মোনায়েম সরকার
গাজীপুরসহ দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশনে নির্বাচন করার জন্য তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী মাসের শেষ দিক থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হবে। তিনটি পৃথক দিনে পাঁচ গুরুত্বপূর্ণ সিটিতে হবে নির্বাচন। তাতে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনমুখী দল আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে পাঁচজন মেয়র প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। রাজশাহী ও খুলনার বর্তমান দুই মেয়রকে বহাল রেখে গাজীপুর ও বরিশালে নতুন দুজনকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সিলেট সিটিতেও চমক সৃষ্টি করা হয়েছে কম আলোচিত প্রবাসী একজনকে মনোনয়ন দিয়ে। সেখানে কোন্দল এড়াতেই এমন ব্যবস্থা বলে জানা যাচ্ছে। এটা উপযুক্ত নেতা সৃষ্টি না হওয়ার কারণে কি না, সেই প্রশ্নও থেকে যায়।
দলের প্রার্থী মনোনয়নে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে গাজীপুর ও বরিশালে নতুন মুখ খুঁজে বের করার ঘটনা। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, বরিশালে দলের প্রভাবশালী নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ মনোনয়ন না পাওয়ায় তা বেশি আলোচনায় এসেছে। কারণ গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের পতন ঘটেছিল আগেই। বঙ্গবন্ধু ও একাত্তরের শহীদদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে তিনি আগেই দল থেকে বহিষ্কৃত হন। মেয়র পদ থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও সামনে এসেছিল। এর পরও তিনি নতুন করে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে ভুল স্বীকার করায় তাঁকে দলে ফেরত নেওয়া হলেও নেত্রী যে এ ধরনের লোকের বিষয়ে কঠোর, সেই বার্তা দিলেন তাঁকে মনোনয়ন না দিয়ে। এটাই প্রত্যাশিত ছিল। তবে বরিশালে সাদিক আবদুল্লাহ তাঁর যাবতীয় বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের পরও মনোনয়ন পেয়ে যেতে পারেন বলে অনেকে ধারণা করেছিলেন। পদ ও মনোনয়ন পাওয়ার বেলায় পারিবারিক যোগাযোগ আমাদের রাজনীতির একটি বড় নিয়ামক বলে মনে করা হয়। সে কারণেই সাদিক আবদুল্লাহ দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় সেটাকে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য বড় বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে। সাদিক আবদুল্লাহ বরিশালে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গেও বড় বিবাদে জড়িয়ে বিতর্কিত হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসন ক্যাডার থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানানো হয়। সরকার তখনই তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় কি না, সেই প্রশ্ন জেগেছিল। সেটা না হলেও নতুন করে তাঁর মেয়র হওয়ার সুযোগ যে কেড়ে নেওয়া হলো, এটা দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ। এ ঘটনা থেকে ক্ষমতা পেয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে ফেলা ব্যক্তিদের শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের বেশি দিন বাকি নেই। নির্বাচন কমিশন সেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভেতরেও শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। সম্ভাব্য প্রার্থীর ব্যাপারে বিভিন্নভাবে খোঁজ নেওয়ার কাজ শুরু করেছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী। সিটি নির্বাচনে বিতর্কিত প্রার্থীকে বাদ দেওয়ার ঘটনায় বোঝা যায়, যাচাই-বাছাই করে অগ্রসর হওয়ার কাজটি তিনি এরই মধ্যে শুরু করে দিয়েছেন। একই পরিবারের অপর ব্যক্তি সাদিক আবদুল্লাহর ছোট চাচাকে মনোনয়ন দেওয়ার ঘটনায় অবশ্য অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, পারিবারিক বৃত্তের বাইরের কাউকে তো বেছে নেওয়া হলো না! পারিবারিক যোগসূত্র থাকলেই কাউকে মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করা হবে, সেটাও কিন্তু স্বাভাবিক নয়। এ ঘটনাকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই গ্রহণ করতে হবে।
এখন প্রশ্ন, যেসব সিটিতে সাবেক মেয়র বা প্রভাবশালী নেতারা মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েছেন, তাঁরা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবেন কি না। তেমন সম্ভাবনা একেবারে নেই, তা বলা যায় না। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর সাহস না থাকলেও তাঁরা যে দলীয়ভাবে মনোনীতদের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারেন, সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। গাজীপুরে জাহাঙ্গীর আলম কী করবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তাঁর অর্থবিত্ত ও প্রভাব রয়েছে বলে জানা যায়। সেটা কাজে লাগিয়ে তিনি দলীয় প্রার্থীকে বেকায়দায় ফেলতে পারেন। বরিশালে সাদিক আবদুল্লাহ অবশ্য ইতিমধ্যে বলেছেন, তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে চাচাকে জেতানোর জন্য কাজ করবেন। সেটা করলেই ভালো। কেননা, বিএনপি এই নির্বাচন কেন্দ্রীয়ভাবে বর্জন করলেও স্থানীয় নেতারা তাতে কোনোভাবেই অংশ নেবেন না, তা বলা যায় না। এরই মধ্যে এ নিয়ে যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বোঝা যায় তৃণমূল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। সিটির কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকের ব্যাপার না থাকায় তাদের স্থানীয় নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে ইতিমধ্যে প্রচারণা শুরু করেছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপি এদের ঠেকাতে পারবে না। সেটা বোধ হয় তারা চাইবেও না। ইতিমধ্যে এটাও জানা গেল, কেউ ‘স্বতন্ত্রভাবে’ মেয়র পদে দাঁড়াতে চাইলে কেন্দ্রের আপত্তি নেই। দলের কোনো পদে না থাকা নেতারা নির্দেশনা না মেনে নির্বাচনে অংশ নিলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করাও সহজ নয়। বিএনপি যেভাবে লাগাতার নির্বাচনের বাইরে থাকছে, তাতে দলের, বিশেষ করে তৃণমূলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া রয়েছে বলেই জানা যায়। নিরপেক্ষ সরকারের অধীন জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা স্থানীয় নির্বাচনও বর্জন করে চলেছে কেন, সেটা দলের লোকদের কাছেও প্রশ্ন।
ইতিমধ্যে আমরা জানতে পারলাম, সিলেট সিটির মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী লন্ডনে গিয়েছিলেন এবং তাঁদের নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে ফিরেছেন। তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, তা ঈদের পরে জানাবেন। তিনি যে নির্বাচনে দাঁড়াতে চান, এটা স্পষ্ট। অন্যান্য সিটি করপোরেশন থেকেও বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে। তবে তাঁরা স্বভাবতই দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করার কথা প্রকাশ্যে বলছেন না। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই অংশ নেবে না বলে বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছে। এটা আত্মঘাতী কি না, সেটা ভেবে দেখার সুযোগও যেন তাঁদের নেই। তবে দলের মেয়র পদপ্রার্থীরা সরাসরি নির্বাচন করার হিম্মত না পেলেও ঘনিষ্ঠ বা পরিবারের কাউকে না কাউকে দাঁড় করিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীতদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে চাইবেন হয়তো।
এদিকে সিটি নির্বাচনে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি কী ভূমিকা রাখবে, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। তারা সব সিটিতে উপযুক্ত প্রার্থী পাচ্ছে না বলে খবরে জানা যায়। চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন ও অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠন কিছু স্থানীয় নির্বাচনে এরই মধ্যে চমক দেখিয়েছে এবং কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়েরও কারণ হয়েছে। আওয়ামী লীগকে এটা মনে রাখতে হবে। দেশের সবখানেই এসব ধর্মীয় দলের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভোট রয়েছে বলে মনে করা হয় এবং এর প্রমাণও পাওয়া গেছে। বিশেষ করে বরিশাল সিটি নির্বাচনে চরমোনাই পীরের দল আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জন্য সংকট তৈরি করতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। জাতীয় পার্টিও তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে পারে বলে খবর রয়েছে। জাতীয় পার্টিতে অবশ্য দুই ধারা। কোন ধারা কখন দলে প্রাধান্য বিস্তার করে, তা আগে থেকে বলা যায় না। মনোনয়নবঞ্চিত সাদিক আবদুল্লাহ ও তাঁর সমর্থকেরা শেষ পর্যন্ত কী করবেন, সেটাই বা কে বলবে! স্থানীয় পর্যায়ের কমিটিতে তারাই তো প্রভাবশালী। যে কারণে শুধু তাঁর নামেই কেন্দ্রের কাছে মেয়র পদে মনোনয়ন চাওয়া হয়েছিল। দলীয় সভাপতির দৃঢ় ভূমিকার কারণেই সেই আবদার এড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে বিশ্বাস করি।
