অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
সরকার যে বেশ জোরেশোরে এবং দৃপ্ত পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তপূরণের পথে হাঁটছে, তা এখন সর্বসমক্ষে দৃশ্যমান ও নিশ্চিতভাবে প্রতীয়মান। বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি (সাড়ে চার বিলিয়ন) মার্কিন ডলার ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের অন্যতম প্রধান শর্ত বিভিন্ন খাত থেকে সরকারের ভর্তুকি প্রত্যাহার। ব্যয় কমানো।
এসব শর্তপূরণের বিষয়ে সরকার এত দিন রাখঢাক করে চলেছে। স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। কিন্তু মনে মনে সিদ্ধান্ত ছিল পাকা। সে জন্যই আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তির ছাড় নিশ্চিত করতে হঠাৎ করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণা আসে ১৩ জানুয়ারি। এর মাত্র পাঁচ দিন পর, আবারও হঠাৎ করেই আসে ১৮ জানুয়ারি গ্যাসের রেকর্ড পরিমাণ মূল্যবৃদ্ধির আদেশ।
বিশেষভাবে লক্ষ করার বিষয় হলো, বিদ্যুৎ এবং গ্যাস দুটিরই দাম বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী আদেশে। এর মাধ্যমে প্রায় এক দশক ধরে চলে আসা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সর্বজনগ্রাহ্য আইনি প্রক্রিয়াটি উপেক্ষা করা হলো। আসলে সব পরিস্থিতিতে আইনকানুন, নিয়ম-নীতি মেনে রাষ্ট্র পরিচালনা কঠিনই বটে!
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনও (বিইআরসি) কিন্তু রাষ্ট্রীয় আইনের আওতায় প্রতিষ্ঠিত একটি আধা বিচারিক (কোয়াসি জুডিশিয়াল) সংস্থা। মাত্র কিছুদিন আগে এই বিইআরসি আইন, ২০০১ সংশোধন করে নির্বাহী আদেশে সব ধরনের জ্বালানি পণ্যের দাম বাড়ানোর সমান্তরাল ব্যবস্থাটি করা হয়। কারণ, ওই যে বললাম, মনে মনে পাকা ছিল ভর্তুকি তুলে দেওয়ার আইএমএফের শর্ত মানার সিদ্ধান্ত!
গত বুধবার দেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক জ্বালানি প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহারের পক্ষে জোরালো ও যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। সেই বক্তব্য থেকে স্পষ্টই অনুধাবন করা যায় যে সরকার ভর্তুকি দেওয়ার নীতি বা সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে চায়।
সরকারের এই চাওয়াকে বোধ হয় আমাদের খুব জোর সমর্থন করা উচিত। কেননা, ভর্তুকি শেষ বিচারে কোনো ভালো জিনিস নয়। ভর্তুকি একটি দেশের অর্থ-বাণিজ্যকে ভেতরে-ভেতরে পঙ্গু করে দেয়। সে ঘরকুনো হয়ে পড়ে। বিশ্ববাজারের উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে সে ভয় পায়। প্রণোদনা ছাড়া তার চলে না। আর এই ভর্তুকি নামের প্রণোদনা দিতে গিয়ে রাষ্ট্র পড়ে হীনবল হয়ে। তার ট্যাঁকের জোর যায় কমে। আমাদের মতো দেশে রাষ্ট্রের বা সরকারের ট্যাঁকের জোর তো এমনিতেই কম। জনকল্যাণমূলক প্রকল্প, জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এসব জরুরি খাতে সরকারের অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতা আরও কমিয়ে দেয় ভর্তুকি। তাই ভর্তুকি তুলে দেওয়ার আদর্শ ব্যবস্থা সমর্থনযোগ্য।
কিন্তু যখন দেখা যায় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান এফবিসিসিআই বিবৃতি দিয়ে বলে যে গ্যাসের এই বর্ধিত দাম দেশের শিল্প-বাণিজ্য বহন করতে অক্ষম, তখন আমাদেরও পুনরায় সন্দেহ জাগে। আসলে মধ্যবিত্ত মানসিকতা আমাদের। কোনো কিছুতেই সহজে নিঃসংশয় হতে পারি না। সে যা-ই হোক। সরকার জ্বালানি-বিদ্যুতের ওপর থেকে ভর্তুকি তুলে দিলে দেশের শিল্প-বাণিজ্য যদি বসে পড়ে, তাহলেই বা কী হবে তার ফলাফল!
এর একটা সমাধানের ইঙ্গিত দিয়েছে আমাদের জ্বালানি বিভাগ। তারা বলেছে, দাম বাড়ানোর অর্থ দিয়ে শুধু ভর্তুকি সমন্বয় করা হবে না। গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহও নিশ্চিত করা হবে; অর্থাৎ দাম বেশি দিলে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাওয়া যাবে। কিন্তু এফবিসিসিআই তো বলছে, এতটা দামই তারা বহন করতে অক্ষম। গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ তো পরের কথা!
তা ছাড়া, এর আগে একবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সময় বিইআরসির কাছে দেওয়া প্রস্তাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর কথা সরকারপক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সেই পরিমাণে বাড়ানো হয়নি। ফলে বিদ্যুতের সরবরাহও প্রস্তাব অনুযায়ী পাওয়া যায়নি। এসব কথাও ব্যবসায়ীদের ভুলে যাওয়ার কথা নয়।
তারও আগের কথা স্মরণ করলে বলা যায়, গত বছর জুলাই-আগস্টে বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম ছিল নিম্নমুখী, তখন দেশে দাম বাড়ানো হলো রেকর্ড পরিমাণে। কেন দাম বাড়িয়েছিল! কারণ, সরকার অর্থসংকটে ছিল। সরকারের হাতে বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা ছিল না। তাই আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া নিশ্চিত করতে জ্বালানি তেলের ওপর থেকে ভর্তুকি প্রায় পুরোটাই প্রত্যাহার করে নিয়ে তেল বিপণনকে মোটামুটি লাভজনকই করে ফেলা হয়।
এবার গ্যাসের ওপর থেকেও ভর্তুকি তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হলো। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও একই নীতি কার্যকর হবে। তার প্রাথমিক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে প্রতি মাসে বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের ঘোষণায়। শোনা যাচ্ছে, জানুয়ারির শেষ কিংবা ফেব্রুয়ারির শুরু নাগাদ বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানো হবে এবং ভর্তুকি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত বিরতিতে দাম বাড়ানো হতেই থাকবে।
এভাবে দাম বাড়িয়ে সরকার একদিকে আইএমএফের ভর্তুকি প্রত্যাহারের শর্ত পূরণ করছে। ফলে ঋণ পাওয়া নিশ্চিত হচ্ছে। ভর্তুকির অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেল, গ্যাস এবং বিদ্যুৎ থেকে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয়ের পথ পরিষ্কার হচ্ছে।
উল্লেখ্য, জ্বালানি খাত সরকারের রাজস্ব আয়ের একটি বড় নির্ভরতার জায়গা। দেশের অদক্ষ কর ও রাজস্ব কর্তৃপক্ষ এই খাতের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়ানোর ফলে সরকারের অন্যতম প্রধান সমস্যা বাজেট ঘাটতি পূরণ, তথা চলতি ব্যয় সংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান বাড়ানোও সম্ভব হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, অস্বাভাবিক রকম দাম বাড়ানোর ফলে যদি দেশের শিল্প-বাণিজ্য তেল-গ্যাস ব্যবহারই করতে না পারে, অর্থাৎ যদি তারা বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারে, তাহলে কী হবে! রপ্তানি আয় বাড়ানো সম্ভব হবে কি? না হলে ডলারের সংকট তো আরও বাড়বে। সেটা কি আইএমএফের দেওয়া ঋণ দিয়ে সমন্বয় হবে? হওয়ার কথা নয়। কারণ ওই ঋণের অর্থ তেমন কোনো বড় অঙ্কের নয়।
আরেকটি প্রশ্ন, আমজনতার কী হবে? গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। নিত্যপণ্যসহ সব জিনিসের দাম এবং জীবনযাত্রার সামগ্রিক ব্যয়ভার বাড়বে। আমজনতা সেটা সামলাবে কী করে! অবশ্য এই প্রশ্নের আলোচনা একটি ক্লিশে বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আমজনতার অবস্থা চিরদিন যা হয়েছে, এখনো তা-ই হবে। কখনো তারা জ্বলন্ত উনুন থেকে ফুটন্ত কড়াইয়ে পড়বে। কখনো ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে। সরকারের চেষ্টা থাকবে টিসিবি প্রভৃতির মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করার। তাতে আমজনতার কতটা কী সাশ্রয় হবে, তা দেখার বিষয়।
আসলে সরকারও পড়েছে এক মহা ফ্যাসাদে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সমগ্র বিশ্বকে টালমাটাল করে তুলেছে। তার ঢেউ আছড়ে পড়েছে আমাদের ওপরও। জ্বালানির বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতা আমাদের ওপর সবচেয়ে বড় আঘাত হয়ে দেখা দিয়েছে। ফলে আমাদের অবস্থা যথেষ্ট এলোমেলো হয়ে পড়েছে।
তবে এ কথা বলতেই হবে, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতেও আমাদের অবস্থা এতটা এলোমেলো না-ও হতে পারত। যদি আমাদের হাতে দৈনিক আর মাত্র এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বেশি গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা থাকত, তাহলেই আমাদের অবস্থা থাকত সম্পূর্ণ বিপরীত। সরকার বিশ্ববাজার থেকে এলএনজি আকারে গ্যাস আমদানির পাশাপাশি যদি দেশের গ্যাসসম্পদ অহরণ ও উত্তোলনের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজটি পরিকল্পিতভাবে করত, তাহলেই দৈনিক ওই এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বাড়তি গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা আমাদের থাকতে পারত। এই দুর্দিনে সেটাই হতো আমাদের রক্ষাকবচ। অবশ্য আমরা সবাই জানি, এখন এ কথা বলে কোনো লাভ নেই। তবু বলা দরকার। কে বলতে পারে, যদি ভবিষ্যতে আবারও কখনো অতীতকে স্মরণ করার প্রয়োজন হয়!
সরকার যে বেশ জোরেশোরে এবং দৃপ্ত পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তপূরণের পথে হাঁটছে, তা এখন সর্বসমক্ষে দৃশ্যমান ও নিশ্চিতভাবে প্রতীয়মান। বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি (সাড়ে চার বিলিয়ন) মার্কিন ডলার ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের অন্যতম প্রধান শর্ত বিভিন্ন খাত থেকে সরকারের ভর্তুকি প্রত্যাহার। ব্যয় কমানো।
এসব শর্তপূরণের বিষয়ে সরকার এত দিন রাখঢাক করে চলেছে। স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। কিন্তু মনে মনে সিদ্ধান্ত ছিল পাকা। সে জন্যই আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তির ছাড় নিশ্চিত করতে হঠাৎ করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণা আসে ১৩ জানুয়ারি। এর মাত্র পাঁচ দিন পর, আবারও হঠাৎ করেই আসে ১৮ জানুয়ারি গ্যাসের রেকর্ড পরিমাণ মূল্যবৃদ্ধির আদেশ।
বিশেষভাবে লক্ষ করার বিষয় হলো, বিদ্যুৎ এবং গ্যাস দুটিরই দাম বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী আদেশে। এর মাধ্যমে প্রায় এক দশক ধরে চলে আসা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সর্বজনগ্রাহ্য আইনি প্রক্রিয়াটি উপেক্ষা করা হলো। আসলে সব পরিস্থিতিতে আইনকানুন, নিয়ম-নীতি মেনে রাষ্ট্র পরিচালনা কঠিনই বটে!
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনও (বিইআরসি) কিন্তু রাষ্ট্রীয় আইনের আওতায় প্রতিষ্ঠিত একটি আধা বিচারিক (কোয়াসি জুডিশিয়াল) সংস্থা। মাত্র কিছুদিন আগে এই বিইআরসি আইন, ২০০১ সংশোধন করে নির্বাহী আদেশে সব ধরনের জ্বালানি পণ্যের দাম বাড়ানোর সমান্তরাল ব্যবস্থাটি করা হয়। কারণ, ওই যে বললাম, মনে মনে পাকা ছিল ভর্তুকি তুলে দেওয়ার আইএমএফের শর্ত মানার সিদ্ধান্ত!
গত বুধবার দেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক জ্বালানি প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহারের পক্ষে জোরালো ও যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। সেই বক্তব্য থেকে স্পষ্টই অনুধাবন করা যায় যে সরকার ভর্তুকি দেওয়ার নীতি বা সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে চায়।
সরকারের এই চাওয়াকে বোধ হয় আমাদের খুব জোর সমর্থন করা উচিত। কেননা, ভর্তুকি শেষ বিচারে কোনো ভালো জিনিস নয়। ভর্তুকি একটি দেশের অর্থ-বাণিজ্যকে ভেতরে-ভেতরে পঙ্গু করে দেয়। সে ঘরকুনো হয়ে পড়ে। বিশ্ববাজারের উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে সে ভয় পায়। প্রণোদনা ছাড়া তার চলে না। আর এই ভর্তুকি নামের প্রণোদনা দিতে গিয়ে রাষ্ট্র পড়ে হীনবল হয়ে। তার ট্যাঁকের জোর যায় কমে। আমাদের মতো দেশে রাষ্ট্রের বা সরকারের ট্যাঁকের জোর তো এমনিতেই কম। জনকল্যাণমূলক প্রকল্প, জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এসব জরুরি খাতে সরকারের অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতা আরও কমিয়ে দেয় ভর্তুকি। তাই ভর্তুকি তুলে দেওয়ার আদর্শ ব্যবস্থা সমর্থনযোগ্য।
কিন্তু যখন দেখা যায় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান এফবিসিসিআই বিবৃতি দিয়ে বলে যে গ্যাসের এই বর্ধিত দাম দেশের শিল্প-বাণিজ্য বহন করতে অক্ষম, তখন আমাদেরও পুনরায় সন্দেহ জাগে। আসলে মধ্যবিত্ত মানসিকতা আমাদের। কোনো কিছুতেই সহজে নিঃসংশয় হতে পারি না। সে যা-ই হোক। সরকার জ্বালানি-বিদ্যুতের ওপর থেকে ভর্তুকি তুলে দিলে দেশের শিল্প-বাণিজ্য যদি বসে পড়ে, তাহলেই বা কী হবে তার ফলাফল!
এর একটা সমাধানের ইঙ্গিত দিয়েছে আমাদের জ্বালানি বিভাগ। তারা বলেছে, দাম বাড়ানোর অর্থ দিয়ে শুধু ভর্তুকি সমন্বয় করা হবে না। গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহও নিশ্চিত করা হবে; অর্থাৎ দাম বেশি দিলে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাওয়া যাবে। কিন্তু এফবিসিসিআই তো বলছে, এতটা দামই তারা বহন করতে অক্ষম। গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ তো পরের কথা!
তা ছাড়া, এর আগে একবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সময় বিইআরসির কাছে দেওয়া প্রস্তাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর কথা সরকারপক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সেই পরিমাণে বাড়ানো হয়নি। ফলে বিদ্যুতের সরবরাহও প্রস্তাব অনুযায়ী পাওয়া যায়নি। এসব কথাও ব্যবসায়ীদের ভুলে যাওয়ার কথা নয়।
তারও আগের কথা স্মরণ করলে বলা যায়, গত বছর জুলাই-আগস্টে বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম ছিল নিম্নমুখী, তখন দেশে দাম বাড়ানো হলো রেকর্ড পরিমাণে। কেন দাম বাড়িয়েছিল! কারণ, সরকার অর্থসংকটে ছিল। সরকারের হাতে বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা ছিল না। তাই আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া নিশ্চিত করতে জ্বালানি তেলের ওপর থেকে ভর্তুকি প্রায় পুরোটাই প্রত্যাহার করে নিয়ে তেল বিপণনকে মোটামুটি লাভজনকই করে ফেলা হয়।
এবার গ্যাসের ওপর থেকেও ভর্তুকি তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হলো। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও একই নীতি কার্যকর হবে। তার প্রাথমিক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে প্রতি মাসে বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের ঘোষণায়। শোনা যাচ্ছে, জানুয়ারির শেষ কিংবা ফেব্রুয়ারির শুরু নাগাদ বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানো হবে এবং ভর্তুকি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত বিরতিতে দাম বাড়ানো হতেই থাকবে।
এভাবে দাম বাড়িয়ে সরকার একদিকে আইএমএফের ভর্তুকি প্রত্যাহারের শর্ত পূরণ করছে। ফলে ঋণ পাওয়া নিশ্চিত হচ্ছে। ভর্তুকির অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেল, গ্যাস এবং বিদ্যুৎ থেকে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয়ের পথ পরিষ্কার হচ্ছে।
উল্লেখ্য, জ্বালানি খাত সরকারের রাজস্ব আয়ের একটি বড় নির্ভরতার জায়গা। দেশের অদক্ষ কর ও রাজস্ব কর্তৃপক্ষ এই খাতের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়ানোর ফলে সরকারের অন্যতম প্রধান সমস্যা বাজেট ঘাটতি পূরণ, তথা চলতি ব্যয় সংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান বাড়ানোও সম্ভব হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, অস্বাভাবিক রকম দাম বাড়ানোর ফলে যদি দেশের শিল্প-বাণিজ্য তেল-গ্যাস ব্যবহারই করতে না পারে, অর্থাৎ যদি তারা বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারে, তাহলে কী হবে! রপ্তানি আয় বাড়ানো সম্ভব হবে কি? না হলে ডলারের সংকট তো আরও বাড়বে। সেটা কি আইএমএফের দেওয়া ঋণ দিয়ে সমন্বয় হবে? হওয়ার কথা নয়। কারণ ওই ঋণের অর্থ তেমন কোনো বড় অঙ্কের নয়।
আরেকটি প্রশ্ন, আমজনতার কী হবে? গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। নিত্যপণ্যসহ সব জিনিসের দাম এবং জীবনযাত্রার সামগ্রিক ব্যয়ভার বাড়বে। আমজনতা সেটা সামলাবে কী করে! অবশ্য এই প্রশ্নের আলোচনা একটি ক্লিশে বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আমজনতার অবস্থা চিরদিন যা হয়েছে, এখনো তা-ই হবে। কখনো তারা জ্বলন্ত উনুন থেকে ফুটন্ত কড়াইয়ে পড়বে। কখনো ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে। সরকারের চেষ্টা থাকবে টিসিবি প্রভৃতির মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করার। তাতে আমজনতার কতটা কী সাশ্রয় হবে, তা দেখার বিষয়।
আসলে সরকারও পড়েছে এক মহা ফ্যাসাদে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সমগ্র বিশ্বকে টালমাটাল করে তুলেছে। তার ঢেউ আছড়ে পড়েছে আমাদের ওপরও। জ্বালানির বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতা আমাদের ওপর সবচেয়ে বড় আঘাত হয়ে দেখা দিয়েছে। ফলে আমাদের অবস্থা যথেষ্ট এলোমেলো হয়ে পড়েছে।
তবে এ কথা বলতেই হবে, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতেও আমাদের অবস্থা এতটা এলোমেলো না-ও হতে পারত। যদি আমাদের হাতে দৈনিক আর মাত্র এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বেশি গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা থাকত, তাহলেই আমাদের অবস্থা থাকত সম্পূর্ণ বিপরীত। সরকার বিশ্ববাজার থেকে এলএনজি আকারে গ্যাস আমদানির পাশাপাশি যদি দেশের গ্যাসসম্পদ অহরণ ও উত্তোলনের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজটি পরিকল্পিতভাবে করত, তাহলেই দৈনিক ওই এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বাড়তি গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা আমাদের থাকতে পারত। এই দুর্দিনে সেটাই হতো আমাদের রক্ষাকবচ। অবশ্য আমরা সবাই জানি, এখন এ কথা বলে কোনো লাভ নেই। তবু বলা দরকার। কে বলতে পারে, যদি ভবিষ্যতে আবারও কখনো অতীতকে স্মরণ করার প্রয়োজন হয়!
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৪ দিন আগে