প্রথম ঢাকা দর্শন

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪: ৪৯

ঢাকায় বসবাস শুরু করার আগে ছেলেবেলায় ফতুল্লায় কেটেছিল রফিকুন নবী তথা রনবীর জীবন। তিনি তখন একেবারেই ছোট। সুদূর উত্তরাঞ্চল থেকে আসার পর ফতুল্লাতেই স্থিত হয়েছিল তাঁদের পরিবার। এরপর তিপ্পান্ন সালের প্রথম দিক থেকে ঢাকায় বসবাস শুরু।

বাবা ছিলেন পুলিশ। ওসি হিসেবে প্রথম পোস্টিং হয়েছিল ফতুল্লায়। সেই ফতুল্লায় একবার গাড়িচাপা পড়েছিলেন রফিকুন নবী।

বাড়ির পেছনে যে পাকা রাস্তাটা, তাতে মোটরগাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি চলত। ব্যস্ত সরু রাস্তা। সে রাস্তা একা পার হওয়ার কথা নয়। কিন্তু একা একাই সেটা পার হচ্ছিলেন শিশু রফিকুন নবী। জেদ তাঁকে রাস্তা পার করাচ্ছিল। পাড়ার পাঁচজন ডাকাবুকো ছেলে রফিকুন নবীকে ‘পিচ্চি’ অভিধা দিয়ে তাঁকে ফেলেই গুলতি দিয়ে পাখি মারার জন্য রাস্তার অন্য পারের ধানখেতে গিয়েছিল পাখি শিকার করতে। রফিকুন নবীর জেদ চাপল, তিনিও রাস্তা পার হয়ে ধানখেতে যাবেন। ফলে ব্যস্ত রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির তলায়!

বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতেই পারত। গাড়ির তলা থেকে যারা তাকে টেনে তুলল, তাদের কথা কানে আসছিল রনবীর। তারা বলছিল, ‘দেখতে দেখতে গাড়িটা খুব জোরে ব্রেক কষল আর সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম, ফুড়ুৎ কইরা বাচ্চাটা তলায় চইলা গেল। আমরা তো ভাবলাম, মইরা শ্যাষ। টাইনা বাইর কইরা দেহি, কথা কয়। ওসি স্যারের কপাল কারে কয়!’

মজার ব্যাপার হলো, এই দুর্ঘটনা রফিকুন নবীকে ঢাকা শহর দেখার সুযোগ তৈরি করে দেয়। গাড়িটার ছিল রিকশার মতো স্পোকওয়ালা সরু চাকা, কাপড়ের ছাদ ছিল ওপরে।

গাড়িটি চালাচ্ছিলেন এক বৃদ্ধ। পাশে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। তাঁরা দুজনই রনবীকে প্রথমে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন, তারপর স্টিমারঘাট বা রেলস্টেশনের ফার্স্ট ক্লাসের যাত্রীদের রিফ্রেশমেন্ট রেস্তোরাঁয় ভরপেট খাইয়েছেন। এরপর পৌঁছে দিয়েছেন বাড়িতে।

এরপর যখনই সময় হতো, সেই গাড়িতে করে তাঁরা রফিকুন নবীকে ঘুরে দেখিয়েছেন ঢাকা শহর। সদরঘাট, হাইকোর্ট, নবাববাড়ি, কার্জন হল—সবই ওই ভদ্রলোকের কল্যাণে দেখা হয়ে যায় রনবীর।

সূত্র: রফিকুন নবী, কাজল ঘোষ সম্পাদিত স্মৃতির ঢাকা, পৃষ্ঠা ২৭৯-২৮৯

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত