ভান্ডারের আধুলি

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৩, ০৯: ১৪

ভান্ডারে নামে এক মারাঠি এল আশ্রমে। স্কুলের মধ্য বিভাগে বীথিকা ঘরে সিট পেল সে। সেই ঘরের সামনে শালবীথি। তার এক প্রান্তে লাইব্রেরি, অন্য প্রান্তে দেহলি। রবীন্দ্রনাথ তখন থাকতেন দেহলিতে।

যেদিন ভান্ডারে এল আশ্রমে, সেদিনই দেহলি থেকে বেরিয়ে শালবীথি দিয়ে রবীন্দ্রনাথ চলেছেন লাইব্রেরির দিকে। রবীন্দ্রনাথের পরনে তখন লম্বা জোব্বা, মাথায় কালো টুপি। ভান্ডারে দাঁড়িয়েছিল তার ঘরের সামনে। রবিঠাকুরকে লাইব্রেরির দিকে যেতে দেখে ভান্ডারে তাঁর দিকে দৌড় দিল। অন্য ছেলেরা তো অবাক! 
দূর থেকে দেখা গেল, ভান্ডারে রবীন্দ্রনাথকে কিছু বলছে। রবীন্দ্রনাথ অল্প অল্প আপত্তি জানাচ্ছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার হলো রবীন্দ্রনাথের। ভান্ডারে তাঁর হাতে কিছু গুঁজে দিল। রবীন্দ্রনাথ মৃদু হেসে জোব্বার নিচের জেবে সেটি রেখে দিলেন। ভান্ডারে একগাল হেসে ফিরে এল ডরমিটরিতে। রবীন্দ্রনাথকে প্রণামও করল না, নমস্কারও করল না।

ভান্ডারে ফিরে আসার পর সবাই জিজ্ঞেস করল, ‘গুরুদেবকে কী দিলি?’ 
ভান্ডারে বলল, ‘গুরুদেব কৌন? ওহ্তো দরবেশ হৈ!’
‘বলিস কিরে! ও তো গুরুদেব হ্যায়।’ 
‘ক্যা গুরুদেব গুরুদেব করতা হৈ? হম উসকো এক অঠন্নি দিয়া।’
রবীন্দ্রনাথকে আধুলি দিয়েছে ভান্ডারে!

দেশ ছাড়ার আগে ভান্ডারের ঠাকুরমা নাকি তাকে উপদেশ দিয়েছেন, সন্ন্যাসী দরবেশ দেখলে দান-দক্ষিণা করতে। তাই শালবীথির দিকে যেতে থাকা ‘দরবেশ’কে সে আধুলি দিয়েছে।

কিছুদিনের মধ্যেই ভান্ডারের জ্বালাতনে অস্থির হয়ে উঠল সবাই। সে খবর গিয়ে পৌঁছাল রবীন্দ্রনাথের কানে। তিনি ভান্ডারেকে ডেকে বললেন, ‘হ্যাঁরে ভান্ডারে, শেষ পর্যন্ত তুই এসব আরম্ভ করলি!... তুই যখন প্রথম এলি, তখন কী রকম ভালো ছেলে ছিলি! মনে নেই, তুই দান-খয়রাত পর্যন্ত করতি? আমাকে পর্যন্ত তুই একটা পুরো আধুলি দিয়েছিলি!...সেই আধুলি আমি কত যত্নে তুলে রেখেছি, দেখবি?’ 
ভান্ডারে চুপ।

সূত্র: সৈয়দ মুজতবা আলী, গুরুদেব ও শান্তিনিকেতন, পৃষ্ঠা ৩৬-৩৭ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত