বিক্রি কম, হতাশ ব্যবসায়ীরা

এস এস শোহান, বাগেরহাট ও সজল সরকার, টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) 
Thumbnail image

করোনার কারণে টানা দুই বছর নানা বিধিনিষেধের মধ্যে ঈদ উদ্‌যাপন করতে হয়েছে দেশবাসীকে। ফলে আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেননি তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীরা। দুই বছর পরে এবারের বিধিনিষেধ না থাকায় করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছিলেন বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ঈদের আগ মুহূর্তেও আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় তাঁরা হতাশ। তাঁদের শেষ ভরসা এখন চাঁদ রাত।

বাগেরহাট শহরের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, তৈরি পোশাকের দোকানে বিক্রি অনেক কম। সাধারণ সময়ের চেয়েও বিক্রি কম বলে দাবি করেছেন দু-একজন ব্যবসায়ী। ক্রেতাদের আকর্ষণের জন্য মেয়েদের পোশাকে চমকপ্রদ নানা নাম দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পুষ্পা ও কাঁচা বাদাম নামের নতুন দুটি থ্রি-পিসের প্রতি আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজারের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে এসব ড্রেস।

এ ছাড়া বারবি বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার থেকে চার হাজার, সাড়ারা আড়াই হাজার থেকে চার হাজার, গাউন দেড় হাজার থেকে দুই হাজার, লেহেঙ্গা সাড়ে তিন হাজার থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

বাগেরহাট শহরের কোর্ট মসজিদ গলির ব্যবসায়ী ফেসবুক ফ্যাশানের স্বত্বাধিকারী শেখ মাসুদ বলেন, প্রতি ঈদেই তাঁর দোকানে ১০ জন বিক্রয়কর্মী নিতে হয়। সবাই পূর্ব নির্ধারিত হওয়ায় মানবিক কারণে করোনার দুই বছরে বেচাবিক্রি না থাকলেও তাঁরা কাজ করেছেন। এবারও তাঁরা আছেন, কিন্তু গেল দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন না। তিন বছর আগেও এই সময়ে অন্তত দুই থেকে তিন লাখ টাকা বেশি আয় হতো। কিন্তু এ বছর কী হবে আল্লাহই ভালো জানেন।

শহরের রুপালী গার্মেন্টসের বিক্রয় কর্মকর্তা শাহাদাত ফকীর বলেন, গত বছর করোনা থাকলেও এই বছরের চেয়ে বেচা-কেনা ভালো হয়েছিল। এবার করোনার প্রকোপ নেই, মার্কেটে মানুষজনও মোটামুটি আসছে। কিন্তু কিনছে না তেমন।

শুকসারী গার্মেন্টসের বিক্রয়কর্মী আনিসুর রহমান বলেন, বাড়তি আয়ের আশায় রমজানের এক মাস কাপড়ের দোকানে থাকেন। দুই বছর পরিবারের জন্য কিছু কিনতে পারেননি। ভেবেছিলেন এবার বেচা-কেনা ভালো হবে। বোনাসও ভালো পাবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসেও বেচা-কেনার যে অবস্থা, তাতে হতাশ তাঁরা।

অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন গত বছরের তুলনায় পোশাকের দাম বেশ বেড়েছে। তাবাসসুম হোসাইন নামের এক ক্রেতা বলেন, দুই বছর আগের ৫০০ টাকার জিনিস এখন ১ হাজার ২০০ টাকা দাম চাচ্ছে। যে থ্রি-পিচ আগে আড়াই হাজার টাকায় পাওয়া যেত সেটা এখন ৩ হাজার ৫০০ টাকা চাচ্ছে। 
সোহাগ আহমেদ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘বাগেরহাট শহর থেকে কিছু কিনতে চাই না। কারণ এখানে ৬০০ টাকার শার্ট ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। খুলনার তুলনায় বাগেরহাটে প্রায় ৫০ শতাংশ দাম বেশি নেয়। এই কারণে বেশির ভাগ ক্রেতা খুলনা চলে যান।’

শুধু জেলা শহরেই নয় উপজেলার বিভিন্ন মার্কেটেও দেখা গেছে একই চিত্র। দোকানগুলোতে তেমন ভিড় নেই। বেচা বিক্রিও কম।গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সবচেয়ে প্রাচীন ও বড় বাজার পাটগাতী বাজার। পাটগাতী বাজারের বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের বেশ ভিড় থাকলেও বিক্রি কম। প্রতিটি দোকানেই ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে বিক্রেতারা নতুন নতুন ডিজাইনের থ্রি-পিচ, সাড়ারা, গাড়ারা, লেহেঙ্গা, শাড়ি, পাঞ্জাবি সাজিয়ে রেখেছেন। নতুন ডিজাইনের পোশাক দেখাতে ব্যস্ত বিক্রেতারা।শাড়ির দোকানের কর্মচারীরা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিক্রেতারা শাড়ি পড়ে দেখাচ্ছেন। তবে অনেক ক্রেতা

দামাদামি করে না কিনেই চলে যাচ্ছেন। এতে হতাশ ব্যবসায়ীরা। কাপড়ের দাম বাড়ায় কাঙ্ক্ষিত বেচাকেনা হচ্ছে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের আশা, চাঁদ রাতে কাঙ্ক্ষিত বিক্রি হবে।

মোল্লা মার্কেটের ব্যবসায়ী রিপন মুন্সী বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর ঈদে ভালো ব্যবসা করতে না পারায় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দোকানে অনেক নতুন ডিজাইনের পণ্য রাখা হয়েছে। ঈদের মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকলেও কাঙ্ক্ষিত বেচাকেনা নেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে কাঙ্ক্ষিত বিক্রির ৪০ শতাংশ পণ্য বিক্রি হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

ব্যবসায়ী কামাল শেখ, সৈকত শেখ, শিবু সাহা, উজ্জ্বল মণ্ডলসহ কয়েক জন বলেন, কাপড় কিনতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দোকানে ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন। কাপড়ের দাম কিছুটা বাড়ায় অনেকে দামাদামি করে না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন। প্রতিটি দোকানেই লাখ লাখ টাকার নতুন নতুন পণ্য আনা হয়েছে। কিন্তু বেচাকেনা খুবই কম। এ বছরের চেয়ে গত দুই বছর ঈদে লুকোচুরি করে আরও ভালো বেচাকেনা করেছেন। তবে চাঁদ রাতে ভালো বেচাকেনা হবে বলে আশা করেন তাঁরা।

পাটগাতী বাজারের দোকানি লাবনী আক্তার বলেন, ঈদ উপলক্ষে এবার ২৫-৩০ লাখ টাকার নতুন শাড়ি এনেছেন। কিন্তু বেচাকেনা খুবই কম। যাঁরা গ্রামের বাজার থেকে ঈদের কেনাকাটা করতেন, তাঁরা এখন গোপালগঞ্জ ও খুলনা থেকে কেনাকাটা করেন। এভাবেই চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা এবার লাভের মুখ তো দেখবেই না, উল্টো লোকসানে পড়বে।

কেনাকাটা করতে আসা মিতা খানম বলেন, প্রতিটি দোকানেই আকর্ষণীয় শাড়ি ও কাপড় রয়েছে। কিন্তু দাম খুবই বেশি। এসব কাপড় পছন্দ হলেও ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকায় না কিনেই ফিরে যেতে হচ্ছে।

পাটগাতী বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম অপু বলেন, বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, পর্যাপ্ত ক্রেতা থাকলেও বেচাকেনা নেই। উপজেলার পার্শ্ববর্তী চিতলমারী, নাজিরপুর, মোল্লাহাট থেকে অনেক ক্রেতারা পাটগাতী বাজারে কেনাকাটা করতে আসতেন। কিন্তু এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় তাঁরা এখন বাগেরহাট, পিরোজপুর ও খুলনা থেকে কেনাকাটা করছেন। এই কারণেই বিক্রেতারা কাঙ্ক্ষিত বেচাকেনা করতে পারছেন না। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত