মেয়েদের জন্য ৯ লাখ টাকাও নেই বাফুফের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলেছিল গত সেপ্টেম্বরে, নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। দেশকে শিরোপা উল্লাসে ভাসানো সেই দলটা অবশেষে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে ১০ মাসের লম্বা বিরতির পর। কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ১৩ ও ১৬ জুলাই ফিফা উইন্ডোর দুই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেপাল।

নিজেদের ইতিহাসে প্রথম সাফ জয়ের পর যেখানে আরও এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল নারী জাতীয় দলের, সেখানে ঘটনাপ্রবাহ এখন উল্টো। গত ১০ মাসে একের পর এক বিতর্কে এলোমেলো হয়ে গেছে নারী ফুটবলের হাসিখুশি সেই পরিবারটা। জানুয়ারিতে ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ায় অভিমানে ফুটবলকে বিদায় বলে দেন সাফজয়ী আনুচিং মারমা। গত মার্চে অর্থের অভাবকে কারণ দেখিয়ে মিয়ানমারে নারী দলকে না পাঠানোয় তোপের মুখে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।

এরপর নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ নিয়ে বাফুফের এলোমেলো সিদ্ধান্তেও বিরক্ত হয়েছিলেন নারী ফুটবলাররা। লম্বা সময়ে মাঠে খেলা না থাকা, ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ফুটবলকে বিদায় বলেছেন আরেক সাফজয়ী ফরোয়ার্ড সিরাত জাহান স্বপ্না। দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন জাতীয় দল ছেড়ে চলে গেছেন চীনে। নারী দলের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা হয়ে এসেছে নারী দলকে শূন্য থেকে গড়ে তোলা কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের পদত্যাগ।

সব মিলিয়ে গুমোট একটা পরিবেশ থেকে নারী দলকে বের করে আনতে পারত মাঠের খেলা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছেন সাবিনা খাতুনরা। সেখানে ম্যাচ খেলার রোমাঞ্চ তো দূর, উল্টো নেপালের দুই ম্যাচ নিয়ে চাপা এক অস্বস্তি বাফুফে ভবনের চারতলায় নারী দলের ক্যাম্পে। গোড়ালিতে চোট আছে ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানী সরকার ও মাসুরা পারভীনের। জাতীয় দলের সাত ফুটবলার এখন জ্বরে আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে শামসুন্নাহার জুনিয়র ও হালিমা আক্তার ডেঙ্গু পজিটিভ। ভঙ্গুর মনোবলে খেলা কঠিন হবে বলে নেপালের বিপক্ষে দুই ম্যাচ পিছিয়ে দিতে নারী ফুটবলারদের করা আবেদন গুরুত্ব দেয়নি বাফুফে।

আন্তর্জাতিক ফুটবলের সময় দলকে হোটেলে রাখা হবে, নারী ফুটবলারদের এমন একটি প্রতিশ্রুতি ছিল বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের পক্ষ থেকে। সিনিয়র ফুটবলাররা সেই প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দিতে গতকাল দলের সিনিয়র সদস্যরা দেখা করেছিলেন নারী ফুটবল উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণের সঙ্গে। নেপাল ও বাংলাদেশ দলকে হোটেলে রাখতে মোট ১৮ লাখ টাকা খরচ হবে—এই কথা শুনিয়ে ফুটবলারদের আবেদন নাকচ করিয়ে দিয়েছেন কিরণ।

সভাপতির প্রতিশ্রুতি ছিল, ফুটবলারদের হোটেলে রাখা হবে, একজন সিনিয়র ফুটবলার এমন কথা মনে করিয়ে দিতে নারী দলকে ৯ লাখ খরচায় হোটেলে রাখার সামর্থ্য নেই বলে জানিয়ে দেন কিরণ। বিষয়টি নিয়ে কিরণ শুধু এতটুকুই বলেছেন, ‘মেয়েরা হোটেলে যাবে না। ওরা এখানেই (বাফুফে ভবনে) থাকবে।’

সাফে সেমিফাইনালে খেলায় ছেলেদের জাতীয় দলকে নিজেদের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা বোনাস দিয়েছে বাফুফে। নিজের পকেট থেকে তিন ফুটবলারকে সাত লাখ টাকা বাড়তি বোনাসও দিয়েছেন কাজী সালাউদ্দিন। অথচ নারী ফুটবলারদের হোটেলে রাখতে ৯ লাখ টাকা খরচ করতে যত আপত্তি বাফুফের।

আন্তর্জাতিক ম্যাচের আগে ছেলেদের জাতীয় দলের জন্য ন্যূনতম তিন তারকা হোটেলের ব্যবস্থা থাকলেও ঘরের মাঠে নারী ফুটবলাররা থাকেন বাফুফে ভবনে। সিনিয়র ফুটবলাররা এক কক্ষে গাদাগাদি করে থাকেন চারজনের মতো। বয়সভিত্তিক ফুটবলারদের অবস্থা আরও করুণ। ৬-৭ ফুটবলারকে ভাগাভাগি করতে হয় একটি কক্ষ!

নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের কোচের পদ নিয়েও হয়েছে একপ্রস্থ নাটক। মাহফুজা আক্তার কিরণ কোচ হতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন ব্রিটিশ টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলিকে। প্রীতি ম্যাচের কোচ হবেন না, এমন যুক্তি দেখিয়ে সাবিনাদের কোচ হননি স্মলি। তাই নেপাল ম্যাচে বাংলাদেশ দলের ডাগআউটে প্রধান কোচের দায়িত্ব থাকছে সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটুর কাঁধেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত