঘটনা ভূমিকায় উল্লেখ না করেন, তাহলে বিনোদিনীর আত্মকাহিনি লেখাটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। স্নেহের সুরে গিরিশ বললেন, ‘তোমার ভূমিকা লিখে না দিয়ে আমি মরব না।’

কিন্তু গিরিশ তাঁর কথা রাখতে পারেননি। ভূমিকা লেখার আগেই তিনি মারা গেলেন। তখন আগে লেখা ভূমিকাটির খোঁজ পড়ল। সেটা যত্ন করে রেখে দিয়েছিলেন অবিনাশচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়। প্রথম সংস্করণে বিনোদিনী ভূমিকাটি ছাপেননি, সেই ভূমিকাটাই পরে ছাপা হয়েছিল বইটির নতুন সংস্করণে।

সূত্র: বিনোদিনী দাসী, আমার কথা ও অন্যান্য রচনা, ভূমিকা

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত