নুসরাত জাহান শুচি
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি—প্রভাতফেরির গানে খালি পায়ে যখন প্রথমবার শহীদ মিনারে গিয়েছিলাম, তখন আমার বয়স আট বছর। প্রথমবার শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়াটা একটা উৎসব ছাড়া তখন আর কিছু মনে হয়নি। সে বয়সে শুধু সালাম, বরকত, রফিক, শফিক এমন কিছু নাম শুনতাম, যাঁরা নাকি ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছিলেন। সবার মুখে কেবল এটিই শোনা যেত—তাঁদের রক্তে লেখা হয়েছে বাংলা ভাষা। এর বাইরে তেমন কোনো আবেগ তখন মাতৃভাষা নিয়ে ছিল না বললেই চলে।
তখনকার সময়ে শিশু-কিশোরদের মাঝে মাতৃভাষা দিবস নিয়ে বেশ কিছু উৎসবের প্রচলন ছিল। এই যেমন স্কুল থেকে প্রভাতফেরিতে অংশগ্রহণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণী, তারপর সবাই মিলে খাওয়াদাওয়া, বিটিভিতে সম্প্রচারিত হতো নানা আয়োজন। আর একুশে বইমেলা তো ছিলই। এসব আনুষ্ঠানিক আয়োজন এখন আরও বর্ণাঢ্য হয়েছে বৈকি।
তবে সেই সময় আমাদের অঘোষিত কিছু অনুষ্ঠান ছিল। এই যেমন পাড়ার ছেলেমেয়ে একত্র হয়ে অলিগলির রাস্তায় ছোট ছোট ফিতা টাঙিয়ে কাঠ, খড়, বাঁশ দিয়ে ছোট ছোট শহীদ মিনার বানানো। সেখানে ফুল দেওয়া। সেই সব সংস্কৃতি এখন আর চোখে পড়ে না।
এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। সেই আট বছর বয়সেই জেনেছিলাম কিছু ভাষাশহীদের নাম। এরপর এসএসসি ও এইচএসসিতে ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইটি পড়ার সুবাদে জানা হয়েছিল ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে রক্তের বিনিয়মে রফিক, শফিক, সালাম, জব্বারসহ প্রাণ দিয়েছিলেন আরও অনেকে; যা বিশ্বইতিহাসে বিরল। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে সদস্যরাষ্ট্রের সম্মতিতে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আরও জেনেছিলাম, ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় বক্তব্য দেন। জাতির পিতার এমন সাহসী উদ্যোগে বৃদ্ধি পেয়েছিল বাংলা ভাষার মর্যাদা। এ ছাড়া জেনেছি ভাষা আন্দোলনভিত্তিক কিছু গান, কবিতা, চলচ্চিত্রের কথা।
বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর জ্ঞানের ঝুলিতে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে জানা তথ্য এতটুকুই। তবে কি এর বাইরে ভাষা আন্দোলন নিয়ে জানার কিছুই নেই?
সেদিন অবশ্য বর্তমান পাঠক্রমের ৯ম-১০ম শ্রেণির ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বই পড়ে জানলাম, ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান। পাকিস্তান সৃষ্টির পর বঙ্গবন্ধু প্রথম গ্রেপ্তার হন ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ, ভাষা আন্দোলনের জন্য করা হরতালের কর্মসূচি পালনকালে। শুধু তা-ই নয়, জাতীয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উর্দুর পক্ষে অবস্থান নিলে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতায় সোহরাওয়ার্দী বাংলার পক্ষে অবস্থান করেন। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর প্রভাব ছিল প্রত্যক্ষ এবং ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ১১ মার্চকে ‘ভাষা দিবস’ পালন করা হতো।
নারীদের অবদানও ছিল অসামান্য। তৎকালীন নারীদের প্রত্যক্ষ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল ভাষা আন্দোলনে। মিছিল, স্লোগান, সভা-সমিতিতে তাঁরা পুরুষের পাশাপাশি সংগ্রাম করেছেন। এমনকি পোস্টার ও প্রচারপত্র চালানোর সময় ১৯৪৯ সালের ১৩ আগস্ট গ্রেপ্তার হন লিলি চক্রবর্তী। এ ছাড়া ওই সময় সংগ্রামী ভূমিকায় ছিলেন নিবেদিতা নাগ, শামসুন্নাহার, মমতাজ বেগম, সাহেরা বানুসহ হাজারো নারী।
ভাষা আন্দোলন নিয়ে রয়েছে অনেক গল্প, অনেক ইতিহাস, যা আমাদের অজানা। বিশ্ব ইতিহাসে যা বিরল, তা-ই আমাদের সোনার বাংলার গল্প। কিন্তু যার অনেকটাই এখন অপ্রচারিত, যা জানে না নতুন প্রজন্ম। তাই তো তাদের চিত্তে স্পর্শ করে না—
‘বাঙালির পণ, বাঙালির আশা,
বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা
সত্য হউক সত্য হউক’
লেখক: নুসরাত জাহান শুচি, সাংবাদিক
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি—প্রভাতফেরির গানে খালি পায়ে যখন প্রথমবার শহীদ মিনারে গিয়েছিলাম, তখন আমার বয়স আট বছর। প্রথমবার শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়াটা একটা উৎসব ছাড়া তখন আর কিছু মনে হয়নি। সে বয়সে শুধু সালাম, বরকত, রফিক, শফিক এমন কিছু নাম শুনতাম, যাঁরা নাকি ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছিলেন। সবার মুখে কেবল এটিই শোনা যেত—তাঁদের রক্তে লেখা হয়েছে বাংলা ভাষা। এর বাইরে তেমন কোনো আবেগ তখন মাতৃভাষা নিয়ে ছিল না বললেই চলে।
তখনকার সময়ে শিশু-কিশোরদের মাঝে মাতৃভাষা দিবস নিয়ে বেশ কিছু উৎসবের প্রচলন ছিল। এই যেমন স্কুল থেকে প্রভাতফেরিতে অংশগ্রহণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণী, তারপর সবাই মিলে খাওয়াদাওয়া, বিটিভিতে সম্প্রচারিত হতো নানা আয়োজন। আর একুশে বইমেলা তো ছিলই। এসব আনুষ্ঠানিক আয়োজন এখন আরও বর্ণাঢ্য হয়েছে বৈকি।
তবে সেই সময় আমাদের অঘোষিত কিছু অনুষ্ঠান ছিল। এই যেমন পাড়ার ছেলেমেয়ে একত্র হয়ে অলিগলির রাস্তায় ছোট ছোট ফিতা টাঙিয়ে কাঠ, খড়, বাঁশ দিয়ে ছোট ছোট শহীদ মিনার বানানো। সেখানে ফুল দেওয়া। সেই সব সংস্কৃতি এখন আর চোখে পড়ে না।
এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। সেই আট বছর বয়সেই জেনেছিলাম কিছু ভাষাশহীদের নাম। এরপর এসএসসি ও এইচএসসিতে ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইটি পড়ার সুবাদে জানা হয়েছিল ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে রক্তের বিনিয়মে রফিক, শফিক, সালাম, জব্বারসহ প্রাণ দিয়েছিলেন আরও অনেকে; যা বিশ্বইতিহাসে বিরল। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে সদস্যরাষ্ট্রের সম্মতিতে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আরও জেনেছিলাম, ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় বক্তব্য দেন। জাতির পিতার এমন সাহসী উদ্যোগে বৃদ্ধি পেয়েছিল বাংলা ভাষার মর্যাদা। এ ছাড়া জেনেছি ভাষা আন্দোলনভিত্তিক কিছু গান, কবিতা, চলচ্চিত্রের কথা।
বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর জ্ঞানের ঝুলিতে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে জানা তথ্য এতটুকুই। তবে কি এর বাইরে ভাষা আন্দোলন নিয়ে জানার কিছুই নেই?
সেদিন অবশ্য বর্তমান পাঠক্রমের ৯ম-১০ম শ্রেণির ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বই পড়ে জানলাম, ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান। পাকিস্তান সৃষ্টির পর বঙ্গবন্ধু প্রথম গ্রেপ্তার হন ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ, ভাষা আন্দোলনের জন্য করা হরতালের কর্মসূচি পালনকালে। শুধু তা-ই নয়, জাতীয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উর্দুর পক্ষে অবস্থান নিলে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতায় সোহরাওয়ার্দী বাংলার পক্ষে অবস্থান করেন। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর প্রভাব ছিল প্রত্যক্ষ এবং ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ১১ মার্চকে ‘ভাষা দিবস’ পালন করা হতো।
নারীদের অবদানও ছিল অসামান্য। তৎকালীন নারীদের প্রত্যক্ষ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল ভাষা আন্দোলনে। মিছিল, স্লোগান, সভা-সমিতিতে তাঁরা পুরুষের পাশাপাশি সংগ্রাম করেছেন। এমনকি পোস্টার ও প্রচারপত্র চালানোর সময় ১৯৪৯ সালের ১৩ আগস্ট গ্রেপ্তার হন লিলি চক্রবর্তী। এ ছাড়া ওই সময় সংগ্রামী ভূমিকায় ছিলেন নিবেদিতা নাগ, শামসুন্নাহার, মমতাজ বেগম, সাহেরা বানুসহ হাজারো নারী।
ভাষা আন্দোলন নিয়ে রয়েছে অনেক গল্প, অনেক ইতিহাস, যা আমাদের অজানা। বিশ্ব ইতিহাসে যা বিরল, তা-ই আমাদের সোনার বাংলার গল্প। কিন্তু যার অনেকটাই এখন অপ্রচারিত, যা জানে না নতুন প্রজন্ম। তাই তো তাদের চিত্তে স্পর্শ করে না—
‘বাঙালির পণ, বাঙালির আশা,
বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা
সত্য হউক সত্য হউক’
লেখক: নুসরাত জাহান শুচি, সাংবাদিক
পর্দার নায়িকারা নিজেদের বয়স আড়ালে রাখা পছন্দ করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আজমেরী হক বাঁধন। প্রতিবছর নিজের জন্মদিনে জানান দেন তাঁর বয়স। গতকাল ছিল বাঁধনের ৪১তম জন্মদিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানালেন এই তথ্য।
২ দিন আগে১০ বছরের বেশি সময় ধরে শোবিজে কাজ করছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। নাটকের পাশাপাশি ওটিটিতে দেখা গেছে তাঁকে। সরকারি অনুদানের ‘দেবী’ নামের একটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। প্রশংসিত হলেও সিনেমায় আর দেখা মেলেনি তাঁর। ছোট পর্দাতেও অনেক দিন ধরে অনিয়মিত তিনি। এবার শবনম ফারিয়া হাজির হচ্ছেন নতুন পরিচয়ে। কমেডি রিয়েলিটি
২ দিন আগেআমাদের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ঐতিহ্য যাত্রাপালা। গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত এই যাত্রাপালা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করছে ‘যাত্রা উৎসব-২০২৪’। আগামী ১ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হবে ৭ দিনব্যাপী এই উৎসব।
২ দিন আগে‘বঙ্গবন্ধু’ পদবি বিলীন হবে না। হতে পারে না। যেমনটি ‘দেশবন্ধু’ চিত্তরঞ্জন দাশের পদবি বিলীন হয়নি। ইতিহাসে এসব পদবি অম্লান ও অক্ষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব ছিল অনন্যসাধারণ। আপনজনকে তো অবশ্যই, শত্রুপক্ষের লোকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উচ্চপদের
২ দিন আগে