হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম

ফরিদপুর ও ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৫: ৫৯
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭: ২৭

হঠাৎ পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গত তিন দিনে ফরিদপুর ও বাগেরহাটে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দর ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। অথচ সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তারপরও কেন দাম বেড়েছে তা ফরিদপুরের ব্যবসায়ী বা আমদানিকারক কেউই জানেন না।

গত বৃহস্পতিবার ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসনের হাজীগঞ্জের বাজার, সদরপুর বাজার, পিঁয়াজখালী বাজার, ফরিদপুর হাজী শরীয়তুল্লা বাজার, হেলিপোর্ট (হেলিপ্যাড) বাজার, টেপাখেলা বেলতলা বাজার, লেকপাড় বাজার, সিঅ্যান্ডবি ঘাট বাজার এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি পেঁয়াজের মূল্য নিচ্ছেন ৮০ টাকা।

তিন দিন আগে যেখানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। অথচ এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজিতে। বাজারে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

গতকাল সকালে বাগেরহাটের ফকিরহাট বাজারের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দরও বেড়েছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। ৫ থেকে ৬ দিন আগে ভারতীয় পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৩৫ টাকা।

ফকিরহাটে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ কেন এতটা বাড়ছে, এমন প্রশ্নে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারিতে তাঁরা যে দামে কেনেন তা থেকে সামান্য লাভ রেখে বিক্রি করেন। আড়তে দাম বাড়ায় তাঁরাও বেশি দামে বিক্রি করছেন।

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। তাদের দাবি, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পেঁয়াজ মজুত রেখে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা লাভের আশা করছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের প্রতি বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান তাঁরা।

ফরিদপুরের কানাইপুর বাজারের ব্যবসায়ী আনন্দ সাহা বলেন, বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম। আর ভারতেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ফলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তি।

ফকিরহাট বাজারের সততা বাণিজ্য ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী ও পাইকারি বিক্রেতা ছাদেক মল্লিক বলেন, পেঁয়াজের দাম কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। তিনি খুলনার পাইকারদের থেকে যে দামে কেনেন তা থেকে কেজিপ্রতি দুই টাকা লাভে ফকিরহাটের খুচরা বিক্রেতাদের সরবরাহ করেন।

ফকিরহাট বাজারের খুচরা বিক্রেতা ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের মালিক আ. রহমান বলেন, বৃষ্টি দেখে গুজব ছড়ানো হয় পেঁয়াজ, মরিচের দাম বাড়বে। ফলে ক্রেতাদের বেশি পণ্য কিনে রাখার মানসিকতা থেকে হঠাৎ মালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সুযোগ নিচ্ছেন আড়তদারেরা।

ফরিদপুর শহরের হাজী শরীয়ত উল্লাহ বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মোকলেছ সেখ বলেন, আমদানি কম হচ্ছে। ফলে দাম বাড়ছে। এ ছাড়া পেঁয়াজের মৌসুম শেষের দিকে। তাই দামও চড়া। পাইকারি বাজারেও দাম বেড়েছে। মণপ্রতি পেঁয়াজের দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা বেড়েছে। তাই তাঁরাও বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। ভবিষ্যতে আরও দাম বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।

তবে ফরিদপুরের পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে দাম বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। এ ছাড়া ভারত বা বাংলাদেশ কোনো পক্ষই পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ করেছে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আমদানিকারকেরাও বলছেন, পেঁয়াজের আমদানির গতি কিছুটা কমলেও বন্ধ হয়নি। তবে, বৃষ্টির কারণে কিছু মুড়িকাটা পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় গতি কমেছে।

ফরিদপুরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির নেতা নুর ইসলাম বলেন, কাঁচামালের বাজার এমনই। সরবরাহ কমে গেলে দাম বাড়ে। বাজারে এখন পেঁয়াজ কম, তাই দামও বেশি।

বাগেরহাট জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান বলেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। আইনের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তবে দামের তালিকা দোকানে টানিয়ে না রাখলে জরিমানা করা হয়।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক রায় বলেন, পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে। পেঁয়াজের দর কেন বাড়ছে সে বিষয়ে তাঁরা খোঁজ নিচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত