সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা
জিনিসপত্রের দাম বাড়া আর সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় কষ্টে আছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। সন্তানদের স্কুল-কলেজে যাতায়াতসহ নানা কাজের জন্য বহু বছরের সঞ্চয় দিয়ে পুরোনো বা কম দামি গাড়ি কেনার যে শখ ছিল মধ্যম আয়ের মানুষের, তা মেটানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সব ধরনের গাড়ির দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় ভাটা পড়েছে মধ্যম আয়ের মানুষের গাড়ি কেনার শখে। তবে বিলাসবহুল গাড়ির বিক্রি আগের মতোই আছে। উচ্চবিত্ত শ্রেণির অনেক ক্রেতা নতুন মডেলের গাড়ির জন্য আগাম বুকিংও দিচ্ছেন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশে আয়বৈষম্য বাড়ার কারণেই এমনটি ঘটছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশের মতে, আয়বৈষম্য বাড়া এবং অতিধনীদের মধ্যে মর্যাদা নিয়ে প্রতিযোগিতার কারণে এই অবস্থা। তিনি বলেন, বিত্তবান মানুষের হাতে পুঞ্জীভূত সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি মর্যাদা-মূল্যের কারণে দাম বাড়া সত্ত্বেও বিলাসবহুল গাড়ির চাহিদা বাড়ছে।
এই অভিমতের সমর্থন মেলে গাড়ি ব্যবসায়ীদের বক্তব্যেও। তাঁরা বলছেন, বিলাসবহুল গাড়ির ক্রেতাদের জন্য বেশি দাম কোনো সমস্যা নয়।
গাড়ি ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তিরা জানান, আমদানিতে শতভাগ এলসি মার্জিন আরোপ, ডলারের দাম বাড়া এবং ডলার সংকটের কারণে ঋণপত্র খুলতে না পারায় গাড়ি আমদানি কমে গেছে। রিকন্ডিশন্ড, সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়িসহ বিলাসবহুল গাড়ির দামও বেড়েছে। এতে মধ্যম আয়ের মানুষের গাড়ি কেনার সামর্থ্য কমে গেছে। তবে উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষের গাড়ি কেনা কমেনি।
জার্মানিভিত্তিক বিলাসবহুল ওডি গাড়ির বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান প্রগ্রেস মোটরস ইমপোর্টস লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, বিলাসবহুল গাড়ির বিক্রি তো কমেইনি, বরং অনেক ক্রেতা নতুন সিরিয়ালের গাড়ির জন্য আগাম বুকিংও দিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি লিড সেলস কর্মকর্তা সাফায়েত বিন তৈয়ব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে সাত-আটটি গাড়ি বিক্রি করি। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বিক্রি একটু কমলেও নভেম্বরে আগের জায়গায় ফিরে এসেছে।’
ওডি গাড়ির মডেলের মধ্যে প্রগ্রেস মোটরস ইমপোর্টস লিমিটেড বিক্রি করে কিউ ৭ ই-ট্রন ও কিউ ৮ ই-ট্রন মডেলের গাড়ি। সাফায়েত বিন তৈয়ব জানান, বর্তমানে কিউ ৭ ই-ট্রন গাড়ির দাম ১ কোটি ৯৯ লাখ এবং কিউ ৮ ই-ট্রনের দাম ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগে ১৫-২০ লাখ টাকা কম ছিল। বিলাসবহুল গাড়ির চাহিদা বাড়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘অডি গাড়ির নতুন মডেল ই-ট্রন বাজারে ছাড়া হবে আগামী জানুয়ারিতে। আমরা এরই মধ্যে ১২টি গাড়ির অগ্রিম বুকিং পেয়েছি। এই গাড়ির দাম পড়বে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা আগে ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।’
বিএমডব্লিউ গাড়ির বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান এক্সিকিউটিভ মোটরস লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে বিএমডব্লিউর জনপ্রিয় গাড়ি হচ্ছে ৫ সিরিজ, ৩ সিরিজ, অ্যাক্স ১, ২, ৩। প্রতিটি সিরিজের গাড়ির দাম বেড়েছে ১০-১৫ শতাংশ। ৫ সিরিজের দাম তিন মাস আগে ছিল ১ কোটি ২৫ থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকায়। এক্সিকিউটিভ মোটরস লিমিটেডের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের গাড়ি বিক্রি কমেনি। কোনো মাসে একটু কম বিক্রি হলেও পরবর্তী মাসে সেটা পুষিয়ে যায়।’
মিৎসুবিশি পাজেরো এসইউভি গাড়ির দাম ২০২১ সালে ছিল ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এখন ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ির দাম ছিল ৮০ লাখ টাকা। এখন ১ কোটি টাকার কমে মিলছে না।
২০ লাখ টাকা বেশি কোনো ব্যাপার না
বিলাসবহুল গাড়ির ক্রেতাদের জন্য বেশি দাম কোনো সমস্যা নয় বলে মন্তব্য করেন সাফায়েত বিন তৈয়ব। তিনি বলেন, ‘আমাদের গাড়ির গ্রাহকেরা ফ্যাশন ও কোয়ালিটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চান। তাঁদের জন্য ২০ লাখ টাকা বেশি কোনো ব্যাপার না। কারণ, দিন শেষে তাঁরা চিন্তা করেন, একটা বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের গাড়ি চালাচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে বিলাসবহুল গাড়ির চাহিদা বাড়ায় অডি ছাড়াও এখন ভক্সওয়াগন কোম্পানির পোরশে, ল্যাম্বরগিনি, বেন্টলি, সিয়াট ব্র্যান্ডের গাড়ি বাজারজাতের কাজ শুরু করেছি।’
মধ্যবিত্তের গাড়ির দাম বেড়েছে
রাজধানীর কাকরাইল, বারিধারা ও পুরানা পল্টনে কয়েকটি শোরুমে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাপানি টয়োটা ব্র্যান্ডের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম গত তিন মাসে বেড়েছে মডেলভেদে তিন থেকে সাত লাখ টাকা।
টয়োটা ব্র্যান্ডের ১৫০০ সিসি এক্সিয়ো করোলা ২০১৭ মডেলের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম তিন মাস আগে ছিল ১৮-১৯ লাখ টাকা, এখন ২৩ লাখ টাকা। একই ব্র্যান্ডের ২০১৭ মডেলের ১৫০০ সিসি এলিয়ন রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম তিন মাসে বেড়েছে ৭ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বরে এই গাড়ি ৩০ লাখ টাকার কমে কেনা গেলেও এখন লাগছে ৩৭ লাখ টাকা।
বারিধারায় সাম্পান অটোতে গাড়ি দেখতে যান অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, ‘দেশের গণপরিবহনব্যবস্থা শিশু ও নারীবান্ধব না হওয়ায় আমার এক নাতির স্কুলে আর মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য কম দামের গাড়ির খোঁজ নিচ্ছি ছয় মাস ধরে। আগে টয়োটা ফিল্ডারের দাম ছিল ১৭ লাখ টাকা, এখন সাড়ে ২২ লাখ টাকা চাইছে। আমার পক্ষে এত বেশি দামে গাড়ি কেনা সম্ভব নয়।’
কমেছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বিক্রি
গাড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে গাড়ির বাজারের ৯০ শতাংশ রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দখলে। এগুলোর মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি জাপানি গাড়ি। এই রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার মূলত গড়ে উঠেছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ঘিরে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কারণে তাঁদের গাড়ি কেনা কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে গাড়ি বিক্রিতে।
হক’স বে অটোমোবাইল লিমিটেডের পরিচালক (অপারেশন) আফাফ মুসতাহিল হক বলেন, ‘মাস তিনেক আগেও আমাদের প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে ৮০-১০০টি গাড়ি বিক্রি করত। দুই মাস ধরে বিক্রি ঠেকেছে ১৫-২০টিতে।’ তিনি বলেন, ‘করোনাকাল থেকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমতে শুরু করে। তার মধ্যে এসেছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ধাক্কা। এই দুই ধাক্কার মধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। এই অবস্থায় আমাদের মূল গ্রাহক মধ্যবিত্ত শ্রেণি টাকা খরচ না করে ধরে রাখতে চাইছে।’
পল্টনে মেসার্স শশী এন্টারপ্রাইজের অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার মোহা. তানজিল চৌধুরী বলেন, ‘দুই মাস ধরে আমাদের শোরুমে গাড়ি বিক্রি নেমে এসেছে এক-তৃতীয়াংশের নিচে। সচরাচর প্রতি মাসে ১৫-১৮টা গাড়ি বিক্রি করতাম। সেপ্টেম্বরে বিক্রি হয়েছে ৫টা আর নভেম্বরে মাত্র ১টা।’
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ ডন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে বছরে ব্যক্তিগত সব ধরনের গাড়ি বিক্রি হয় ২৫-২৬ হাজার ইউনিট। গত দুই মাসে বিক্রি কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ।’
দাম বাড়ার কারণ
হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, গাড়ি আমদানি করার জন্য ঋণপত্র খুলতে না পারায় একদিকে বাজারে গাড়ির সরবরাহ সংকট আছে; অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় বেড়ে গেছে আমদানি খরচ। এ দুই কারণে বেড়েছে গাড়ির দাম। তিনি বলেন, ‘ছয় মাস আগেও ডলারের দাম ছিল ৮৭ টাকা, এখন ডলারের দাম আমদানিকারকদের জন্য ১০৭ টাকা। প্রতি ডলারে বেশি খরচ হচ্ছে ২০ টাকা।’
হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, ‘এলসির টাকা পুরো পরিশোধ করার পরও গাড়ি ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না। গাড়ি আমদানি করতে এলসি খুলতে গেলে ব্যাংকগুলো ডলার সংকটের কথা বলে আমাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। এ বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ে অভিযোগও দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘দেশে প্রায় ৯০০ গাড়ি ব্যবসায়ীর মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ী নগদ টাকায় গাড়ি আমদানির ঋণপত্র খুলতে পারছেন। শতভাগ এলসি মার্জিনের কারণে অনেকের পক্ষে ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
ট্রাস্ট অটো ইমপোর্টসের অংশীদার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছয় মাসে আগেও গাড়ি কেনার জন্য ঋণ দিতে ব্যাংকের লোকজন আমাদের অফিসে এসে বসে থাকত। এখন গ্রাহকেরা সব কাগজপত্র ঠিকমতো দেওয়ার পরও ঋণ পাচ্ছেন না। অথচ গাড়িতে ব্যাংকঋণের রিকভারি হার ৯৮ শতাংশের ওপরে।’
অর্থনীতির অসমতার প্রকাশ
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি মধ্যবিত্ত শ্রেণি। করোনাকাল থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণি অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থায়। অন্যদিকে এই খারাপ সময়েও সমাজের ওপরের দিকের ১০ শতাংশ লোকের আয় বেড়েছে বেশ। টাকার অভাবে একদিকে মধ্যবিত্ত শ্রেণি স্বল্প দামের রিকন্ডিশন্ড গাড়ি কিনতে পারছে না; অন্যদিকে উচ্চবিত্তের বিলাসবহুল গাড়ির বিক্রি বাড়া আমাদের অর্থনীতির অসমতাকে নির্দেশ করছে।’
অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, স্বাভাবিক সময়ে কোনো দ্রব্যের দাম কমলে চাহিদা বাড়ে, দাম বাড়লে চাহিদা কমে। সাধারণভাবে এই চাহিদাবিধি কার্যকর হলেও অভ্যাস ও রুচির পরিবর্তন, আয়ের পরিবর্তন, বিলাসজাত দ্রব্য, গিফেন দ্রব্য ইত্যাদির মতো বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়। তিনি আরও বলেন, ‘হীরা, মণিমুক্তা, দামি গাড়ির মতো বিলাসজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদাবিধি কার্যকর না হওয়ার বড় কারণ এসব দ্রব্যের স্ট্যাটাস ভ্যালু (মর্যাদা-মূল্য)। দেশে বিত্তবান মানুষের সংখ্যা এবং তাঁদের হাতে পুঞ্জীভূত সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি স্ট্যাটাস ভ্যালুর কারণে বিলাসবহুল গাড়ির দাম বাড়া সত্ত্বেও চাহিদা বাড়ছে।’
জিনিসপত্রের দাম বাড়া আর সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় কষ্টে আছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। সন্তানদের স্কুল-কলেজে যাতায়াতসহ নানা কাজের জন্য বহু বছরের সঞ্চয় দিয়ে পুরোনো বা কম দামি গাড়ি কেনার যে শখ ছিল মধ্যম আয়ের মানুষের, তা মেটানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সব ধরনের গাড়ির দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় ভাটা পড়েছে মধ্যম আয়ের মানুষের গাড়ি কেনার শখে। তবে বিলাসবহুল গাড়ির বিক্রি আগের মতোই আছে। উচ্চবিত্ত শ্রেণির অনেক ক্রেতা নতুন মডেলের গাড়ির জন্য আগাম বুকিংও দিচ্ছেন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশে আয়বৈষম্য বাড়ার কারণেই এমনটি ঘটছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশের মতে, আয়বৈষম্য বাড়া এবং অতিধনীদের মধ্যে মর্যাদা নিয়ে প্রতিযোগিতার কারণে এই অবস্থা। তিনি বলেন, বিত্তবান মানুষের হাতে পুঞ্জীভূত সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি মর্যাদা-মূল্যের কারণে দাম বাড়া সত্ত্বেও বিলাসবহুল গাড়ির চাহিদা বাড়ছে।
এই অভিমতের সমর্থন মেলে গাড়ি ব্যবসায়ীদের বক্তব্যেও। তাঁরা বলছেন, বিলাসবহুল গাড়ির ক্রেতাদের জন্য বেশি দাম কোনো সমস্যা নয়।
গাড়ি ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তিরা জানান, আমদানিতে শতভাগ এলসি মার্জিন আরোপ, ডলারের দাম বাড়া এবং ডলার সংকটের কারণে ঋণপত্র খুলতে না পারায় গাড়ি আমদানি কমে গেছে। রিকন্ডিশন্ড, সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়িসহ বিলাসবহুল গাড়ির দামও বেড়েছে। এতে মধ্যম আয়ের মানুষের গাড়ি কেনার সামর্থ্য কমে গেছে। তবে উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষের গাড়ি কেনা কমেনি।
জার্মানিভিত্তিক বিলাসবহুল ওডি গাড়ির বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান প্রগ্রেস মোটরস ইমপোর্টস লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, বিলাসবহুল গাড়ির বিক্রি তো কমেইনি, বরং অনেক ক্রেতা নতুন সিরিয়ালের গাড়ির জন্য আগাম বুকিংও দিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি লিড সেলস কর্মকর্তা সাফায়েত বিন তৈয়ব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে সাত-আটটি গাড়ি বিক্রি করি। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বিক্রি একটু কমলেও নভেম্বরে আগের জায়গায় ফিরে এসেছে।’
ওডি গাড়ির মডেলের মধ্যে প্রগ্রেস মোটরস ইমপোর্টস লিমিটেড বিক্রি করে কিউ ৭ ই-ট্রন ও কিউ ৮ ই-ট্রন মডেলের গাড়ি। সাফায়েত বিন তৈয়ব জানান, বর্তমানে কিউ ৭ ই-ট্রন গাড়ির দাম ১ কোটি ৯৯ লাখ এবং কিউ ৮ ই-ট্রনের দাম ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগে ১৫-২০ লাখ টাকা কম ছিল। বিলাসবহুল গাড়ির চাহিদা বাড়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘অডি গাড়ির নতুন মডেল ই-ট্রন বাজারে ছাড়া হবে আগামী জানুয়ারিতে। আমরা এরই মধ্যে ১২টি গাড়ির অগ্রিম বুকিং পেয়েছি। এই গাড়ির দাম পড়বে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা আগে ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।’
বিএমডব্লিউ গাড়ির বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান এক্সিকিউটিভ মোটরস লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে বিএমডব্লিউর জনপ্রিয় গাড়ি হচ্ছে ৫ সিরিজ, ৩ সিরিজ, অ্যাক্স ১, ২, ৩। প্রতিটি সিরিজের গাড়ির দাম বেড়েছে ১০-১৫ শতাংশ। ৫ সিরিজের দাম তিন মাস আগে ছিল ১ কোটি ২৫ থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকায়। এক্সিকিউটিভ মোটরস লিমিটেডের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের গাড়ি বিক্রি কমেনি। কোনো মাসে একটু কম বিক্রি হলেও পরবর্তী মাসে সেটা পুষিয়ে যায়।’
মিৎসুবিশি পাজেরো এসইউভি গাড়ির দাম ২০২১ সালে ছিল ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এখন ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ির দাম ছিল ৮০ লাখ টাকা। এখন ১ কোটি টাকার কমে মিলছে না।
২০ লাখ টাকা বেশি কোনো ব্যাপার না
বিলাসবহুল গাড়ির ক্রেতাদের জন্য বেশি দাম কোনো সমস্যা নয় বলে মন্তব্য করেন সাফায়েত বিন তৈয়ব। তিনি বলেন, ‘আমাদের গাড়ির গ্রাহকেরা ফ্যাশন ও কোয়ালিটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চান। তাঁদের জন্য ২০ লাখ টাকা বেশি কোনো ব্যাপার না। কারণ, দিন শেষে তাঁরা চিন্তা করেন, একটা বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের গাড়ি চালাচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে বিলাসবহুল গাড়ির চাহিদা বাড়ায় অডি ছাড়াও এখন ভক্সওয়াগন কোম্পানির পোরশে, ল্যাম্বরগিনি, বেন্টলি, সিয়াট ব্র্যান্ডের গাড়ি বাজারজাতের কাজ শুরু করেছি।’
মধ্যবিত্তের গাড়ির দাম বেড়েছে
রাজধানীর কাকরাইল, বারিধারা ও পুরানা পল্টনে কয়েকটি শোরুমে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাপানি টয়োটা ব্র্যান্ডের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম গত তিন মাসে বেড়েছে মডেলভেদে তিন থেকে সাত লাখ টাকা।
টয়োটা ব্র্যান্ডের ১৫০০ সিসি এক্সিয়ো করোলা ২০১৭ মডেলের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম তিন মাস আগে ছিল ১৮-১৯ লাখ টাকা, এখন ২৩ লাখ টাকা। একই ব্র্যান্ডের ২০১৭ মডেলের ১৫০০ সিসি এলিয়ন রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম তিন মাসে বেড়েছে ৭ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বরে এই গাড়ি ৩০ লাখ টাকার কমে কেনা গেলেও এখন লাগছে ৩৭ লাখ টাকা।
বারিধারায় সাম্পান অটোতে গাড়ি দেখতে যান অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, ‘দেশের গণপরিবহনব্যবস্থা শিশু ও নারীবান্ধব না হওয়ায় আমার এক নাতির স্কুলে আর মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য কম দামের গাড়ির খোঁজ নিচ্ছি ছয় মাস ধরে। আগে টয়োটা ফিল্ডারের দাম ছিল ১৭ লাখ টাকা, এখন সাড়ে ২২ লাখ টাকা চাইছে। আমার পক্ষে এত বেশি দামে গাড়ি কেনা সম্ভব নয়।’
কমেছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বিক্রি
গাড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে গাড়ির বাজারের ৯০ শতাংশ রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দখলে। এগুলোর মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি জাপানি গাড়ি। এই রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার মূলত গড়ে উঠেছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ঘিরে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কারণে তাঁদের গাড়ি কেনা কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে গাড়ি বিক্রিতে।
হক’স বে অটোমোবাইল লিমিটেডের পরিচালক (অপারেশন) আফাফ মুসতাহিল হক বলেন, ‘মাস তিনেক আগেও আমাদের প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে ৮০-১০০টি গাড়ি বিক্রি করত। দুই মাস ধরে বিক্রি ঠেকেছে ১৫-২০টিতে।’ তিনি বলেন, ‘করোনাকাল থেকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমতে শুরু করে। তার মধ্যে এসেছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ধাক্কা। এই দুই ধাক্কার মধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। এই অবস্থায় আমাদের মূল গ্রাহক মধ্যবিত্ত শ্রেণি টাকা খরচ না করে ধরে রাখতে চাইছে।’
পল্টনে মেসার্স শশী এন্টারপ্রাইজের অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার মোহা. তানজিল চৌধুরী বলেন, ‘দুই মাস ধরে আমাদের শোরুমে গাড়ি বিক্রি নেমে এসেছে এক-তৃতীয়াংশের নিচে। সচরাচর প্রতি মাসে ১৫-১৮টা গাড়ি বিক্রি করতাম। সেপ্টেম্বরে বিক্রি হয়েছে ৫টা আর নভেম্বরে মাত্র ১টা।’
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ ডন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে বছরে ব্যক্তিগত সব ধরনের গাড়ি বিক্রি হয় ২৫-২৬ হাজার ইউনিট। গত দুই মাসে বিক্রি কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ।’
দাম বাড়ার কারণ
হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, গাড়ি আমদানি করার জন্য ঋণপত্র খুলতে না পারায় একদিকে বাজারে গাড়ির সরবরাহ সংকট আছে; অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় বেড়ে গেছে আমদানি খরচ। এ দুই কারণে বেড়েছে গাড়ির দাম। তিনি বলেন, ‘ছয় মাস আগেও ডলারের দাম ছিল ৮৭ টাকা, এখন ডলারের দাম আমদানিকারকদের জন্য ১০৭ টাকা। প্রতি ডলারে বেশি খরচ হচ্ছে ২০ টাকা।’
হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, ‘এলসির টাকা পুরো পরিশোধ করার পরও গাড়ি ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না। গাড়ি আমদানি করতে এলসি খুলতে গেলে ব্যাংকগুলো ডলার সংকটের কথা বলে আমাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। এ বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ে অভিযোগও দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘দেশে প্রায় ৯০০ গাড়ি ব্যবসায়ীর মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ী নগদ টাকায় গাড়ি আমদানির ঋণপত্র খুলতে পারছেন। শতভাগ এলসি মার্জিনের কারণে অনেকের পক্ষে ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
ট্রাস্ট অটো ইমপোর্টসের অংশীদার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছয় মাসে আগেও গাড়ি কেনার জন্য ঋণ দিতে ব্যাংকের লোকজন আমাদের অফিসে এসে বসে থাকত। এখন গ্রাহকেরা সব কাগজপত্র ঠিকমতো দেওয়ার পরও ঋণ পাচ্ছেন না। অথচ গাড়িতে ব্যাংকঋণের রিকভারি হার ৯৮ শতাংশের ওপরে।’
অর্থনীতির অসমতার প্রকাশ
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি মধ্যবিত্ত শ্রেণি। করোনাকাল থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণি অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থায়। অন্যদিকে এই খারাপ সময়েও সমাজের ওপরের দিকের ১০ শতাংশ লোকের আয় বেড়েছে বেশ। টাকার অভাবে একদিকে মধ্যবিত্ত শ্রেণি স্বল্প দামের রিকন্ডিশন্ড গাড়ি কিনতে পারছে না; অন্যদিকে উচ্চবিত্তের বিলাসবহুল গাড়ির বিক্রি বাড়া আমাদের অর্থনীতির অসমতাকে নির্দেশ করছে।’
অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, স্বাভাবিক সময়ে কোনো দ্রব্যের দাম কমলে চাহিদা বাড়ে, দাম বাড়লে চাহিদা কমে। সাধারণভাবে এই চাহিদাবিধি কার্যকর হলেও অভ্যাস ও রুচির পরিবর্তন, আয়ের পরিবর্তন, বিলাসজাত দ্রব্য, গিফেন দ্রব্য ইত্যাদির মতো বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়। তিনি আরও বলেন, ‘হীরা, মণিমুক্তা, দামি গাড়ির মতো বিলাসজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদাবিধি কার্যকর না হওয়ার বড় কারণ এসব দ্রব্যের স্ট্যাটাস ভ্যালু (মর্যাদা-মূল্য)। দেশে বিত্তবান মানুষের সংখ্যা এবং তাঁদের হাতে পুঞ্জীভূত সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি স্ট্যাটাস ভ্যালুর কারণে বিলাসবহুল গাড়ির দাম বাড়া সত্ত্বেও চাহিদা বাড়ছে।’
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে