অভিজিৎ পাঠক
২৩ আগস্ট চন্দ্রযান-৩ যখন চাঁদের মাটি স্পর্শ করে, তখনকার মুহূর্তটি ছিল অসাধারণ। নিঃসন্দেহে এটা ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের কঠোর পরিশ্রমের কারণে সম্ভব হয়েছে। হ্যাঁ, এক অর্থে চাঁদে হাঁটল ভারত। যখন টেলিভিশন উপস্থাপকেরা চন্দ্রজয়ের এ খবর প্রচার করছিলেন ধারাভাষ্যের মতো করে (মনে হচ্ছিল ১০০ মিটার অলিম্পিক রেসের ধারাভাষ্য চলছে), প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন ঐতিহাসিক মুহূর্তটি ধারণ করছিলেন এবং চারদিকে উদ্যাপনের উৎসব চলছিল, তখন আমি কিছুটা দ্বিধা, বিভ্রান্ত এবং অনিশ্চয়তা বোধ করছিলাম। একের পর এক বিরক্তিকর প্রশ্ন আমার মনে হতে লাগল। নিজেকে সন্দেহ করা শুরু করলাম। আমি কি ‘দেশবিরোধী’? আমি কি যথেষ্ট ‘দেশপ্রেমিক’ নই যে এত আনন্দের খবরে রাস্তায় নাচতে পারি, মিষ্টি বিতরণ করতে পারি? তারপরও নীরব থেকে এবং চিন্তাভাবনা করে আমি বিষয়টিতে মনোযোগ দেওয়ার সাহস অর্জন করেছি।
শুরুতে আমি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সমাজ বিষয়ে ভাবতে শুরু করি। এমন নয় যে আমরা মনের মতো প্যারাডক্স নিয়ে বেঁচে আছি। হ্যাঁ, যদিও প্রযুক্তিগত অনেক বিষয় জাদুর মতো মনে হয়, কিন্তু আমাদের রয়েছে এমন একটি সমাজ, যা এখনো নতুন জ্ঞান ও নতুন প্রযুক্তিকে খোলা মনে গ্রহণ করে না।
যদিও ‘বৈজ্ঞানিকতা’ একধরনের হ্রাসবাদী ইতিবাচকতা হতে পারে, যেমন আশিস নন্দী এবং অন্য পণ্ডিতেরা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, এতে অসন্তুষ্টি রয়েছে—চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি উপায় হিসেবে বিজ্ঞানের মুক্তির সম্ভাবনা হতে পারে না। বিজ্ঞানের এই সমালোচনামূলক বা মানবতাবাদী দিকটিই আমাদের বর্ণপ্রথা, পিতৃতান্ত্রিক গৎবাঁধা ধারণা, ধর্মীয় কুসংস্কার, দুর্নীতিগ্রস্ত পুরোহিতদের হুকুম, এমনকি অভিনব আধ্যাত্মিক শিল্পের লোভনীয় ব্যবসাকে প্রতিরোধ করার জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক শক্তি দিতে পারে।
রূঢ় বাস্তবতা হলো, এই অজ্ঞতাকে কাটিয়ে ওঠার ও যুক্তির আলো ছড়ানোর উদ্দীপনামূলক কাজটি করতে কখনোই কাউকে দেখা যায়নি। এর জন্য প্রয়োজন ধৈর্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সততা এবং সর্বোপরি নীরবে কাজ করার সাহস, এমনকি কোনো ধরনের স্বীকৃতি ছাড়াই। এটি জটিল কোনো বিষয় নয়। আমাদের বেশির ভাগের জন্য, প্রযুক্তিগত চশমা পরে দূরে চলে যাওয়া বরং সহজ, যদিও আমরা বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকি। দূরে থাকি নতুন আবিষ্কার ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে কারও মানসিক বলয়কে প্রসারিত করা থেকে। হ্যাঁ, চমক হিসেবে প্রযুক্তি এবং জীবনযাপনের পথ হিসেবে বিজ্ঞানের মধ্যে একটা ব্যবধান রয়েছে।
আপনার চোখ খুলুন এবং আপনি সর্বত্র এই প্যারাডক্স দেখতে পারেন। ‘অন্যদের’ সম্পর্কে সব ধরনের গোঁড়া বিশ্বাস এবং অনুমানসহ কেউ ‘অতিজাতিবাদী’ টেক-স্যাভি হতে পারেন। তিনি আধুনিক গ্যাজেটগুলো কিনতে ও ব্যবহার করতে পারেন এবং প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘৃণা, কুসংস্কারপূর্ণ বিশ্বাস ও বিভাজনের বিষাক্ত শব্দভান্ডার ছড়িয়ে দিতে পারেন। একইভাবে ‘টপ-র্যাঙ্কিং’ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলো থেকে এমটেক ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও আমাদের তরুণেরা বিয়েসংক্রান্ত কলামগুলোয় সতর্ক দৃষ্টি রাখেন, যৌতুক নেন এবং বর্ণ-গোত্র দেখে বিয়ে করেন। প্রযুক্তিকে ভালোবাসেন বা বিজ্ঞানকে পড়ার বিষয় হিসেবে বেছে নেন শুধু ভালো ক্যারিয়ার গড়ার জন্য। বিজ্ঞানের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করা অন্য বিষয়।
আসুন, আমরা আরও একটি প্রশ্ন করার সাহস দেখাই। সেটা হচ্ছে, একটি প্রযুক্তিগত দর্শন হিসেবে চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যের রাজনৈতিক সুবিধা-সম্পর্কিত। এটা ভারতের জয়; এটা ভারতের মুহূর্ত; এটি বিশ্বকে দেখাচ্ছে যে মহাকাশ গবেষণায় ভারতের অগ্রগতি এমনকি যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার মতো পরাক্রমশালী শক্তিকেও নত করতে পারে। অন্য কথায়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্রিকেট ম্যাচে জয়, জি-২০ জোটে ভারতের সভাপতির মর্যাদা বা নতুন গান ‘আমরা চাঁদে আছি’—এসব কিছুকে রাজনৈতিক শ্রেণি, বিশেষ করে শাসকগোষ্ঠী পেশিবহুল জাতীয়তাবাদের প্রতীকে রূপান্তর করবে।
বার্তাটি পরিষ্কার। গর্ববোধ করুন, মিষ্টি বিতরণ করুন, রাস্তায় নাচুন। জাতির নেতাকে ত্রাণকর্তা হিসেবে পূজা করুন এবং নিরাপদে ভুলে যান যেগুলো আপনার দেশে নতুন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে—সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা, গরু রক্ষার নামে মুসলমানদের ওপর হামলা, ঘৃণামূলক বক্তৃতা, যৌতুকের জন্য হত্যা, শিক্ষকবিহীন স্কুল, ক্ষুধা, অপুষ্টি এবং অস্বাস্থ্যকর ও জনাকীর্ণ সরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর গন্ধ। এর পরিবর্তে এই ভেবে ভালো বোধ করুন যে ‘ভারতের বিকাশ হচ্ছে’। আমরা যখন উগ্র জাতীয়তাবাদের বক্তৃতায় প্রলুব্ধ হই, তখন আমরা যুক্তি ও চিন্তাভাবনাকে স্থগিত করি। তাই এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যে এই অতিজাতীয়তাবাদীদের মধ্যে যাঁরা এই চন্দ্রজয়কে উদ্যাপন করছেন, তাঁরাই আবার কুসংস্কার, ঘৃণা এবং অন্ধ বিশ্বাস দেখে করুণভাবে নীরব থাকেন, যা আমাদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক চিত্রকে কলুষিত ও দূষিত করে।
বিজ্ঞান যদি উন্মুক্ততা-সম্পর্কিত হয়, তাহলে অর্থপূর্ণ বিতর্ক এবং আলোচনায় যুক্ত হওয়ার, অন্যদের কথা শোনার এবং নতুন তথ্য ও অনুসন্ধানের ভিত্তিতে নিজের অবস্থান পরিবর্তন এবং সংশোধন করার সাহস থাকতে হবে। বিজ্ঞান কি এমন একটি দেশে বিকাশ লাভ করতে পারে, যার ‘জাতীয়তাবাদী’ শিক্ষাবিদেরা দ্বিধা করেন না স্কুলের পাঠ্য থেকে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব মুছে ফেলতে? ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেসে গণেশের প্লাস্টিক সার্জারির গল্পগুলো যদি আমাদের গ্রহণ করতে বলা হয়, তাহলে এ দেশে বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ সহজেই অনুমেয়। এ দেশের মধ্যবিত্ত বাবা-মায়েরা চান যে তাঁদের সন্তানেরা কোচিং কারখানার নোট এবং গাইড বই থেকে পদার্থবিদ্যা/ রসায়ন/ জীববিদ্যা/ গণিত পড়ুক, যাতে তারা পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারে এবং ভবিষ্যতে একটি ভালো চাকরি পেতে পারে। তাঁরা আরও চান, তাঁদের সন্তানেরা সব ধরনের সামাজিক রক্ষণশীলতা গ্রহণ করুক। এমন একটি দেশে সত্যিই কি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ সম্ভব?
হ্যাঁ, এসব কারণে ২৩ আগস্ট আমি রাস্তায় নাচতে পারিনি বা আমি মিষ্টি বিতরণ করতে পারিনি এবং ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলতে পারিনি।
(দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
লেখক: সংস্কৃতি ও শিক্ষাবিষয়ক লেখক
২৩ আগস্ট চন্দ্রযান-৩ যখন চাঁদের মাটি স্পর্শ করে, তখনকার মুহূর্তটি ছিল অসাধারণ। নিঃসন্দেহে এটা ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের কঠোর পরিশ্রমের কারণে সম্ভব হয়েছে। হ্যাঁ, এক অর্থে চাঁদে হাঁটল ভারত। যখন টেলিভিশন উপস্থাপকেরা চন্দ্রজয়ের এ খবর প্রচার করছিলেন ধারাভাষ্যের মতো করে (মনে হচ্ছিল ১০০ মিটার অলিম্পিক রেসের ধারাভাষ্য চলছে), প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন ঐতিহাসিক মুহূর্তটি ধারণ করছিলেন এবং চারদিকে উদ্যাপনের উৎসব চলছিল, তখন আমি কিছুটা দ্বিধা, বিভ্রান্ত এবং অনিশ্চয়তা বোধ করছিলাম। একের পর এক বিরক্তিকর প্রশ্ন আমার মনে হতে লাগল। নিজেকে সন্দেহ করা শুরু করলাম। আমি কি ‘দেশবিরোধী’? আমি কি যথেষ্ট ‘দেশপ্রেমিক’ নই যে এত আনন্দের খবরে রাস্তায় নাচতে পারি, মিষ্টি বিতরণ করতে পারি? তারপরও নীরব থেকে এবং চিন্তাভাবনা করে আমি বিষয়টিতে মনোযোগ দেওয়ার সাহস অর্জন করেছি।
শুরুতে আমি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সমাজ বিষয়ে ভাবতে শুরু করি। এমন নয় যে আমরা মনের মতো প্যারাডক্স নিয়ে বেঁচে আছি। হ্যাঁ, যদিও প্রযুক্তিগত অনেক বিষয় জাদুর মতো মনে হয়, কিন্তু আমাদের রয়েছে এমন একটি সমাজ, যা এখনো নতুন জ্ঞান ও নতুন প্রযুক্তিকে খোলা মনে গ্রহণ করে না।
যদিও ‘বৈজ্ঞানিকতা’ একধরনের হ্রাসবাদী ইতিবাচকতা হতে পারে, যেমন আশিস নন্দী এবং অন্য পণ্ডিতেরা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, এতে অসন্তুষ্টি রয়েছে—চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি উপায় হিসেবে বিজ্ঞানের মুক্তির সম্ভাবনা হতে পারে না। বিজ্ঞানের এই সমালোচনামূলক বা মানবতাবাদী দিকটিই আমাদের বর্ণপ্রথা, পিতৃতান্ত্রিক গৎবাঁধা ধারণা, ধর্মীয় কুসংস্কার, দুর্নীতিগ্রস্ত পুরোহিতদের হুকুম, এমনকি অভিনব আধ্যাত্মিক শিল্পের লোভনীয় ব্যবসাকে প্রতিরোধ করার জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক শক্তি দিতে পারে।
রূঢ় বাস্তবতা হলো, এই অজ্ঞতাকে কাটিয়ে ওঠার ও যুক্তির আলো ছড়ানোর উদ্দীপনামূলক কাজটি করতে কখনোই কাউকে দেখা যায়নি। এর জন্য প্রয়োজন ধৈর্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সততা এবং সর্বোপরি নীরবে কাজ করার সাহস, এমনকি কোনো ধরনের স্বীকৃতি ছাড়াই। এটি জটিল কোনো বিষয় নয়। আমাদের বেশির ভাগের জন্য, প্রযুক্তিগত চশমা পরে দূরে চলে যাওয়া বরং সহজ, যদিও আমরা বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকি। দূরে থাকি নতুন আবিষ্কার ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে কারও মানসিক বলয়কে প্রসারিত করা থেকে। হ্যাঁ, চমক হিসেবে প্রযুক্তি এবং জীবনযাপনের পথ হিসেবে বিজ্ঞানের মধ্যে একটা ব্যবধান রয়েছে।
আপনার চোখ খুলুন এবং আপনি সর্বত্র এই প্যারাডক্স দেখতে পারেন। ‘অন্যদের’ সম্পর্কে সব ধরনের গোঁড়া বিশ্বাস এবং অনুমানসহ কেউ ‘অতিজাতিবাদী’ টেক-স্যাভি হতে পারেন। তিনি আধুনিক গ্যাজেটগুলো কিনতে ও ব্যবহার করতে পারেন এবং প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘৃণা, কুসংস্কারপূর্ণ বিশ্বাস ও বিভাজনের বিষাক্ত শব্দভান্ডার ছড়িয়ে দিতে পারেন। একইভাবে ‘টপ-র্যাঙ্কিং’ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলো থেকে এমটেক ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও আমাদের তরুণেরা বিয়েসংক্রান্ত কলামগুলোয় সতর্ক দৃষ্টি রাখেন, যৌতুক নেন এবং বর্ণ-গোত্র দেখে বিয়ে করেন। প্রযুক্তিকে ভালোবাসেন বা বিজ্ঞানকে পড়ার বিষয় হিসেবে বেছে নেন শুধু ভালো ক্যারিয়ার গড়ার জন্য। বিজ্ঞানের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করা অন্য বিষয়।
আসুন, আমরা আরও একটি প্রশ্ন করার সাহস দেখাই। সেটা হচ্ছে, একটি প্রযুক্তিগত দর্শন হিসেবে চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যের রাজনৈতিক সুবিধা-সম্পর্কিত। এটা ভারতের জয়; এটা ভারতের মুহূর্ত; এটি বিশ্বকে দেখাচ্ছে যে মহাকাশ গবেষণায় ভারতের অগ্রগতি এমনকি যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার মতো পরাক্রমশালী শক্তিকেও নত করতে পারে। অন্য কথায়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্রিকেট ম্যাচে জয়, জি-২০ জোটে ভারতের সভাপতির মর্যাদা বা নতুন গান ‘আমরা চাঁদে আছি’—এসব কিছুকে রাজনৈতিক শ্রেণি, বিশেষ করে শাসকগোষ্ঠী পেশিবহুল জাতীয়তাবাদের প্রতীকে রূপান্তর করবে।
বার্তাটি পরিষ্কার। গর্ববোধ করুন, মিষ্টি বিতরণ করুন, রাস্তায় নাচুন। জাতির নেতাকে ত্রাণকর্তা হিসেবে পূজা করুন এবং নিরাপদে ভুলে যান যেগুলো আপনার দেশে নতুন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে—সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা, গরু রক্ষার নামে মুসলমানদের ওপর হামলা, ঘৃণামূলক বক্তৃতা, যৌতুকের জন্য হত্যা, শিক্ষকবিহীন স্কুল, ক্ষুধা, অপুষ্টি এবং অস্বাস্থ্যকর ও জনাকীর্ণ সরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর গন্ধ। এর পরিবর্তে এই ভেবে ভালো বোধ করুন যে ‘ভারতের বিকাশ হচ্ছে’। আমরা যখন উগ্র জাতীয়তাবাদের বক্তৃতায় প্রলুব্ধ হই, তখন আমরা যুক্তি ও চিন্তাভাবনাকে স্থগিত করি। তাই এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যে এই অতিজাতীয়তাবাদীদের মধ্যে যাঁরা এই চন্দ্রজয়কে উদ্যাপন করছেন, তাঁরাই আবার কুসংস্কার, ঘৃণা এবং অন্ধ বিশ্বাস দেখে করুণভাবে নীরব থাকেন, যা আমাদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক চিত্রকে কলুষিত ও দূষিত করে।
বিজ্ঞান যদি উন্মুক্ততা-সম্পর্কিত হয়, তাহলে অর্থপূর্ণ বিতর্ক এবং আলোচনায় যুক্ত হওয়ার, অন্যদের কথা শোনার এবং নতুন তথ্য ও অনুসন্ধানের ভিত্তিতে নিজের অবস্থান পরিবর্তন এবং সংশোধন করার সাহস থাকতে হবে। বিজ্ঞান কি এমন একটি দেশে বিকাশ লাভ করতে পারে, যার ‘জাতীয়তাবাদী’ শিক্ষাবিদেরা দ্বিধা করেন না স্কুলের পাঠ্য থেকে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব মুছে ফেলতে? ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেসে গণেশের প্লাস্টিক সার্জারির গল্পগুলো যদি আমাদের গ্রহণ করতে বলা হয়, তাহলে এ দেশে বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ সহজেই অনুমেয়। এ দেশের মধ্যবিত্ত বাবা-মায়েরা চান যে তাঁদের সন্তানেরা কোচিং কারখানার নোট এবং গাইড বই থেকে পদার্থবিদ্যা/ রসায়ন/ জীববিদ্যা/ গণিত পড়ুক, যাতে তারা পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারে এবং ভবিষ্যতে একটি ভালো চাকরি পেতে পারে। তাঁরা আরও চান, তাঁদের সন্তানেরা সব ধরনের সামাজিক রক্ষণশীলতা গ্রহণ করুক। এমন একটি দেশে সত্যিই কি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ সম্ভব?
হ্যাঁ, এসব কারণে ২৩ আগস্ট আমি রাস্তায় নাচতে পারিনি বা আমি মিষ্টি বিতরণ করতে পারিনি এবং ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলতে পারিনি।
(দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
লেখক: সংস্কৃতি ও শিক্ষাবিষয়ক লেখক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে