বাবা

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১০: ৪২

দারুণ একরোখা মানুষ ছিলেন সলিল চৌধুরীর বাবা। করতেন ডাক্তারি। সাহেবদের সঙ্গে যুদ্ধ করতেন গরিবের জন্য ভালো ওষুধ আনানোর জন্য। জীবনসংগ্রামে অতিষ্ঠ হয়ে মাঝে মাঝে ছেলেমেয়েদের ডেকে বলতেন, ‘কবে তোরা বড় হবি, মানুষ হবি?’

যখন বাবাকে একটু অবসর দেওয়ার দরকার, তখন সলিল চৌধুরী যোগ দিলেন কমিউনিস্ট পার্টিতে। পড়াশোনা বাদ দিয়ে, বাবার স্বপ্ন পূরণ না করে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেওয়ায় আশাহত হলেন বাবা। তিনি চিঠি লিখলেন ছেলেকে, পত্রপাঠ পার্টির সঙ্গে সংস্রব ত্যাগ করে পড়াশোনায় মন দেওয়ার জন্য। ছেলে সলিল তাঁর বাবার যন্ত্রণা আর হতাশা বুঝলেন না। তিনি রেগে গেলেন, ভাবলেন, বাবা তাঁর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছেন। লিখে দিলেন, ‘আমাকে আর টাকা পাঠাবেন না। আমি নিজের ভার নিজে নিতে পারব।’

বাবাকে এই আঘাত দেওয়া যে উচিত হয়নি, সেটা সলিল চৌধুরী বুঝেছেন অনেক বয়স হলে। বাবা কিন্তু টাকা পাঠানো বন্ধ করেননি। মামাবাড়ির ঠিকানায় সে টাকা যেত। সলিল চৌধুরী নিতেন না। সে টাকা আবার ফেরত যেত।

সলিল চৌধুরীর এমএ পরীক্ষার সময় বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। শিলং হাসপাতালে ভর্তি হলেন। অ্যাপেনডিক্স অপারেশন করতে হবে। সলিলের পরীক্ষার খবর ছিল বাবার কাছে, তাই সবাইকে বলে রেখেছিলেন, সলিল যেন খবরটা জানতে না পারেন। কিন্তু মা জানিয়ে দিলেন। সলিল যেদিন শিলং এলেন, সেদিনই অপারেশন হয়েছে বাবার। অপারেশনের পর জ্ঞান হয়নি, নার্স যখন সলিলকে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিলেন, তখনো বাবার চোখ আচ্ছন্ন। ছেলেকে দেখে বললেন, ‘পরীক্ষা?’ সলিল মিথ্যে বললেন, ‘শেষ হয়ে গেছে।’

প্রশান্তিতে চোখ বুজলেন তিনি। হাসপাতালে ১০ দিন থাকার পর যখন ফিরছেন বাড়ি, তখনই সলিল ফাঁস করে দিলেন কথাটা—বাবার অসুখের কারণে তিনটি পেপার পরীক্ষা দিতে পারেননি।

খুব খেপে গেলেন তিনি। কেন মা সলিলকে জানালেন, সে কথা মনে করে খুব রাগ করলেন।

সূত্র: সলিল চৌধুরী, জীবন উজ্জীবন, পৃষ্ঠা ২৯-৩০ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত