হাতে কাজ, মনে দুশ্চিন্তা

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ৫৯
Thumbnail image

৩০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের একটা ঘর। ছোট্ট সেই ঘরে কাজে নিবিষ্ট ১৭ জন শ্রমিক। কেউ জুতার তলা তৈরিতে হাত লাগাচ্ছেন। কেউবা আটা দিয়ে লাগাচ্ছিলেন ফিতা, চুমকি ও জরি। এরপর সেলাই শেষে জোড়ায় জোড়ায় জুতা ভরছিলেন প্যাকেটে। গতকাল শনিবার বেলা ৩টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর পূর্বমাদারবাড়ির নছু মালুম লেনের ‘দিপালী সুজ’ নামের একটি জুতার কারখানার চিত্র এটি। ঈদ উপলক্ষে কারখানাগুলোতে ব্যস্ততা বাড়লেও বিক্রি নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন মালিকেরা। এ জন্য চীন ও ভারত থেকে জুতা আসা, কাঁচামালের দাম দ্বিগুণ এবং করোনার বন্ধে দক্ষ শ্রমিক হারানোর বিষয়টি সামনে আনছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাকিব সুজ নামের কারখানার মালিক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘একটা সময় খুব কদর ছিল আমাদের জুতার। সপ্তাহে ২০০ ডজন ফরমায়েশ পেতাম। এখন সেটি কমতে কমতে ৫০ ডজনে ঠেকেছে। কাঁচামালের দামও দ্বিগুণ। সবাই হিমশিম খাচ্ছেন, তবু ছেড়ে যেতে পারছেন না। কেননা অনেক কারখানার মালিকই ঋণের জালে বন্দী।’

জুতা তৈরির ব্যবসা নিয়ে তাই শঙ্কিত অনেকেই। সেই শঙ্কা আরও বাড়ল চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র পাদুকা শিল্প মালিক গ্রুপের সভাপতি মঞ্জু খানের কথায়। তিনি বলেন, ‘আগে স্বাভাবিক সময়ে ঈদে ৮০ কোটি টাকার ব্যবসা হতো। এবার ৫০ কোটি টাকা হবে কি না সেটিও সন্দেহ।’

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পশ্চিম মাদারবাড়ি, অভয়মিত্র ঘাট, জলসা মার্কেট ও নালাপাড়ায় গড়ে ওঠা প্রায় ৪০০ কারখানাই এখন জেগে আছে রাত-দিন। এ ব্যস্ততা চলবে ২৫ রমজান পর্যন্ত। তত দিন বাড়ি কিংবা বাসায় যাওয়ার ছুটি নেই মালিক-শ্রমিকদের। এই কদিন কারখানাগুলোই হয়ে উঠেছে তাঁদের ঘরবাড়ি।

চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র পাদুকা শিল্প মালিক গ্রুপের সভাপতি মঞ্জু খান জানান, বহু বছর আগে এই জুতা-স্যান্ডেলের কারখানাগুলো গড়ে ওঠে। এসব কারখানায় বানানো জুতার বেশির ভাগই যায় নগরীর নূপুর মার্কেট, লাকি প্লাজা, শপিং সেন্টারসহ বিভিন্ন মার্কেটে। সেখান থেকে আরেক দফা বিক্রি হয়ে চলে যায় চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাতে। তবে কয়েক বছর ধরে চীন ও ভারত থেকে আসা জুতায় মার্কেটগুলো ভরে যায়। এ কারণে বেশির ভাগ কারখানাতেই সারা বছর জুতা তৈরি হয় না। আর এখন মূলত ঈদ ঘিরেই তাঁদের মূল ব্যবসা।

কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারখানাগুলোতে চামড়ার জুতা তৈরি হয় না বললেই চলে। এখানে বেশির ভাগ জুতাই তৈরি হয় রেক্সিন দিয়ে। তবে ক্রেতারা ফরমায়েশ দিলে চামড়ার জুতাও তৈরি হয়। ফেসবুক থেকে বিভিন্ন জুতার নকশা সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী তৈরি হয় করা বেশির ভাগ কারখানায়। এ ছাড়া ভারত-চীন থেকে আমদানি করা জুতার নকশাও কেউ কেউ নকল করেন। এখানকার কারখানাগুলোর বিশেষত্ব হলো, সেলাই ছাড়া জুতা তৈরির বাকি সব কাজই হয় হাতে।

গতকাল কয়েকটি কারখানা ঘুরে কথা হয় শ্রমিকদের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, প্রতিটি জুতা তৈরিতে চারজন শ্রমিকের হাতের ছোঁয়া লাগাতে হয়। একজন জুতার তলা তৈরি করেন, আরেকজন করেন ওপরের অংশ। এরপর দুটি অংশ জোড়া লাগান আরেকজন। শেষে চূড়ান্তভাবে তৈরির পর প্যাকেটে ভরেন একজন। প্রতি ডজন জুতা এখানে ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এতে লাভ হয় ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। এখানকার মালিক ও শ্রমিকদের বেশির ভাগই মানিকগঞ্জ ও ভৈরব এলাকার।

বাজারে বিদেশি জুতার চাপে এমনিতেই এখানকার জুতার চাহিদা পড়তির দিকে। এর মধ্যে গত দুই বছর করোনার কারণে ব্যবসা হয়নি বললেই চলে। এখন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও আগের সেই ব্যবসা নেই। সেটিই বলছিলেন পিএম সুজ কারখানার মালিক খায়রুল ইসলাম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘করোনার সময় অনেক দক্ষ শ্রমিক কাজ না থাকায় চলে গেছেন। তাঁরা আর এ পেশায় ফেরেননি। এখন ব্যবসাও আগের মতো নেই। কোনোমতে টিকে আছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত