কারাম উৎসবে ওঁরাওরা

সাদ্দাম হো‌সেন, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮: ৩৯

ঢাকঢোলের তালে বৃক্ষের বন্দনায় মেতে উঠেছে ঠাকুরগাঁওয়ের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ওঁরাও সম্প্রদায়ের নানা বয়সী মানুষ। আমন ধানের চারা রোপণের পর কৃষিজীবী ওঁরাও নারী-পুরুষেরা খানিকটা অবসরে থাকেন। ঠিক তখনই শুরু ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের কারাম পূজা। এটি মূলত কৃষিভিত্তিক উৎসব।

পরিবারের সুখ-শান্তি ও নিজেদের সুস্থতায় কারাম নামের একটি বিশেষ বৃক্ষের বন্দনার মধ্য দিয়ে ওঁরাও সম্প্রদায়ের লোকজন এই উৎসব উদ্‌যাপন করে। গত শনিবার দিবাগত রাত থেকে সদর উপজেলার পাঁচপীরডাঙ্গা, জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চণ্ডীপুর, বি-আখড়া ও সালন্দর ইউনিয়নে ওঁরাও সম্প্রদায়ের পল্লিতে উদ্‌যাপিত হচ্ছে দুই দিনব্যাপী এই কারাম পূজা।

ওঁরাও সম্প্রদায়ের মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বংশপরম্পরায় পরিবারের মঙ্গল কামনায় এদিন পূজা-অর্চনার পাশাপাশি শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী মানুষ আনন্দে মেতে থাকে। উৎসবে ওঁরাও কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা নাচে–গানে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। শুধু ওঁরাও সম্প্রদায়ই নয়, হো, খেড়িয়া, শবর, কোড়া, মাহালি, পাহাড়িয়া, হাড়ি, বাগদি, বেদে, ঘাসি, লোধা এবং বৃহৎ জনগোষ্ঠী সাঁওতাল, মুন্ডা প্রভৃতি সম্প্রদায়ও উদ্‌যাপন করে থাকে এ কারাম উৎসব।

ওঁরাও সম্প্রদায়ের নেতা সূর্য টুডু জানান, বিপদ-আপদ ও অভাব-অনটন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন‌্য এই কারাম উৎসব করেন তাঁরা।

স্বপন কুজুর জানান, কারাম উৎসব বাংলাদেশের বাইরে ভারতের ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ, আসাম, ওডিশা ও নেপালে উদ্‌যাপিত হয়। এই উৎসব কারাম দেবতার উদ্দেশে নিবেদিত। কারাম হলো শক্তি, যুব ও যৌবনের দেবতা।  
ঠাকুরগাঁও আদিবাসী পরিষদের নারী নেত্রী নয়মী টপ্য বলেন, ‘ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে সবাই অংশ নেন আমাদের এই উৎসবে।’

গাছ দেবতার সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য ধান, সরিষাদানা, কলাই, গম প্রভৃতি ফসলের বীজ এই কারামগাছের গোড়ায় রাখা হয়। এরপর বিভিন্ন প্রথা পালন করা হয়। এর উদ্দেশ্য যেন শক্তি, যুব ও যৌবনের দেবতা কারাম জমিতে ভালো ফলন দেন, সবাইকে সুস্থ রাখেন, সবার মঙ্গল করেন। এরপর বিভিন্ন বাড়ি থেকে চাল-ডাল তোলা হয়। সেসব চাল, ডাল ও টাকা দিয়ে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয় আমন্ত্রিত অতিথি ও আত্মীয় স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে। এরপর সারা রাত চলে ভাদরিয়া ঝুমুর গান ও যৌথ নাচ। এ নাচই বিখ্যাত কারাম নাচ হিসেবে পরিচিত। এই নাচে শুধু অবিবাহিত ও নববিবাহিত মেয়েরাই অংশ নিতে পারেন। এ সময় মেয়েদের পরনে থাকে লুঙ্গি, গামছা কিংবা শাড়ি আর শরীরে থাকে রুপার গয়না ও মাথায় ফুল।

সৃষ্টিকর্তার প্রতি নাচ-গান উৎসর্গ করার পর স্থানীয় নদী বা খালবিলে কারামগা‌ছের ডাল বিসর্জনের মাধ্যমে উৎসব আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার সময় বাড়ল

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

ব্যাংক খাতে নতুন নীতিমালা: আটকে গেল ২৫৮ কর্মকর্তার জিএম পদে পদোন্নতি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত