বিভুরঞ্জন সরকার
দুজন জঙ্গিকে ছিনতাই করে নেওয়ার বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?
এটা দুঃখজনক এবং উদ্বেগের বিষয়। এতে সংশ্লিষ্ট পুলিশের চরম অবহেলা ও গাফিলতি ছিল। জঙ্গিরা যেকোনো সময় যেকোনো ঘটনা ঘটিয়ে বসতে পারে। তারা মরতে এবং মারতে কোনো যুক্তিবুদ্ধির ধার ধারে না। তাই গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের জেলখানায় রাখা ও আদালতে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে যে ধরনের সতর্কতা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকা উচিত, তা এই দুই জঙ্গির ক্ষেত্রে ছিল না।
এই গাফিলতির কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
একাধিক কারণ তো অবশ্যই আছে। এর মধ্যে একটি হলো, এই জঙ্গিদের সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণার অভাব। দুই. কিছুদিন ধরে জঙ্গিবিরোধী কোনো বড় অপারেশন না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হয়তো আত্মবিশ্বাস বেড়েছে যে তারা আর কিছু করতে পারবে না। তাই একটি গা-ছাড়া ভাব থাকতে পারে। তিন. এবং এটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয় যে জঙ্গিদের পাহারায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের কেউ তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে থাকতে পারে। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে যে ধরনের উগ্র প্রচারণা চালানো হচ্ছে, তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য প্রভাবিত হচ্ছেন কি না, তা বোঝার জন্য কোনো নজরদারির ব্যবস্থা আছে বলে আমার মনে হয় না। চার. এসবের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে দুর্নীতি বা অসততা। জঙ্গিরা টাকা দিয়েও তাদের কাজ হাসিলের উপায় করতে পারে। ঘুষ-দুর্নীতি তো এখন লাগামছাড়া। কারাগারে আটক থেকেও জঙ্গি বা অন্য অপরাধীরা বাইরে মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলতে পারে, এমনকি শোনা যাচ্ছে তারা কারাকক্ষে টেলিভিশনও রাখতে পারছে। কীভাবে
এসব সম্ভব?
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের জেল থেকে আদালতে নেওয়ার সময় নিরাপত্তাব্যবস্থা কি যথাযথ ছিল?
নিরাপত্তাব্যবস্থা মোটেও পর্যাপ্ত ছিল না। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি বা অন্য অপরাধীদের কারাগার থেকে কীভাবে আদালতে নেওয়া হবে, তার স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে। জঙ্গিদের শুধু হাতকড়া নয়, ডান্ডাবেড়ি পরিয়েই আনা-নেওয়া করার কথা। তা ছাড়া, কোনো জঙ্গিকে বিপজ্জনক বা হুমকি মনে করলে তাকে আদালতে হাজির না করার নিয়মও আছে। আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে তাঁর শুনানি হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, এর আগে ত্রিশালে যেহেতু জঙ্গি ছিনতাইয়ের একটি ঘটনা ঘটেছিল, সেহেতু জঙ্গিদের আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো শিথিলতা থাকাটা তো রীতিমতো বিস্ময়কর। আরও আশ্চর্যের বিষয়, অল্পসংখ্যক পুলিশ দিয়ে তাঁদের আনা-নেওয়া করা। এতগুলো শৈথিল্য কীভাবে ঘটল, আমি বুঝতে পারছি না।
চারজন ডিআইজিকে (প্রিজন) বদলি
করা হয়েছে। এই শাস্তি কি যথেষ্ট?
যে ঘটনা ঘটেছে তার মাত্রা বিবেচনায় দায়িত্ব পালনরত কয়েকজন পুলিশকে অব্যাহতি দেওয়া কিংবা কয়েকজন ডিআইজি বা কারা কর্মকর্তাকে বদলি করা আসলে কোনো শাস্তি নয়। এটা অনেকটা আইওয়াশের মতো। এমন আইওয়াশ না করাই ভালো। ঘটনার অনুপঙ্খ তদন্ত করে কাদের গাফিলতি বা কর্তব্য পালনে অবহেলার কারণে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটল, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় না আনলে ভবিষ্যতেও এমন ঘটনা ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।
জঙ্গি দমনে সফলতা অর্জনের পরও কেন এমন ঘটছে?
বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে এবং ভাবনাচিন্তা করেই এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যেটা টেকসই হবে। সাময়িক ব্যবস্থা কখনো সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়। আমাদের দেশে কীভাবে উগ্র ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল, কোথা থেকে এরা মদদ পেয়েছে? এর গোড়া তো শুধু দেশের মধ্যেই নয়। সাধারণভাবে মনে করা হয়, আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মপ্রাণ হলেও ধর্ম নিয়ে মারামারি, হানাহানি তাদের পছন্দ নয়। তাহলে কী কী কারণে জঙ্গি তৈরি হচ্ছে এবং কিছুটা সামাজিক প্রশ্রয় বা সমর্থনও পাচ্ছে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে শেল্টার পাচ্ছে।
একসময় মনে করা হতো, গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মাদ্রাসায় শিক্ষিত তরুণেরাই জঙ্গিবাদে জড়িত হচ্ছে। কিন্তু হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর এটা দেখা গেছে, উচ্চবিত্ত ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণেরাও ঘর ছেড়ে জিহাদে শরিক হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাও তারা পাচ্ছে।
হোলি আর্টিজানের ঘটনা আমাদের জন্য ছিল একটি বড় ঝাঁকি। সমাজ-রাজনীতিতে যেমন বড় ধাক্কা দিয়েছিল, তেমনি জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আমাদের দুর্বলতার দিকগুলোও স্পষ্ট হয়েছিল। হোলি আর্টিজানে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানের অভিজ্ঞতা থেকে পরবর্তী সময়ে আলাদা একটি কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠনের মাধ্যমে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ বা বড় সাফল্য এসেছে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান বা তৎপরতায় জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও তাদের মূলোৎপাটন সম্ভব নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতাও বাড়ানো প্রয়োজন। শিক্ষার গুণগত মান যেমন বাড়ানো প্রয়োজন, তেমনি একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারের বিষয়টি উপেক্ষা করাও অনুচিত। সেই ড. কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনে একমুখী শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হলেও এখনো বাস্তবে আমাদের দেশে কয়েক ধরনের শিক্ষা চলছে। মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার ঘটছে, কিন্তু সেটাও এক ধারায় নয়। সেখানেও কওমি ও আলিয়া দুই ধারা আছে, আছে বাংলা মিডিয়ামে মূলধারার শিক্ষা আর ইদানীং প্রসার ঘটছে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষার। এই ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাপদ্ধতি শিক্ষার্থীদের চিন্তার জগৎ ও কর্মক্ষেত্রে সুযোগের বৈষম্য তৈরি করছে।
এই বৈষম্যের পথ ধরে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসী চিন্তার উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করছে। তরুণ-যুবকদের বড় অংশ কর্মহীন থাকলে এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্র বা সরকারের উদ্যোগ দৃশ্যমান না হলে অস্থিরতা তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ কিংবা ধর্মীয় উগ্রতা-অসহিষ্ণুতা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এটা এখন বৈশ্বিক সমস্যা। তবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থা মোটামুটি ভালো। জঙ্গিদের মূলোৎপাটন করা সম্ভব না হলেও তারা নিয়ন্ত্রণে আছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সহনশীলতা-সমঝোতার চর্চা না থাকাসহ আরও কিছু কারণে এখনো মাঝেমধ্যেই তরুণদের ঘর ছেড়ে নিরুদ্দেশ (হিজরতের) হওয়ার খবর পাওয়া যায়। তারা জঙ্গি প্রশিক্ষণে যায় বলেই ধারণা। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলো সংগঠিত হওয়ার চেষ্টাও করে। তাদের সবশেষ বড় কার্যক্রম হলো দুই জঙ্গি ছিনতাই।
জঙ্গি দমনে রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?
জঙ্গি সমস্যা কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমস্যা নয়। এটা জাতীয় সমস্যা। আর যেকোনো জাতীয় সমস্যার স্থায়ী সমাধানে রাজনৈতিক ঐকমত্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমাদের দেশের রাজনীতিতে আস্থাহীনতার সংকট প্রবল। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক না থাকায় জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনাকেও ‘নাটক’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। হাতকড়ার চাবি বানানোর বিষয়টি কারও কাছে বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ার কারণ বোধগম্য নয়। জঙ্গিরা সরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থার ফাঁকফোকর খোঁজে এবং তার সদ্ব্যবহার করে। কারাগারে আটক থেকে বাইরে সহযোগীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে তারা যদি ছিনতাই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে হাতকড়ার চাবি বানানো কেন জটিল কাজ হবে?
জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশের কোনো যোগসূত্র আপনি দেখেন কি?
আমি সে রকম কোনো কষ্টকল্পনায় না গিয়ে বরং সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, বিএনপিকে ঢাকায় নির্বিঘ্নে সমাবেশ করতে দেওয়া হোক। বাধা দিয়ে, প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে তিক্ততা না বাড়িয়ে বিএনপিকে স্পেস করে দিলে সরকারের ক্ষতি নেই। বিএনপিকেও সংযত আচরণ করতে হবে। শান্তিপূর্ণভাবে বিভাগীয় সমাবেশগুলো করে বিএনপি তো নিন্দিত হয়নি। সমাবেশগুলো করতে দিয়ে সরকারেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু শক্তি প্রদর্শনের নামে অহেতুক সহিংসতা করলে উভয় পক্ষেরই ক্ষতি হবে। বাংলাদেশ এখন আর অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থানে নেই। বিশ্বের সব দেশই বাংলাদেশকে সমীহ করে। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করার মতো অদূরদর্শিতা কোনো রাজনৈতিক দলই দেখাবে না বলে আমার বিশ্বাস। বাইরের শক্তির মুখাপেক্ষী না হয়ে জনমতের ওপর আস্থা রাখার দৃঢ়তা দেখাতে হবে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে। নির্বাচন থেকে দূরে না থেকে একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হোক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ একটি সংসদ গঠিত হোক। রাজপথ নয়, সংসদই হোক রাজনৈতিক আলোচনা ও তর্কবিতর্কের কেন্দ্র।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
দুজন জঙ্গিকে ছিনতাই করে নেওয়ার বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?
এটা দুঃখজনক এবং উদ্বেগের বিষয়। এতে সংশ্লিষ্ট পুলিশের চরম অবহেলা ও গাফিলতি ছিল। জঙ্গিরা যেকোনো সময় যেকোনো ঘটনা ঘটিয়ে বসতে পারে। তারা মরতে এবং মারতে কোনো যুক্তিবুদ্ধির ধার ধারে না। তাই গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের জেলখানায় রাখা ও আদালতে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে যে ধরনের সতর্কতা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকা উচিত, তা এই দুই জঙ্গির ক্ষেত্রে ছিল না।
এই গাফিলতির কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
একাধিক কারণ তো অবশ্যই আছে। এর মধ্যে একটি হলো, এই জঙ্গিদের সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণার অভাব। দুই. কিছুদিন ধরে জঙ্গিবিরোধী কোনো বড় অপারেশন না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হয়তো আত্মবিশ্বাস বেড়েছে যে তারা আর কিছু করতে পারবে না। তাই একটি গা-ছাড়া ভাব থাকতে পারে। তিন. এবং এটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয় যে জঙ্গিদের পাহারায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের কেউ তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে থাকতে পারে। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে যে ধরনের উগ্র প্রচারণা চালানো হচ্ছে, তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য প্রভাবিত হচ্ছেন কি না, তা বোঝার জন্য কোনো নজরদারির ব্যবস্থা আছে বলে আমার মনে হয় না। চার. এসবের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে দুর্নীতি বা অসততা। জঙ্গিরা টাকা দিয়েও তাদের কাজ হাসিলের উপায় করতে পারে। ঘুষ-দুর্নীতি তো এখন লাগামছাড়া। কারাগারে আটক থেকেও জঙ্গি বা অন্য অপরাধীরা বাইরে মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলতে পারে, এমনকি শোনা যাচ্ছে তারা কারাকক্ষে টেলিভিশনও রাখতে পারছে। কীভাবে
এসব সম্ভব?
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের জেল থেকে আদালতে নেওয়ার সময় নিরাপত্তাব্যবস্থা কি যথাযথ ছিল?
নিরাপত্তাব্যবস্থা মোটেও পর্যাপ্ত ছিল না। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি বা অন্য অপরাধীদের কারাগার থেকে কীভাবে আদালতে নেওয়া হবে, তার স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে। জঙ্গিদের শুধু হাতকড়া নয়, ডান্ডাবেড়ি পরিয়েই আনা-নেওয়া করার কথা। তা ছাড়া, কোনো জঙ্গিকে বিপজ্জনক বা হুমকি মনে করলে তাকে আদালতে হাজির না করার নিয়মও আছে। আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে তাঁর শুনানি হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, এর আগে ত্রিশালে যেহেতু জঙ্গি ছিনতাইয়ের একটি ঘটনা ঘটেছিল, সেহেতু জঙ্গিদের আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো শিথিলতা থাকাটা তো রীতিমতো বিস্ময়কর। আরও আশ্চর্যের বিষয়, অল্পসংখ্যক পুলিশ দিয়ে তাঁদের আনা-নেওয়া করা। এতগুলো শৈথিল্য কীভাবে ঘটল, আমি বুঝতে পারছি না।
চারজন ডিআইজিকে (প্রিজন) বদলি
করা হয়েছে। এই শাস্তি কি যথেষ্ট?
যে ঘটনা ঘটেছে তার মাত্রা বিবেচনায় দায়িত্ব পালনরত কয়েকজন পুলিশকে অব্যাহতি দেওয়া কিংবা কয়েকজন ডিআইজি বা কারা কর্মকর্তাকে বদলি করা আসলে কোনো শাস্তি নয়। এটা অনেকটা আইওয়াশের মতো। এমন আইওয়াশ না করাই ভালো। ঘটনার অনুপঙ্খ তদন্ত করে কাদের গাফিলতি বা কর্তব্য পালনে অবহেলার কারণে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটল, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় না আনলে ভবিষ্যতেও এমন ঘটনা ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।
জঙ্গি দমনে সফলতা অর্জনের পরও কেন এমন ঘটছে?
বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে এবং ভাবনাচিন্তা করেই এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যেটা টেকসই হবে। সাময়িক ব্যবস্থা কখনো সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়। আমাদের দেশে কীভাবে উগ্র ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল, কোথা থেকে এরা মদদ পেয়েছে? এর গোড়া তো শুধু দেশের মধ্যেই নয়। সাধারণভাবে মনে করা হয়, আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মপ্রাণ হলেও ধর্ম নিয়ে মারামারি, হানাহানি তাদের পছন্দ নয়। তাহলে কী কী কারণে জঙ্গি তৈরি হচ্ছে এবং কিছুটা সামাজিক প্রশ্রয় বা সমর্থনও পাচ্ছে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে শেল্টার পাচ্ছে।
একসময় মনে করা হতো, গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মাদ্রাসায় শিক্ষিত তরুণেরাই জঙ্গিবাদে জড়িত হচ্ছে। কিন্তু হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর এটা দেখা গেছে, উচ্চবিত্ত ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণেরাও ঘর ছেড়ে জিহাদে শরিক হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাও তারা পাচ্ছে।
হোলি আর্টিজানের ঘটনা আমাদের জন্য ছিল একটি বড় ঝাঁকি। সমাজ-রাজনীতিতে যেমন বড় ধাক্কা দিয়েছিল, তেমনি জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আমাদের দুর্বলতার দিকগুলোও স্পষ্ট হয়েছিল। হোলি আর্টিজানে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানের অভিজ্ঞতা থেকে পরবর্তী সময়ে আলাদা একটি কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠনের মাধ্যমে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ বা বড় সাফল্য এসেছে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান বা তৎপরতায় জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও তাদের মূলোৎপাটন সম্ভব নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতাও বাড়ানো প্রয়োজন। শিক্ষার গুণগত মান যেমন বাড়ানো প্রয়োজন, তেমনি একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারের বিষয়টি উপেক্ষা করাও অনুচিত। সেই ড. কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনে একমুখী শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হলেও এখনো বাস্তবে আমাদের দেশে কয়েক ধরনের শিক্ষা চলছে। মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার ঘটছে, কিন্তু সেটাও এক ধারায় নয়। সেখানেও কওমি ও আলিয়া দুই ধারা আছে, আছে বাংলা মিডিয়ামে মূলধারার শিক্ষা আর ইদানীং প্রসার ঘটছে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষার। এই ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাপদ্ধতি শিক্ষার্থীদের চিন্তার জগৎ ও কর্মক্ষেত্রে সুযোগের বৈষম্য তৈরি করছে।
এই বৈষম্যের পথ ধরে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসী চিন্তার উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করছে। তরুণ-যুবকদের বড় অংশ কর্মহীন থাকলে এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্র বা সরকারের উদ্যোগ দৃশ্যমান না হলে অস্থিরতা তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ কিংবা ধর্মীয় উগ্রতা-অসহিষ্ণুতা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এটা এখন বৈশ্বিক সমস্যা। তবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থা মোটামুটি ভালো। জঙ্গিদের মূলোৎপাটন করা সম্ভব না হলেও তারা নিয়ন্ত্রণে আছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সহনশীলতা-সমঝোতার চর্চা না থাকাসহ আরও কিছু কারণে এখনো মাঝেমধ্যেই তরুণদের ঘর ছেড়ে নিরুদ্দেশ (হিজরতের) হওয়ার খবর পাওয়া যায়। তারা জঙ্গি প্রশিক্ষণে যায় বলেই ধারণা। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলো সংগঠিত হওয়ার চেষ্টাও করে। তাদের সবশেষ বড় কার্যক্রম হলো দুই জঙ্গি ছিনতাই।
জঙ্গি দমনে রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?
জঙ্গি সমস্যা কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমস্যা নয়। এটা জাতীয় সমস্যা। আর যেকোনো জাতীয় সমস্যার স্থায়ী সমাধানে রাজনৈতিক ঐকমত্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমাদের দেশের রাজনীতিতে আস্থাহীনতার সংকট প্রবল। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক না থাকায় জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনাকেও ‘নাটক’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। হাতকড়ার চাবি বানানোর বিষয়টি কারও কাছে বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ার কারণ বোধগম্য নয়। জঙ্গিরা সরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থার ফাঁকফোকর খোঁজে এবং তার সদ্ব্যবহার করে। কারাগারে আটক থেকে বাইরে সহযোগীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে তারা যদি ছিনতাই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে হাতকড়ার চাবি বানানো কেন জটিল কাজ হবে?
জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশের কোনো যোগসূত্র আপনি দেখেন কি?
আমি সে রকম কোনো কষ্টকল্পনায় না গিয়ে বরং সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, বিএনপিকে ঢাকায় নির্বিঘ্নে সমাবেশ করতে দেওয়া হোক। বাধা দিয়ে, প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে তিক্ততা না বাড়িয়ে বিএনপিকে স্পেস করে দিলে সরকারের ক্ষতি নেই। বিএনপিকেও সংযত আচরণ করতে হবে। শান্তিপূর্ণভাবে বিভাগীয় সমাবেশগুলো করে বিএনপি তো নিন্দিত হয়নি। সমাবেশগুলো করতে দিয়ে সরকারেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু শক্তি প্রদর্শনের নামে অহেতুক সহিংসতা করলে উভয় পক্ষেরই ক্ষতি হবে। বাংলাদেশ এখন আর অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থানে নেই। বিশ্বের সব দেশই বাংলাদেশকে সমীহ করে। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করার মতো অদূরদর্শিতা কোনো রাজনৈতিক দলই দেখাবে না বলে আমার বিশ্বাস। বাইরের শক্তির মুখাপেক্ষী না হয়ে জনমতের ওপর আস্থা রাখার দৃঢ়তা দেখাতে হবে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে। নির্বাচন থেকে দূরে না থেকে একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হোক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ একটি সংসদ গঠিত হোক। রাজপথ নয়, সংসদই হোক রাজনৈতিক আলোচনা ও তর্কবিতর্কের কেন্দ্র।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৩ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৭ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৭ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৭ দিন আগে