নকল আর ভেজাল

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

‘এমন কোনো পণ্য নেই, যা দেশে নকল হচ্ছে না।’—কথাটা খুব সহজে বলে ফেলা যাচ্ছে, কারণ এটাই বাস্তব ঘটনা। বলেছেন ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। যদিও এটা কোনো নতুন কথা নয়, তবু জনসমক্ষে সাহস করে বলে ফেলায় তাঁকে সাধুবাদ জানাতে হয়।

ভেজালে ছেয়ে গেছে দেশ, নকলে ছেয়ে গেছে দেশ। ভেজালের কথা দিয়েই শুরু করি। মাছের বাজারে গেলে আপনি অবাক হবেন। এত সৎ মাছ বিক্রেতা রয়েছে বাজারজুড়ে, সেটা কেন এত দিন আপনি খেয়াল করেননি, সেটা ভেবে আফসোস করবেন। তাঁরা প্রত্যেকেই দাবি করবেন, তাঁদের মাছটাই খাঁটি নদীর মাছ। কোনো ভেজাল নেই তাতে। পাকা রুইয়ের দাম চাইবে ৮০০ টাকা কেজি। পাঁচ কেজি ওজনের মাছটা আপনাকে দেওয়ার খুব শখ তাঁর, তাই শুধু আপনার জন্যই ওই মাছটি তিনি সাড়ে ৬০০ টাকা কেজি রাখবেন।

‘অরিজিনাল’ নদীর মাছ নিয়ে আপনি বাজার থেকে বের হওয়ার আগেই একই আকারের আরেকটি মাছ ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন সেই সত্যবাদী। এ কথা আপনার জানার কথা নয়।

গরুর মাংসে সিরিঞ্জ দিয়ে পানি ঢোকাতে দেখেছেন কখনো? খুব ভোরবেলা গরু জবাই করার পরপরই কোনো কোনো বাজারের কোনো কোনো কসাইয়ের সাঙ্গপাঙ্গরা মাংসের মধ্যে পানি ঢোকানোর কাজটা শুরু করে দেয়। আপনি যদি ২ কেজি মাংস কেনেন, তাহলে বাড়িতে এসে রান্নায় বসালে সেটা এমনিতেই দেড় কেজি হয়ে যাবে। আপনি বুঝতেও পারবেন না কোন পথে ঠকলেন।

আর বাটখারা? সে স্বয়ংক্রিয় হোক আর হাতে ওজন করা বাটখারা হোক, অন্য জায়গায় মেপে দেখলেই বুঝতে পারবেন, আপনাকে ওজনে ঠকানো হয়েছে।

ভেজালের দুটো উদাহরণ দেওয়া হলো। এই ভেজালও কি নকল নয়? আপনি তো আসল মাছের দামে নকল মাছ কিনলেন, আসল মাপের জায়গায় নকল মাপে মাংস কিনলেন। আপনার সরল বিশ্বাসে এই ‘কসম’-কাটা লোকদের কিছুই যায়-আসে না। মোদ্দাকথা—মুনাফা। এই মুনাফা শুধু মাছ আর মাংসের বাজারে চলছে, সেটা ভাববেন না। শুশ্রূষার জন্য যেসব হাসপাতাল খুলে রাখা হয়েছে, সেখানেও দেখবেন নকল চিকিৎসার আড়ম্বর। সাংবাদিকদের মধ্যে নকল সাংবাদিক, সংস্কৃতিসেবীর মধ্যে নকল সংস্কৃতিসেবী, ঠিকাদারের মধ্যে নকল ঠিকাদার খুঁজে পাবেন—এই তালিকা কি পূর্ণ হওয়ার মতো?

চকবাজারে গেলে দেখবেন, থরে থরে দামি বিদেশি প্রসাধনসামগ্রীর দোকান। সব নকল, সব রদ্দিমাল। কিন্তু এখান থেকেই অভিজাত মার্কেটে যাচ্ছে এই প্রসাধনী। ১০০ টাকার জিনিস ৫ হাজার টাকায় কিনে ক্রেতা ভাবছেন, জিতে গেলাম! আসলে সবই যে শুভংকরের ফাঁকি, সেটা জানলে কপাল চাপড়ানো ছাড়া আর কীই-বা করার থাকে!

দেশটা উচ্ছন্নে যাচ্ছে বলে গালাগাল করা সহজ, কিন্তু দেশটাকে ‘উচ্ছন্ন’ থেকে ফিরিয়ে আনতে হলে তো সচেতন মানুষদের ঐক্য গড়ে ওঠা দরকার। নকলবাজদের কড়া শাস্তি দেওয়া দরকার। প্রশ্ন একটাই, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত