ড. মো. ফখরুল ইসলাম
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যা করেছে এবং এখনো আরও নতুন যেসব প্রতারক প্রতিষ্ঠানের নাম বেরিয়ে আসছে, তাদের জন্য প্রতারিত ভুক্তভোগীদের সামনে কী করুণ দশা অপেক্ষা করছে তা তাঁরা কেউই জানেন না। তাঁরা তাঁদের দেওয়া টাকা ফেরত চান।
যেকোনো জিনিস সামনে পেলে সেটাকে নিজের মনে করে বগলদাবা করে নেওয়া আমাদের অনেকেরই বদভ্যাস হয়ে গেছে। রোগ-শোকের এই দুঃসময়ে দেশের অর্থনীতি ও রাষ্ট্রনীতির মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত জালিয়াত চক্র কবজা করে আছে। মানুষের মজ্জার মধ্যে ময়লা জমে শুধু ‘একাই খাব, একাই নেব’ নীতির মানসিকতা গড়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে অতিমারির মধ্যে দুষ্ট ও জালিয়াত চক্ররা নতুন ফাঁদ পেতে বসেছে। মানুষের ঘরে ঘরে নিত্যপণ্য সরবরাহ করার নাম করে ভেজাল পণ্য নিয়ে বদমায়েশি ব্যবসা শুরু করেছে। নিত্যপণ্য ছাড়াও বিলাসদ্রব্য, বাইক, মোটরগাড়ি, ফ্ল্যাটবাড়ি, জমির প্লট ইত্যাদি বড় বড় বিষয় নিয়ে জালিয়াত চক্র করোনাকালকে পুঁজি করে বিষধর কালসাপের মতো ছোবল দেওয়ার কাজটি অতিসন্তর্পণে সম্পন্ন করার সব ফন্দি বাস্তবায়ন করে ফেলেছে।
দেশে শত শত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নানা বাহারি নামে মেকিয়াভেলির সেই ‘প্রয়োজনে শিয়ালের মতো ধূর্ত হবার’ তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে একদিকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে কবজা করেছে, অন্যদিকে নৈতিকতাবিবর্জিত পন্থায় পুঁজিপতি হওয়ার কুবাসনা চরিতার্থ করার কাজে জম্পেশ প্রচারণার মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে প্রতারিত করার কাজটি করতে হাজারো ফাঁদ পেতেছে। এভাবে তারা দেশের অর্থনৈতিক শূন্যতা তৈরির কাজটি সম্পন্ন করে ফেলেছে। কারণ, তাদের কুব্যবসার চমকপ্রদ প্রচারণার ফলে প্রলোভিত হয়ে সহজ-সরল মানুষ নিজেদের সঞ্চয় হারিয়ে পথে বসে গেছেন। অপরদিকে দেশের অর্থ-সম্পদ পাচার করে সেসব কুলাঙ্গার পরিবার-পরিজনসহ বিদেশের মাটিতে বিলাসী জীবনযাপন করছে। দেশ হয়ে যাচ্ছে অন্তঃসারশূন্য। দেশের মূলধন গায়েব হয়ে যাচ্ছে, মেধাশূন্যতা তৈরি হচ্ছে এবং শুধু মাটি কামড়ে পড়ে থাকছেন প্রতারিত মানুষেরা। তার সঙ্গে শহরগুলোয় প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে নদীভাঙা, বন্যায় ডোবা, নিঃস্ব ও বুভুক্ষু মানুষের দল। সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে কিছু বলতে গেলে একশ্রেণির ধড়িবাজ, অনৈতিকভাবে উঠতি বিত্তশালীরা বাধা দিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত প্রচারমাধ্যমে জোর গলায় গলাবাজি করে এবং হতদরিদ্র নিঃস্ব মানুষগুলোর শত সমস্যাকে আড়াল করে শুধু নিজেদের স্বার্থে প্রচারণা চালায় আর মন্দ কাজকে ভালো ভালো বলে। তারা দুষ্ট ঘোড়া, গাধা সবাইকে লাই দিয়ে মাথায় তুলে ভুজঙ্গ নৃত্য করতে কার্পণ্য করে না।
শহরগুলো তো কারও কারও পুরো ভবনে করোনা ও ডেঙ্গু রোগী। গ্রামের বাড়িতেও একই অবস্থা। তৎসত্ত্বেও সন্তানদের নিয়ে বাইরে যেতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজারঘাট করতে হয়। এটা তাদের ইমোশনাল বিষয়গুলো পাত্তা দিতে গিয়ে চরম মানসিক সমস্যার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এভাবে ইমোশনাল ও মানসিক সমস্যা থেকে আশাহত হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে বিশাল একসারি আশাবাদী মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেছে। ঘরে বসে লাভের কথা চিন্তা করতে গিয়ে একশ্রেণির লোভী মানুষের পাল্লায় নিজেদের সঁপে দিয়ে তাঁরা আজ নিঃস্ব, সর্বস্বান্ত। অধুনা তাঁরা জোট বেঁধেছেন। এহেন অন্যায়ের প্রতিবাদে ব্যানার নিয়ে পথে নেমেছেন।
আজ এক, কাল দুই করে নতুন প্রতারক প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশিত হয়েই চলেছে প্রতিদিন। সেই ইভ্যালি দিয়ে শুরু হয়ে, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, রিংআইডি, কিউকম—কেউ কম যায়নি প্রতারণার ডালি সাজাতে। দামি দামি ক্রিকেটার, সেলিব্রেটিদের তারা প্রচারণার কাজে ব্যবহার করেছে দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে জালিয়াতি করা অর্থের বিনিময়ে কিনে নিয়ে। তাদের চেহারা ও লোভনীয় বাহারি কথায় দ্রুত ধনী হওয়ার প্রলোভনে চমকিত হয়ে অনেকেই সারা জীবনের সঞ্চয় ওই সব প্রতারকের হাতে তুলে দিতে দেরি করেননি। কয়েক বছর আগে ডেসটিনির এমন চাতুরীও তাঁরা বেমালুম ভুলে বসেছেন।
আসলে সমাজে মানুষের কল্যাণ হয় কিসে? সে কথা যদি ভুলে গিয়ে শুধু নিজের স্বার্থে প্রচারণা করে মৌখিক উন্নতির কথা বলা হয়, তাহলে কি সমস্যা মেটে? এ দিয়ে কি পেটের ক্ষুধা কমে? সুগারমিল থেকে একজন রিটায়ার্ড ব্যক্তিকে ১৬ বছর ধরে ধরনা দিতে হচ্ছে বিভিন্ন সরকারি অফিসে তাঁর পাওনা টাকা পাওয়ার জন্য। তিনি বলেছেন, ‘আমি বৃদ্ধ মানুষ, ঠিকমতো চলতেই পারি না। আমি হিসাবে মোট ২৩ লাখ টাকা পাব। কিন্তু এতগুলো বছর পার হয়ে গেল, আজও কিছুই পেলাম না। অনেকেই ঘুষ দিয়ে আগেই তাঁদের রিটায়ারমেন্টের টাকা তুলতে পারলেও আমি তো হারাম বা অন্যায় কাজ করি না, ঘুষ দিতে পারব না। আমার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য মাত্র দুই লাখ টাকা পেলেই আমার আপাতত চলত। কিন্তু সেটাও তারা বিনা ঘুষে দিতে চায় না। এখন আমার মরণ হলেই ভালো হয়।’
এ তো গেল একটি উদাহরণ। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যা করেছে এবং এখনো আরও নতুন যেসব প্রতারক প্রতিষ্ঠানের নাম বেরিয়ে আসছে, তাদের জন্য প্রতারিত ভুক্তভোগীদের সামনে কী করুণ দশা অপেক্ষা করছে, তা তাঁরা কেউই জানেন না। তাঁরা তাঁদের দেওয়া টাকা ফেরত চান। সরকার চায় প্রতারকদের ধরে জেলে পুরে পরে বিচার করতে। তাদের জেলে পুরলে তারা খুশি। তখন টাকা উদ্ধারে কেউই তাদের ওপর হামলা করতে পারবে না। কিন্তু টাকা হারানো বয়স্ক, অসুস্থ, অসহায় মানুষ ও তাঁদের পরিবারগুলোর তত দিনে কী হাল হবে, তা কি কেউ ভেবে দেখেছেন?
এ বিষয়ে টাকা দ্রুত উদ্ধার করে প্রতারিত মানুষগুলোকে বাঁচাতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান পণ্য দেওয়ার নাম করে যত টাকা জনগণের কাছ থেকে নিয়েছে, এখন তাদের কারও কারও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তার সিকি ভাগ টাকারও স্থিতি নেই। নেই তাদের নামে স্থাবর-অস্থাবর কোনো সম্পত্তি। গ্রাহকদের হতাশা সেখানেই। তাই টাকা চিরতরে হারিয়ে ফেলার ভয়ে তাঁরা অনেকেই হা-হুতাশ করছেন।
করোনা-পরবর্তী সময়ে মানুষের মানসিক সমস্যা বেড়েছে; এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নিত্যনতুন আর্থসামাজিক জটিলতা। যেগুলোর ভোগান্তি থেকে ভেঙে যাচ্ছে পরিবার, ধ্বংস হচ্ছে ব্যবসা, ত্বরান্বিত হচ্ছে সামাজিক ভাঙন। চুরি করা অর্থে ই-কমার্সের নামে অনৈতিক ব্যবসার জালিয়াত চক্র উচ্চস্তরে ঘুষ দিয়ে পার পেয়ে গাধার মতো বড় বড় দাঁত বের করে চিঁহিঁ করে হাসছে। উপহাস করছে তাদের সে হাসি গোটা মানবতাকে। সৎ, নিরীহ যেসব মানুষ ই-কমার্স নামধারী জালিয়াত ও গাধাদের পেছনে গিয়েছিলেন বেঁচে থাকার নতুন আশায়, আজ তাঁদের দাঁত মাড়িসহ ভেঙে গেছে। তাঁরা ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। হয়তো সেই অসহ্য ব্যথা সইতে না পেরে মানসিক যন্ত্রণায় এই কঠিন দুঃসহ সময় পার করতে না পেরে তাঁদের কেউ কেউ আত্মাহুতি দিতে বাধ্য হবেন। কারণ, তাঁদের চিকিৎসার ডাক্তার নেই, দু-একজন থাকলেও তাঁরা নিজেরাও অসুস্থ।
এসব ভার্চুয়াল বাণিজ্যবাদী চক্র তাঁদের অনেককে একই কৌশলে গ্রাস করে ফেলেছে। এত কিছু দেখেশুনে যেকোনো বিনিয়োগে মানুষকে সাবধান হতে হবে এবং সব জালিয়াতের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
ড. মো. ফখরুল ইসলাম, ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যা করেছে এবং এখনো আরও নতুন যেসব প্রতারক প্রতিষ্ঠানের নাম বেরিয়ে আসছে, তাদের জন্য প্রতারিত ভুক্তভোগীদের সামনে কী করুণ দশা অপেক্ষা করছে তা তাঁরা কেউই জানেন না। তাঁরা তাঁদের দেওয়া টাকা ফেরত চান।
যেকোনো জিনিস সামনে পেলে সেটাকে নিজের মনে করে বগলদাবা করে নেওয়া আমাদের অনেকেরই বদভ্যাস হয়ে গেছে। রোগ-শোকের এই দুঃসময়ে দেশের অর্থনীতি ও রাষ্ট্রনীতির মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত জালিয়াত চক্র কবজা করে আছে। মানুষের মজ্জার মধ্যে ময়লা জমে শুধু ‘একাই খাব, একাই নেব’ নীতির মানসিকতা গড়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে অতিমারির মধ্যে দুষ্ট ও জালিয়াত চক্ররা নতুন ফাঁদ পেতে বসেছে। মানুষের ঘরে ঘরে নিত্যপণ্য সরবরাহ করার নাম করে ভেজাল পণ্য নিয়ে বদমায়েশি ব্যবসা শুরু করেছে। নিত্যপণ্য ছাড়াও বিলাসদ্রব্য, বাইক, মোটরগাড়ি, ফ্ল্যাটবাড়ি, জমির প্লট ইত্যাদি বড় বড় বিষয় নিয়ে জালিয়াত চক্র করোনাকালকে পুঁজি করে বিষধর কালসাপের মতো ছোবল দেওয়ার কাজটি অতিসন্তর্পণে সম্পন্ন করার সব ফন্দি বাস্তবায়ন করে ফেলেছে।
দেশে শত শত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নানা বাহারি নামে মেকিয়াভেলির সেই ‘প্রয়োজনে শিয়ালের মতো ধূর্ত হবার’ তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে একদিকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে কবজা করেছে, অন্যদিকে নৈতিকতাবিবর্জিত পন্থায় পুঁজিপতি হওয়ার কুবাসনা চরিতার্থ করার কাজে জম্পেশ প্রচারণার মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে প্রতারিত করার কাজটি করতে হাজারো ফাঁদ পেতেছে। এভাবে তারা দেশের অর্থনৈতিক শূন্যতা তৈরির কাজটি সম্পন্ন করে ফেলেছে। কারণ, তাদের কুব্যবসার চমকপ্রদ প্রচারণার ফলে প্রলোভিত হয়ে সহজ-সরল মানুষ নিজেদের সঞ্চয় হারিয়ে পথে বসে গেছেন। অপরদিকে দেশের অর্থ-সম্পদ পাচার করে সেসব কুলাঙ্গার পরিবার-পরিজনসহ বিদেশের মাটিতে বিলাসী জীবনযাপন করছে। দেশ হয়ে যাচ্ছে অন্তঃসারশূন্য। দেশের মূলধন গায়েব হয়ে যাচ্ছে, মেধাশূন্যতা তৈরি হচ্ছে এবং শুধু মাটি কামড়ে পড়ে থাকছেন প্রতারিত মানুষেরা। তার সঙ্গে শহরগুলোয় প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে নদীভাঙা, বন্যায় ডোবা, নিঃস্ব ও বুভুক্ষু মানুষের দল। সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে কিছু বলতে গেলে একশ্রেণির ধড়িবাজ, অনৈতিকভাবে উঠতি বিত্তশালীরা বাধা দিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত প্রচারমাধ্যমে জোর গলায় গলাবাজি করে এবং হতদরিদ্র নিঃস্ব মানুষগুলোর শত সমস্যাকে আড়াল করে শুধু নিজেদের স্বার্থে প্রচারণা চালায় আর মন্দ কাজকে ভালো ভালো বলে। তারা দুষ্ট ঘোড়া, গাধা সবাইকে লাই দিয়ে মাথায় তুলে ভুজঙ্গ নৃত্য করতে কার্পণ্য করে না।
শহরগুলো তো কারও কারও পুরো ভবনে করোনা ও ডেঙ্গু রোগী। গ্রামের বাড়িতেও একই অবস্থা। তৎসত্ত্বেও সন্তানদের নিয়ে বাইরে যেতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজারঘাট করতে হয়। এটা তাদের ইমোশনাল বিষয়গুলো পাত্তা দিতে গিয়ে চরম মানসিক সমস্যার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এভাবে ইমোশনাল ও মানসিক সমস্যা থেকে আশাহত হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে বিশাল একসারি আশাবাদী মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেছে। ঘরে বসে লাভের কথা চিন্তা করতে গিয়ে একশ্রেণির লোভী মানুষের পাল্লায় নিজেদের সঁপে দিয়ে তাঁরা আজ নিঃস্ব, সর্বস্বান্ত। অধুনা তাঁরা জোট বেঁধেছেন। এহেন অন্যায়ের প্রতিবাদে ব্যানার নিয়ে পথে নেমেছেন।
আজ এক, কাল দুই করে নতুন প্রতারক প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশিত হয়েই চলেছে প্রতিদিন। সেই ইভ্যালি দিয়ে শুরু হয়ে, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, রিংআইডি, কিউকম—কেউ কম যায়নি প্রতারণার ডালি সাজাতে। দামি দামি ক্রিকেটার, সেলিব্রেটিদের তারা প্রচারণার কাজে ব্যবহার করেছে দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে জালিয়াতি করা অর্থের বিনিময়ে কিনে নিয়ে। তাদের চেহারা ও লোভনীয় বাহারি কথায় দ্রুত ধনী হওয়ার প্রলোভনে চমকিত হয়ে অনেকেই সারা জীবনের সঞ্চয় ওই সব প্রতারকের হাতে তুলে দিতে দেরি করেননি। কয়েক বছর আগে ডেসটিনির এমন চাতুরীও তাঁরা বেমালুম ভুলে বসেছেন।
আসলে সমাজে মানুষের কল্যাণ হয় কিসে? সে কথা যদি ভুলে গিয়ে শুধু নিজের স্বার্থে প্রচারণা করে মৌখিক উন্নতির কথা বলা হয়, তাহলে কি সমস্যা মেটে? এ দিয়ে কি পেটের ক্ষুধা কমে? সুগারমিল থেকে একজন রিটায়ার্ড ব্যক্তিকে ১৬ বছর ধরে ধরনা দিতে হচ্ছে বিভিন্ন সরকারি অফিসে তাঁর পাওনা টাকা পাওয়ার জন্য। তিনি বলেছেন, ‘আমি বৃদ্ধ মানুষ, ঠিকমতো চলতেই পারি না। আমি হিসাবে মোট ২৩ লাখ টাকা পাব। কিন্তু এতগুলো বছর পার হয়ে গেল, আজও কিছুই পেলাম না। অনেকেই ঘুষ দিয়ে আগেই তাঁদের রিটায়ারমেন্টের টাকা তুলতে পারলেও আমি তো হারাম বা অন্যায় কাজ করি না, ঘুষ দিতে পারব না। আমার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য মাত্র দুই লাখ টাকা পেলেই আমার আপাতত চলত। কিন্তু সেটাও তারা বিনা ঘুষে দিতে চায় না। এখন আমার মরণ হলেই ভালো হয়।’
এ তো গেল একটি উদাহরণ। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যা করেছে এবং এখনো আরও নতুন যেসব প্রতারক প্রতিষ্ঠানের নাম বেরিয়ে আসছে, তাদের জন্য প্রতারিত ভুক্তভোগীদের সামনে কী করুণ দশা অপেক্ষা করছে, তা তাঁরা কেউই জানেন না। তাঁরা তাঁদের দেওয়া টাকা ফেরত চান। সরকার চায় প্রতারকদের ধরে জেলে পুরে পরে বিচার করতে। তাদের জেলে পুরলে তারা খুশি। তখন টাকা উদ্ধারে কেউই তাদের ওপর হামলা করতে পারবে না। কিন্তু টাকা হারানো বয়স্ক, অসুস্থ, অসহায় মানুষ ও তাঁদের পরিবারগুলোর তত দিনে কী হাল হবে, তা কি কেউ ভেবে দেখেছেন?
এ বিষয়ে টাকা দ্রুত উদ্ধার করে প্রতারিত মানুষগুলোকে বাঁচাতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান পণ্য দেওয়ার নাম করে যত টাকা জনগণের কাছ থেকে নিয়েছে, এখন তাদের কারও কারও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তার সিকি ভাগ টাকারও স্থিতি নেই। নেই তাদের নামে স্থাবর-অস্থাবর কোনো সম্পত্তি। গ্রাহকদের হতাশা সেখানেই। তাই টাকা চিরতরে হারিয়ে ফেলার ভয়ে তাঁরা অনেকেই হা-হুতাশ করছেন।
করোনা-পরবর্তী সময়ে মানুষের মানসিক সমস্যা বেড়েছে; এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নিত্যনতুন আর্থসামাজিক জটিলতা। যেগুলোর ভোগান্তি থেকে ভেঙে যাচ্ছে পরিবার, ধ্বংস হচ্ছে ব্যবসা, ত্বরান্বিত হচ্ছে সামাজিক ভাঙন। চুরি করা অর্থে ই-কমার্সের নামে অনৈতিক ব্যবসার জালিয়াত চক্র উচ্চস্তরে ঘুষ দিয়ে পার পেয়ে গাধার মতো বড় বড় দাঁত বের করে চিঁহিঁ করে হাসছে। উপহাস করছে তাদের সে হাসি গোটা মানবতাকে। সৎ, নিরীহ যেসব মানুষ ই-কমার্স নামধারী জালিয়াত ও গাধাদের পেছনে গিয়েছিলেন বেঁচে থাকার নতুন আশায়, আজ তাঁদের দাঁত মাড়িসহ ভেঙে গেছে। তাঁরা ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। হয়তো সেই অসহ্য ব্যথা সইতে না পেরে মানসিক যন্ত্রণায় এই কঠিন দুঃসহ সময় পার করতে না পেরে তাঁদের কেউ কেউ আত্মাহুতি দিতে বাধ্য হবেন। কারণ, তাঁদের চিকিৎসার ডাক্তার নেই, দু-একজন থাকলেও তাঁরা নিজেরাও অসুস্থ।
এসব ভার্চুয়াল বাণিজ্যবাদী চক্র তাঁদের অনেককে একই কৌশলে গ্রাস করে ফেলেছে। এত কিছু দেখেশুনে যেকোনো বিনিয়োগে মানুষকে সাবধান হতে হবে এবং সব জালিয়াতের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
ড. মো. ফখরুল ইসলাম, ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