পুঁথির খোঁজে

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯: ৫৮

জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়েছিলেন, কিন্তু পরিবারে সবার স্নেহ-ভালোবাসা পেয়েছেন। পড়াশোনা শুরু করেছিলেন দেরিতে।মুসলমানের ছেলে হিসেবে আরবি, ফারসি আর উর্দু পড়েছেন বাড়িতেই। স্কুলে শিখেছিলেন ইংরেজি। সাহিত্যের প্রতি ছিল তীব্র আকর্ষণ। 
একবার ডুমুরিয়া গ্রামে গিয়েছিলেন আবদুল করিম।

সেখানে এক কৃষকের ঘরে গিয়ে দেখলেন এক পুঁথি। দেখে শুধু অবাক হলেন না, বুঝলেন তিনি কিছু একটা আবিষ্কার করছেন। সেই চাষিকে বললেন, ‘এই চুক্তিটা আমাকে দিন।’ 

চাষি বুঝলেন না, মাস্টার সাহেব কোন সোনার খনির সন্ধান পেয়েছেন এতে! সেটা হাতে পেয়েই নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে পাঠোদ্ধারে মনোনিবেশ করলেন।

এই পুঁথি ছিল আলাওলের ‘পদ্মাবতী’। পদ্মাবতী আবিষ্কার ভাবনার মোড় ঘুরিয়ে দিল আবদুল করিমের। প্রাচীন পুঁথি পড়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেন। সেই পুঁথির প্রাচীন হস্তাক্ষর পড়তে শিখলেন।

আলাওলের পদ্মাবতী উঠে এল সাহিত্যের দরবারে। এই পুঁথি আবিষ্কারের মাধ্যমে জানা গেল, মধ্যযুগের সাহিত্যে বাঙালি মুসলমানের অবদান কম নয়।

সেই নেশার ঘোরেই জানতে পারেন, শিলাইগড়া গ্রামের মহুরিবাড়িতে থাকেন বুধা গাজী। তাঁর বাড়িতে প্রতি সন্ধ্যায় বসে পুঁথিপাঠের আসর। আবদুল করিম গেলেন বুধা গাজীর বাড়িতে। লক্ষ করলেন, বুধা গাজীর সংগ্রহে অনেক পুঁথি রয়েছে। কীভাবে এই পুঁথি সংগ্রহ করা যায়? বুধা গাজী খুশিমনেই পুঁথিগুলো দেন আবদুল করিমকে।

নিজের কাজ নিয়ে খুব তৃপ্ত ছিলেন তিনি। এ ব্যাপারে তাঁর বলা কথাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ:

‘আমি যেকালে সাহিত্যে প্রবেশ করি,  তখন দ্বিতীয় মুসলমান কেহ ছিল না বলিলেই হয়। হিন্দু পুস্তক, পত্রিকা পাঠ করিতে করিতে একটা প্রশ্ন আমার মনে আন্দোলিত হইত যে, আধুনিক কালের মতো প্রাচীন কালেও কি মুসলমান ছিল না? প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহ করিতে বুঝিতে পারি যে হিন্দুর মতো মুসলমানেরও একটা বিরাট সুগঠিত ও উন্নত প্রাচীন সাহিত্য আছে।’ (১৯৪৫-এ জয়ন্তী উৎসবে মানপত্রের উত্তরে ভাষণ)। 

সূত্র: আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ স্মারকগ্রন্থ

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত