মুহাম্মদ তানিম নওশাদ
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল সেই ২০১৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি, যখন ‘মর্যাদার বিপ্লবে’র নামে ইউক্রেনের রুশ-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইউক্রেন অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি’ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা পশ্চিমা বলয়ের আরও কাছে চলে আসে। যেটি জাতিগতভাবে রুশ ইয়ানুকোভিচ এবং তার পেছনের চালিকাশক্তি রাশিয়ার মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পতনের পর রাশিয়ার পক্ষে আবার ঘুরে দাঁড়াতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। ভ্লাদিমির পুতিনের মস্তিষ্ক নামে খ্যাত আলেকনাস্দর দুগিন তাঁর লেখালেখি এবং বক্তব্যে দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে সোভিয়েত-উত্তর জামানায় রাশিয়া পশ্চিমাদের নিওলিবারেলিজমের অনেক মূল্যবোধ গ্রহণ করেও তাদের মন রক্ষা করতে পারেনি; সেই সঙ্গে চিন্তাগত জায়গায় অনেক ছাড় দিয়েও রুশদের শেষরক্ষা হয়নি। কারণ পশ্চিমারা রুশ জাতিকে পশ্চিমা, আধুনিক, এমনকি ইউরোপীয় জাতিও মনে করে না। দুগিনও মনে করেন, ইউরেশিয়া ভূখণ্ডে অবস্থিত রাশিয়া মূলত কৃষিভিত্তিক ও চরিত্রগতভাবে এশীয়। সংস্কৃতিগতভাবেও এশীয় বৈশিষ্ট্যের প্রভাব রুশ জাতিতে তীব্র। ফলে রুশ দেশের পরাশক্তির গরিমা আজও পশ্চিমের কাছে ভীতিকর। উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগে পশ্চিমের জন্য হুমকি মূলত এশিয়া; কারণ এটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতাগুলোর লীলাভূমি, জ্ঞানগতভাবে উন্নত জাতিগোষ্ঠীর বাস। বর্তমানে অর্থনীতি ও সামরিক শক্তিতে এখানকার অনেক দেশই পশ্চিমের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর রুশ দেশ তাদের কাছে ঐতিহ্যগতভাবে এশীয়। অন্যদিকে ইয়ানুকোভিচ জন্মেছিলেন সেই দোনবাসে, যেখানে আজোভ ব্যাটেলিয়ান ও ইউক্রেন সেনাবাহিনী ইউক্রেনের পশ্চিম সমর্থিত বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মদদে রুশ জাতিগোষ্ঠী নিধনে লিপ্ত। এই অভিযোগেই মূলত ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে। এত কিছু বলার কারণ, রাশিয়া এই যুদ্ধে জিতবে কি হারবে, তা বোঝার আগে রাশিয়ার মনস্তত্ত্ব জরিপ করা।
অনেকে দাবি করেছেন, এই যুদ্ধে আগে বা পরে রাশিয়া পরাজিত হবে। ফলে বাস্তবতা এ ক্ষেত্রে কী, তা আমরা এখানে নির্মোহভাবে বোঝার চেষ্টা করব। প্রথমত, ইউক্রেনকে আক্রমণের পেছনে রাশিয়ার নৈতিক দাবি একেবারে ফেলার মতো নয়। নিরপেক্ষভাবে বিচার করলে দেখা যাবে, ইউক্রেনে অনেক দিন ধরেই রুশ জাতিগোষ্ঠী চরমভাবে অবহেলিত এবং বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। তাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে সেখানে ইউক্রেনীয় সাংস্কৃতিক গরিমার নিচে আড়াল, এমনকি মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আজোভ বাহিনী চাউর করছে যে ইউক্রেনীয় সভ্যতা রুশসভ্যতা থেকে উন্নততর। দোনবাসে, অর্থাৎ দোনেৎস্ক ও লুহান্সের রুশ জাতিগোষ্ঠীকে রাশিয়ার গুপ্তচর, রুশ আগ্রাসনের পরিকল্পনার মদদদানকারী ইত্যাদি নামে অভিহিত করে নানা অজুহাতে বহু দিন ধরেই চলছিল সাধারণ রুশদের গুম-খুনের ঘটনা। আজোভ বাহিনীর ও জেলেনস্কি প্রশাসনের এই নাৎসি মানসিকতা থেকে রুশ জাতিকে রক্ষার একটা তাড়না পুতিন সরকারের অনেক দিন ধরেই ছিল। ‘জা মির বেজ নাৎসিজমা’ (নাৎসিবাদমুক্ত পৃথিবী) নামে এক গণসম্মেলনও তিনি করেছিলেন গত বছর। আমরা জানি, যুদ্ধে সফলতার জন্য দরকার মনস্তাত্ত্বিক জোর, যার সঙ্গে সম্পর্কিত নৈতিক বল, যা দখলদার বাহিনীর থাকে না। আর দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধের জন্য এটি খুবই দরকার। রাশিয়া এই যুদ্ধ নৈতিক যুদ্ধের মর্যাদা পেয়েছে দুটি কারণে; প্রথমত, এটি ইউক্রেনের রুশ জাতিগোষ্ঠীকে মুক্তির লড়াই। দ্বিতীয়ত, ন্যাটোর সম্প্রসারণের কারণে এবং ইউক্রেন তাতে যুক্ত হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করায় রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের জন্য জেলেনস্কি প্রশাসন হুমকি হওয়ায় এটি রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড রক্ষার প্রয়োজনে তার সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখারও যুদ্ধ। অন্যদিকে গত বছর ইউক্রেনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত জীবাণু অস্ত্রের ৪৬টি পরীক্ষাগার আবিষ্কৃত হওয়ায় এবং যুক্তরাষ্ট্র তা স্বীকার করায় এই যুদ্ধে রাশিয়ার নৈতিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী হয়েছে। রাশিয়া অবশ্য আগে থেকেই এ বিষয়ে সরব ছিল।
ভৌগোলিক দিক দিয়েও রাশিয়া আছে সুবিধাজনক জায়গায়। রাশিয়া ও তার মিত্র বেলারুশের সঙ্গে রয়েছে ইউক্রেনের দীর্ঘ সীমান্ত। অন্যদিকে ইউক্রেনের অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপও গণভোটের মাধ্যমে রুশ দেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ২০১৪ সালে। ফলে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে ঝড় বয়ে যাবে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের ওপর, অন্তত রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে গিয়ে যুদ্ধের সামর্থ্য যেহেতু ইউক্রেনের নেই। কারণ, এই দুই দেশের মধ্যে শক্তি-সাম্য নেই; সামরিক শক্তিতে রাশিয়া ইউক্রেন থেকে অনেক এগিয়ে। আর সাময়িক অসুবিধায় রুশ ও বেলারুশ বাহিনীর আছে তাদের জন্য সহজে গম্য পশ্চাদপসরণভূমি। ফলে এ ক্ষেত্রে পশ্চিমা মদদে এই যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে, ইউক্রেন ততই শুধু ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে এবং হচ্ছেও তা-ই।
এবার আসা যাক পশ্চিমের সামগ্রিক সামরিক বাস্তবতার জায়গায়। ন্যাটো বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে যতই সামরিক সহায়তা দিক, রাশিয়াকে পরাজিত করতে হলে ন্যাটোকে সরাসরি যুদ্ধে নামতে হবে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই যুদ্ধের শুরুতেই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে তারা সরাসরি এই যুদ্ধে জড়াবেন না। কারণটিও পরিষ্কার। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সামরিক বিজ্ঞানে একটি পদ রয়েছে, যাকে বলা হয় ‘ত্রাসের ভারসাম্য’। বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যাক, ধরা যাক সমগ্র ন্যাটো সামরিক শক্তিতে রাশিয়ার চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি। যে কারণে প্রচলিত যুদ্ধের ধারণা দিয়ে এই যুদ্ধকে বিবেচনা করা যাবে না। কারণ, প্রচলিত সামরিক শক্তির বিবেচনায় ন্যাটো এগিয়ে থাকলেও, ধ্বংসাত্মক ক্ষমতায় রাশিয়া ত্রাসের ভারসাম্য সৃষ্টি করেছে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী রাশিয়ার ওয়ার হেডের সংখ্যা ৫,৯৭৭টি। এর মধ্যে রাশিয়ার ‘ডুমসডে আর্সেনাল’ই সমগ্র পৃথিবীকে কয়েকবার ধ্বংস করতে সক্ষম। অন্য কোনো দেশ যদি রাশিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে প্রথমে ধ্বংসও করে, সে তার স্বয়ংক্রিয় সেকেন্ড স্ট্রাইক ক্যাপাবিলিটি দিয়ে সেই ধ্বংসকারীকে তারপরেও ধ্বংস করতে সক্ষম।
যে কারণে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, নর্ডস্ট্রিম পাইপলাইন ব্রিটিশ নৌবাহিনী ধ্বংস করার পর রাশিয়ার হুমকিতেই প্রধানমন্ত্রী লিজ স্ট্রাস তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের মাত্র ৪৫ দিন পর ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। ভুলে গেলে চলবে না, পুতিন এই যুদ্ধের শুরুতে বলেছিলেন, রাশিয়া না থাকলে পৃথিবীর আর থাকার দরকার নেই। তিনি আরও বলেছিলেন, পারমাণবিক অস্ত্রগুলো রাশিয়া শুধু দেখানোর জন্য বানায়নি; বরং কোনো কোনো দিক দিয়ে এই যুদ্ধে পশ্চিমই পরাজিত হয়েছে। যেখানে পশ্চিম শুরুতে রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস কিনবে না বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিল, এখন অন্যদের সঙ্গে তাদেরও অনেকে সেগুলো কিনছে, যার মধ্যে শীর্ষে আছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাতব্বর জার্মানি। এ ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে তাদের সামনে কোনো বিকল্পও নেই। রাশিয়া একাই সমগ্র ইউরোপের ৩০ শতাংশ গ্যাস (এর মধ্যে ইইউর ৪০ শতাংশ রয়েছে) ও ৪২ শতাংশ তেল সরবরাহ করে। এখন ইইউ সেসবের দাম নির্ধারণ করতে গিয়ে নিজেই তাদের পরাজয় প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছে। যদিও রাশিয়া ওই দামে রাজি হয়নি। এমনকি ইইউভুক্ত অনেক দেশ রুশ মুদ্রা রুবলেই সেসবের দাম পরিশোধ করছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ডলারের আধিপত্য ধরে রাখতেই নাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে এই যুদ্ধে জড়িয়েছিল।
মুহাম্মদ তানিম নওশাদ, লেখক, গবেষক
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল সেই ২০১৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি, যখন ‘মর্যাদার বিপ্লবে’র নামে ইউক্রেনের রুশ-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইউক্রেন অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি’ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা পশ্চিমা বলয়ের আরও কাছে চলে আসে। যেটি জাতিগতভাবে রুশ ইয়ানুকোভিচ এবং তার পেছনের চালিকাশক্তি রাশিয়ার মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পতনের পর রাশিয়ার পক্ষে আবার ঘুরে দাঁড়াতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। ভ্লাদিমির পুতিনের মস্তিষ্ক নামে খ্যাত আলেকনাস্দর দুগিন তাঁর লেখালেখি এবং বক্তব্যে দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে সোভিয়েত-উত্তর জামানায় রাশিয়া পশ্চিমাদের নিওলিবারেলিজমের অনেক মূল্যবোধ গ্রহণ করেও তাদের মন রক্ষা করতে পারেনি; সেই সঙ্গে চিন্তাগত জায়গায় অনেক ছাড় দিয়েও রুশদের শেষরক্ষা হয়নি। কারণ পশ্চিমারা রুশ জাতিকে পশ্চিমা, আধুনিক, এমনকি ইউরোপীয় জাতিও মনে করে না। দুগিনও মনে করেন, ইউরেশিয়া ভূখণ্ডে অবস্থিত রাশিয়া মূলত কৃষিভিত্তিক ও চরিত্রগতভাবে এশীয়। সংস্কৃতিগতভাবেও এশীয় বৈশিষ্ট্যের প্রভাব রুশ জাতিতে তীব্র। ফলে রুশ দেশের পরাশক্তির গরিমা আজও পশ্চিমের কাছে ভীতিকর। উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগে পশ্চিমের জন্য হুমকি মূলত এশিয়া; কারণ এটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতাগুলোর লীলাভূমি, জ্ঞানগতভাবে উন্নত জাতিগোষ্ঠীর বাস। বর্তমানে অর্থনীতি ও সামরিক শক্তিতে এখানকার অনেক দেশই পশ্চিমের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর রুশ দেশ তাদের কাছে ঐতিহ্যগতভাবে এশীয়। অন্যদিকে ইয়ানুকোভিচ জন্মেছিলেন সেই দোনবাসে, যেখানে আজোভ ব্যাটেলিয়ান ও ইউক্রেন সেনাবাহিনী ইউক্রেনের পশ্চিম সমর্থিত বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মদদে রুশ জাতিগোষ্ঠী নিধনে লিপ্ত। এই অভিযোগেই মূলত ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে। এত কিছু বলার কারণ, রাশিয়া এই যুদ্ধে জিতবে কি হারবে, তা বোঝার আগে রাশিয়ার মনস্তত্ত্ব জরিপ করা।
অনেকে দাবি করেছেন, এই যুদ্ধে আগে বা পরে রাশিয়া পরাজিত হবে। ফলে বাস্তবতা এ ক্ষেত্রে কী, তা আমরা এখানে নির্মোহভাবে বোঝার চেষ্টা করব। প্রথমত, ইউক্রেনকে আক্রমণের পেছনে রাশিয়ার নৈতিক দাবি একেবারে ফেলার মতো নয়। নিরপেক্ষভাবে বিচার করলে দেখা যাবে, ইউক্রেনে অনেক দিন ধরেই রুশ জাতিগোষ্ঠী চরমভাবে অবহেলিত এবং বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। তাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে সেখানে ইউক্রেনীয় সাংস্কৃতিক গরিমার নিচে আড়াল, এমনকি মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আজোভ বাহিনী চাউর করছে যে ইউক্রেনীয় সভ্যতা রুশসভ্যতা থেকে উন্নততর। দোনবাসে, অর্থাৎ দোনেৎস্ক ও লুহান্সের রুশ জাতিগোষ্ঠীকে রাশিয়ার গুপ্তচর, রুশ আগ্রাসনের পরিকল্পনার মদদদানকারী ইত্যাদি নামে অভিহিত করে নানা অজুহাতে বহু দিন ধরেই চলছিল সাধারণ রুশদের গুম-খুনের ঘটনা। আজোভ বাহিনীর ও জেলেনস্কি প্রশাসনের এই নাৎসি মানসিকতা থেকে রুশ জাতিকে রক্ষার একটা তাড়না পুতিন সরকারের অনেক দিন ধরেই ছিল। ‘জা মির বেজ নাৎসিজমা’ (নাৎসিবাদমুক্ত পৃথিবী) নামে এক গণসম্মেলনও তিনি করেছিলেন গত বছর। আমরা জানি, যুদ্ধে সফলতার জন্য দরকার মনস্তাত্ত্বিক জোর, যার সঙ্গে সম্পর্কিত নৈতিক বল, যা দখলদার বাহিনীর থাকে না। আর দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধের জন্য এটি খুবই দরকার। রাশিয়া এই যুদ্ধ নৈতিক যুদ্ধের মর্যাদা পেয়েছে দুটি কারণে; প্রথমত, এটি ইউক্রেনের রুশ জাতিগোষ্ঠীকে মুক্তির লড়াই। দ্বিতীয়ত, ন্যাটোর সম্প্রসারণের কারণে এবং ইউক্রেন তাতে যুক্ত হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করায় রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের জন্য জেলেনস্কি প্রশাসন হুমকি হওয়ায় এটি রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড রক্ষার প্রয়োজনে তার সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখারও যুদ্ধ। অন্যদিকে গত বছর ইউক্রেনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত জীবাণু অস্ত্রের ৪৬টি পরীক্ষাগার আবিষ্কৃত হওয়ায় এবং যুক্তরাষ্ট্র তা স্বীকার করায় এই যুদ্ধে রাশিয়ার নৈতিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী হয়েছে। রাশিয়া অবশ্য আগে থেকেই এ বিষয়ে সরব ছিল।
ভৌগোলিক দিক দিয়েও রাশিয়া আছে সুবিধাজনক জায়গায়। রাশিয়া ও তার মিত্র বেলারুশের সঙ্গে রয়েছে ইউক্রেনের দীর্ঘ সীমান্ত। অন্যদিকে ইউক্রেনের অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপও গণভোটের মাধ্যমে রুশ দেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ২০১৪ সালে। ফলে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে ঝড় বয়ে যাবে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের ওপর, অন্তত রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে গিয়ে যুদ্ধের সামর্থ্য যেহেতু ইউক্রেনের নেই। কারণ, এই দুই দেশের মধ্যে শক্তি-সাম্য নেই; সামরিক শক্তিতে রাশিয়া ইউক্রেন থেকে অনেক এগিয়ে। আর সাময়িক অসুবিধায় রুশ ও বেলারুশ বাহিনীর আছে তাদের জন্য সহজে গম্য পশ্চাদপসরণভূমি। ফলে এ ক্ষেত্রে পশ্চিমা মদদে এই যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে, ইউক্রেন ততই শুধু ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে এবং হচ্ছেও তা-ই।
এবার আসা যাক পশ্চিমের সামগ্রিক সামরিক বাস্তবতার জায়গায়। ন্যাটো বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে যতই সামরিক সহায়তা দিক, রাশিয়াকে পরাজিত করতে হলে ন্যাটোকে সরাসরি যুদ্ধে নামতে হবে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই যুদ্ধের শুরুতেই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে তারা সরাসরি এই যুদ্ধে জড়াবেন না। কারণটিও পরিষ্কার। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সামরিক বিজ্ঞানে একটি পদ রয়েছে, যাকে বলা হয় ‘ত্রাসের ভারসাম্য’। বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যাক, ধরা যাক সমগ্র ন্যাটো সামরিক শক্তিতে রাশিয়ার চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি। যে কারণে প্রচলিত যুদ্ধের ধারণা দিয়ে এই যুদ্ধকে বিবেচনা করা যাবে না। কারণ, প্রচলিত সামরিক শক্তির বিবেচনায় ন্যাটো এগিয়ে থাকলেও, ধ্বংসাত্মক ক্ষমতায় রাশিয়া ত্রাসের ভারসাম্য সৃষ্টি করেছে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী রাশিয়ার ওয়ার হেডের সংখ্যা ৫,৯৭৭টি। এর মধ্যে রাশিয়ার ‘ডুমসডে আর্সেনাল’ই সমগ্র পৃথিবীকে কয়েকবার ধ্বংস করতে সক্ষম। অন্য কোনো দেশ যদি রাশিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে প্রথমে ধ্বংসও করে, সে তার স্বয়ংক্রিয় সেকেন্ড স্ট্রাইক ক্যাপাবিলিটি দিয়ে সেই ধ্বংসকারীকে তারপরেও ধ্বংস করতে সক্ষম।
যে কারণে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, নর্ডস্ট্রিম পাইপলাইন ব্রিটিশ নৌবাহিনী ধ্বংস করার পর রাশিয়ার হুমকিতেই প্রধানমন্ত্রী লিজ স্ট্রাস তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের মাত্র ৪৫ দিন পর ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। ভুলে গেলে চলবে না, পুতিন এই যুদ্ধের শুরুতে বলেছিলেন, রাশিয়া না থাকলে পৃথিবীর আর থাকার দরকার নেই। তিনি আরও বলেছিলেন, পারমাণবিক অস্ত্রগুলো রাশিয়া শুধু দেখানোর জন্য বানায়নি; বরং কোনো কোনো দিক দিয়ে এই যুদ্ধে পশ্চিমই পরাজিত হয়েছে। যেখানে পশ্চিম শুরুতে রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস কিনবে না বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিল, এখন অন্যদের সঙ্গে তাদেরও অনেকে সেগুলো কিনছে, যার মধ্যে শীর্ষে আছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাতব্বর জার্মানি। এ ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে তাদের সামনে কোনো বিকল্পও নেই। রাশিয়া একাই সমগ্র ইউরোপের ৩০ শতাংশ গ্যাস (এর মধ্যে ইইউর ৪০ শতাংশ রয়েছে) ও ৪২ শতাংশ তেল সরবরাহ করে। এখন ইইউ সেসবের দাম নির্ধারণ করতে গিয়ে নিজেই তাদের পরাজয় প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছে। যদিও রাশিয়া ওই দামে রাজি হয়নি। এমনকি ইইউভুক্ত অনেক দেশ রুশ মুদ্রা রুবলেই সেসবের দাম পরিশোধ করছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ডলারের আধিপত্য ধরে রাখতেই নাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে এই যুদ্ধে জড়িয়েছিল।
মুহাম্মদ তানিম নওশাদ, লেখক, গবেষক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৬ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৬ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৬ দিন আগে