এখন নির্বাচনের ময়দানে মনোনয়নবঞ্চিত সাদিক ও জাহাঙ্গীররা যেন বড় কোনো নেতিবাচক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা পরাজিত হলে সরকারের পতন ঘটে যাবে, তা নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তা কখনো হয়ও না। তবু এই নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয় দেশে জনমত পরিস্থিতি কেমন, তা বোঝার জন্য। সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকারব্যবস্থা এখনো সেভাবে শক্তিশালী হয়নি, এ কথা সত্য। তবে এই নির্বাচনে জনগণ বিশেষ আগ্রহের সঙ্গে অংশ নিয়ে থাকে এ জন্য যে, তারা মনে করে এটা তাদের ‘ঘরের কাছের সরকার’। সে জন্য অনেক সময় দলীয় বিবেচনার বাইরে গিয়েও মানুষ ভোট দিয়ে থাকে যোগ্য প্রার্থীকে। তবে বাংলাদেশে এখনো সব নির্বাচনে দলীয় বিবেচনাই মুখ্য। সামনেই জাতীয় নির্বাচন বলে এটা এখন আরও বেশি প্রাধান্য পাবে। সে জন্য গ্রহণযোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
এখন কাজ হলো নির্বাচনটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা জোগানো এবং দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের জন্য সংগঠনের ঐক্য ধরে রেখে সর্বশক্তি নিয়োগ করা। এই নির্বাচন ঘিরে যেন নতুন কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না হয় বা তেমন কোনো সুযোগ না পায় বিরোধী দল। শুধু মেয়র নয়, কাউন্সিলর পদেও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীরা যেন নির্বাচনে অংশ নেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে আওয়ামী লীগকে। জাতীয় নির্বাচনের মাস ছয়েক আগে এটা তাদের জন্য একটি পরীক্ষা বৈকি।
লেখক: রাজনীতিক, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর
গাজীপুরসহ দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশনে নির্বাচন করার জন্য তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী মাসের শেষ দিক থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হবে। তিনটি পৃথক দিনে পাঁচ গুরুত্বপূর্ণ সিটিতে হবে নির্বাচন। তাতে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনমুখী দল আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে পাঁচজন মেয়র প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। রাজশাহী ও খুলনার বর্তমান দুই মেয়রকে বহাল রেখে গাজীপুর ও বরিশালে নতুন দুজনকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সিলেট সিটিতেও চমক সৃষ্টি করা হয়েছে কম আলোচিত প্রবাসী একজনকে মনোনয়ন দিয়ে। সেখানে কোন্দল এড়াতেই এমন ব্যবস্থা বলে জানা যাচ্ছে। এটা উপযুক্ত নেতা সৃষ্টি না হওয়ার কারণে কি না, সেই প্রশ্নও থেকে যায়।
দলের প্রার্থী মনোনয়নে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে গাজীপুর ও বরিশালে নতুন মুখ খুঁজে বের করার ঘটনা। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, বরিশালে দলের প্রভাবশালী নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ মনোনয়ন না পাওয়ায় তা বেশি আলোচনায় এসেছে। কারণ গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের পতন ঘটেছিল আগেই। বঙ্গবন্ধু ও একাত্তরের শহীদদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে তিনি আগেই দল থেকে বহিষ্কৃত হন। মেয়র পদ থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও সামনে এসেছিল। এর পরও তিনি নতুন করে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে ভুল স্বীকার করায় তাঁকে দলে ফেরত নেওয়া হলেও নেত্রী যে এ ধরনের লোকের বিষয়ে কঠোর, সেই বার্তা দিলেন তাঁকে মনোনয়ন না দিয়ে। এটাই প্রত্যাশিত ছিল। তবে বরিশালে সাদিক আবদুল্লাহ তাঁর যাবতীয় বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের পরও মনোনয়ন পেয়ে যেতে পারেন বলে অনেকে ধারণা করেছিলেন। পদ ও মনোনয়ন পাওয়ার বেলায় পারিবারিক যোগাযোগ আমাদের রাজনীতির একটি বড় নিয়ামক বলে মনে করা হয়। সে কারণেই সাদিক আবদুল্লাহ দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় সেটাকে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য বড় বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে। সাদিক আবদুল্লাহ বরিশালে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গেও বড় বিবাদে জড়িয়ে বিতর্কিত হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসন ক্যাডার থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানানো হয়। সরকার তখনই তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় কি না, সেই প্রশ্ন জেগেছিল। সেটা না হলেও নতুন করে তাঁর মেয়র হওয়ার সুযোগ যে কেড়ে নেওয়া হলো, এটা দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ। এ ঘটনা থেকে ক্ষমতা পেয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে ফেলা ব্যক্তিদের শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের বেশি দিন বাকি নেই। নির্বাচন কমিশন সেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভেতরেও শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। সম্ভাব্য প্রার্থীর ব্যাপারে বিভিন্নভাবে খোঁজ নেওয়ার কাজ শুরু করেছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী। সিটি নির্বাচনে বিতর্কিত প্রার্থীকে বাদ দেওয়ার ঘটনায় বোঝা যায়, যাচাই-বাছাই করে অগ্রসর হওয়ার কাজটি তিনি এরই মধ্যে শুরু করে দিয়েছেন। একই পরিবারের অপর ব্যক্তি সাদিক আবদুল্লাহর ছোট চাচাকে মনোনয়ন দেওয়ার ঘটনায় অবশ্য অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, পারিবারিক বৃত্তের বাইরের কাউকে তো বেছে নেওয়া হলো না! পারিবারিক যোগসূত্র থাকলেই কাউকে মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করা হবে, সেটাও কিন্তু স্বাভাবিক নয়। এ ঘটনাকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই গ্রহণ করতে হবে।
এখন প্রশ্ন, যেসব সিটিতে সাবেক মেয়র বা প্রভাবশালী নেতারা মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েছেন, তাঁরা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবেন কি না। তেমন সম্ভাবনা একেবারে নেই, তা বলা যায় না। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর সাহস না থাকলেও তাঁরা যে দলীয়ভাবে মনোনীতদের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারেন, সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। গাজীপুরে জাহাঙ্গীর আলম কী করবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তাঁর অর্থবিত্ত ও প্রভাব রয়েছে বলে জানা যায়। সেটা কাজে লাগিয়ে তিনি দলীয় প্রার্থীকে বেকায়দায় ফেলতে পারেন। বরিশালে সাদিক আবদুল্লাহ অবশ্য ইতিমধ্যে বলেছেন, তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে চাচাকে জেতানোর জন্য কাজ করবেন। সেটা করলেই ভালো। কেননা, বিএনপি এই নির্বাচন কেন্দ্রীয়ভাবে বর্জন করলেও স্থানীয় নেতারা তাতে কোনোভাবেই অংশ নেবেন না, তা বলা যায় না। এরই মধ্যে এ নিয়ে যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বোঝা যায় তৃণমূল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। সিটির কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকের ব্যাপার না থাকায় তাদের স্থানীয় নেতারা নির্বাচনে অংশ নিতে ইতিমধ্যে প্রচারণা শুরু করেছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপি এদের ঠেকাতে পারবে না। সেটা বোধ হয় তারা চাইবেও না। ইতিমধ্যে এটাও জানা গেল, কেউ ‘স্বতন্ত্রভাবে’ মেয়র পদে দাঁড়াতে চাইলে কেন্দ্রের আপত্তি নেই। দলের কোনো পদে না থাকা নেতারা নির্দেশনা না মেনে নির্বাচনে অংশ নিলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করাও সহজ নয়। বিএনপি যেভাবে লাগাতার নির্বাচনের বাইরে থাকছে, তাতে দলের, বিশেষ করে তৃণমূলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া রয়েছে বলেই জানা যায়। নিরপেক্ষ সরকারের অধীন জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা স্থানীয় নির্বাচনও বর্জন করে চলেছে কেন, সেটা দলের লোকদের কাছেও প্রশ্ন।
ইতিমধ্যে আমরা জানতে পারলাম, সিলেট সিটির মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী লন্ডনে গিয়েছিলেন এবং তাঁদের নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে ফিরেছেন। তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, তা ঈদের পরে জানাবেন। তিনি যে নির্বাচনে দাঁড়াতে চান, এটা স্পষ্ট। অন্যান্য সিটি করপোরেশন থেকেও বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে। তবে তাঁরা স্বভাবতই দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করার কথা প্রকাশ্যে বলছেন না। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই অংশ নেবে না বলে বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছে। এটা আত্মঘাতী কি না, সেটা ভেবে দেখার সুযোগও যেন তাঁদের নেই। তবে দলের মেয়র পদপ্রার্থীরা সরাসরি নির্বাচন করার হিম্মত না পেলেও ঘনিষ্ঠ বা পরিবারের কাউকে না কাউকে দাঁড় করিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীতদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে চাইবেন হয়তো।
এদিকে সিটি নির্বাচনে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি কী ভূমিকা রাখবে, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। তারা সব সিটিতে উপযুক্ত প্রার্থী পাচ্ছে না বলে খবরে জানা যায়। চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন ও অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠন কিছু স্থানীয় নির্বাচনে এরই মধ্যে চমক দেখিয়েছে এবং কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়েরও কারণ হয়েছে। আওয়ামী লীগকে এটা মনে রাখতে হবে। দেশের সবখানেই এসব ধর্মীয় দলের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভোট রয়েছে বলে মনে করা হয় এবং এর প্রমাণও পাওয়া গেছে। বিশেষ করে বরিশাল সিটি নির্বাচনে চরমোনাই পীরের দল আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জন্য সংকট তৈরি করতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। জাতীয় পার্টিও তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে পারে বলে খবর রয়েছে। জাতীয় পার্টিতে অবশ্য দুই ধারা। কোন ধারা কখন দলে প্রাধান্য বিস্তার করে, তা আগে থেকে বলা যায় না। মনোনয়নবঞ্চিত সাদিক আবদুল্লাহ ও তাঁর সমর্থকেরা শেষ পর্যন্ত কী করবেন, সেটাই বা কে বলবে! স্থানীয় পর্যায়ের কমিটিতে তারাই তো প্রভাবশালী। যে কারণে শুধু তাঁর নামেই কেন্দ্রের কাছে মেয়র পদে মনোনয়ন চাওয়া হয়েছিল। দলীয় সভাপতির দৃঢ় ভূমিকার কারণেই সেই আবদার এড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে বিশ্বাস করি।
এখন নির্বাচনের ময়দানে মনোনয়নবঞ্চিত সাদিক ও জাহাঙ্গীররা যেন বড় কোনো নেতিবাচক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা পরাজিত হলে সরকারের পতন ঘটে যাবে, তা নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তা কখনো হয়ও না। তবু এই নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয় দেশে জনমত পরিস্থিতি কেমন, তা বোঝার জন্য। সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকারব্যবস্থা এখনো সেভাবে শক্তিশালী হয়নি, এ কথা সত্য। তবে এই নির্বাচনে জনগণ বিশেষ আগ্রহের সঙ্গে অংশ নিয়ে থাকে এ জন্য যে, তারা মনে করে এটা তাদের ‘ঘরের কাছের সরকার’। সে জন্য অনেক সময় দলীয় বিবেচনার বাইরে গিয়েও মানুষ ভোট দিয়ে থাকে যোগ্য প্রার্থীকে। তবে বাংলাদেশে এখনো সব নির্বাচনে দলীয় বিবেচনাই মুখ্য। সামনেই জাতীয় নির্বাচন বলে এটা এখন আরও বেশি প্রাধান্য পাবে। সে জন্য গ্রহণযোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
এখন কাজ হলো নির্বাচনটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা জোগানো এবং দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের জন্য সংগঠনের ঐক্য ধরে রেখে সর্বশক্তি নিয়োগ করা। এই নির্বাচন ঘিরে যেন নতুন কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না হয় বা তেমন কোনো সুযোগ না পায় বিরোধী দল। শুধু মেয়র নয়, কাউন্সিলর পদেও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীরা যেন নির্বাচনে অংশ নেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে আওয়ামী লীগকে। জাতীয় নির্বাচনের মাস ছয়েক আগে এটা তাদের জন্য একটি পরীক্ষা বৈকি।
লেখক: রাজনীতিক, লেখক; মহাপরিচালক, বিএফডিআর
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে