‘রিফিউজি’ শব্দের মানে

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৩, ১০: ৫১

একাত্তর সালে সীমানা পেরিয়ে যখন ত্রিপুরায় পৌঁছালেন, তখন বুঝলেন, আপাতত পাকিস্তানিদের নাগালের বাইরে চলে এসেছেন। তারপর বিশাল এক ট্রেন জার্নির পর কলকাতার শিয়ালদা স্টেশনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ঘটল কত কাহিনি।

পথে খিদে লাগলেও খাবার পাওয়া কঠিন ছিল। লামডিং স্টেশনে যখন পৌঁছালেন, তখন খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। স্টেশনের ধারে ছিল লঙ্গরখানা। সেখানে শরণার্থীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা আছে, কিন্তু ঢোকে কার সাধ্য? ইতিমধ্যে হাজারখানেক নারী-শিশু-বৃদ্ধ সেই লাইনে দাঁড়িয়ে গেছে। তাই রুটি আর কলা কিনে খিদে মেটানোর চেষ্টা করলেন আলী যাকের ও তাঁর সঙ্গে থাকা স্বজনেরা। রেলওয়ের একজন কর্মচারী পরামর্শ দিলেন, স্টেশনের ক্যানটিনে খাবারের সন্ধানে যেতে। ধর্মনগর-কলকাতা পথে ট্রেনের টিকিট কিনতে হয়নি বিধায় কিছু টাকাপয়সা ছিল পকেটে। তাই ক্যানটিনে যাওয়া গেল।

ক্যানটিনের বেয়ারা বলল, ‘আমাদের এখানে মাংস হবে না। কেবল পোনা মাছের ঝোল, নিরামিষ, পটোলভাজা আর ডাল আছে।’ 
পোনা মাছ মানে ছোট রুই মাছের যে দাম হাঁকা হলো, তা দিয়ে মাছ খাওয়ার সাধ্য ছিল না। তাই নিরামিষ, ভাত আর মুগ ডাল দিয়েই খাওয়া সারতে হলো। রান্না ছিল খুবই সুস্বাদু। এরপর থেকেই আলী যাকের নিরামিষের ভক্ত হয়ে পড়েছিলেন।

ট্রেন যখন শিয়ালদার কাছে এল, তখন বহু আগের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল আলী যাকেরের। ছেলেবেলায় মায়ের সঙ্গে ঢাকা মেইলে করে যখন শিয়ালদা এসেছিলেন, তখন যেমন ছিল, তেমনি আছে স্টেশন। সেটা ছিল দেশভাগের কয়েক বছর পর। শিশু যাকের প্ল্যাটফর্মে দেখলেন ভাসমান মানুষের স্রোত। মাকে প্রশ্ন করলেন, ‘এরা কারা?’

মা খুব সংক্ষেপে উত্তর দিলেন, ‘রিফিউজি।’

ছয়-সাত বছরের শিশুর পক্ষে তখন রিফিউজি শব্দটির অর্থ জানা ছিল না। তিনি তখন ভেবেছিলেন, এরাও হয়তো কোনো বিশেষ জাতের মানুষ। যেমন পাঞ্জাবি বা বিহারি।

এত দিনে নিজে রিফিউজি হয়ে হাড়ে হাড়ে বুঝলেন, রিফিউজি শব্দটির মানে।

সূত্র: আলী যাকের, দূরে কাছে স্বর্গ আছে, পৃষ্ঠা ৪৫-৪৮ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত