বাজারে ফড়িয়ার দাপট ক্ষতির মুখে ধানচাষি

মীর মো. মহিব্বুল্লাহ, পটুয়াখালী
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ১০
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ১০

উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে আমন ধানের আবাদ বেশি হয়। এবার ফলন ও দাম ভালো বিধায় বাড়িতে বসেই কৃষকেরা ধান বিক্রি করছেন। তবে আমন ধানের বাম্পার ফলন হলেও ফড়িয়ার কাছে জিম্মি থাকায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন পটুয়াখালীর কৃষকেরা।

জানা গেছে, মেট্রিক টন পদ্ধতিতে ৪০ কেজিতে এক মণ হলেও পটুয়াখালীর কৃষকদের কাছ থেকে ৪৮-৫০ কেজি মণ হিসাব করে ধান কিনছেন দালাল ও ফড়িয়ারা। আর স্থানীয় বাজারগুলোতে ফড়িয়াদের এই আধিপত্যের কারণে জটিলতা এড়াতে বাধ্য হয়েই ফড়িয়াদের কাছেই ধান বিক্রি করছেন কৃষক। এতে করে এখন ৪৮-৫০ কেজিতে মণ হিসাব করার বিষয়টি স্থানীয় রীতিতে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে কৃষকেরা প্রতিবাদ করলেও কোনো প্রতিকার মিলছে না।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, পটুয়াখালী জেলায় এবার ১ লাখ ২২ হাজার ৪৮ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় উচ্চফলনশীল জাতের হেক্টরপ্রতি পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ মেট্রিক টন এবং স্থানীয় জাতের ধান তিন থেকে সাড়ে তিন মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাচ্ছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।

এদিকে এবার আমনের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারগুলোতে ধানের মূল্য বেশি। তবে ৪০ কেজিতে মণ হিসাব করলে কৃষকেরা আরও বেশি লাভবান হতেন।

সরেজমিন পটুয়াখালীর বাউফলের কালাইয়া, কলাপাড়ার ধানখালী, শহরের হেতালিয়া বাঁধঘাটের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি মণ ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ৪৮-৫০ কেজিতে মণ হিসাব করে ধান বিক্রি করায় কৃষকেরা ২৫০-২৬০ টাকা দাম কম পাচ্ছেন। এ কারণে প্রতি মণে কৃষককে ৮-১০ কেজি করে বেশি ধান দিতে হচ্ছে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছর ৪০ কেজি হিসাবে মণ নির্ধারণ করে বিক্রি চললেও এবার মৌসুমের শুরু থেকে ৪৮-৫০ কেজিতে মণ হিসাব করে ধান কিনছেন দালাল ও ফড়িয়ারা। এতে তাঁরা আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার কৃষক সোনা মিয়া বলেন, ‘ধান মাড়াই করার পর চিটা ও কুটা আলাদা করে বস্তা ভরে বিক্রি করি। যেহেতু ধান কিছুটা কাঁচা থাকে, সে জন্য মণপ্রতি এক কিংবা দুই কেজি বেশি নিলে সেটা একটা যুক্তির মধ্যে থাকে। কিন্তু ফড়িয়ারা মণপ্রতি ৮-১০ কেজি পর্যন্ত বেশি নিচ্ছেন। এটা অন্যায়, এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কিন্তু আমাদের করার কিছু নেই। এত ধান বাজারে নিয়ে বিক্রি করাও সম্ভব নয়।’

গলাচিপা উপজেলার বারেক মৃধা বলেন, ‘আমরা হারাকাল (সারা বছর) ৪৮ কেজিতে বেচি, নাইলে ফইররারা (ফড়িয়ারা) কেনে না। কি কমু কন আমাগো আটকাইয়া লইছে ওরা।’

বাউফলের কালাইয়া বাজারের ধানের আড়তদার গৌতম বণিক বলেন, ‘আমরা ৪০ কেজিতে মণ হিসাবেই ধান কিনে বিক্রি করি, উল্টো আমাদের আরও ঘাটতি দেখা দেয়। ফড়িয়ারা যে কৃষকদের কাছ থেকে ৪৮ কেজিতে ধান কেনেন, সে প্রথা বন্ধ করা হোক। আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে এ বিষয়ে অনুরোধ করছি।’

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সেলিম মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরাও বিষয়টি জানতে পেরেছি। কয়েকটি স্থানে অভিযানও পরিচালনা করা হয়েছে ইতিমধ্যে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত