প্রশ্নের জবাব

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১০: ২৯

ধর্মবিরোধের জটিলতা নিয়ে অশ্বিনীকুমার দত্তের স্পষ্ট একটা চেতনা ছিল। মাত্র আঠারো বছর বয়সে এ কারণেই তিনি ১৮৭৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘সাধারণ ধর্মসভা’র। যে সভা থেকে একই সঙ্গে হিন্দু-মুসলিম-খ্রিষ্টান ধর্মের সারাৎসার প্রচারিত হবে। একই আসরে বসে উপাসনা করবে হিন্দু-মুসলমান-খ্রিষ্টান। গানে ছিল আহ্বান, ‘এ ধূলি মস্তকে লয়ে ভাবেতে প্রমত্ত হয়ে/হিন্দু-মোসলেম কাজ করিব জাতিভেদ ভুলে’।

‘আয়রে মুসলমান ভাই, আজ জাতিভেদ নাই’ কিংবা ‘এখন তোরা আপন হলি’ এসব যে শুধু কথার কথা ছিল না, সেটা অশ্বিনীকুমারের জীবনাচরণ দেখেই বোঝা গিয়েছিল। অন্য অনেকের মতো শহরে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করেননি। তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন সাধারণ মানুষের মধ্যে। মিশেছেন হিন্দু-মুসলমানের সঙ্গে একইভাবে।

রবীন্দ্রনাথই বলেছিলেন, ‘আমরা সভা-সমিতিতে “ভাই ভাই” বলে ডাক দিই, কিন্তু আমাদের বিচ্ছেদমূলক, বিদ্বেষমূলক আচরণের মধ্যে তার কোনো চিহ্ন থাকে না।’ সাধারণ মানুষের সঙ্গে নেতা বা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের দূরত্বটা তাতে স্পষ্ট বোঝা যায়। অশ্বিনীকুমার কিন্তু সেই দূরত্ব বজায় রাখেননি। রাস্তায় বসে থাকা রক্তবমি করা এক গরিব মুসলমানকে পিঠে করে বয়ে এনেছেন শুশ্রূষার জন্য।

একবার এক মুসলমান চাষি অশ্বিনীকুমার দত্তের বাড়িতে একটা বেঞ্চিতে বসে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। একটা প্রশ্ন ছিল তাঁর মনে।কী সে প্রশ্ন? থাক, সে প্রশ্ন তাঁর মনেই থাকুক। আমরা দেখি, অশ্বিনীকুমার ফিরে আসার পর তাঁদের মধ্যে কী কথোপকথন হচ্ছে।অশ্বিনীকুমার দত্ত বাড়িতে ফিরে দেখলেন, একজন গরিব মুসলমান চাষি বসে আছেন তাঁর ঘরে। তিনি তাঁর পাশে গিয়ে কাঁধে হাত রেখে বসলেন।

চাষি বললেন, ‘একটা প্রশ্ন নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু তার জবাব পেয়ে গেছি। আপনারা বক্তৃতার সময় বলেন, সকলেই সমান, ভাই ভাই। আমার সন্দেহ ছিল, কথাটা সত্য কি না। কিন্তু আপনি যখন আমার পাশে, আমার কাঁধে হাত রেখে বসলেন, তখন আমার মনে আর কোনো সন্দেহ নেই। বাবু, আপনাকে সেলাম।’ 

সূত্র: শঙ্খ ঘোষ, ভিন্ন রুচির অধিকার, পৃষ্ঠা ১৩৭-১৪০

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত